ভালো জবাব পেতে ভদ্র কমেন্ট আবশ্যক শীতের প্রকোপে চারপাশ যখন জমে থাকে, তখন কিছু করার না পেয়ে আমি বসে বসে অতীতের কাটানো দিনগুলোর কথা মনে করি, আর সবসময় কিছু হাস্যকর ঘটনা ভেবে, একা একা হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেয়ে সেই স্মৃতিচারন শেষ হয়। আজকে ভাবছিলাম স্কুলের সময়কালের কথা আর তখন মনে পড়ে গেলো আমার টিনএজে থাকাকালীন সময়ের সবচেয়ে সবচেয়ে সবচেয়ে বেশি ফ্যসিনেশনের কথা, রেসলিং । আর এসময় এমন কিছু ঘটনা আমার চোখে ভাসছে যেগুলি আমি কোনোদিন ভুলতে চাই না, তাই লিখিতভাবে এই স্মৃতিকে আমি চিরকয়েদি বানাতে চাই।
তখনো আমি অনেক ছোট যখন রেসলিং প্রথম দেখি, ৮ কি ৯ বছর হবে বড়জোর, মামাদের সাথে মাঝে মাঝে বসে বসে দেখতাম, ভালোই লাগত। সবচেয়ে ভালো লাগত লিটাকে ।
আমার উর্বর মস্তিষ্কের তখনো এতটা বিকাশ ঘটেনি যে আমি চিন্তা করতে পারবো একটা মেয়ে ছেলেদের মত মারামারি করতে পারবে, লিটার স্টান্টস দেখার মত ছিলো, তার ডিগবাজি আমি এখনো ভুলিনি! তখন ভাবতাম সে এতটাই কনফিডেন্ট ছিলো যে তার অপনেন্ট ছেলে হলেও সে নার্ভাস হতো না, নিজের মত ফাইট করতো। আর লিটার লাল চুল ছিলো আমার কাছে সবচেয়ে বেশি আকর্ষনীয়। সব মিলিয়ে বলা যায়, লিটাকে তখন মনে আমার কাছে পৃথিবীর পারফেক্ট মেয়ে মনে হত । আর ৯০ এর রেসলিং ছিলো অনকে মজার, তখন রেসলিং মানে ভালোরা সব একদলে খারাপরা একদলে। রক আর ট্রিপল এইচের প্রতিদন্দ্বিতা তখন সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় ছিলো।
তাছাড়া তৎকালীন ডব্লিউ ডব্লিউ এফের চেয়ারম্যান, ভিন্স ম্যাকমোহন ছিলো ট্রিপল এইচের শ্বশুর। তো সে অনেক আনএথিকাল কাজ করতো, ট্রিপল এইচের ফেভারে। এদিকে রক, আন্ডারটেকার , আর কেইনের গ্রুপ ছিলো খুবই শক্তিশালী, তাই ভিন্সের স্বৈরাচারী সিদ্ধান্ত সবসময় খুব বেশী কার্যকরী হতও না। অন্যায়ের উপর ন্যায়ের আধিপত্য বরাবরই আমাকে মুগ্ধ করে আচ্ছন্ন রাখতো। আরো অনেক পলিটিক্স ছিলো, আমার কাছে সবকিছু খুবই উপভোগ্য লাগত, আর মোটামোটি সব কিছু প্রেডিক্টএবল ছিলো।
যাই হোক, এই পোস্টে তখনকার কথা প্রাধান্য পাবেনা, এটা একটা ব্যাকগ্রাউন্ড মাত্র, রেসলিংয়ের সাথে এটাচমেন্টের শুরু কীভাবে, আর এত কেন পছন্দ তার একটা হাল্কার ধারনা দেওয়ার চেষ্টা করলাম মাত্র।
তো শুরু করি , তখন ক্লাস সেভেনে পড়ি , ২০০৩ সালে। রেসলিং দেখি না ২-৩ বছর, আসলে সেই চ্যানেলটা আর আসতো না। তাই না দেখতে দেখতে ভুলেও যাই। ফার্স্ট টার্ম পরীক্ষা শেষ করে খুব রিল্যাক্সড মুডে চ্যানেল চেন্জ করতে হঠাৎ দেখি রক!!!! রক আমার সর্বকালের প্রিয় রেসলার ছিলো, সবসময়ের জন্য।
তাকে সবসময় ভ্রু কুচকানো দেখতাম, সেদিন দেখলাম খুবই হাস্যোজ্জ্বল চেহারায় সে রিংয়ে স্পিচ দিচ্ছে। আমি তো খুশিতে শেষ। কিন্তু সে খুশি বেশিক্ষন থাকলো না কারন একটু পরেই দেখলাম গোল্ডবার্গ রককে ভালোমত ধোলাই দিলো। গোল্ডবার্গকে চিনতাম না, তাই সেদিন থেকে সে আমার সবচেয়ে বেশি অপছন্দের রেসলার হয়ে গেলো। এর পর আবার শুর হলো, রেসলিং দেখা।
এতটাই এ্যডিক্টেড হয়ে গেলাম যে একই এপিসোড ৩-৪বার দেখতাম , কখনো কখনো ৫ বার! রক তখন রেগুলার ছিলো না, সে হলিউডে অনেক বেশি ইনভল্ভ হয়ে পড়েছিলো, তাই রক ভক্তি ততটা আর থাকলো না। তখন আমার পছন্দের সুপারস্টার হয়ে গেলো জন সিনা । সবার থেকে আলাদা , কারো কোন তোয়াক্কা করে না, আকর্ষনীয় একটা স্টীলের চেন গলায় ঝুলানো থাকতো, চান্স পেলে সেই চেইন দিয়ে মারত, চিটিং করতো, এমন অদ্ভূত রেসলারটাকে আমার সবচেয়ে বেশি পছন্দ হয়ে গেলো। তখনো জন সিনা ডব্লিউ ডব্লিউ ই তে নেগেটিভ সাইডে ছিলো। কিন্তু আমার খুব পছন্দ ছিলো, এত বেশি পছন্দ ছিলো যে তাকে আমি প্রায়ই চিঠি লিখতাম তাকে গুড লাক উইশ করে, আশ্চর্য হলেও সত্যি আমার জীবনের প্রথম লাভ লেটার জন সিনাকেই লিখেছিলাম , আমার এখনো হাসি পাচ্ছে ভেবে , চিঠিগুলি সযত্নে একটা ডায়েরীতে আছে এখনো।
শুধু তাই না, তখন গিফটের জন্য হোক, ভালো রেজাল্টের জন্য হোক বা যেভাবেই টাকা পেতাম সব খরচ করতাম আর্চিসের কার্ড , ডায়েরী, লেটার প্যাড কিনে কিনে। সব কিছুতে শুধু রেসলিংয়ের কথা লিখতাম, প্রতিটা কার্ডে জন সিনার নাম লেখা, লেটার প্যাডে লেটার লিখে ডায়েরীতে জমিয়ে রাখতাম, মাঝে মাঝে র, স্ম্যাক ডাউন দেখে রিভিউ লিখতাম। রক কেও মিস করে মাঝে মাঝে চিঠি লিখতাম। আর যাই হোক না কেন যে কোন পে পার ভিউ ইভেন্টের আগে জন সিনা, ব্রক লেসনার, রে মিস্টেরিও, শন মাইকেলস আর কার্ট এ্যংগেল কে চিঠি লিখবোই অল দ্যা বেস্ট উইশ করে। তাই বলা যায় তাদের চেয়ে বেশি আমার ব্যস্ততা থাকতো সে সময়।
আসলে ক্লাসে তখন পেন ফ্রেন্ডশীপ রিলেটেড কম্প্রিহেনশন পড়াচ্ছিলো, তো সেখান থেকেই এই বুদ্ধি মাথায় আসে। এক মাত্র মেয়ের এহেন পাগলামো দেখে আমার বাবা রেসলিংয়ের অনেক ম্যাগাজিন এনে দিয়েছিলো। আমাকে আর পায় কে! সেখান থেকে সবার ছবি কেটে কেটে আমার সেই ডায়েরী গুলোকে আরো সুন্দর একটা রেসলিং বুক বাননিয়ে ফেলতাম। সেখানে সবাইকে নিয়ে অনেক প্যারাগ্রাফ লিখতাম, আমার কাকে পছন্দ তাদের র্যাং কি এসব লিখতাম, আর কাদের অপছন্দ , সেটাও লিখতাম নানা রংয়ের গ্লিটার পেন দিয়ে। আরো লিখতাম কোন কোন ইমপরটেন্ট ম্যাচে কে জিতলো।
যত খুটিনাটি সব লিখতাম। আর সব লিখতাম ইংলিশে। প্রথম প্রথম ভুলে ভরা থাকতো, কিন্তু আস্তে আস্তে যখন তাদের একসেন্টের সাথে ইউসড টু হতে থাকি তখন গ্রামাটিকাল নোলেজ গ্রো করে, আর আম্মু বানান দেখে দেখে ঠিক করতো ( তখন আমার বেস্ট ফ্রেন্ড সেই ছিলো, কারন আমি অতিমাত্রায় অন্ত:গামী ছিলাম, তাই লাভ লেটার ও দেখিয়েছি এমন নগদে ঝাড়িও খেয়েছি ইচড়া পাকার টাইটেল সহ ) ইম্প্রুভ হয়। সত্যি বলতে কি, চৌধুরী এন্ড হোসেন এর গ্রমার বই এর চেয়ে রেসলিং আমাকে হেল্প করেছিলো ইংলিশ শিখতে, এখনকার ডোরেমনাসক্ত ছেলেমেয়েদের দেখলে এদের ভবিষ্যতের লেভেল ভেবে খুব মায়া লাগে। দুইটা চিরস্মরনীয় ঘটনার কথা না বল্লেই না।
ঘটনা ১
তখনো সেভেনে পড়ি, ফাইনাল পরীক্ষার আগের রাতে সারভাইভার সিরিজ দেখছি। খুবই ক্রুশিয়াল অনেক ম্যাচ ছিলো। আম্মু তেমন কিছু বলেনি কারন পরেরদিন ইংলিশ ১ম পত্র পরীক্ষা ছিলো , পুরা ফ্রী হ্যান্ড রাইটিং। যাই হোক২টা ম্যাচের প্রতি আমার খুব আগ্রহ ছিলো, প্রথমটা ছিলো অস্টিনের টিমের সাথে এরিক বিশপের টিমের ম্যাচ, পুরা কন্ডিশন মনে নেই কিন্তু এতটুক মনে আছে অস্টিন আর বিশপ ২ জনই র এর জি.এম ছিলো, যদি অস্টিন হেরে যায় তাহলে সে আর র এর জি.এম থাকবে না। অস্টিনের টিমে সম্ভবত শেন ম্যাকমোহন, শন মাইকেলস, আর.ভি.ডি আরো ২জন ছিলো, আর বিশপের টিমে ছিলো সব ভিলেন টাইপ র এর সুপারস্টার।
শন মাইকেলস জিতেই যাচ্ছিলো, কোন একটা চিটিং করে বিশপের টিম জিতে যায়। শর্তমতে অস্টিনের বিদায় জানানোর পালা, আর আমার চোখ দিয়ে পানি পড়েই যাচ্ছে । আমি টেরও পাইনি যে আমি কাদছি। আম্মু এসে বলে কি হলো, কাদো কেন? তখন আমার সম্বিৎ ফিরে পেয়ে হাুমাু করে কান্না জুড়ে দেই , কাদার সময় বলছিলাম, অস্টিন চলে গেলো, শেষবারের মত বিয়ার খেয়ে রিংয়ে রেখেছে। আমার বেচারী মা কত কস্টে হাসি থামিয়ে রেখেছিলো সেটা এখন আচ করতে পারি।
এরপরের আরেকটা ম্যাচ ছিলো বারিড এলাইভ, ভিন্স ম্যাকমোহন আর আন্ডডারটেকারের। সেখানেও সাপোর্ট করেছিলাম আন্ডারটেকারকে। কেইনের জন্য সে হেরে গেলো, আর তাকে জ্যান্ত পুতে ফেলা হলো। সেটা দেখে শুরু হলো আরেক দফা কান্না। এবার দাদু এসে বলে কাদো কেন? তখন বললাম আন্ডারটেকারকে মেরে ফেললো , ওকে জ্যান্ত কবর দিয়ে দিলো।
তখন দাদু বলে তোতোমার কি? চিনো না জানো না, তোমাকেও চিনে না, এমন কারো জন্য এভাবে কাদে নাকি? এমনিতে মন ভালো না এর মধ্যে এসব ভাষন শুনে মাথা গরম হয়ে গেলো। দাদুর সাথে বরাবরই দা কুমড়ার সম্পর্ক তাই শুরু হলো ঝগড়া। এবার আম্মু এসে টি.ভি বন্ধ করে জোড় করে ঘুমাতে পাঠালো। আমি সেদিন সারারাত কেদেছিলাম। পরদিন সকালে সবাই স্কুলে অবাক হয়ে বলে কি হলো , মন খারাপ নাকি? চোখ ফোলা কেন? পড়ে আসনি? হেহেহেহে , তাদের কী এসব বলে লাভ হত? তারা তো তখন কাসৌটি জিন্দেগী ছাড়া কিছুই বুঝতো না।
ফাইনাল শেষ হবার পর আমি অস্টিন আর আন্ডারটেকারকে অনেক চিঠি লিখেছিলাম, আমার সেই ডায়েরীতে, এখনো নিজের বোকামির প্রমান হিসেবে সেসব চিঠিতে চোখ বুলাই।
ঘটনা ২
এটা ২০০৪ এর ঘটনা, আমি এর মধ্যে জন সিনার অন্ধ ভক্ত হয়ে গেছি। অস্টিনও র তে এর মধ্যে চলে এসেছে, শেরিফ হিসেবে , যেহেতউ শেষ ম্যাচের শর্তে শুধু জি.এম পোস্ট থেকে রিসাইন করার কথা ছিলো, আর আন্ডারটেকারও রেসলমেনিয়া তে ফিরে এসে কেইনের সাথে প্রতিশোধ নিয়ে নিয়েছে , ডেডম্যান বলে কথা! তো নতুন একটা রেসলার এসেছে, কারলিটো ক্যারিবিয়ান কুল। খুবই অসভ্য প্রকৃতির, সবার গায়ে আপেল খেয়ে স্পিট করে। সেটা খুব একটা সমস্যা ছিলো না।
সমস্যা শুরু হলো যখন সে জন সিনার সাথে লাগতে আসলো। আরমাগেডেনে ইউ.এস চ্যাম্পিয়নশীপের স্ট্রীট ফাইট ম্যাচে চিটিং করে সে জন সিনাকে হারায়, শুধু তাই না, এত খারাপভাবে ইনজুরড করে যে জন সিনার কিডনিতে সমস্যা হয়, আর জন সিনার উপর সে আপেল খেয়ে স্পিট করে। এটা দেকখে প্রায় ৬-৭ মাস আপেল খাইনি, কিন্তু আপেল আমার অনেক পছন্দের ফল ছিলো।
এই ছিলো আমার শৈশব, কৈশোরের স্মৃতি, যদিও এমন আরো অগনিত ঘটনা আছে, কিন্তু সবচেয়ে বেশি এসবই মনে পড়ে। সময়ের স্রোতে আমিও যান্ত্রিক সভ্যতায় মিশে ঘেছি, আর এসব বাড়তি আবেগ মোটেও কাজ করেনা কোন কিছুতএই।
এখন ভাবলেই অবাক লাগে কত বোকা ছিলাম যে পাতানো খেলা দেখে আমি এতটা প্রভাবিত হতাম, এতটা বোকা ছিলাম যে প্রতিটা ম্যাচ দেখার আগে নামাজে দোয়া করতাম তারা যাতে না হারে ( যদিও ম্যাচ হয়ে যাওয়ার ২ সপ্তাহ পরে সেটা দেখতে পেতাম তাও দোয়া করতাম। তাও এখনো মনে হয়, কাটিয়ে আসা দিংুলি আসলেই অসাধারন ছিলো ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।