ক্যারিয়ার গড়ার অন্যতম সম্ভাবনাময় একটি ক্ষেত্র হচ্ছে লেখালেখি, যেটিকে আর্টিকেল রাইটিং বা কন্টেন্ট রাইটিং বলা হয়। যারা ইংরেজিতে ভালো এবং লেখালেখিতে পেষণ আছে তারাই রাইটার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করতে পারেন। ওয়েবে বিভিন্ন উদ্দেশ্য কে সামনে নিয়ে আর্টিকেল লিখতে হয়। ব্লগ আর্টিকেল ছাড়াও প্রডাক্টের রিভিউ, সার্ভিসের সেলস পেজ, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের জন্য রিসোর্স বই, ব্রশিউর, লিফলেট বা অন্যান্য প্রচারণার কাজে রাইটারদের আর্টিকেল লিখতে হয়। রয়েছে বিশাল কাজের ক্ষেত্র।
ওডেস্ক ও ইল্যান্সের মত নাম করা ফ্রিল্যান্স মার্কেট প্লেস গুলোতে রয়েছে হাজার হাজার প্রজেক্ট। শুধু মাত্র ইল্যান্সে গত ৩০ দিনে লেখক চেয়ে জব পোস্ট হয়েছে ৯০,২৭৭ টি। এমনকি রাইটিংকে নিয়ে গড়ে উঠছে মার্কেটপ্লেসের সংখ্যাও নিছক কম নয়। যেমন
বাংলাদেশে এমন অনেক ফ্রিল্যান্স লেখক আছেন যারা ঘন্টায় ১০-১২ থেকে ৩০ ডলার আয় করে থাকেন।
আয় করার সুযোগ আছে নিজের ব্লগিং সাইটে ইনফরমেটিভ ব্লগ এবং অ্যাফিলিয়েট সাইটে প্রডাক্ট রিভিউ লিখে।
এছাড়া দেশি-বিদেশি ইন্টারনেট মার্কেটিং অথবা কনটেন্ট মার্কেটিং প্রতিষ্ঠানেও ৩০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা বেতনে চাকরিও করছেন অনেকে।
অনেকে ফ্রিল্যান্স রাইটিং কিংবা ব্লগিং পেশায় আসতে চান, কিন্তু সঠিক গাইড লাইনের অভাবে ভালো করতে পারছেন না। আমি চেষ্টা করি আমার নিজের মত করে আগ্রহিদের গাইড করতে। অনেকেই সফলও হয়েছে ইতিমধ্যে। আর্টিকেল রাইটিংয়ের কিছু টিপস নিয়ে আমার লেখাটি আশাকরি আপনাদের উপকারে আসবে।
ইমেইজ ক্রেডিটঃ Edwardlangley
১। প্রথমে নিজে নিজেই বিভিন্ন বিষয়ে নিয়মিত লিখে যান। এতে আপনার লেখালেখির দক্ষতা ও আত্নবিশ্বাস বাড়বে। শুরুতেই কি নিয়ে লিখবেন ভবছেন?
মনে রাখতে হবে আর্টিকেল রাইটিং এবং ক্রিয়েশন দুইটা ভিন্ন ব্যপার। ক্রিয়েশনের জন্য চাই স্পেসিফিক বিষয়ে প্রচুর জানাশুনা, এক্সপেরিমেন্ট এবং অনেক দিনের বাস্তব অভিজ্ঞতা, যেখানে আপনার নিজস্ব মতামত প্রতিষ্ঠা করতে হয়।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, রিসার্স পেজ, স্টোরি শেয়ারিং ও কেসস্টাডি। কিন্তু আর্টিকেল রাইটিংয়ে বিভিন্ন জানাশুনাকে একুমুলেট করে ভিন্ন ভাবে উপস্থাপন করা হয়, যা তুলনা মূলক সহজ। শুরুতে আপনি হয়তো কোন বিষয়েই অভিজ্ঞতা উজার করে লিখতে পারবেন না। হতাশ হবেন না লিখে যান নিয়মিত।
২।
মূলত ৭ ধরণের লিখার স্ট্রাকচার হতে পারে। আর এই জন্যই প্রথমেই আইডেন্টিফাই করতে হবে কোণ বিষয়ের জন্য কোন ধরনের স্ট্রাকচারে লিখতে হবে। নিচের লিংক থেকে আমার সংগৃহীত লেখাটি ডাউনলোড করে পড়ে নিন, লেখার ৭ স্ট্রাকচার ও কিভাবে লিখতে হবে সেই সম্পর্কে আপনার পরিপূর্ণ জ্ঞান চলে আসবে। https://copy.com/bQaHhHAufPwgT8nc
মনে রাখবেন প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিষয় বস্তু ও এপ্রোচ অনুযায়ী লেখার মান, কোয়ালিটি এবং স্ট্যাইল ভিন্ন ভিন্ন হয়। এছাড়াও ব্লগ আর্টিকেল, প্রডাক্ট রিভিউ, সেলস পেজ, রিসার্স পেজ, স্টোরি শেয়ারিং, ক্যাস স্টাডি’র জন্য লেখা কেমন হয় বা হতে হবে সেই বিষয়ে প্রচুর পড়াশুনা করতে হবে।
গুগলে সার্চ করে লেখা গুলো ফলো করুন। পাশাপাশি এই লিংকে আমি কিছু স্যাম্পল দিয়েছি দেখুন https://copy.com/VOJDaPjnnS1euVMz
৩। লেখালেখিতে নিজস্ব বাচন ও প্রকাশ ভঙ্গি তৈরি করুন, যা আপনাকে অন্যদের চেয়ে ভিন্ন এবং সহজেই বিশেষ করে তুলবে। বিখ্যাত আমেরিক্যান লেখক “Sandra Cisneros” এর এই উক্তিটি “Write about what make you different” মনে রাখবেন সব সময়।
৪।
লেখার সময় গ্রামারের প্রতি এবং শব্দ ও বাক্য চয়নে বিশেষ নজর দিন।
৫। লেখালেখিতে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে ড্রাফটিং এবং রিভিশন। আপনাকে অবশ্যই লেখার শেষে লেখাটির প্রুফরিড করতে হবে।
৬।
লেখালেখি কারার জন্য আপনাকে প্রচুর পড়তে হবে, বিভিন্ন বিষয়ে জানতে হবে। জানাশুনা ছাড়া লেখালেখি অসম্ভবই বটে। ভালো মানের লেখকদের বই এবং জনপ্রিয় ব্লগারদের বই নিয়মিত পড়ুন। তাদের লেখনী ফলো করতে করতে এক সময় আপনার নিজস্ব স্টাইল তৈরি হবে। যা আপনাকে সবার মাঝে ইউনিক করে তুলবে।
আমি যেই ৬ টি ব্লগ/সাইট নিয়মিত ফলো করি আপনাদের সাথে শেয়ার করছি...
লেখার আগে জানা চাই কেন লিখছেন, কাদের টার্গেট করে লিখছেন এবং তারা কি চায়। লেখার পাঠক কে সেটা নির্ণয় করুন। মনে রাখতে হবে লেখা যেন যুক্তিযুক্ত হয়। ওয়েবসাইট এবং বিষয় বস্তু অনুযায়ী ঠিক করে নিতে হয় লাইন অফ অ্যাকশন। আর প্রথমেই নিজের মনকে জিজ্ঞেস করুন আপনি এই বিষয়ের পাঠক হলে কি কি তথ্য পেতে চাইতেন এই লিখা থেকে।
এক্ষেত্রে আমার পার্সোনাল মতামত হচ্ছে প্রথমে বিষয় ভিত্তিক WH question ডেভেলপ করা। কি বুঝলেন না তো? ধরুন আমাদের বিষয়, ইনস্যুরেন্স। তাহলে আমরা নিচের WH question গুলো ডেভেলপ করতে পারি।
কারণ পাঠকের এই প্রশ্ন গুলো ই অজানা, ঐ বিষয় থেকে তথ্য গুলো সে জানতে চাচ্ছে।
প্রথমেই লিখাটির টাইটেল লিখুন।
আমি টাইটেল লিখার সময় কমপক্ষে ৪/৫ ভেরিয়েশন লিখি, তারপর সবচেয়ে আকর্ষনীয়টিকে বাছাই করি। টাইটেল আকর্ষনীয় হলে ইউজারের এঙ্গেজমেন্ট বাড়ে, টাইটেল দেখেই লেখাটি পড়তে আগ্রহি হয়ে যায়। আচ্ছা বলুন ত নিচের কোন টাইটেলটি আপনাকে বেশি আকৃষ্ট করে?
“যে ৫ টি ব্যপার না জানা থাকলে আপনার চুল পরে যেতে পারে!” এটা তাই না? হুম তুলনা মূলক ভাবে মানুষ এই টাইটেলটা দেখলেই বেশি আগ্রহী হবে। মনে আছে ত যে বেস্ট আইডিয়া তখনি পাওয়া যায় যখন অনেক আইডিয়া থাকে আপনার কাছে। সুতরাং টাইটেল ভেরিশন আনা জানতে হবে।
এই নিন আমার সংগৃহীত ৮০+ টাইটেল সাজেশন https://copy.com/kMpbAcuX4Jfe8xga
এবার আপনাকে লিখতে হবে, লেখার আগে যা লিখতে চান, সেটার মূল পয়েন্টগুলো (অর্থাৎ প্রশ্ন গুলো) লিখে নেন। প্রশ্ন গুলোর বিষয়ে পরিপূর্ন জানাশোনা কিংবা অভিজ্ঞতা থাকলে ভালো, অন্যথায় নির্দিষ্ট প্রশ্ন নিয়ে সার্চ ইঞ্জিনে সার্চ করে বিভিন্ন ব্লগ পড়ে (প্রতিটা প্রশ্নের জন্য মিনিমাম ৫ টি লেখা পড়ুন) কিংবা ফোরামে অংশ গ্রহণ করার মাধ্যমে জানা শুনা বাড়াতে হবে। বলতে পারে রীতিমতো গবেষণা করতে হবে। যে বিষয়ে লিখবেন সে বিষয়ে কোন ধারণা না থাকলে কখনোই ভালো লিখতে পারবেন না। তাই যে বিষয়ে লিখবেন সে বিষয়ের বিভিন্ন ফোরাম এবং ব্লগ ভিজিট করুন এবং পড়ুন, এতে আপনার ধারণা ক্লিয়ার হবে।
গবেষণার কাজ শেষ হলে, এবার লেখাটিকে তিনটি ধাপে সাজান। ভূমিকা, পোস্ট বডি এবং উপসংহার। পাঠক পুরো আর্টিকেলটিতে কি পেতে যাচ্ছে সেটা স্থান পাবেন ভুমিকায়। তারপর লেখার মুল অংশ অর্থাৎ পোস্ট বডি। এখানেই আমরা যেই WH question গুলো ডেভেলপ করে পয়েন্ট আকারে সাজিয়ে উত্তর লিখবো।
আরেকটা বিষয় উপরে যেই ৭ স্ট্রাকচারে কথা বলেছিলাম, এখানেই ইম্পিমেন্ট করতে হবে। লেখার সময় নিচের ৩ টি পয়েন্ট অবশ্যই মাথায় রাখবেন।
বিভিন্ন গ্রামার চেকার টুল আছে, সেগুলো দিয়ে গ্রামার চেক করাতে পারেন।
উপসংহারে আমরা পুরো বিষয়ের সামারি উল্লেখ করত পাঠককে উদ্বুদ্ধ করবো উপরে লিখত বিষয়ে। আপনার লেখার কাজ শেষ, এখন এটাকে গ্রামার চেকিং এবং স্পেল চেকিং এর মধ্যমে প্রুফরিড করুন।
ভুল গুলো খুঁজে বের করে সংশোধন করে ফেলুন। অবাঞ্ছিত বাক্য ছেঁটে ফেলে দিন।
এছাড়াও আর্টিকেল রাইটিং এর সময় রাইটারকে সার্চ ইঞ্জিনগুলোর অনপেজ রিলেটেড বেশ কিছু ফ্যাক্টর ফলো করতে হয় যা সার্চ ইঞ্জিন গুলোতে আর্টিকেল গুলোকে দ্রুত র্যাংক করতে সহায়ক হয়। তাই রাইটারকে আর্টিকেলটি লেখার সময় গুরুত্বের সাথে নিচের এসইও চেক লিস্টটি গুলো ফলো করতে হবেঃ
ভালো মানের আর্টিকেল লিখতে হলে একজন আর্টিকেল রাইটারের অবশ্যই গুরুত্বপূর্ন কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখা উচিৎ। বিষয়গুলো মনে রাখলে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করলে অবশ্যই আর্টিকেল রাইটার হিসেবে সফলতা পাওয়া সম্ভব।
এই ৯টি চেকলিস্ট অবশ্যই ফলো করবেনঃ
কখনোই এমনটি ভাববেন না যে আপনি কপি পেস্ট করে আর্টিকেল লিখবেন। বাজারে অনেক রিরাইট করা যায় এমন টুলস পাওয়া যায়, এগুলো ব্যবহারে কথা মাথা থেকে ঝেরে ফেলুন কেননা এরা ৪০% ক্ষেত্রেই হিউম্যান রিডএবল লেখা দিতে ব্যর্থ।
উপরের টিপসগুলো মাথায় রেখে চর্চা করুন, ইনশাআল্লাহ সফলতা আসবেই।
সকলেই ভালো থাকুন। হ্যাপি ফ্রিল্যান্সিং।
ফেসবুকে আমি
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।