৯ মার্চ, রোববার চীনের সাংবাদিকদের কাছে ইমেইলে পাঠানো একটি পিডিএফ বার্তায় তারা এই দাবি জানিয়েছে।
অখ্যাত এই গোষ্ঠী দাবি করেছে, নিখোঁজ মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজটি তারা বিধ্বস্ত করে দিয়েছে।
তারা বলেছে, “তোমরা আমাদের একজনকে খুন করবে, পাল্টা প্রতিশোধ হিসেবে আমরা তোমাদের একশত জনকে খুন করবো। ”
চীন বা মালয়েশিয়ান সরকার এই বার্তার ব্যাপারে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। তবে চীনের মূলধারার গণমাধ্যমগুলো এই দাবিকে উড়িয়ে দিয়েছে।
তারা বলছে, সংখ্যালঘুদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়ানোর জন্য কোনো সুযোগ সন্ধানী গোষ্ঠি এই বার্তা ছড়িয়ে থাকতে পারে।
তবে ইউএস সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সীর (সিআইএ) পরিচালক জন ব্রেননান গত মঙ্গলবার ওয়াশিংটনে বলেছেন, মালয়েশীয় এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজটি নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পেছনে কোনো সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর সম্পৃক্ততা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
তিনি বলেছেন, “বিমান নিখোঁজ হওয়ার ব্যাপারে ‘দায় দায়িত্ব স্বীকারের দাবি’ আছে। যদিও এই দাবিটিকে নিশ্চিত করা যায়নি। কিন্তু একেবারে উড়িয়ে দেওয়াও যাচ্ছে না।
”
কোনো সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর সম্পৃক্ততার বিষয়টি তিনি উড়িয়ে দিতেও চান না বলেও জানান তিনি। কে বা কারা বিমান নিখোজেঁর দায় দায়িত্ব স্বীকার করেছে সে ব্যাপারে বিস্তারিত বলতে তিনি অস্বীকৃতি জানান।
তাকেঁ প্রশ্ন করা হয়, তিনি এই ঘটনার সাথে কোনো সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর সম্পৃক্ততা উড়িয়ে দিতে পারেন কী না। জবাবে সিআইএ প্রধান বলেন,’না, আমি তা উড়িয়ে দিতে পারি না। ‘
সিআইএ প্রধানের এই বক্তব্যের মাধ্যমে বিমান নিখোজেঁর ঘটনায় যে কেউ দায় দায়িত্ব স্বীকার করেছে, সে ব্যাপারে মার্কিন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় থেকে স্বীকৃতি পাওয়া যায়।
যদিও তিনি এই ব্যাপারে বিস্তারিত বলতে সম্মত হননি। তাঁর এই বক্তব্যের আগেই চীনের সাংবাদিকদের কাছে চাইনিজ মার্টিয়ার ব্রিগেডের ইমেইল বার্তাটি পৌছেঁ গিয়েছিলো।
চীনের মিডিয়া এবং সাংবাদিকদের সূত্রে জানা যায়, চাইনিজ মার্টিয়ার ব্রিগেড মালয়েশীয় এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজটি ছিনিয়ে নেয়া বিষয়ে দুটি কারণ উল্লেখ করেছে।
এর মধ্যে একটি হচ্ছে, মালয়েশীয় সরকারের নির্মম বিচার ব্যবস্থা। তবে বার্তায় এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু উল্লেখ করা হয়নি।
দ্বিতীয় কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, চীনের উইগুর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর চীন সরকারের নিবর্তনমূলক পদক্ষেপে। এর প্রতিবাদ হিসেবে কাজটি করা হয়েছে বলে দাবী করা হয়।
জানা গেছে, বেইজিং সরকার গত কয়েক বছর ধরেই এই সংখ্যালঘু উইগুরদের সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করে আসছে। চীনের বিভিন্নস্থানে বড় ধরনের সহিংস হামলার জন্যও এদের দায়ী করা হচ্ছে।
সাম্প্রতিক সময়ে কুনমিন এর একটি রেলওয়ে স্টেশনে ছুরিকাঘাতে ৩৩ জন চীনা নাগরিককে হত্যার জন্য এদের দায়ী করা হয়।
এছাড়া তিয়ানমান স্কেয়ারে জীপ বিষ্ফোরণের সঙ্গেও এরাই জড়িত বলে চীন সরকার মনে করে।
চীনা গণমাধ্যমের ভাষ্যানুযায়ী, উইগুর সম্প্রদায়ের ‘চোরাগোপ্তা’ আন্দোলনের পেছনে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র মদদ আছে। সিআইএ’র পৃষ্ঠপোষকতায়ই এরা আন্দোলন করে বলে চীনা গণমাধ্যগুলো মনে করে।
উড়োজাহাজ নিখোঁজ হওয়ার ঘটনার আগে বেইজিং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সন্ত্রাসী হামলা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছিলো চীনা কর্তৃপক্ষ।
অন্তত দুই দফা হুমকি এবং বার্তা পেয়ে চীন এবং তাইওয়ান বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করে।
গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, এর আগে গত ৪ মার্চ অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি তাইওয়ানের বৃহত্তম এয়ালরাইন্স চায়না এয়ারলাইন্স এর বেইজিং অফিসে ফোন করে জানায়, বেইজিং বিমানবন্দরে চায়না এয়ারলাইন্স এর ওপর হামলা হবে।
এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ সঙ্গে সঙ্গে চায়না এভিয়েশন এডমিনিস্ট্রেশনকে এই তথ্য জানালে বাড়তি সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এর আগে তাইওয়ানস ন্যাশনাল সিকিউরিটি ব্যুরো বেইজিং বিমানবন্দরে সম্ভাব্য সহিংস হামলা হতে পারে বলে চীনকে তথ্য দেয়।
চীনা মিডিয়ার এই তথ্যগুলো থেকে ধারণা করা যায়, একটি সম্ভাব্য হামলার আশঙ্কা চীনা কর্তৃপক্ষের মধ্যে আগে থেকেই ছিলো।
চাইনিজ মার্টিয়ার্স ব্রিগেড ভবিষ্যতে আরো হামলা করা হবে বলে ঘোষণা দিয়ে বলেছে, তাদের ধারণা ছিলো বিমানটির সব যাত্রীই চীনা।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।