শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ৮১ উপজেলায় ভোটগ্রহণ হয়। গোলযোগের কারণে ১৩ উপজেলার ২৬ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত হয়েছে।
বাগেরহাট সদরে এক প্রার্থীর সমর্থক খুন হন দুর্বৃত্তের হামলায়, শরীয়তপুরের নড়িয়ায় ব্যালট ছিনতাইয়ের সময় পুলিশের গুলিতে এক প্রার্থীর এজেন্ট নিহত হন।
কুড়িগ্রাম সদর, যশোরের মনিরামপুর, লক্ষ্মীপুরের কমলনগর, চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ ও কচুয়া ও ফেনীর দাগনভূঞায় ব্যালট বাক্স ছিনতাই হয়েছে। ভোটের ফলের তালিকা ছিড়ে ফেলা হয়েছে নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলায়।
দুপুরে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার একটি কেন্দ্রে ব্যালট ছিনতাইয়ের চেষ্টাকালে দুর্বৃত্তদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়্। এ সময় পুলিশের গুলিতে আওয়ামী লীগ নেতা ও চেয়ারম্যান প্রার্থী এ কে এম ইসমাইল হকের এক নির্বাচনী এজেন্ট নিহত হন।
শরীয়তপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এহসান শাহ্ জানান, ভূমখাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ চলাকালে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে ২০-৩০ জন যুবক ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের চেষ্টা চালায়।
এ সময় পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুড়লে দুপক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ গুলি ছুড়লে ভূমখাড়া গ্রামের মনসুর মাঝির ছেলে রিপন মাঝি গুলিবিদ্ধ হয়।
শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে।
এর আগে সকালে বাগেরহাটের মেগনিতলা এলাকায় সন্ত্রাসীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে এক যুবক নিহত হয়েছেন, যাকে শিবিরকর্মী বলে দাবি করেছে জেলা জামায়াত।
বাগেরহাট মডেল থানার ওসি মো. আলী অজম খান জানান, সকালে মেগনিতলায় রক্তাক্ত অবস্থায় দুজনকে পড়ে থাকতে দেখে এলাকাবাসী তাদের বাগেরহাট সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মানজারুল ইসলামকে (২০) মৃত ঘোষণা করেন। তার মাথাসহ শরীরের অনেক জায়গায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
মানজারুল বাগেরহাট সরকারি পিসি কলেজের অর্থনীতি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তিনি গত কয়েকদিন ধরে উপজেলা নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক মোস্তাইন বিল্লাহর পক্ষে কাজ করেছিলেন বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে।
যশোর
বেলা ১১টার দিকে মণিরামপুরের হাজরাকাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে হামলা চালিয়ে ব্যালট বাক্স ছিনতাই ও ব্যালট পেপারে আগুন দেয়া হয় বলে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন জানান।
এতে ব্যালট পেপারসহ বাক্সটি সম্পূর্ণ পুড়ে যায়।
হামলাকারীরা আরো দুটি ব্যালট বাক্স ভাংচুর করে বলে জানান আলমগীর।
হামলায় পুলিশের নায়েক আব্দুল জব্বার আহত হয়ছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ১২ রাউন্ড গুলি ছোড়ে।
গোলযোগের কারণে কেন্দ্রটিতে ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দেয়া হয় বলে যশোরের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা শরীফ নজরুল ইসলাম জানান।
কুড়িগ্রাম
বেলা ১১টার দিকে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়ে একটি বুথ ভাংচুর এবং ৩০০ ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নেয় বলে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আক্তারুজ্জামান জানান।
এ সময় ভোটগ্রহণের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বেধড়ক মারধর করা হয় বলে জানান তিনি। পরে ওই কেন্দ্রে এক ঘণ্টা ভোটগ্রহণ বন্ধ রাখা হয়।
লক্ষ্মীপুর
লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলায় একটি কেন্দ্রে ব্যালট ছিনতাইয়ে বাধা দিতে গিয়ে চার পুলিশ সদস্য আহত হন।
উপজেলার হাজীগঞ্জ ফোরকানিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে গোলযোগের পর ভোটগ্রহণ সাময়িক বন্ধ রাখা হয় বলে ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান জানান।
তিনি বলেন, সকাল ১১টার দিকে আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী এ কে এম নুরুল আমিন রাজুর সমর্থকরা হামলা চালিয়ে ব্যালট ছিনতাই করে।
এ সময় পুলিশ শটগানের গুলি ছোড়ে।
হামলায় চার পুলিশ কনস্টেবল আহত হন বলে জানান তিনি।
চাঁদপুর
কেন্দ্র দখল, জাল ভোটসহ বিভিন্ন অনিয়মের কারণে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ ও কচুয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ছয়টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করে প্রশাসন।
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের রাজারগাঁও কেন্দ্রে তছনছ হওয়া ব্যালট পেপার।
চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মো. আমির জাফর জানান, সকাল সাড়ে ৯টায় কচুয়ার তেগুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র দখল করে জাল ভোট দেয়াকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। এতে উভয় প্রার্থীর অন্তত ১৫ নেতাকর্মী আহত হন।
দুপুর সোয়া ১টায় একই উপজেলার তেগুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে একই ধরনের সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন আহত হয়।
অপরদিকে হাজীগঞ্জের পশ্চিম রাজারগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বেলা পৌনে ১১টায় জাল ভোট দেয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ বাধে।
এছাড়া মেনাপুর উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থীর কর্মীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়।
এতে অন্তত পাঁচজন আহত হয়। সংঘর্ষ চলাকালে এই কেন্দ্র থেকে ব্যালট বাক্স ছিনিয়ে নেয়া হয়।
ফেনী
ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলায় গুলিবর্ষণ, ব্যালট বাক্স ছিনতাই, অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর, কেন্দ্র দখল, জাল ভোট, পুলিশ ও গণমাধ্যমের গাড়ি ভাংচুর, তিন নির্বাচন কর্মকর্তার সাজা ও তিনটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত হয়েছে।
এই প্রেক্ষিতে দুপুরে ১৯ দল সমর্থিত প্রার্থী আকবর হোসেন, আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী আবদুল হাই মিলন, বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী আবুল হাশেম বাহাদুর ও ৮ ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী সংবাদ সম্মেলনে কারচুপি অভিযোগে নির্বাচন বাতিল করে পুনরায় তফসিল ঘোষণার দাবি জানান।
নোয়াখালী
নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলায় ভোটের ফলাফলের শিট ছিঁড়ে ফেলেছে আওয়ামী লীগ সমর্থিত এক ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর লোকজন।
পুলিশ জানায়, শনিবার সন্ধ্যায় এ ঘটনার পর আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।
সংঘর্ষ চলাকালে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ফ্যাক্স মেশিন, মাইক্রোফোনসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাংচুর করা হয়। এতে ফলাফল ঘোষণা কিছুক্ষণ বন্ধ থাকে।
পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।
সহকারী রির্টানিং কর্মকর্তা উদয়ন দেওয়ান জানান, সংঘর্ষের পর কিছুক্ষণ বন্ধ থাকার পর রাত সাড়ে ৮টা থেকে আবার ফলাফল ঘোষণা শুরু হয়।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।