শনিবার রাতে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত প্যানেলের বিজয়ীরা সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি তাদের উদ্দেশ্যে একথা বলেন।
খালেদা জিয়া বলেন, “এই সরকারের সঙ্গে দেশের জনগণ নেই। সুপ্রিম কোর্টসহ সারা দেশের জেলা বারগুলোতে জাতীয়তাবাদী শক্তির বিজয়ে জনগণের সেই চিন্তার প্রতিফলন ঘটছে। তাই সব রাজনৈতিক দলকে বলব, আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে নামি।
“আমি স্পষ্টভাষায় বলে দিতে চাই, আমরা রাজপথে নামবই।
সরকারের যত বাঁধা-নির্যাতন-গুলি আসুক না কেন- যখন সময় হবে আমরা সময়মত রাজপথে নামব। ”
রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি খন্দকার মাহবুব উদ্দিন আহমাদ ও সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকনের নেতৃত্বে বিজয়ী নেতাদের এই সাক্ষাৎ হয়।
এ সময় খন্দকার মাহবুবউদ্দিনের নেতৃত্বে আইনজীবীরা ফুল দিয়ে খালেদা জিয়াকে অভিনন্দন জানান।
গত ১২ ও ১৩ মার্চ অনুষ্ঠিত সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত নীল প্যানেলের প্রার্থীরা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। ১৪টি পদের মধ্যে ১৩টিতেই জয়ী হয় তারা।
সমিতিতে শুধু একটি সদস্য পদ পেয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থকদের সাদা প্যানেল।
এর আগে ঢাকা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনেও সভাপতি ও সম্পাদকসহ ১৮টি পদে জয়ী হয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত নীল প্যানেল।
উপজেলা নির্বাচনে সরকারের বিরুদ্ধে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া বলেন, “সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ও ঢাকা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনসহ বিভিন্ন জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনগুলোতে জাতীয়তাবাদী প্যানেলের বিজয় হচ্ছে। এটা দেখে তারা উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে জবরদখল করে প্রতিশোধ নিচ্ছে। আজকে উপজেলার নির্বাচনে জবর দখল হয়েছে।
”
উপজেলা নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা ‘জবর দখল না করলে’ তাদের ভরাডুবি হতো বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আওয়ামী লীগের অধীনে ‘সুষ্ঠু’ নির্বাচন সম্ভব নয় দাবি করে বিএনপি প্রধান বলেন, “৫ জানুয়ারি ভোট হয়নি, নির্বাচনের নামে প্রহসন ও তামাশা হয়েছে। ভাগ-বাটোয়ারার ওই নির্বাচনে যে সংসদ হয়েছে তাতে কোনো বিরোধী দল নেই। বিরোধী দলীয় নেতা জনগণের দ্বারা নির্বাচিত নন। তিনি কিভাবে বিরোধী দলীয় নেতা হন?”
দশম সংসদের বিরোধী দলের নেতাদের সরকারের মন্ত্রিসভায় থাকা এবং প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হওয়ার বিষয়টি ‘অদ্ভুত’ বলেও মন্তব্য করেন খালেদা জিয়া।
তিনি বলেন, “দেশে কোনো গণতন্ত্র নেই, আইনের শাসন নেই। বর্তমান সরকার জনগণের নির্বাচিত বৈধ কোনো সরকার নয়। তারা বন্দুকের জোরে ক্ষমতায় বসে আছে। ”
মানুষ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দাবি করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, “আজ সুপ্রিম কোর্টের বিচারকরা ন্যায়বিচার করতে পারছেন না। উপর থেকে এমনভাবে হস্তক্ষেপ হয়, বিচারকরা কিছু করতে পারেন না।
ফলে বিচার প্রার্থীরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ”
সারা দেশে গুম-হত্যা ও মিথ্যা মামলা দিয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ তার।
নেতা-কর্মীদের সহযোগিতার জন্য জেলা ভিত্তিক ‘আইন সহায়তা কমিটি- লিগ্যাল এইড কমিটি’ গঠন করার জন্য আইনজীবীদের প্রতি আহ্বান জানান খালেদা জিয়া।
সাতক্ষীরা ও ফেনীসহ বিভিন্ন জেলায় যৌথ অভিযানের নামে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের নেতা-কর্মীদের ওপর ভয়াবহ নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “আমি তদন্ত কমিটি করে দিয়েছিলাম। রিপোর্ট দিয়েছে।
ওই রিপোর্টে ভয়াবহ নির্যাতনের চিত্র ফুটে উঠেছে। ”
ভারতের সঙ্গে বর্তমান সরকারের সম্পর্কের প্রতি ইংগিত করে তিনি বলেন, “আমরা কিছুই পাই না। আর তারা যা চাচ্ছে, সব কিছুই দিয়ে দিচ্ছে। এখন কেবল দেশটা দেয়া বাকি। তাও তারা দিয়ে দিতে পারে।
“আমরা স্পষ্টভাবে বলে দিতে চাই, জাতীয়তাবাদী শক্তি থাকতে তা আমরা হতে দেবো না। ”
বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটকে ‘ভয়’ পাওয়ার কারণে তাদের সভা-সমাবেশ করতে দেয়া হয় না দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, “আন্তর্জাতিক নারী দিবসে মহিলা দলকে শোভাযাত্রা করতে দেয়নি। অথচ তারা রাস্তা বন্ধ করে সমাবেশ করেছে। এখানে আসলে কোনো গণতন্ত্র নেই। তারা জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে।
”
এ সময় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, রফিকুল ইসলাম মিয়া, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন, সম্পাদক মাহবুবউদ্দিন খোকন বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শাহজাহান ওমর, জয়নাল আবেদীন, মীর নাসির উদ্দিন, আইন বিষয়ক সম্পাদক জিয়াউর রহমান খান, সহসম্পাদক নিতাই রায় চৌধুরী, গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক সানাউল্লাহ মিয়া, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মাসুদ আহমেদ তালুকদার, মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক নাসির উদ্দিন অসীম, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক বদরুদ্দোজা বাদল, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মহসিন মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক মোসলেহ উদ্দিন জসীম উপস্থিত ছিলেন।
সাক্ষাতের শুরুতে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী প্যানেলের নবনির্বাচিত সহসভাপতি পদে মো. খালেদ আহমেদ ও রফিকুল ইসলাম মেহেদি, কোষাধ্য¶ মাসুদ আহমেদ সাইদ, সহকারী সম্পাদক একেএম রেজাউল করিম খন্দকার ও নাসরিন আক্তার, সদস্য আফছানা রশীদ শুভ্রা, আসাদুজ্জামান আনসারী, গোলাম মোস্তফা, আইয়ুব আলী আশ্রাফী, সালমা বেগম ও শামীমা সুলতানা বানুকে পরিচয় করে দিয়ে হয়।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।