আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিষিদ্ধ পল্লী থেকে

কইরে শ্যামলী বাহিরে থেকে খালার ডাকার আওয়াজ শুনতে উঠে বসল সে।

কালকে রাতে একেবারে ঘুমাতে পারেনি সে। এই লোকটা আসলে পাগলামী করে। প্রতিরাতে এখানে থেকে যায়। এখানে যারা অন্যায় আনন্দের সন্ধানে আসে তারা তাদের কখন ই ভালবাসেনা।

তাদের ক্ষনিকের অভিজ্ঞতা বা বিনোদনের জন্য আসে বড় ঘৃনায় টাকা ছুড়ে চলে যায় কোন ধরনের বোধ না করে। সম্ভবত তাদের দৃষ্টিতে আমরা পাঁক আমাদের স্পর্শে তাদের গায়ে কাঁদা লেগেছে। সেটা তারা ভূলতে পারেনা । বড় ঘৃনার দৃষ্টি দিতে দিতে তারা বিদায় নেয়। যাওয়ার সময় খুব অল্প সংখ্যক লোকের আবার আসার প্রতিশ্রতি থাকে।

কেননা সবার ভিতরে একটা অপরাধবোধ কাজ করে। নিজেকে নষ্ট করায় আরেকজনকে নষ্ট করায়। শুধু এই লোকটি ব্যাতিক্রম। প্রথম থেকে খুব সহানুভূতির সাথে শ্যামলীর সাথে মিশছে। তার সব দরকারী জিনিস প্রতিদিন নিয়ে আসে।

অনেকটা তার মৃত স্বামীর কথা মনে করিয়ে দেয়। তার বাধা কাষ্টমার। এক বড় সরকারী অফিসে নাকি কাজ করে। বড় বড় গল্প বড় বড় স্বপ্ন সে শোনে।

তাকে বেশ কিছু শাড়ী দরকারী জিনিস কিনে দিয়েছে বাড়তি তার পাওনা টাকা দেওয়ার পরও।

প্রতিদিন সন্ধায় কিছু বাজার নিয়ে এসে বলে রান্না কর খাব। ক্ষিধে লেগেছে। শ্যামলী বিরক্তি বোধ করে কখন ও অসহায় বোধ করে। একজন কে নিয়ে থাকলে এখানে চলেনা।

বাহিরে এসে দেখে খালা বিরক্তমুখে বসে আছে।



কি রে তুই সারাক্ষন ওই ব্যাটার লগে লাইগা বইসা থাকস কেন?

কি করুম খালা যাইতে চায়না। বসি থাকে। ঘরের বউ মনে হয় অশান্তির। সে ও বিরক্ত হয়ে বলে।

বিয়ের জন্য জোর করবি ।

দেখবি পলাইব বেটা। খালা গা দুলিয়ে জোরে জোরে হাসে।

বিয়ের কথায় মনটা স্বপ্নাতুর হয়ে যায় শ্যামলীর। তার মানুষটির কথা মনে পড়তে থাকে। না স্বামী তার একজন ই।

বড় আদরের ভালমানুষ ছিল। ওরকম আর কি তার জীবনে হইব।

বিয়ের রাতে স্বামী তারে সালাম করার পর একটা চেইন পরাই দিছিল গলায় আর একহাজার টাকা আচলে বাইধা দিছিল। কতমানুষ আইল গেল। কত ছোয়া এই শরীরের উপর হইল ওই জায়গায় কেও হাত দিতে পারেনি ।

কোনদিন পারবনা।

মাপ করি দিও আমারে অনেক অধর্ম হয়ে যাইতাছে এই জীবনে। দীর্ঘনিশ্বাস বেরিয়ে আসে বুকের গভীর থেকে।
শোন একটা বিরাট খবর আছে। তোরে এটা জানাইতে আসছি।



খালার কথায় শ্যামলীর চিন্তার সূত্র ছিন্ন হয়ে যায়।

এই ওয়ার্ডের কমিশনার বাহিরে যাচ্ছে একমাসের জন্য। তোর মেয়েরে তার মনে ধরছে। একসঙ্গে নিতে চায় বিলাত।

চমকে উঠে শ্যামলী খালার দিকে মারমূখী দৃষ্টিতে তাকায়।

জবাব টা তার আসে অত্যন্ত কর্কশ হয়ে। কেননা খালা তার মূল্যবান আদরের জায়গায় হাত দিয়ে ফেলছে।

আর কোনদিন আমার কাছে এই প্রস্তাব নিয়ে আইসনা। তোমারে আমার মায়ের মত মনে করছিলাম। ফুঁফিয়ে উঠে বলে সে।



খালা ও একটু অপরাধবোধে এসে জড়িয়ে ধরে শ্যামলীকে। সে জানে মেয়ের ব্যাপারে শ্যামলীর আবেগের ব্যাপারটা।

তুমি জান খালা সুমার বয়স তের বছর। ওরে হোষ্টেলে রাইখা পড়াশোনা করাইতেছি আমার জীবনের ছোয়া যেন না লাগে। ওর জন্য কষ্ট করি আমি এই ঘৃণার কাজ করি।

মেয়ের ভাল বিয়ে দিতে পারলে আমি এই কাজ ছাইড়া দুরে চইলা যামু । ভিক্ষা কইরা খামু। পাথর ভাঙ্গুম। এই কাজ আর করুমনা। আমার সুমার বাপের অভিশাপ লাগব আমার উপর।

হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে সে।

তোর মেয়েরে কি ভাল কেও বিয়ে করবে? শ্যামলী যদি কোন ছেলে বড়মনে হইলে যদি করে। আমার উপর রাগিসনা মারে। সত্য কথাটা কইলাম বলে। খালা সমবেদনায় বলে।



সেইরকম হইলে প্রথমে মেয়েরে বিষ খাওয়ামু তারপর আমি নিজে খামু তবু আমার মেয়ে এই রাস্তায় আইবনা খালা। এখন তুমি যাও। আর কোনদিন আমার লগে এরকম বাজে কথা কইবানা বলে খালার মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দিল।

খালা যাওয়ার পর বিছানায় শুয়ে ফুপিয়ে ফুিয়ে অনেকক্ষন কাদল মৃত স্বামীর কথা মনে করে।

অনেকদিন পরে খুব পরিস্কার করে সময় নিয়ে স্নান করল।

নামাজ পড়ল সেই ছোটবেলার মত।

প্রভূ আমার নামাজ কবুল করে নাও। আমার শরীরটা অপবিত্র কিন্ত আমি এক মা । আমার মায়ের মন পবিত্র। মায়ের পবিত্র ভালবাসার দোহাই দিয়ে বলি আমার মেয়ের জীবন যেন আমার মতন না হয়।

কাঁদতে কাঁদতে এলোমেলোভাবে জায়নামাজে শুয়ে পড়ল। ঘুমিয়ে পড়ল একসময়।

সামাদ ঠিক সেইসময় শ্যামলীর দরজায় এসে পৌছল। বাজার থেকে সে বড় চিতল মাছের পেটি কিনেছে। সে ভাবছে নিজে রান্না করে শ্যামলীকে হাতে করে খাইয়ে দিবে।



কয়েকবার দরজা ধাক্কা দেওয়ার পর কার ও কোন সাড়া মিললনা।

কিছুক্ষন পরে ভিতর থেকে শ্যামলীর আওয়াজ পেল সে।

তাকে চলে যেতে বলছে। ওর নাকি শরীর ভালনা।

সামাদ তারপর ও চেষ্টা করল একটু দরজা খোল ।

শরীর বেশী খারাপ হলে ঔষধ কিনে দিয়ে যাব। অনুনয়ের স্বরে বলল। সে ভাল করে জানে শ্যামলীকে দেখার মত কেও নেই।

ভিতর থেকে জবাব আসল কর্কশ “আপনি ঔষধ আনবেন কেন?আপনি কি আমার জামাই লাগেন?

মনে কর আমি সেই। সামাদ মন গলানোর চেষ্টা করে।

কোন ফল না হওয়াতে অবশেষে মাছটা দরজার কাছে ফেলে চলে গেল।

কিছুক্ষন পরে বেশবাশ ঠিক করে নিজেকে গুছিয়ে শ্যামলী দরজা খুলে দিল। কোথাও সামাদকে পেলনা। তার মনটা এখন একটু ভাল হয়েছে নামাজ পড়ার কারনে। খুব যত্ন করে মাছ রান্না করে বসে রইল লোকটার জন্য।

এখন তার অনেক মন খারাপ লাগছে বেচারার জন্য।

মাছ ভাত ঢেকে সে অপেক্ষা করতে লাগল সামাদের।

সেই রাতে সামাদ আর ফিরে এলনা।

(পরবর্তীতে)।

সোর্স: http://prothom-aloblog.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.