ধ্রুব সত্য যে, গণমাধ্যম হচ্ছে গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ। এটি এমন এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের দিক নির্দেশ করে, যা কিনা স্বাধীন সমাজকাঠামোর বাহক। প্রেস ও টিভি চ্যানেল উভয় গণমাধ্যম নিশ্চিত করে যে, জনগণ হচ্ছে মনিব এবং তারা ক্ষমতা চালনা করে নেতাদের মাধ্যমে, যারা শাসন বা অপশাসন কোনোটিই করে না। এটি হচ্ছে ব্যালট বাঙ্রে পবিত্রতা, যা গণনা করা হয়। আর গণমাধ্যম হচ্ছে এর রক্ষক।
একটি পত্রিকাকে কী বলা উচিত? এটি সব সময় কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে, কারণ এমনই এর কর্মযজ্ঞের ধরনটাই এমন। কোনো কোনো স্থানে কারও কারও বিরক্তিকর ঝুঁকি মোকাবিলা করতে হয় এটিকে। সরকারি ক্ষেত্রে দেখা যায়, কোনো একটা বিষয়কে লুকিয়ে রাখার প্রবণতা থাকে এবং কোনো কর্মকর্তার ভয়ে সত্যকে প্রকাশে ভীত থাকতে হয়। ব্যাপক জনশ্রুতি রয়েছে যে, সরকারি পরিভাষা ব্যবহারে 'প্রতিধ্বনি' বেশ বিস্তৃত। তারা কারা? কে তাদের অবধায়ন করে থাকে? তারা কতটুকু সঠিক? এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায় না কখনোই।
সরকারের এমন কিছু লোক আছে, যারা উচ্চ পদপদবি দখলে রাখে বিশ্বাসের সঙ্গে যে, তারাই সর্বেসর্বা। তারা জানে যে, জাতিকে কী বলতে হবে এবং কখন। এবং তারা বিরক্তি প্রকাশ করে, যদি কোনো সংবাদ, যা তারা পছন্দ করে না তা ছাপা হয়। এ ক্ষেত্রে তাদের পথম পদক্ষেপ থাকে এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ এবং এটিকে ক্ষতিকর হিসেবে উল্লেখ করা। পরবর্তী সময়ে, যখন এটিকে বিশ্লেষণ করা হয়, তখন নিছক একটি ব্যাখ্যা দাঁড় করানো হয়, যা কিনা এতটাই খোঁড়া যে, বিষয়টি 'সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি' প্রকাশ করে না।
সম্ভবত, ওই সময়, সরকার সটকে পড়ে তার গল্পের সংস্করণ নিয়ে। কিন্তু এটি বিশ্লেষণ করা হয় না যে কর্মকর্তাদের অতিকথনের জন্য সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতা হ্রাস পায়। এমনকি সরকারের সৎ অভিযোগগুলোও এর মাধ্যমে প্রশ্নবিদ্ধ হয়। গণতন্ত্রে বিশ্বাসের আলোড়ন জনগণের প্রতিক্রিয়া। অথচ একটি রাজনৈতিক দল কী বলে আর কী করে তা সন্দেহের মধ্যেই থেকে যায়।
মুক্ত সমাজব্যবস্থায় গণমাধ্যমের একটি কর্তব্য হলো জনসাধরণকে কোনো ভয় বা আনুকূল্য ছাড়া কোনো বিষয় জানানো। বর্তমান সময়ে এটি একটি অসন্তুষ্টিকর কর্মযজ্ঞ। কিন্তু গণমাধ্যমকে এটি করতে হয় কারণ একটি মুক্ত সমাজ গঠিত হয় মুক্ত তথ্যের মাধ্যমে। যদি গণমাধ্যম শুধু সরকারের তল্পিবাহক বা সরকারি মতনির্ভর হয়ে থাকত, তবে শুধু তুচ্ছ বিষয়ে ভ্রষ্টতা, অসামর্থ্য আর ভুল নিয়েই থাকতে হতো। প্রকৃত সত্য হচ্ছে, গণমাধ্যম অত্যন্ত পরিপাটি, বেশ সুন্দর, যদিও অনেক পরিশোধিত, অনেকটা প্রস্তুত বেরিয়ে আসতে।
সরকারের বেশি কিছু জানতে চাওয়া উচিত নয়। দুর্ভগ্যজনকভাবে, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সময়ের নির্বাচনের গল্প বেশ নোংরা। যখন সংসদের অর্ধেকেরও বেশি সদস্য নির্বাচিত হন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়, এ নির্বাচন মানুষের মনে অত্যন্ত সন্দেহের সৃষ্টি করে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ দায়বদ্ধ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হওয়ার জন্য।
বাংলাদেশে অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির তত্ত্বাবধানে কেয়ার টেকার সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা ছিল।
এ অঞ্চলে বাংলাদেশ ওই সময় অত্যন্ত স্বাধীন নির্বাচনের একটি ক্ষেত্র ছিল, এমনকি ভারতকে ধরেও। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি সাংবিধানিক সংশোধনের মাধ্যমে কেয়ার টেকার বিধান বিলুপ্ত করলেন।
বাংলাদেশের সমাজ আজ এমন জায়গায় দাঁড়িয়ে যে, তারা মনে করে, নির্বাচন শুধু সুষ্ঠু হলেই হবে না, সুষ্ঠু হওয়ার মতো উপাদান দৃশ্যমান থাকতে হবে। গণমাধ্যমগুলো চালকের আসনে বসে সরকারকে নির্বাচন কেয়ার টেকার সরকারের অধীনে অনুষ্ঠানে ফিরিয়ে নিতে চাপ সৃষ্টি করতে পারে। আর তাহলেই কেবল জনগণ সার্বভৌমত্ব বজায় রেখে পূর্ণ গণতন্ত্রের স্বাদ পাবে।
ইংরেজি থেকে অনুবাদ : মুজাহিদুল হক
।অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।