২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেটে গৃহীত জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত।
সোমবার জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী বলেন, “একথা সত্য যে, বিগত তিন মাসের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে সৃষ্ট অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ২ শতাংশ অর্জন করা সম্ভব না।
“তবে তিন মাসের হরতাল-অবরোধ সত্ত্বেও দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচকসমূহের ছয় মাসের (ডিসেম্বর ২০১৩ পর্যন্ত) গতি-প্রকৃতি বিশ্লেষণ করে এ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার ৬ দশমিক ৫ শতাংশের কাছাকাছি হবে মর্মে আমরা আশাবাদী। ”
সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনা করেই তাই প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৬ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
সন্ধ্যায় চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে বাজেট বাস্তবায়নে অগ্রগতি ও আয়-ব্যয়ের গতিধারা এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ নিয়ে প্রতিবেদন উপস্থাপনের শুরুতে এতথ্য জানান অর্থমন্ত্রী।
মুহিত বলেন, “বিশেষ করে ২০১৩-১৪ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচকগুলোর অবস্থার সাথে পূর্ববর্তী অর্থবছরের একই সময়ের অবস্থার তুলনামূলক বিশ্লেষণ হতে প্রবৃদ্ধির হার ৬ দশমিক ৫ শতাংশের কাছাকাছি অর্জনের যৌক্তিকতা খুঁজে পাওয়া যাবে। ”
প্রতিবেদনে অর্থমন্ত্রী বলেন, “রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে অর্থনীতির বিভিন্ন খাত নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত হওয়ায় আমাদের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কষ্টকর হবে। ”
এর আগে বিশ্ব ব্যাংক চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি কমে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দেয়। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও (আইএমএফ) বলেছে, প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশ হতে পারে, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকেরও পূর্বাভাস ছিল।
অর্থমন্ত্রী বলেন, “তবে চলতি অর্থবছরের প্রবৃদ্ধির বিষয়ে আমি এতোটা হতাশ নই।
সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিল্প, খনিজ এবং বিদ্যুৎ খাতের উৎপাদনসূচক বেড়েছে। আউসের উৎপাদন বেড়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির কারণে সেচ মৌসুমে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত হবে বিধায় বোরোর উৎপাদন বৃদ্ধির সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। ”
ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ, কৃষি ঋণ বিতরণ, রপ্তানি এবং যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানি বেড়েছে বলে জানান তিনি।
মুহিত বলেন, “আমি আশা করি, নির্বাচনোত্তর সময়ে স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ এবং সরকার প্রদত্ত বিভিন্ন পরিপূরক সুযোগ সুবিধা বিনিয়োগকারীদের নতুন বিনিয়োগে উৎসাহিত করবে এবং ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগও প্রবৃদ্ধি অর্জনের চালিকা শক্তি হিসেবে ভূমিকা পালন করবে।
”
‘২০১৩ সাল শেষে বিশ্ব অর্থনীতির গতি তরান্বিত হয়েছে’ উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী তার প্রতিবেদনে বলেন, “আইএমএফের সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০১৪ এবং ২০১৫ সালে বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি প্রক্ষেপণ করা হয়েছে, যথাক্রমে ৩ দশমিক ৭ শতাংশ এবং ৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
মন্ত্রী জানান, যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক পুনরূদ্ধারের গতিধারা শক্তিশালী হয়েছে। ইউরো অঞ্চল মন্দাভাব কাটিয়ে প্রবৃদ্ধির ইতিবাচক গতিধারায় ফিরে আসছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও বাণিজ্য বাড়ছে।
“আমি মনে করি, বিশ্ব উৎপাদন, বিশেষ করে উন্নত দেশগুলোর প্রবৃদ্ধির গতি বৃদ্ধির সুফল নিট রপ্তানি এবং রেমিটেন্স চ্যানেলে বাংলাদেশ ভোগ করবে।
“সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনা করে আমরা ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি। ”
প্রতিবেদনের শুরুতে তিনি বলেন, “আজ দেশের ছয় মাসের অর্থনৈতিক বাস্তবতা সম্পর্কে বলতে গিয়ে বাঙালির আজীবন বিদ্রোহী কবি সুকান্তের ‘জ্বলে-পুড়ে-মরে ছারখার, তবু মাথা নোয়াবার নয়’- এ বিখ্যাত উক্তি বার বার মনে পড়ছে।
“গত বছরের সেপ্টেম্বর হতে এ বছরের জানুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত লাগাতার হরতাল-অবরোধ, জ্বালাও-পোড়াও নির্ভর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি পঙ্গু করে দেয়ার হীন পরিকল্পনা বানচাল করে দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী এ জাতি। ”
মূল্যস্ফীতি কমেছে
প্রতিবেদনে মন্ত্রী বলেন, “বিগত মাসগুলোতে হরতাল-অবরোধ বিদ্যমান থাকায় পণ্য সরবরাহ ব্যাহত হয়েছে। ফলে বাংলাদেশে খাদ্যমূল্য আশানুপাতে হ্রাস পায়নি।
তবে আমি আশা করছি, সামনের দিনগুলোতে খাদ্যপণ্যের মূল্য অনেকটাই কমবে।
“মূল্যস্ফীতির গতিধারা সহনীয় পর্যায়ে রাখতে আমরা সদা সচেষ্ট। এ বিষয়ে আমাদের যথেষ্ট সফলতা রয়েছে। পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে গত বছরের জুনে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ০৫ শতাংশ। ডিসেম্বরে তা কমে ৭ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
”
রাজস্ব আদায়
জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আদায়ের পরিমাণ দাড়িয়েছে ৫০ হাজার ৩৩৮ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১২ দশমিক ২ শতাংশ বেশি।
২০১২-১৩ অর্থবছরে ৪৪ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে।
এদিকে ছয় মাসে রপ্তানি আয় বেড়েছে ১৬ দশমিক ৬ শতাংশ। আর আমদানি বেড়েছে ১৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।