আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শ্রেনীর আবার রকম কি? লাশের সাপ্লাই আসলেই হইলোঃ সাভার, মতিঝিল, জলদস্যু আর ঢাকার জিডিপি দস্যু

ট্রুথ নট সেইড টুডে, কুড টার্ন টু আ লাই টুমোরো হালের ফেইসবুক বাজারে দুই কিসিমের এক্টিভিস্ট আছেন। একপক্ষ শুধুই সংবাদ খোজেন। যদিও সংবাদের চেয়ে গুজবের গ্রহণযোগ্যতাই বেশি। আরেক কিসিমের ঝানু এক্টিভিস্ট আছেন, যারা তত্ত্ব দেন। এই তাত্ত্বিকদের একটা অংশের পছন্দের বিশ্লেষণ পদ্ধতি কয়েকটি ঘটনার মাঝে যোগসূত্র বের করে কোন নির্দিষ্ট শ্রেনীর প্রতি অত্যাচার অবিচার হচ্ছে তা খুজে বের করা।

এতে সমাজে 'কেয়ারিং', 'সমাজসচেতন' ইত্যাদি দূর্লভ ট্যাগ লাভ করা যায়। এই কিসিমের তাত্ত্বিকরা ভুল নন পুরোপুরি। সাভারের থ্যাতলানো গার্মেন্টসকর্মী আর মতিঝিলের গুলিবিদ্ধ মাদ্রাসা ছাত্রদের একই শ্রেণী আবিস্কার করতে বেগ পেতে হয় না। ফলে তাদের হাজার লাশের সারি আর সামাজিক নিষ্পেষণ দেখায়ে সহজেই মুগ্ধতা জাগায়ে বয়ান করা যায়--সমাজের এই বিশাল অংশকে দাবায়া রাখতে পারবা না, জঙ্গি হবে, সুইসাইড বোম্বার হবে, গৃহযুদ্ধ হবে, সব শেষ করে দিবে। মুগ্ধ হতে বেশ লাগে।

কিন্তু আশাবাদী হয়ে উঠি। মনে হয় এই শ্রেণী আমাদের শহুরে সমাজকে খতম করতে পারবে না। এই নিম্নবিত্ত সর্বহারা শ্রেণী আপনার পছন্দের লাশের থ্রেশোল্ডের উপরেই লাশ সাপ্লাই দিতে থাকবে, শত চাইলে শত, হাজারে চাইলে হাজার। কারণ তারা একতাবদ্ধ নন। দেশের রাজনৈতিক ক্ষমতা যেই উপরতলার আমলা-ব্যবসায়ী-সাবেক সেনাকর্মকর্তা-সাবেক ছাত্রনেতারা একচেটিয়া দখলে রেখেছে তারা নিজেদের প্রয়োজনেই ভাড়াটে মিছিল আর আন্দোলনের জন্য এই শ্রেনীর মাঝে ফাটল জাগায়ে রাখে।

কেউ সাভারের ফাটল দেখায়া ফাকায়। কেউ আস্তিক নাস্তিকের ফাটল দেখায়া ফাকায়। এরা কখনও বলবে না নিম্নবিত্তদের রাজনৈতিক অধিকারের কথা, দেশের সম্পদে অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা। রক্ত দেয়ার বেলায় সবার সামনে সস্তা লাশগুলান, আর ক্ষমতার নেয়ার বেলায় পিছন থেকে দৌড়ে মন্ত্রীত্ব লুফে নিবেন আবুলরা। সাভারের হাজার লাশের উপরে দাড়ায়ে অনেক মায়াকান্না দেখলাম- দুই জোটের কেউ গেল না বিজিএমইএ র কান ধরতে।

যেন লাশ পড়লে কিছু অর্থভিক্ষাই রীতি। একই কথা চলে মতিঝিলের কওমী মাদ্রাসার ছেলেদের জন্য। লাশ গুনে কেউ কম হলে মজা পায়, অনেকে আবার লাশ উঠে কথা বলে উঠলে দুঃক্ষ পায়। এদের আর শ্রেনীচেতনার লড়াইয়ের খোয়াবে বলিয়ান করিয়েন না। এদের যদি কেউ জঙ্গি বানায় সেইটা আপনারই শ্রেণীস্বার্থরক্ষায় বানানো হবে।

কেউ যদি সুইসাইড বম্বিং করতে পাঠায় সেটা আপনার শত্রু মারতে আপনিই পাঠাবেন। এক্ষনে আমার মনে হয় না এই নিম্নবিত্ত শ্রেণী কি বুঝতেছে যে তারাই সবার পছন্দের লাশ। মধ্যবিত্ত-উচ্চবিত্তশ্রেণী রাজপথ ছাড়সে অনেক আগেই। মাঝে তারা একবার যে গনজাগরন বা ঢাকাজাগরন করলো তা ১ হপ্তা পর সরকারের কাছে বন্ধক দিয়ে মাসব্যাপী কার্নিভাল করে ঘোষিত সময়সূচী মোতাবেক ঘরে ফিরে গেলেন। বাংলা পরীক্ষার বাইরে আর কোন পুস্তকে তারা যাওয়ার সাহস পাইলেন না।

এহন যে মারখাওয়া শ্রেণীর জন্য আপনাদের আহা উহু দেখেন তা লাশের রাজনৈতিক পরিচয়ের সাথে জড়িত। লাশের স্বপ্নের ১৩দফার কামিয়াবির জন্য না। গার্মেন্টস কর্মীর নিরাপদ উন্নত জীবনের জন্য না। সাগরের জেলেরা ৩০-৪০জন মারা গেলেও ঝুটিওয়ালা ও গোফওয়ালা মানবাধিকারকর্মীরা পাচতারা হোটেলে সেমিনার করেন না। কারণ তারা অরাজনৈতিক।

হত্যাকারীও অরাজনৈতিক জলদস্যু। জলদস্যু লীগ বা জলদস্যু জাতীয়তাবাদী দল থাকলে তাদের ঘাড়ে দায় চাপিয়ে গনহত্যা বলার ফুসরত মিলতো। জাস্ট ইগনর দোস পুওড় পিপল। একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা যা ঘনঘন ঢাকা থেকে অনেক দূরে ঘটে। ওখানে কারওয়ান বাজারের ক্যামেরা গিয়ে জিজ্ঞাসা করে না 'আপনার অনুভূতি কি?' কি দরকার ওসব ঘেটে? বিডিয়ারের ৬হাজার জনকে জেল জুলুম আর অর্ধ শতাধিক জওয়ান সেনাবাহিনীর নির্যাতনে মারা গেলেও আমরা সেটা ইগ্নোর করবো।

কারণ পেয়ারা উচ্চবিত্ত সেনাবাহিনীর বিকৃত লাশের চেয়ে নিম্নবিত্ত বিডিয়ারের লাশ নিতান্তই সস্তা। আর সেনাবাহিনী চটিয়ে কে যাবে ক্ষমতায়? অরাজনৈতিক লাশের জন্য আখের-মার্কা শ্রেণীচেতনা আর মানবাধিকার না ফলানোই শ্রেয়। গার্মেন্টস হোক আর মাদ্রাসার হোক- লাশগুলো ততক্ষন শ্রেণী সংগ্রামী তত্ত্বের জন্য ভালো যতক্ষণ পর্যন্ত তারা নিজেদের শ্রেনীর কোন দাবি না করে যে যার মসনদে যাওয়ার ও থাকার আন্দোলন করে। যাহাতক এরা পদাতিক সৈন্যের মতো রক্ত দিয়া যাবে উপরতলার নানান স্বার্থউদ্ধারে ততদিন এদের দয়া করে বেওকুফ শ্রেণী বা নরম করে ঘুমন্ত শ্রেণীই বলেন, শ্রেণীসংগ্রামের মিথ্যা খোয়াব দেখাইয়েন না। যেদিন এরা শ্রেণীচেতনা নিয়ে ঢাকায় আইসা বলবে তোদের বিলিয়ন ডলারের সাবমেরিন, হাজার কোটির ব্যাংক লুটপাট, হাতিরঝিল, ফ্লাইওভার, সীসা লাউঞ্জের ফুটানি, ঢাকার কোটি টাকার ফ্ল্যাটে আমাদের ভাগ কই- সেদিন এই সরকারী-বিরোধীদলী সব এক হয়ে বলে উঠবে--- শালা জঙ্গি।

তখন ওদের শ্রেণীচেতনার পতাকা ফেইসবুকে বইবার লোক পাওয়া যাবে না। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৪ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.