বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতন্ত্রের দেশ ভারত, জনসংখ্যার দিক দিয়ে যেটি চীনের পরেই অবস্থান করছে। ভারতের ১৬ তম লোকসভা নির্বাচন আগামী ৭ এপ্রিল, এবারের লোকসভা নির্বাচন ৯ ধাপে অনুষ্টিত হবে, যা ভারতের ইতিহসে সবচেয়ে দীর্ঘায়িত লোকসভা নির্বাচন হতে যাচ্ছে, নির্বাচন শেষ হবে ১২ মে, আর যার ফল প্রকাশ করা হবে আগামী ১৬ মে। রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সংরক্ষিত ২টি আসন বাদে ৫৪৩ টি আসনের জন্য এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
বস্তুতপক্ষে আগামী সপ্তাহ গুলোতে সারা বিশ্বের নজর কাঁড়বে এই নির্বাচন। ইতিমধ্যেই গত বুধবার ক্ষমতাসীন কংগ্রেস তাদের নির্বচনী ইশতেহার প্রকাশ করেছে।
কংগ্রেসের নির্বাচনী ইশতেহারের মূল ট্যাগ লাইন হল "আপনার কণ্ঠ, আমাদের প্রতিশ্রুতি" তারা স্বাস্থ ও গরিবের জন্য আবাসনকে এবার বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী ও সহসভাপতি রাহুল গান্ধী স্পষ্টতই বলে দিয়েছেন তারা জনমত জরিপকে তেমন কোন পাত্তা দেবেন না কারণ ২০০৯ সালের নির্বাচনের আগেও জনমত জরিপে কংগ্রেস অনেক পিছিয়ে ছিল কিন্তু তারপরও কংগ্রেসই জয়লাভ করেছিল। দলটির দৃঢ় মনোবল ও স্পষ্টভাষাই বলে দিচ্ছে তারা কতোটা আত্মপ্রত্যয়ী।
এদিকে প্রধান বিরোধী দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ও থেমে নেই নির্বাচনী প্রচারণায়। আসছে আগামী সপ্তাহে বিজেপি তাদের নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করতে পারে, তারা সম্ভাব্য যে বিষয়টি গুরুত্ব দিবে সেটি হলো-১০০টি নতুন স্মার্ট নগর প্রতিষ্টা।
অনেকেই মনে করছে আগামী লোকসভার নির্বাচনে বিজেপিই ফেবারিট আর সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
তবে এসবের অবসান হবে আগামী ১৬ মে নির্বচনের ফল ঘোষনার মধ্যেদিয়ে। সারা বিশ্ব তো বটেই, বাংলাদেশের জন্যও এই নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ বাংলাদেশের সাথে ভারতের অনেক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ঝুলে আছে যা অনেকটাই নির্ভর করবে আগামী ভারতীয় সরকারের উপর।
এর আগে ভারতের ইরেজী দৈনিক "দ্যা টাইম্স আফ ইন্ডিয়া" একটি চমৎকার নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করে, এটি মূলত ছিল আসন্ন ইশতেহারে কি কি বিষয় গুরুত্ব পেতে পারে তার উপর এক বিশেষ ফলোআপ। যা সাংবাদিকতার ইতিহাসে এক অভূতপূর্ব ঘটনা বলেছেন অনেকেই।
ভারতে হাজারেরও বেশি দৈনিক পত্রিকা রয়েছে, যারা নিয়মিত নির্বাচনী জনমত জরিপ পরিচালনা করছেন এবং তাদের পত্রিকায় প্রকাশ করছেন, সম্ভাব্য কোন দলটি কার চেয়ে কতো এগিয়ে এই যেন এখন নিয়মিত খবরের শিরোনাম।
তবে সোনিয়া গান্ধীর জনমত জরিপকে পাত্তা না দেওয়ারও যথেষ্ট কারণ আছে, কিছুদিন আগেই বিবিসি বাংলার স্পেশাল খবরে উঠে আসে এক দারুণ খবর-ভারতীয় অনেক সংবাদ মাধ্যম অর্থের বিনিময়ে খবর ছাপছেন এবং নির্দিষ্ট দলকে ফোকাস করে তাদের ভাল-ভাল খবর এবং আগামী নির্বাচনে যে সেই দলটিই সম্ভাব্য জয়ী হতে যাচ্ছে এমন খবরও ফলাও করে প্রকাশ করছে, সবচেয়ে বড় বিষয় হলো অনেক সংবাদ মাধ্যেম বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধেও খবর ছাপছেন অর্থের বিনিময়ে।
যে কোন নির্বাচনের আগে বিভিন্ন পরিসংখান এর গুরুত্ব বেড়ে যায় অনেক বেশি। আমরা দেখেছি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় প্রায় প্রতিদিনই খ্যাতনামা সব রিচার্স প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নির্বাচনী জরিপ প্রকাশ করেছে, কোন স্টেটে রিপাবলিক কোন স্টেটে ডেমোক্রাটিক পার্টি এগিয়ে তা তদের নখদর্পণে ছিল। এ প্রসঙ্গে ব্রাডলি অ্যাফরনের একটি বিখ্যাত উক্তির কথা মনে পড়ে গেলো তিনি বলেছিলেন "Those who ignore statistics are condemned to reinvent it." জনগণের প্রকৃত মতের প্রতিফলন যদি জনমত জরিপে উঠে আসে তাহলে কংগ্রেসকে তার মূল্য অবশ্যই দিতে হবে।
যতো খারাপ আর বিরোধী খবরই ছাপা হোক না কেন, ভারতীয় কংগ্রেসকে কিছুটা হলেো মানতে হবে যে, তাদের বর্তমান অবস্থা খুব একটা ভাল না, দুনীতির কলঙ্ক এখন অনেক বড়-বড় নেতার গায়ে, ভারতীয় অর্থনীতি বর্তমানে সবচেয়ে খারপ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, তাদের জিডিপি ১০ শতাংশ থেকে নেমে এখন ৩-৪ শতাংশে ঠেকেছে। যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন, আগামী দিনের প্রধান চ্যালেঞ্জই হবে তাদের প্রবৃদ্ধি বাড়ানো।
১২৫ কোটি লোকের দেশ ভারত আর তাদের সবার অবস্থাও একরকম নয়, ভারত তার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জনগোষ্ঠীকে এখনো প্রাথমিক স্বাস্থসেবা, শিক্ষা ও আবাসনের ব্যবস্থা করতে পারে না, যেখানে লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রতিদিন পেট পুরে খেতে পারে না, নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না, যাদের আর্থসামাজিক অগ্রগতি আমাদের খেকেও সম্ভাবতো অনেক পিছিয়ে তাদের জন্য আসন্ন নির্বাচন খূবই তাৎপর্যপূর্ণ। কংগ্রেস তার নির্বাচনী ইশতেহারে যে আশার আলো জাগিয়েছে তা যেন খেটে খাওয়া সাধারণ মানেুষের জীবনে প্রশান্তির সুবাতাস বয়ে আনে এই প্রত্যাশাই রইলাম। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।