আমার টিউন টি আমার বাবার লেখা আর্টিকেল থেকে নেয়া। আশাকরি ভালো লাগবে।
‘বিশ্বাস’ শব্দটি উৎপত্তিগতভাবে ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য। এটি মানুষের একট সহজাত বৈশিষ্ট। ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে মানুষের এই বৈশিষ্টটি যেমন অতীব প্রয়োজনীয়,তেমনি ধর্মীয়অনুভুতিতেও তা অত্যান্ত জরুরী।
নানা উপায়ে মনুষের মধ্যে এই গুনটি উন্মেষ ঘটে;যেমন দীর্ঘদিনের জানাশোনায় একে অপরের মধ্যে বিশ্বাস গড়ে উঠে। আবার কখনো তাৎক্ষনিক ভাবেও বিশ্বাসের সৃষ্টি হয়,সেই বিশ্বাস তৈরী হয় চাক্ষুস প্রমাণের দ্বারা। এছাড়াও মানুষের বাহ্যিক দৃষ্টিভঙ্গি তথা অবয়ব ওপরিচ্ছদ থেকেও আকষ্মিক বিশ্বাস সৃষ্টি হতে পারে। যেভাবেই হোকনা কেন,এই বিশ্বাস যে মানুষের আত্মিক,সামাজিক ও ধর্মীয় জীবনে ওতপ্রোতভাবে জড়িত তাতে কোন সন্দেহ নেই। দীর্ঘদিনের জানাশোনায় মানুষের মধ্যে যখন সখ্যতা গড়ে উঠে তখন তা থেকে সৃষ্টি হয় বিশ্বাস।
আমাদের দৃষ্টির সীমানায় যাকিছু আছে তা আমরা দেখেই বিশ্বাস করি, যা চাক্ষুস প্রমাণ থেকে সৃষ্ট। আবার কোন বিশ্বস্থ মানুষের কাছ থেকে কোন কিছু শুনেও আমরা অনেক ক্ষেত্রে বিশ্বাস করে থাকি। এ ক্ষেত্রে চাক্ষুস প্রমানের প্রয়োজন হয়না, আমরা মধ্যস্বত্তার উপর আমাদের বিশ্বাসকে মেনে নেই। আবার কখনো কখনো একজন লেবাসধারী লোকের কথা তাৎক্ষণিক বিশ্বাস করি এই ভেবে যে তিনি মিথ্যে বলতে পারেননা। আবার কোন কোন বিষয় আছে যা আমরা শুণে বিচার বিশ্লেষন না করেও বিশ্বাস করি তার সম্ভাবতা চিন্তাকরে।
নানাভাবে সৃষ্ট এই বিশ্বাস বোধটি আমাদের চিত্তে স্থান করে নেয় কতগুলি বিশেষ বৈশিষ্টের দ্বারা, তা হল চাক্ষুস প্রমান, মধ্যস্বত্বার বিশ্বস্ততা, ঘটনার সম্ভাবতা। আরেক ধরনের বিশ্বাস রয়েছে তা হল ধর্মানুভূতি। এই অনুভূতিতে উপরের বৈ্শিষ্টগুলো উপস্থিতি থাকার কোন বধ্যবাদকতা নেই; সাধারনতঃ মানুষ তা অধিকার করে জন্মগতভাবে। আজকের বিজ্ঞানও পরোক্ষভাবে স্বীকার করে নিচ্ছে যে, মানুষের মস্তিস্কে সৃষ্টিগতভাবেই এ অনুভূতি স্থানান্তরিত হয়। অভ্যাস ও অধ্যবসায় দ্বারা তার গভীরতা কমবেশী করা যায়।
‘মস্তিস্কে বিধাতার অবস্থান’ প্রবন্ধে এ বিষয়ে আমরা সমান্য আলোচনা করেছি। এই ধর্মানুভুতি সম্পূর্ণই নির্ভর করে বিশ্বাসের উপর। এর চাক্ষুস কোন প্রমান নেই।
এখন প্রশ্ন হল এই বিশ্বাসের ভিত কতটা শক্ত?যদি বলা হয় এই বিশ্বাসের ভিত খুব শক্ত! তবে প্রশ্ন চলে আসে,‘মানুষ কেন ধর্মান্তরিত হয়?যৌক্তিক কারণে বলতেই হয় যে,তার পুরানো বিশ্বাসের ভিত প্রকৃতপক্ষে শক্তিশালী ছিলনা;কারণ জন্মগতভাবে প্রাপ্ত ধারনার চেয়ে কোন শক্তিশালী ধারনা যদি তার চিত্তকে নাড়া দেয় তখন সে আপন মনেই তার বিশ্বাসকে পাল্টায়। এক্ষেত্রে তার পুরোনো ধারনাকে ঠিক রাখতে হলে তার সামনে চাই কিছু চাক্ষুস প্রমান,না হলে অন্তত পক্ষে পরোক্ষ প্রমানের শক্তিশালী যুক্তি।
হয়তো সে কারণেই আদী মানুষটি তার সূর্যের মত শক্তিশালী দেবতাকে ছেড়ে কোন অশরিরী আত্মাকে প্রণাম নিবেদন করেছিল। কালক্রমে বিবর্তন সেরকমই আবাস দেয়। মানুষের বুদ্ধির ক্রমবিকাশের সাথে সাথে সৃষ্টি হয়েছে নানা ধর্মমত;এক একটি ধারনা চলেছে দীর্ঘদিন। এভাবেই পাল্টাতে পাল্টাতে প্রায় ১৪০০ বছর আগে আসে এক নতুন ধারনা। দাবী করা হল এক উম্মী নবীর কাছে অবতীর্ণ হয়েছে এক মহাসত্য বাণীবদ্ধ পবিত্র কোরআন।
দাবী করলেইতো মানুষের কাছে সবকিছু গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেনা! তারজন্যে চাই গ্রহনযোগ্য ও যৌক্তিক উপস্থাপনা। সবই হল; মূল্যবান কথায় ভাবগাম্ভীর্যে পূর্ণ এক মহাগ্রন্থ মানুষের সামনে তুলে ধরা হল। অনেকেই তার উপর বিশ্বাস স্থাপন করলেন, অনেকে ভাবলেন এটি যে স্রষ্টার বাণী তার কি প্রমাণ রয়েছে। পবিত্র কোরআনের অলৌকিতার দাবীদাররা তখন হতাশ হয়ে পড়লেন। দীর্ঘ দিন ধরে গবেষণা চলতে থাকলো কিন্তু কোন সুরাহা করা গেলনা।
বিশ্বাসের পথ ধরেই চলতে থাকলো পবিত্র কোরআনের অগ্রযাত্রা। কালের বিবর্তনে অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে পবিত্র কোরআন সংগ্রহ করলো অসংখ্য অনুসারী। দিন দিন বিশ্বাসের ভিত শক্ত হতে থাকলে। পাশাপাশি বিজ্ঞান তার কৈাশোর পেরিয়ে যুবাবয়সে এসে নানা আবিস্কারের সূচনা করতে লাগলো। বিজ্ঞানের একএকটা আবিস্কারের পাশাপাশি কোরআন অনুসারীরা চমকে চমকে উঠে বলতে লাগল,‘এইতো! বিশয়টি পবিত্র কোরআনের পাতায় কালির অক্ষরে ছাপা রয়েছে।
পবিত্র কোরআন অনুশারীদের মুখ কাঁচা আলোয় রাঙা হয়ে উঠতে লাগলো। সম্ভাব্যতার যাচাইয়ে বিশ্বাসের সেই ছোট্ট চারাগাছটি মহীরুহে রূপন্তরিত হতে লাগলো। কিন্তু কোন অলৌকিকতার প্রমাণ মিলানো গেলনা। মহান গবেষকরা হাল ছেড়ে দিলেননা। পথ চলতে চলতে একদিন হঠাৎ আলোর রেখা দেখাদিল।
পবিত্র কোরআনের সেই আয়াতটি চোখের সামনে এসে ইশারায় বললো,‘আমাকে চোখে পড়েনা!’ ঘোর কেটে গেল; ধীরে ধীরে আলোর উজ্জ্বলতা বেড়ে চাখে পড়লো ‘১৯’।
সূরা আল মুদ্দাসসির এর্ ৩০-৩১ আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন,
عَلَيْهَا تِسْعَةَ عَشَرَ
৭৪:৩০ এর উপর নিয়োজিত আছে উনিশ (ফেরেশতা)।
وَمَا جَعَلْنَا أَصْحَابَ النَّارِ إِلَّا مَلَائِكَةً وَمَا جَعَلْنَا عِدَّتَهُمْ إِلَّا فِتْنَةً لِّلَّذِينَ كَفَرُوا لِيَسْتَيْقِنَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ وَيَزْدَادَ الَّذِينَ آمَنُوا إِيمَانًا وَلَا يَرْتَابَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ وَالْمُؤْمِنُونَ وَلِيَقُولَ الَّذِينَ فِي قُلُوبِهِم مَّرَضٌ وَالْكَافِرُونَ مَاذَا أَرَادَ اللَّهُ بِهَذَا مَثَلًا كَذَلِكَ يُضِلُّ اللَّهُ مَن يَشَاء وَيَهْدِي مَن يَشَاء وَمَا يَعْلَمُ جُنُودَ رَبِّكَ إِلَّا هُوَ وَمَا هِيَ إِلَّا ذِكْرَى لِلْبَشَر
৭৪:৩১ আমি জাহান্নামের তত্ত্বাবধায়ক ফেরেশতাই রেখেছি। আমি কাফেরদেরকে পরীক্ষা করার জন্যেই তার এই সংখ্যা করেছি- যাতে কিতাবীরা দৃঢ়বিশ্বাসী হয়, মুমিনদের ঈমান বৃদ্ধি পায় এবং কিতাবীরা ও মুমিনগণ সন্দেহ পোষণ না করে এবং যাতে যাদের অন্তরে রোগ আছে, তারা এবং কাফেররা বলে যে, আল্লাহ এর দ্বারা কি বোঝাতে চেয়েছেন। এমনিভাবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচ্ছা সৎপথে চালান।
আপনার পালনকর্তার বাহিনী সম্পর্কে একমাত্র তিনিই জানেন এটা তো মানুষের জন্যে উপদেশ বৈ নয়।
সকলেই উঠে পরে লাগলেন এই আয়াত দু’টির ব্যাখ্যা বিশ্লেষনে। বেড়িয়ে এল নানা তথ্য। দেখা গেল পবিত্র কোরআনে অক্ষর,শব্দ, আয়াত,সূরা সবই যেন কোন না কোন উপায়ে ১৯ এর সাথে সম্পৃক্ত। খুলে গেল বদ্ধ দুয়ার, সেই খোলাপথে মানুষের দৃষ্টি চলে গেল অনেক দূর।
দেখা গেল পবিত্র কোরআন ১৯ এর কাঠামোয় এক রূদ্ধ দূর্গ। বাইরে থেকে যার অন্তস্থল দেখা যায়,বুঝা যায়,কিন্ত তাকে কলুষিত করার জন্যে প্রবেশ করা যায়না। দিনে দিনে ১৯ হয়ে উঠলো পবিত্র কোরআনের রক্ষা কবচ। যার অলৌকিকতার ছটায় বক্র দৃষ্টিতে পবিত্র কোরআনের দিকে তাকানো যায়না। তাকাতে হয় বিনম্র দৃষ্টিতে অনুগত হয়ে।
বলা হল, ১৯ পবিত্র কোরআনের গাণিতিক কোড,যা দিয়ে লিখা হয়েছে পবিত্র কোরআনের সফটওয়ার,যার দৃশ্য রূপ হল কাল হরফের আরবী লেখা। আর এই গাণিতিক কাঠামোই হল পবিত্র কোরআনের প্রামানিক দলিল। কথাটি ব্যাখ্যা করে বুঝাবার আর কোন প্রয়োজন থাকেনা এজেন্যে য, মহান আল্লাহ ৭৪:৩০ নং আয়াতে ১৯ এর সংবাদ দিয়ে ৭৪:৩১ এ বলছেন,এই সংখ্য তিঁনি করেছেন এজন্যে যে,‘যাতে কিতাবীরা দৃঢ়বিশ্বাসী হয়, মুমিনদের ঈমান বৃদ্ধি পায় এবং কিতাবীরা ও মুমিনগণ সন্দেহ পোষণ না করে’।
দিনে দিনে ১৯ এর অনেক সমন্বয় বেড়িয়ে এল,এগিয়ে চলল কোরআন গবেষনা, উন্মুক্ত বাতায়ন পথে দেখাগেল,পেবিত্র কোরআন শুধু ১৯ এর কাছেই বাধা নয়,রয়েছে ৭ সংখ্যার বিস্ময়কর কাঠামো,রয়েছে ১১ এর সমন্বয়,আরও কত সংখ্যার হিসেব!গবেষকদের অন্তর শুধু বলতেই লাগলো‘ছোবহান আল্লাহ’। বার বার মনে পড়তে লাগলো পাগল বৃদ্ধ বৈজ্ঞানিক গ্যালিলিওর সেই ভিখ্যাত উক্তি ‘অঙ্ক হল সেই ভাষা,যে ভাষায় স্রষ্টা মহাবিশ্বকে লিখেছিলেন’।
বিশ্বাসীগণ অবাক বিষ্ময়ে তাকিয়ে রইলেন,বললেন এ কোন রহস্য!কেউ কেউ ক্ষোভে দুঃখে বলতে লাগলেন,আমারা কি বিশ্বাস করিনা,আমাদের বিশ্বাস কি যথেষ্ট নয়,যে প্রমাণের প্রয়োজন আছে?কোরআন শরীফে সংখ্যার আবার হিসেব কি?’
সুধী পাঠক, আমি অধমও অনেক সূধী জন ও পবিত্র কোরআনের মহামান্য ধারক-বাহকদের সাথে কথা বলে দেখেছি, একই প্রশ্নের সমুখীন হয়েছি। প্রকৃতই জটীল প্রশ্ন! অন্তরের পবিত্র বিশ্বাসইতো স্রষ্টার স্বীকৃতি। আর এই বিশ্বাসের জন্যে প্রমাণের যদি আবশ্রকতাই থাকে তবে আর সম্পর্কটি রইল কোথায়। তা হল এইযে,প্রমাণ আমাকে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য করলো। স্রষ্টাকে বিশ্বাসের মধ্যে থাকবে ভালবাসা;যেখানে ভালোবাসা থাকে সেখানে প্রমাণ মূখ্য নয়।
আমারা আমাদের বাবা-মা,স্ত্রী-সন্তান, বন্ধু-বান্দবদের ভালবাসি, সেখানেতো কোন প্রমাণের প্রয়োজন হয়না।
সূধী পাঠক, উপরের কথাটি নীরেট সত্য, তবে একটা বিষয় লক্ষ্যনীয় যে,আমাদের আপনজনদের উপস্থিতি সেই ভালোবাসার প্রতি বিশ্বস্ততা তৈরী করে, কিন্তু যেখানে একটা কাল্পনিক অস্তিত্ব ভালোবাসার কেন্দ্রবিন্দু হয় তখন চিত্ততলে একটা টলটলায়মান সন্দেহের ছায়া উন্মোচিত হয়,যা নানা প্ররোচণায় স্থিরতা পাওয়ার চেষ্টা করে। আর সেই কারণেই প্রমান এ ক্ষেত্রে মহৌষধীর মত কাজ করে। মহান আল্লাহ নিজেও আমাদের বিশ্বাসের উপড় গভীর শ্রদ্ধা রেখে ৭৪:৩১ আয়াতে বলেছেন,‘মুমিনদের ঈমান বৃদ্ধি পায়’। তার পরেও যদি বিশ্বাসীদের সেই আবেগময় প্রশ্নটি উত্থাপিত হয় (আমাদের বিশ্বাস কি যথেষ্ট নয়,যে প্রমাণের প্রয়োজন আছে?)তবে তারও একটা আবেগময় জবাব রয়েছে!
আমরা জানি, আল্লাহর নবী হয়রত মূসা আলাইহে সাল্লাম,হাতের লাঠিকে সাপ বানিয়ে আল্লাহর নিদর্শন দেখিয়েছিলেন, হয়রত ঈসা আলাইহেস সাল্লাম অন্ধকে দৃষ্টি দিয়েছিলেন,মৃতকে জীবিত করেছিলেন,আমাদের নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) আরববাসীদের চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত করে দেকিয়েছিল।
মূসা(আঃ)আল্লাহর দীদার লাভে তুর পাহার ভষ্ম হয়ে গিয়েছিল,হযরত ইব্রাহীম (আঃ);আল্লাহর নিদর্শন দেখতে চেয়েছিলেন; সূরা আল বাক্কারা’র ২৬০ নং আয়াতে বলা হয়েছে,
وَإِذْ قَالَ إِبْرَاهِيمُ رَبِّ أَرِنِي كَيْفَ تُحْيِـي الْمَوْتَى قَالَ أَوَلَمْ تُؤْمِن قَالَ بَلَى وَلَـكِن لِّيَطْمَئِنَّ قَلْبِي قَالَ فَخُذْ أَرْبَعَةً مِّنَ الطَّيْرِ فَصُرْهُنَّ إِلَيْكَ ثُمَّ اجْعَلْ عَلَى كُلِّ جَبَلٍ مِّنْهُنَّ جُزْءًا ثُمَّ ادْعُهُنَّ يَأْتِينَكَ سَعْيًا وَاعْلَمْ أَنَّ اللّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ
২:২৬০ আর স্মরণ কর, যখন ইব্রাহীম বলল, হে আমার পালনকর্তা আমাকে দেখাও, কেমন করে তুমি মৃতকে জীবিত করবে। বললেন; তুমি কি বিশ্বাস কর না? বলল, অবশ্যই বিশ্বাস করি, কিন্তু দেখতে এজন্যে চাইছি যাতে অন্তরে প্রশান্তি লাভ করতে পারি। বললেন, তাহলে চারটি পাখী ধরে নাও। পরে সেগুলোকে নিজের পোষ মানিয়ে নাও, অতঃপর সেগুলোর দেহের একেকটি অংশ বিভিন্ন পাহাড়ের উপর রেখে দাও। তারপর সেগুলোকে ডাক; তোমার নিকট দৌড়ে চলে আসবে।
আর জেনে রাখো, নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী, অতি জ্ঞান সম্পন্ন।
পরিশেষে স্মরন করুণ আমাদের নবীজি হয়রত মোহাম্মদ (সাঃ) এর মে’রাজের কথা। কেন এসব ঘটেছিল?
সূধী পাঠক, আমাদের বিশ্বাস কি এ্তটাই বেশী যে, আল্লাহর নবীদেরকেও ছাড়িয়ে গেছে? একবার লক্ষ্য করুণ ২:২৬০ আয়াতটি,নবী ইব্রহীম (আঃ)পরিস্কার ভাবেই বলছেন,‘কিন্তু দেখতে এজন্যে চাইছি যাতে অন্তরে প্রশান্তি লাভ করতে পারি’। এর পরেও কি বলবেন আমাদের বিশ্বাসই যথেষ্ট,নিদর্শণ বা প্রমানের দরকার নেই। লক্ষ্য করুন নীচের আয়াতগুলো-
আপনি বলে দিন, আমি তো কেবল একজন ভীতি প্রদর্শনকারী।
وَقُلِ الْحَمْدُ لِلَّهِ سَيُرِيكُمْ آيَاتِهِ فَتَعْرِفُونَهَا وَمَا رَبُّكَ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُونَ
27:93 এবং আরও বলুন, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর। সত্বরই তিনি তাঁর নিদর্শনসমূহ তোমাদেরকে দেখাবেন। তখন তোমরা তা চিনতে পারবে। এবং তোমরা যা কর, সে সম্পর্কে আপনার পালনকর্তা গাফেল নন।
মহান আল্লাহ্ সূরা ইউনুছ এর ২০ নং আয়াতে বলছেন,
وَيَقُولُونَ لَوْلاَ أُنزِلَ عَلَيْهِ آيَةٌ مِّن رَّبِّهِ فَقُلْ إِنَّمَا الْغَيْبُ لِلّهِ فَانْتَظِرُواْ إِنِّي مَعَكُم مِّنَ الْمُنتَظِرِينَ
১০:২০ বস্তুতঃ তারা বলে, তাঁর কাছে তাঁর পরওয়ারদেগারের পক্ষ থেকে কোন নির্দেশ এল না কেন? বলে দাও গায়েবের কথা আল্লাহই জানেন।
আমি ও তোমাদের সাথে অপেক্ষায় রইলাম।
সূরা আল আনআম আয়াত 109-111
وَأَقْسَمُواْ بِاللّهِ جَهْدَ أَيْمَانِهِمْ لَئِن جَاءتْهُمْ آيَةٌ لَّيُؤْمِنُنَّ بِهَا قُلْ إِنَّمَا الآيَاتُ عِندَ اللّهِ وَمَا يُشْعِرُكُمْ أَنَّهَا إِذَا جَاءتْ لاَ يُؤْمِنُونَ
৬:১০৯ তারা জোর দিয়ে আল্লাহর কসম খায় যে, যদি তাদের কাছে কোন নিদর্শন আসে, তবে অবশ্যই তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে। আপনি বলে দিনঃ নিদর্শনাবলী তো আল্লাহর কাছেই আছে। হে মুসলমানগণ, তোমাদেরকে কে বলল যে, যখন তাদের কাছে নিদর্শনাবলী আসবে, তখন তারা বিশ্বাস স্থাপন করবেই ?
وَنُقَلِّبُ أَفْئِدَتَهُمْ وَأَبْصَارَهُمْ كَمَا لَمْ يُؤْمِنُواْ بِهِ أَوَّلَ مَرَّةٍ وَنَذَرُهُمْ فِي طُغْيَانِهِمْ يَعْمَهُونَ
৬:১১০ আমি ঘুরিয়ে দিব তাদের অন্তর ও দৃষ্টিকে, যেমন-তারা এর প্রতি প্রথমবার বিশ্বাস স্থাপন করেনি এবং আমি তাদেরকে তাদের অবাধ্যতায় ত্যাগ করব ও তারা উদভ্রান্তের মত ঘুরবে।
৬:১১১ আমি যদি তাদের কাছে ফেরেশতাদেরকে অবতারণ করতাম এবং তাদের সাথে মৃতরা কথাবার্তা বলত এবং আমি সব বস্তুকে তাদের সামনে জীবিত করে দিতাম, তথাপি তারা কখনও বিশ্বাস স্থাপনকারী নয়; কিন্তু যদি আল্লাহ চান।
কিন্তু তাদের অধিকাংশই মুর্খ।
মহান আল্লাহ সূরা আল আনকাবুত এর ৫০-৫১ আয়াতে বলছেন,
وَقَالُوا لَوْلَا أُنزِلَ عَلَيْهِ آيَاتٌ مِّن رَّبِّهِ قُلْ إِنَّمَا الْآيَاتُ عِندَ اللَّهِ وَإِنَّمَا أَنَا نَذِيرٌ مُّبِينٌ
29:50 তারা বলে, তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে তার প্রতি কিছু নিদর্শন অবতীর্ণ হল না কেন? বলুন, নিদর্শন তো আল্লাহর ইচ্ছাধীন। আমি তো একজন সুস্পষ্ট সতর্ককারী মাত্র।
أَوَلَمْ يَكْفِهِمْ أَنَّا أَنزَلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ يُتْلَى عَلَيْهِمْ إِنَّ فِي ذَلِكَ لَرَحْمَةً وَذِكْرَى لِقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ
29:51 এটাকি তাদের জন্যে যথেষ্ট নয় যে, আমি আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছি, যা তাদের কাছে পাঠ করা হয়। এতে অবশ্যই বিশ্বাসী লোকদের জন্যে রহমত ও উপদেশ আছে।
এখন প্রশ্ন হল সেই নিদর্শন কি আমাদের এই গাণিতিক কাঠামো বা সংখ্যার অবস্থান?
সূধী পাঠক,ভাষা সাহিত্যে ‘স্থান কাল পাত্র’ বলে একটা শব্দগুচ্ছ প্রায়শ্চঃ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সেই বিবেচনায় আমাদেরকেও তৎকালীণ মানুষের চিন্তা চেতনা ও সামাজিক অবস্থানের কথা ভাবতে হবে, ভাবতে হবে তদের কাছে আল্লাহর প্রেরিত পুরুষদের অবস্থানের কথা,ভাবতে হবে ধর্মীয় চিন্তাচেতনার পরিপক্কতার কথা। কালের বহু বিবর্তনে আজকের মানুষের সেই অবস্থান অনেকটাই উন্নীত হয়েছে,দূরদৃষ্টির প্রখরতা বেরেছে। তাছাড়াও নবী রসুলদের আগমন গেছে বন্দ হয়ে। ফলে চাক্ষুষ নিদর্শণ দেখার আর সুযোগ রইল কোথায়? সম্ভবত মহান আল্লাহ আজকের এই পরিপক্ক মস্তিস্কের মানুষের জন্যেই কোরআনের বাণীবদ্ধ নিদর্শণ গুলো এতদিন ধরে মানুষেরই জ্ঞানদৃষ্টির আড়াল করে রেখেছিলেন।
যখন তা উন্মুক্ত হল তখন তাকে আর অস্বীকার করার পথ রইলনা। এই গাণিতিক কাঠামো আজ কোরআনের অলৌকিকতার প্রথম ধাপ হয়ে আমাদেরকে সামনে এগিয়ে যাবার পথ দেখাচ্ছে।
সূরা হা-মীম, আয়াত ৩৭;
وَمِنْ آيَاتِهِ اللَّيْلُ وَالنَّهَارُ وَالشَّمْسُ وَالْقَمَرُ لَا تَسْجُدُوا لِلشَّمْسِ وَلَا لِلْقَمَرِ وَاسْجُدُوا لِلَّهِ الَّذِي خَلَقَهُنَّ إِن كُنتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُونَ
৪১:৩৭ তাঁর নিদর্শনসমূহের মধ্যে রয়েছে দিবস, রজনী, সূর্য ও চন্দ্র। তোমরা সূর্যকে সেজদা করো না, চন্দ্রকেও না; আল্লাহকে সেজদা কর, যিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন, যদি তোমরা নিষ্ঠার সাথে শুধুমাত্র তাঁরই এবাদত কর।
দেখুন মহান আল্লাহর আরেকটি বিষ্ময়কর আয়াত,সূরা আল জিন আয়াত ২৮ এ মহান আল্লাহ বলছেন,
لِيَعْلَمَ أَن قَدْ أَبْلَغُوا رِسَالَاتِ رَبِّهِمْ وَأَحَاطَ بِمَا لَدَيْهِمْ وَأَحْصَى كُلَّ شَيْءٍ عَدَدًا
৭২:২৮ যাতে আল্লাহ তা’আলা জেনে নেন যে, রসূলগণ তাঁদের পালনকর্তার পয়গাম পৌছিয়েছেন কি না।
রসূলগণের কাছে যা আছে, তা তাঁর জ্ঞান-গোচর। তিনি সবকিছুর সংখ্যার হিসাব রাখেন।
এখানে আয়াতের শেষ শব্দটি হল ‘আদাদা’ عَدَدًا, যার অর্থ সব কিছু গুণে রেখেছেন; অর্থাত সবকিছু সংখ্যায় হিসাব করা। আমরা কি করে স্বীকার করবো যে,মহান আল্লার কাছে সংখ্যার কোন মূল্য নেই।
সূধী পাঠক,পবিত্র কোরআন বিভিন্ন সংখ্যার গাণিতিক সমন্বয়ে সমন্বিত হয়ে আছে।
এই গাণিতিক সমন্বয়কে উণ্মোচিত করে মহান আল্লাহ তাঁর পবিত্র গ্রন্থের অলৌকিকতাকেই আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন;আর এটিই হল আজকের যুগে মহা প্রভুর বিশেষ নিদর্শন। আমরা এই নিদর্শন অবলোকন করে আমরা আমাদের বিশ্বাসকে দৃঢ় করতে পারি।
তারপরেও কিছু অনুরাগী মানুষ আবেগের আতিসয্যে বলে থাকে, ‘আমাদের বিশ্বাসই আমাদেরকে সঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে। কোন প্রমানের প্রয়োজন নেই, সংখ্যার কোন হিসব দিয়ে আমাদের বিশ্বাসকে গাঢ়করার প্রয়োজন নেই। ’
অত্যান্ত শ্রদ্ধাভরে বলতেচাই,বিশ্বাসই আমদেরকে মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুযোগ করে দেবে; এটিই একমাত্র পথ, আর এই বিশ্বাসকে পুঁজি করেই আমাদের ধর্মমত এগিয়ে চলে।
একটা বিষয় আজ অবদি বৈজ্ঞানীক ভাবে প্রমানিত না হলেও আমাদের সামাজিক জীবন ও ধর্মীয় জীবনে অদৃশ্যভাবেই অনুমেয় যে,শয়তান আমাদেরকে নানাভাবে বিচ্যুত করার চেষ্ট করে ও অবশেষে বিচ্যুত করে। শয়তানের ধোকা থেকে নিজের আত্মাকে রক্ষা করতে হলে চাই আমাদের মনে দৃঢ় বিশ্বাস। আর এই বিশ্বাস যদি কোন প্রমানের দ্বারা স্বীকৃত হয় তবে তা এতটাই মজবুত হয় যে,ধোকার সম্মুখীন হলেই সেই প্রমাণ বা নিদর্শন এসে আমাদের চোখের সামনে প্রতীরক্ষা বেষ্ঠনী হয়ে দাঁড়ায়। তাই এই প্রমানগুলোকে আমাদের খুঁজে নেওয়া দরকার। যা চোখের সামনে জ্বল জ্বল মহান স্রষ্টার বাণীগুলোকে অলৌকিকতার মর্যাদা দেবে।
সূধী পাঠক,পবিত্র কোরআনের গাণিতিক সমন্বয় সম্পর্কে যৎসামান্য ধারণার লক্ষ্যে আমরা ‘পবিত্র কোরআনের গাণিতিক সমন্বয়’ গ্রন্থের প্রথম পর্বটি উন্মুক্ত করে দিলাম,মহান আল্লাহ যদি আমাদেরকে সুযোগ দান করেন তবে পরবর্তীতে এ বিষয়কে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চেষ্টা করবো। এজন্যে আপনাদের দোওয়া কাম্য। পরিশেষে পবিত্র কোরআনের একটি আয়াত উদ্ধৃত করলাম;
সূরা আয যুমার এর ১৮ নং আয়াত,
الَّذِينَ يَسْتَمِعُونَ الْقَوْلَ فَيَتَّبِعُونَ أَحْسَنَهُ أُوْلَئِكَ الَّذِينَ هَدَاهُمُ اللَّهُ وَأُوْلَئِكَ هُمْ أُوْلُوا الْأَلْبَابِ
৩৯:১৮ যারা মনোনিবেশ সহকারে কথা শুনে, অতঃপর যা উত্তম, তার অনুসরণ করে। তাদেরকেই আল্লাহ সৎপথ প্রদর্শন করেন এবং তারাই বুদ্ধিমান।
চাইলেআমারবাবারব্লগটিঘুরেআসতেপারেন।
http://sciencewithquran.wordpress.com
আমিফেসবুকএ ,
https:www.facebook.com/hridoy.khandakar1
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।