আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যেখানে বহুবার হারিয়েছিলাম আমার ভোক্তা স্বাধীনতা!

কদিন ধরেই ভাবছিলাম আমার লেখার বিষয়বস্তুর বাস্তব-ঘনিষ্টতা সম্পর্কে! কতটুকু বাস্তবতা ধারণ করে আমার কলমের নগণ্য নির্যাস? কেন লিখি? এসব লেখায় কার কী উপকার হয়?
উত্তর জানা নেই আমার! স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে নিবন্ধ লিখতে লিখতে মনে হয়েছে বারবার নিজেই এখনও বুঝিনি স্বাধীনতার মানে!

মোটাদাগে আমার ভেতর দুটো আমির বসবাস। একজন লেখক আমি, অন্যজন বাস্তব আমিলেখক আমির সাথে বাস্তবের আমির দ্বন্দ্ব চলে অবিরাম। অহেতুক দ্বন্দ্বের অবিরাম আঘাতে বিপর্যস্ত বাস্তবের আমির নানা ঝামেলা। এসব ঝামেলা পোহাতে হয় না লেখক আমিকে।

বাস্তবের আমিকে কষ্ট করতে হয় প্রতিদিন। সকালে উঠে কর্মক্ষেত্রে যেতে হয়, বাজার করতে হয়, বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা গ্রহণের মূল্য প্রদান করতে হয় কড়ায়-গণ্ডায়। ক্রেতা হিসেবে অবিরাম প্রবঞ্চিত হতে হয়, নামমাত্র দামে বিকিয়ে দিতে হয় একটু ভালোভাবে বাঁচতে চাওয়ার স্বাধীনতা।

২৬ মার্চ। আমাদের মহান স্বাধীনতা দিবসের পরদিন অর্থাৎ ২৭ মার্চ।

আমার বাস্তব আমির দুধ দরকার। সিদ্ধান্ত নিলাম দুধ নিবো প্রসিদ্ধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আড়ংয়ের। সিদ্ধান্ত নেবার পর দোকান নির্বাচনের পালা। দোকান নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমার সিদ্ধান্তের পাল্লাটিও প্রসিদ্ধ দোকানের দিকেই ঝুলে পড়ল। আড়ং দুধ কেনার জন্য প্রসিদ্ধ দোকান মীনাবাজারকেই বেছে নিলাম আমি।

কারণ ক্রেতা কিংবা ভোক্তা হিসেবে ছোট ছোট দোকানে ছোট ছোট প্রতারণার শিকার হতে হয়েছে আমাকে বহুবার। প্রসিদ্ধ দোকানে অন্তত প্রতারণার সুযোগ নেই! ভোক্তার স্বাধীনতা আশাকরি অবাধ সেখানে!
আমার বাসার কাছে মীনাবাজারের ওয়ারী শাখা। ১৯/১, লারমিনি স্ট্রীটে অবস্থিত এই সুদৃশ্য দোকানটির ঝকঝকে চকচকে অবয়বেই প্রশান্তির প্রতিভাস!
ভেতরে প্রবেশ করলাম আমি। কী মনোরম, কী ভদ্রোচিত মীনাবাজরের কর্মচারীদের ব্যবহার!
শরীফ নামের একজন কেতাদুস্তর কর্মচারীর নির্দেশে আমাকে ১ লিটার পরিমানের দুটি আড়ং দুধের প্যাকেট সুন্দরভাবে ব্যাগে গুছিয়ে ১২৪ টাকা বিলসহ (মেমো নম্বর: ওঘঠ॥৫৮৫৭৮॥চঙঝ৩২১৫১১) প্রদান করলেন মীনাবাজারের অন্য একজন কর্মচারী।
কৃতার্থমনে আমি ফিরে এলাম বাসায়।

দুধের প্যাকেট দুটোর মধ্যে একটি খুললাম প্রথমে। বিড়ম্বিত হলাম! প্যাকেটের ভেতর সংরক্ষিত দুধ পুরোপুরি নষ্ট! মন খারাপ হলো!
মুখ কালো করে দ্বিতীয় প্যাকেটটি খুললাম এবার! বিচলিত হলাম! দূর্ভাগ্যবশত এই প্যাকেটে সংরক্ষিত দুধও নষ্ট পুরোপুরি!
আমি বিষয়টি নিয়ে বিড়ম্বিত এবং বিচলিত হলেও বাকরুদ্ধ হলাম না। কারণ, দুধ পচনশীল দ্রব্য! উত্তম পদ্ধতিতে প্রক্রিয়াজাত হলেও এমন ভীষণ গরমে এ ধরনের ঘটনা ঘটা অস্বাভাবিক কিছুই নয়। আমি বিষয়টির প্রতি মীনাবাজারের দৃষ্টি আকর্ষণ এবং পরবর্তী করণীয় জানতে আবার পা রাখলাম প্রসিদ্ধ দোকানটিতে। শরীফ সাহেবকে অবহিত করলাম বিষয়টি।

তিনি বিষয়টি সম্পর্কে সম্পূর্ণ শীতল মনোভাব প্রকাশ করলেন। জানালেন, এই ঘটনায় কিছুই করণীয় নেই তাঁদের।
কিন্তু আমি ‘করণীয় নেই’ শব্দদুটির পরিষ্কার ব্যাখ্যা চাইলাম।
শরীফ সাহেব আমাকে জানালেন, বিক্রিত পণ্যের পরিবর্তে অর্থ ফেরতের কোন বিধান নেই মীনাবাজারে। আমি স্পষ্টভাষায় বললাম, আমি অর্থ ফেরত চাইছি না।

আমি যেহেতু নষ্ট পণ্যের জন্য অর্থ প্রদান করিনি, তাই নষ্ট পণ্যের পরিবর্তে সঠিক গুণমানসম্পন্ন পণ্য প্রদানের অনুরোধ জ্ঞাপন করছি।
আমার বোধগম্যতার জগতটি অস্বচ্ছ মনে হলো শরীফ সাহেবের কাছে। তিনি আমাকে নিয়ে গেলেন দোকনের উচ্চপদস্থ কতৃপক্ষের কাছে।
সেখানে একজন অত্যন্ত সুবেশী যুবকের সাথে কথা হলো আমার। আমি তাঁর নাম জানতে চাইলাম।

তিনি জানালেন, তাঁর নাম মেহেদী। তারপর তিনি বাংলা এবং ইংরেজী মিশ্রিত নানারকম কৌশলী বাক্যের মাধ্যমে আমার দাবীর অযৌক্তিকতা এবং অসারতা প্রমানে সচেষ্ট হলেন! নানা ধরনের বিক্রয়শর্ত উপস্থাপনের মাধ্যমে মেহেদী প্রমান করার চেষ্টা করলেন আমার কষ্টোপার্জিত অর্থের বিনিময়ে যে নষ্ট দুধ আমি ক্রয় করেছি, তার দায়ভার একান্তই আমার, কোনক্রমেই মীনাবাজার কতৃপক্ষের নয়!
উপায়ন্তরহীন আমি ধীর পায়ে ফিরে এলাম! নতমস্তকে! কষ্টোপার্জিত অর্থে পুনরায় দুধ ক্রয়ে প্রবৃত্ত হলাম সেই সব ছোট দোকানগুলোর একটি থেকে যেখানে আমি ছোট ছোট প্রতারনার শিকার হয়েছিলাম আগে, যেখানে বহুবার হারিয়েছিলাম আমার ভোক্তা স্বাধীনতা!।

সোর্স: http://prothom-aloblog.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.