বাড়ীর ছোট মেয়েটি তার মাকে শেষ কথা জানিয়ে দিলো পাশের গ্রামের রমিজের সাথে তার বিয়ে না দিলে সে নিজ থেকেই রমিজের হাত ধরে অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি দিবে। এ কথা শুনে মায়ের আহাজারি। অমন কাজ করিস না তুই। তাহলে আমাদের বংশের মান সম্মান চলে যাবে। তোর বড় ভাই বাসার কাজের মেয়েকে নিয়ে ভেগেছে।
মেঝ ভাই ড্রাইভারের বউকে নিয়ে পালালো। তোর ছোট ভাই পাশের বাড়ীর বিধবার সাথে লটর পটর করতে গিয়ে গণধোলাই খেয়ে বাড়ী ছাড়া। আর তোর বাপ সেই যে মুচীর মেয়েকে নিয়ে পালালো তার আজও খবর নাই। তোর বড় বোন এলাকার সবচেয়ে বড় রংবাজ মজনুর হাত ধরে বাড়ী থেকে বেড়িয়ে গেলো। মেঝটা বিয়ে করেছে মুদী দোকানদার কে।
আর তোর দাদাতো এখনও বিয়ে করেই চলেছে। আর তোর চাচাতো ভাইয়ের কথা আর কি বলবো। গোয়ালীনির সাথে তার পরকীয়া দেখে তো এলাকায় ছিঃ ছিঃ রব পরে গেছে। এখন তুই যদি ঐ বেকার রমিজের সাথে ভেগে যাস তাহলে তো আর বংশের মানসম্মান বলে কিছু থাকে নারে মা। তুই অমন কাজ করিস না।
আসলেই বংশের মানসম্মান বলে কথা। খুব সহজেই চলে যেতে পারে। তবে যাদের যায় তাদের একাবরেই যায়। আর যাদের যায় না তাদের এই বংশের মতোই সহজে যায় না। কৌতুকটি বিএনপির বিগত পাঁচ বছরের কার্যকলাপ ও হুংকারের সাথে মিল রেখেই করা।
বিএনপির বিগত পাঁচ বছর ছিলো নখ ও দন্তবিহীন বাঘের মতো শুধুই হুংকারে পরিপূর্ন এবং সরকারকে এটাই শেষ সুযোগ দিচ্ছে এই মর্মে। বিএনপি গত পাঁচ বছরে যতগুলি সরকার পতনের ইস্যূ পেয়েছে ততগুলির অর্ধেকরও কম যদি আওয়ামীলীগ বিরোধী দল থাকাকালীন অবস্থায় পেতো তাহলে আমি পরিপূর্নভাবে বলে দিতে পারি বিএনপি তার পুরো মেয়াদের জন্য ক্ষমতায় থাকতে পারতো না। বিডিআর বিদ্রোহ, শেয়ার বাজার কেলেংকারী, হলমার্ক, সাগর রুনী, ইলিয়াস আলী গুম, বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় দখল ও প্রথম পর্যায়ের সকল নেতাদের কারারুদ্ধ করা, পদ্মাসেতু কেলেংকারী, কালো বিড়াল খ্যাত সুরঞ্জিতের রেলের টাকা উদ্ধার, টেন্ডারবাজী, দখলবাজী, মিডিয়ার টুঁটি চেপে ধরা, বিসমিল্লাহ গ্র“প, হেফাজত ইস্যূ, জামাত নিষিদ্ধের আইন পাশ, খালেদা জিয়াকে তার ক্যান্টনমেন্টের বাসা থেকে উচ্ছেদ, ভিন্নমতাবলম্বীদের কোনঠাসা করে রাখা, মাঠে-ময়দানে বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী দলকে দাঁড়াতে না দেওয়া, গোঁয়ার্তুমি করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল, রানা প্লাজা, গার্মেন্টস্ সেক্টেরের অস্থিরতা, নিয়োগ কেলেংকারী, গ্রামীন ব্যাংক, প্রতিবেশী একটি রাষ্ট্রের নগ্ন হস্তক্ষেপ, একতরফা নির্বাচন, কূটনৈতিক ক্ষেত্রে সীমাহীন ব্যর্থতাসহ, শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের বেপরোয়া চাঁদাবাজি ও দখল বাজি ইত্যাদি সহ শত শত ইস্যূ বিএনপি কাজে লাগাতে পারে নাই। এক একটি ইস্যূ তৈরি হয়েছে সেটি নিয়ে মাঠে নামার আগেই আরেকটি নতুন ইস্যূ তৈরি করেছে আওয়ামী লীগ। মুলত আওয়ামী লীগ তাদের পুরো শাসনামালেই বিএনপিকে কোন একটি নির্দিষ্টি ইস্যূতে মনোযোগ করতে দেয়নি ও ব্যস্ত থাকার মতো সময় দেয়নি।
রাজনীতির মাঠে বিএনপি এখনও শিশু আওয়ামীলীগের কাছে। গ্রামের নেংটি পড়া কোন বাচ্চা ছেলে যদি জাপানের কোনা সুমোকুস্তিগীরের সাথে কুস্তিতে পাল্লা দিতে যায় তাহলে ঐ বাচ্চা ছেলে যেমন অবধারিতভাবে ধরাশায়ী হবে সুমো কুস্তিগীরের কাছে ঠিক তেমনি আওয়ামী লীগের চাল ও চালাকির কাছে বিএনপি সব সময়ই ধরাশায়ী হয়েছে। বিএনপিকে বিভিন্ন ইস্যুতে ব্যস্ত রেখে বিএনপির সাংগাঠনিক কাঠামোকে চরমভাবে দুর্বল করে দিয়েছে আওয়ামীলীগ। আর এ কারনেই কোন ক্ষেত্রেই বড় ধরনেই প্রতিরোধ করতে পারেনি বিএনপি। বিএনপির ইউনিয়ন পর্যায়ের কমিটি থেকে কেন্দ্রীয় পর্যায়ের কমিটি পর্যন্ত ভীষণভাবে দুর্বল।
এছাড়া মামলা মোকদ্দমায় পর্যুদস্ত বিএনপির অনেক নেতা-কর্মীই থেকে গেছেন লোক চক্ষুর অন্তরালে। আর সরকার প্রশাসনকে যেভাবে দলীয়করন করেছে এবং প্রশাসন যেভাবে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের নির্মুল করতে ব্যস্ত ছিলো তাতে যদি বলা হয় প্রশাসনের বিরোধী দল মোকাবেলাই একমাত্র কাজ তাহলে অত্যুক্তি করা হবে না। আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, প্রজ্ঞা ও সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার সাথে বিএনপির বিস্তর ফারাক। আর যেটি প্রকাশ্যে ও অপ্রাকাশ্যে সর্বজনে আলোচিত সেটি হলো আওয়ামীলীগের প্রতি ভারতের সমর্থন। এক ভারতপ্রীতির কারনে বাংলাদেশ আন্তর্জাাতিক অঙ্গনে অনেক ভালো ভালো বন্ধু রাষ্ট্রের কাছ থেকে সময়োপযোগী সহায়তা পায়নি।
সুতরাং দেশীয় রাজনৈতিক শক্তি ও বিদেশী বুদ্ধিতে আওয়ামীলীগ প্রতিবারই অপরাধ করেও জিতে গেছে আর গায়ে জামাতী গন্ধ লাগিয়ে বিএনপি প্রতিবারই ব্যার্থ হয়েছে কোন ইস্যূ দাঁড় করাতে। আর সাথে ছিলো মিডিয়ার অকুণ্ঠ সমর্থন। হাতে গোনা দুই একটি মিডিয়া বাদ দিলে প্রায় সব মিডিয়াই আওয়ামী সকল কর্মের বা অপকর্মের ঢোল বাজিয়ে পজেটিভলিইি বাজিয়ে গেছে বিভিন্ন সুবিধা আদায়ের জন্য অথবা নিজের অস্তিত্ব রক্ষা করার জন্য। আর না বাজিয়েও কোন উপায় ছিলোনা, কেননা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বিভিন্ন ভাবে মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রন রাখা হয়েছে অথবা অন্য মিডিয়াগুলোর করুন পরিনতির কথা মনে করিয়ে দিয়ে তাদেরকে লেজ গুটিয়ে আওয়ামী ছাতার নীচে আসতে বাধ্য করা হয়েছে।
মুলত আওয়ামী লীগের এই বারের জয়ের পেছনে অনেকগুলো মূলকারনের মধ্যে ছিলো সাংগাঠনিক শক্তি, মিডিয়ার সমর্থন, একই সুরে আওয়ামী নেতাদের বক্তব্য, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের নগ্ন হস্তক্ষেপ, প্রশাসনের নির্লজ্জ পক্ষপাতিত্ব, রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার।
যদি বলা হয় দেশের মানুষ আওয়ামী লীগের পক্ষে ছিলো তাহলে সেটি ভুল। বিগত দুই বছরের দেশী বিদেশী কোন জরিপেই আওয়ামীলীগের অবস্থান বিএনপির উপরে ছিলো না। তারপরও “সাংবিধানিক কাঠামো” ভেতরে থেকে নির্বাচনের ব্যবস্থাই আওয়ামীলীগকে তার আসন আবারও পরিপোক্ত করেছে। এ ক্ষেত্রে এরশাদ নামক যে এক বিশ্ববেহায়া আওয়ামীলীগকে এক রহস্যময় সমর্থন দিয়েছে তাতে আজ যেমন জামাতকে ধরে রাখার ক্ষেত্রে বিএনপিকে মানুষ দোষারোপ করে ঠিক তেমনি এরশাদকে গৃহাপালিত দল বা সুবিধাবাদী বিরোধীদল করে আওয়ামীলীগের কোলে রাখার জন্যও একদিন আওয়ামীলীগকে এর চরম মুল্য দিতে হবে। আওয়ামীলীগের মতো একটি রাজনৈতিক দল রাজনীতির জন্য যে ভুলটা করলো এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে যে চরম সংকটের মধ্যে ফেলে দিলে এর জন্য একদিন আওয়ামীলীগকে একদিন বুক ফাটা শব্দ করে আর্তনাদ করতে হবে।
ক্ষমতার রঙীন চশমা পড়লে অনেক চড়াই উৎরাই চোখে দেখা যায় না। কিন্তু মনে রাখতে হবে চোখ বুঁজে থাকলেই প্রলয় থেমে থাকে না। এরশাদ মানুষের জন্য রাজনীতি করে না, এরশাদ রাজনীতি করে ক্ষমতার ব্যবহার করে নিজের সুবিধা আদায়ের জন্য, রাষ্ট্রীয় আরাম আয়েশে জীবন কাটানোর জন্য। এরশাদ একটা চরম সুবিধাবাদী লোক। আজ গর্ভনম্যান্ট ব্যাক্ট বিরোধী দলের ভূমিকায় অবতীর্ন হয়ে রাষ্ট্রীয় সুযোগসুবিধা ভোগ করা আর মামলা মোকাদ্দমা থেকে রেহায় পেলেও আওয়ামীলীগ কে ভুলে গেলে চলবে না আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক দুর্দিন এল এই এরশাদ তাদের সাথে থাকবে না।
কারন এরশাদ একজন বহুরুপী গিরগিটি। সে জানে কখন রং পাল্টাতে হয় আর কখন সুবিধা আদায় করে নিতে হয়। আর সুবিধাবাদীরা কোনদিনই কারো চোখের মনি হতে পারে না। বাংলার মানুষ সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করলেও সে ভুল সংশোধনের জন্য সময় নেয় না। ভবিষ্যতই বলে দিবে সুবিধাবাদীদের অবস্থান কোথায় হবে, ক্ষমতার মসনদে না জনগনের ঘৃনার পাত্রে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।