আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ওয়াকা ওয়াকা –ট্যুর আফ্রিকা ( ৫ম পর্ব) ঃ অনন্ত জলিলের দেশে

সুখি হওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় বিবেক হীন হওয়া। আক্রা গামি ফ্লাইট ধরতে ০২ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে কাক ডাকা ভোরে আমাদেরকে রওনা দিতে হয় রিয়া বিমান বন্দর অভিমুখে। চারিদিকে তখনো নিকষ কালো ঘুটঘুটে অন্ধকার। পুরো রাস্তাঘাট একেবারে জন মানব শুন্য। মাঝে মধ্যে শুধু দুই একটা গাড়ি বেপরোয়া গতিতে ছুটে যেতে দেখা গেল।

পূব আকাশে সূর্য্যি মামা কিঞ্চিৎ উঁকি দিল আমরা বিমান বন্দরে পৌঁছানোর পর। সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের দৃশ্য সব সময়ই আমার নিকট পরম উপভোগ্য একটা ব্যাপার। কারণ একমাত্র এই দুই সময়েই বদমেজাজি মামাটাকে দেখা যায় স্নিগ্ধতা আর কোমলতার আবহে চারপাশ আলোকিত করে তুলতে। আহা, কেয়ামতের দিনে সূর্য যখন মাথার উপর এক হাত দূরত্বে নেমে আসবে, সেদিন তার রূপ যদি এমন মোহনীয় আর মোলায়েম হত। কবি সাহিত্যিক গণ চাঁদকে নিয়ে অনেক কবিতা আর গান রচনা করেছেন।

কিন্তু সূর্যকে নিয়ে সেভাবে বোধ হয় ভাবেনি কেউ। মনে মনে সূর্যকে নিয়ে লেখা গান মনে করতে চেষ্টা করলাম। মনে পড়ে গেল একটা গানের কলিঃ ‘ সূর্য চাঁদের আলো আকাশটাকে রাখে নীল হাতে যদি হাত রাখো, ভালোবাসা হয় বর্ণিল’। নাহ যুতসই হলনা গানটা ! এখানেও চাঁদ মামা এসে ভাগ বসিয়েছে। হঠাৎ ট্যুর লিডারের তাড়া শুনে বাস্তবে ফিরে এলাম- এই জলদি চল, চেক ইন করতে হবে।

চেক ইন শেষে চেপে বসলাম বিমানে। নির্ধারিত সময়েই বিমান টেক অফ করল। গুড বাই লাইবেরিয়া। নাউ উই আর হেডিং টুয়ার্ডস গানা। মনে মনে অনন্ত জলিল কে একটা ধন্যবাদ না দিয়ে পারলাম না।

ওর কারনেই তো দেশটি দেখার এত প্রবল আগ্রহ আমাদের। ঠিক করলাম, ফিরে গিয়ে জোস একটা ফেসবুক স্ট্যাটাস দিব- HELLO, ONONTO…PLEASE BELIEVE ME, I AM JUST BACK POM GANA .. সাথে ব্যাক গ্রাউন্ডে ঘানা লেখা একটা সাইনবোর্ড সহ ছবি পোস্ট করতে হবে, নইলে আবার বর্ষা আপু ক্ষেপে গিয়ে প্লেট বাটি ছুঁড়ে মারতে পারে। নদী, সাগর, পাহাড়, সূর্যোদয়, সূর্যাস্তের পাশাপাশি মেঘের আবেদন ও আমার কাছে নেহায়েত কম নয়। নীল আকাশের বুকে পেঁজা তুলোর মত শ্বেত শুভ্র মেঘকে মনে হয় দক্ষ শিল্পীর তূলির নিপুণ আঁচড়ে আঁকা কোন শিল্প কর্ম যেন। দেড় ঘণ্টা পর আমরা অবতরণ করলাম আক্রা এয়ারপোর্টে।

বিমান বন্দরের ফর্মালিটিজ শেষ করে বের হতেই দেখি আমাদের গাইড ‘ এনেট’ দাঁড়িয়ে আছে একটা মাইক্রো নিয়ে। হোয়াট এ সারপ্রাইজিং রিসেপশান! এতটা আশা করিনি আমরা। সি ইজ অলসো পম গানা। এক কলিগের পূর্ব পরিচিত সে। বেশ সপ্রতিভ ভাবে বলল – তোমরা যথেষ্ট টায়ার্ড।

এখন হোটেলে গিয়ে দারুন এক শাওআর নিয়ে ফ্রেস হবে, লাঞ্চ করবে ; তারপর বিকেলের দিকে ঘুরতে বের হওয়া যাবে। তার এহেন আন্তরিকতা আমাদের মুগ্ধ করল। আবিদজানের আইভরিয়ানদের উগ্র মেজাজ দেখে আফ্রিকান সম্পর্কে মনে যে নেতিবাচক ধারণা জন্ম নিয়েছিল , এক নিমিষেই হাওয়া হয়ে গেল আজ। আমরা চললাম হোটেল ব্লু লজের উদ্দেশ্যে। হোটেলে বুকিং দেওয়া ছিল আগেই।

ফ্রেস হয়ে বিকেলে আমরা ঘুরতে বের হলাম। হোটেলের সন্নিকটে দেখলাম চলছে এক অনাড়ম্বর ফ্যাশন শো। কিঞ্চিত ফ্যাশন শো দেখে আমরা চললাম ‘ লাবাডি’ বীচের উদ্দেশ্যে। আক্রা শহরে সব কিছুই আক্রা অর্থাৎ এক্সপেন্সিভ। কিছুক্ষণ পর আবারো টের পেলাম বিষয়টা - বীচে যেতে হলে টিকেট কাটতে হবে।

আবার সেই সমুদ্র, ফেনিল জলরাশি আর উথাল পাথাল ঢেউ! বাকি জীবনটা যদি সাগর পাড়ে কাটিয়ে দেওয়া যেত মন্দ হতোনা। সন্ধ্যার আঁধার ঘনিয়ে এসেছে। আরেকটু আগে আসা উচিত ছিল এখানে। সূর্যাস্ত টা মিস করে ফেললাম আজ। কি আর করা।

তবে বীচটা বেশ জম জমাট মনে হল। পুরো বীচটাই প্রচুর লোকে লোকারণ্য। সাগরের কোল ঘেঁষে গড়ে উঠেছে প্রচুর রেস্তোরাঁ। প্রতিটি রেস্তোরাঁর সামনেই গোল করে সুন্দর চেয়ার টেবিল পাতা রয়েছে। সাগরের একেবারে কোল ঘেঁষে আমরা একটা টেবিলের দখল নিলাম।

রাতের আঁধারে বীচে এর আগে বসা হয়নি কখনো। থেমে থেমে সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ প্রবল হিস হিস গর্জনপূর্বক আছড়ে পড়ছিল আমাদের খুব কাছাকাছি। সাগরের ঢেউয়ে আলো প্রতিফলিত হয়ে বেশ দ্যুতি ছড়াচ্ছে চারিদিকে। দুটো বড় আকারের ঘোড়া দেখলাম আরোহী নিয়ে হ্রেষা ধ্বনি তুলে ছুটে চলেছে সাগরের তীর ঘেঁষে। আরেকটা ঘোড়ার মালিক এসে আমাকে অফার করল অশ্বারোহণের।

দিনের বেলা হলে অ্যাডভেঞ্ছারটা নেওয়া যেত। কিন্তু রাতে রিস্ক নেওয়া ঠিক হবেনা। বীচেই ডিনার সেরে রাত্রি নয়টার দিকে ফিরে আসলাম হোটেলে। আগামীকাল আক্রা শহর ঘুরে দেখার প্ল্যান আমাদের। একটা জম্পেশ ঘুম দরকার এখন।

অতএব এখনকার মত বন নুই – মানে গুড নাইট।  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.