আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পিকনিকের খাবার নয়-যেন রিলিপের চাল সংগ্রহ এবং ওয়াকা ওয়াকা দিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের উদ্বোধন

যদি পারতাম দুঃখগুলো নিলামে বিক্রি করে দিতাম ঢাকা ব্যাংকের এক বন্ধুর কাছ থেকে আমন্ত্রণ পেলাম পিকনিকে যাবার। পিকনিকের জায়গার নাম শুনে একটু আগ্রহ জাগল। সর্বশেষ পর্যটন মেলায় ঐ পিকনিক স্পটের একটা স্টল ছিল। তারা তাদের গোয়ালের দুধ এত মিঠা বলে প্রচার করেছিল যে- মনে মনে ইচ্ছে ছিল জায়গাটা একবার ঘুরে আসি। তাই আমন্ত্রণপত্র পেয়ে রাজী হয়ে গেলাম।

তাছাড়া ঢাকা ব্যাংকের বাতসরিক পিকনিক বলে কথা। বিশাল গাড়ী বহর- দুই আড়াই হাজার লোকের সমাগম নিশ্চয় পিকনিকটা অনেক মজা হবে। অপেক্ষা করে করে রাতে ঘুমিয়ে পড়লাম। আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে সাতটায় বিমান অফিসের সামন থেকে গাড়ীতে উঠলাম। আমাদের গন্তব্যস্থ চন্দ্রার (গাজীপুর) 'রাঙ্গামাটি ওয়াটার পন্ড'।

প্রায় দুই ঘন্টার ভেতরেই আমাদের গাড়ী গিয়ে পৌছল রাঙ্গামাটি ওয়াটার পন্ড-এ। গাড়ী থেকে নেমে সকালের নাস্তার টোকেন টা দিয়ে কোনো প্রকার ঝামেলা ছাড়াই নাস্তা সারলাম। কিন্তু সাড়া দিনের ঝামেলা যে অপেক্ষা করতেছে তা বুঝতে পারিনি। দিনের প্রথম ঝামেলায় পড়লাম- যে রাঙ্গামাটি ওয়াটার পন্ড এর কথা শুনে আসলাম, তার নাম গন্ধ কিছু নেই। নামে ওয়াটার পন্ড বাস্তবে কিছুই নেই।

জঙ্গলের ভেতর খুব সাধারণ কয়েকটা দালান ঘর ছাড়া দেখার মত কিছু নেই। হতাশ হয়ে যখন একটা চেয়ার নিয়ে বসে পড়লাম- তখন শুরু হল দিনের প্রথম রিলিপ যুদ্ধ। অর্থাত যারা একটু পরে এসেছে তাদের কপালে সকালের নাস্তা নেই। নেই নেই নেইতো এক গ্লাস পানিও নেই। চিল্লা চেচামেচিতে বেলা সাড়ে এগারোটা গড়াল।

তখন কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে মাইকে ঘোষণা এল 'সকালের নাস্তার অনাকাঙ্কিত ঘটনার জন্য আমরা দুঃখিত' আপনার একটু কষ্ট করে অপক্ষো করুন- সাড়ে ১২টার দিকে মহিলা এবং শিশুদের দুপুরের খাবার দেওয়া হবে। মানুষ আশায় একটু বুক বাধল। দ্বিতীয় রিলিপ যুদ্ধ : সাড়ে ১২টা অতিক্রম করে বেলা দ্বেড়টা বাজল। দুপুরের খাবারের কোনো নাম গন্ধ নেই। হঠাত করে দেখি খাবারের লাইন শুরু হইছে।

গিয়ে দাড়ালাম রিলিপের লাইনে। প্লেট আছে কিন্তু খাবার আসেনি। শুরু হল প্লেট দখলের যুদ্ধ। একটা প্লেট জুটল। সিরামিকের হাফ কেজি ওজনের প্লেট ব্যাংকের অন্যান্য কর্মকর্তার সাথে ভিক্ষুকের মত আধা ঘন্টার উপর লাইনে অপেক্ষা খাবারের জন্য।

অবশেষে খাবার এল। কিন্তু এখন শক্তি আছে যার, খাবার আছে তার এই রকম একটা প্রতিযোগিতা চলল কিছুক্ষণ। তারপর আবার খাবার শেষ। খাবারের আশা ছেড়ে দিয়ে ভাবলাম ক্যামেরা যখন সাথে আছে এই রকম পরিস্থিতির মূল্যবান কয়েকখান ছবি তুলে রাখি। তাই খাবারের আশা ছেড়ে দিয়ে ছবি তুলাই শুরু করলাম।

দিনের বেশীর ভাগ সময়ই গেল বিরক্তিতে। ভাবলাম যেহেতু রিংকু ভাই এসেছেন গান গাওয়ার জন্য এবং সাথে এলিসা নামে আরেকটা মেয়ে শিল্পীও আছে তাহলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করে দুধের স্বাধ ঘুলে মিটিয়ে বাসায় যাওয়া যাবে। কিন্তু কথায় আছে যার একুলে হয়না, তার চৌদ্দ কুলেও কিছু হয়না। আমাদের ভাগ্যেও তাই হল। মঞ্চে প্রথমেই আসল এলিসা।

এসেই বদমাশটা শুরু করল "ওয়াকা ওয়াকা" ইংলিশ গান দিয়ে। মেজাজটা গেলো বিগড়ে। দ্বিতীয়টা বাংলায় কিন্তু তৃতীয় গানটা আবার হিন্দিতে। মেজাজটা এতই চরম আকার ধারণ করল যে আর দাড়িয়ে থাকতেই ইচ্ছে হল না। চলে আসলাম গাড়ীতে।

লোকজনকে বলে গাড়ী হাউসফুল করে ত্যাগ করলাম থার্ড ক্লাস পিকনিক স্পট রাঙ্গামাটি ওয়াটার পন্ড। দুঃখিত রিংকু ভাই আপনে কি গান গাইলেন তা আর শুনতে পারলাম না। পাদটিকা :: যারা ইতিমধ্যে চন্দ্রার রাঙ্গামাটি ওয়াটার পন্ড যাবার খায়েস করছেন। তারা মন থেকে চিরতরে মুছে ফেলে দেন। কারণ ঐখানে দেখার মত কিছু নেই।

তারচেয়ে যাওয়ার পথে আশে পাশে যে জঙ্গল আছে সেখানে ঘুরাঘুরি করলেও মনে আরাম পাইব। সর্বশেষ মন্তব্য : সারা দিনটাই বেহুদা গেল। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.