আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিমান দূর্ঘটনার আদ্যোপান্ত

বেশীরভাগ বিমান দূর্ঘটনা ঘটে বিমান উড্ডয়নের প্রথম ৩ মিনিটের মধ্যে অথবা ল্যান্ডিং করার আগের শেষ ৮ মিনিটে। এই ১১ মিনিটই যাত্রীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। আর প্রকৃতপক্ষে বিমান মাটিতে আছড়ে পরার সময় যাত্রীরা মারা যায় না; বেশীরভাগ মারা যায় আছড়ে পরার পূর্বে বিষাক্ত গ্যাস ও ধোয়ার কারনে অথবা মাটিতে আছড়ে পরার পর বিস্ফোরন জনিত আগুনের কারনে।

বিমান দূর্ঘটনা আসলে মানুষকে বেশী আকর্ষিত করে কারন এই দূর্ঘটনাগুলো গাড়ি,ট্রেন বা জাহাজ দূর্ঘটনার তুলনায় অনেক কম ঘটে। বাংলাদেশে এই হার তো আরও কম।

ট্রান্সপোর্টেশান সেফটি বোর্ড ও এয়ার ক্র্যাশ তদন্তকারী সংস্থার হিশাব অনুযায়ী প্রতি ১.২ মিলিয়ন ফ্লাইটে ১ টি দূর্ঘটনা ঘটে। যার অর্থ হলো একজন নিয়মিত যাত্রীর আকাশ পথে সঙ্কটে পড়ার সম্ভাবনা আসলে খুবই কম; নেই বললেই চলে। আহত হবার সম্ভাবনা আরো কম - প্রতি ১১ মিলিয়নে মাত্র ১। উন্নত দেশে গাড়ী দূর্ঘটনার হার হলো প্রতি ১২০০০ এ ১ এবং বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশে প্রতি ২০০০ এ ১। তাই বলা হয় বিমান যাত্রা অনেক নিরাপদ।

কিন্তু মিডিয়ায় বিমান দূর্ঘটনার সংবাদ গুরুত্তের সাথে প্রচার হওয়ায় এবং কিছুটা অতিরঞ্জিত হওয়ায় মানুষ একে সবচাইতে ভয়ঙ্কর ভাবে। আর বেশীর ভাগ মানুষ বিমান যাত্রাকে ভয় পায় কারন যাত্রার সময় যদি কোন ধরনের সমস্যা দেখা দেয় তখন একধরনের নিরাপত্তাহীনতা ভর করে।

যাত্রীরা কিন্তু এয়ারপ্লেনের পেছনের অংশে আসন গ্রহন করে তাদের যাত্রা একটু নিরাপদ করতে পারে। এয়ার ক্র্যাশ তদন্তকারী সংস্থা দ্বারা এটা প্রমানিত হয়েছে যে, যারা পেছনের আসনে বসেন তাদের বেচে থাকার সম্ভাবনা তুলনামুলক ভাবে সামনের আসনের যাত্রীদের থেকে অনেক বেশী। আরেকটি উপায় বেচে থাকার সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে সেটা হলো প্লেনে বসে মদ না খাওয়া, মাতাল না হওয়া।

বিপদের সময় সজাগ যাত্রীরা বিমান থেকে বের হওয়ার পথ খুজে নেয়, এমনকি যদিও কোন কিছু না দেখা যায় তখনও; কিন্তু এধরনে পরিস্থিতি থেকে মাতাল যাত্রীদের বের হবার সুযোগ কম থাকে।

বেশীরভাগ বিমান দূর্ঘটনা ঘটে পাইলটের ভূলের কারনে অথবা যান্ত্রিক ত্রুটির কারনে। এখন পর্যন্ত ঘটে যাওয়া ৪৫% দূর্ঘটনার জন্য পাইলটরা দায়ী যার মধ্যে খারাপ আবহাওয়া জনিত ভুল সিদ্ধান্তগুলো অর্ন্তভূক্ত। ২২% দূর্ঘটনা ঘটে যান্ত্রিক ত্রুটির কারনে। কিছু দূর্ঘটনা ঘটে যখন পাইলট যন্ত্রপাতির সংকেত ভূলভাবে নির্নয় করে, আবহাওয়া পরিস্থিতি ভুলভাবে বিশ্লেষণ করে বা যান্ত্রিক ত্রুটি চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হয়।



দূর্ঘটনা ঘটার পর পরই ব্লাক বক্স সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন বস্তু হয়ে ওঠে কারন দূর্ঘটনার সময় এটি বিমানের গতির তথ্য, উচ্চতা, জ্বালানী প্রবাহ, ককপিটের কথোপকোথন রেকর্ড করে রাখে। ব্লাক বক্স কিন্তু দেখতে কাল নয়; এগুলো কমলা রঙ্গের। ব্লাক বক্সে দুইটি অংশ থাকে। এর মধ্যে একটি ফ্লাইট রেকর্ডার এবং আরেকটি ককপিটের ভয়েস রেকর্ডার। ব্লাক বক্স সাধারনত বিমানের পেছনের অংশে বসানো থাকে।

বিমান বিশেষজ্ঞগরা এগুলোকে ব্লাক বক্স বলেন না। তারা এটাকে ইলেকট্রিক ফ্লাইট ডাটা রেকোডারস বলেন। আসলে ব্লাক বক্স কথাটি মিডিয়ার আবিস্কৃত। ব্লাক বক্স অধ্বংশনীয় ও প্রায় অবিনাশী। এগুলো ১১০০ ডিগ্রি তাপমাত্রায়, ৫০০০ পাউন্ড চাপসহ লবনাক্ত পানিতে ও জেট ফুয়েলেও অক্ষত থাকতে পারে।



বিমানের অক্সিজেন মাস্ক,লাইট,হার্ড ল্যান্ডিং, মোবাইল ফোন ব্যবহার এবং হেডসেট সম্পর্কে অনেক ভুল ধারনা প্রচলিত আছে। যেমন কেবিন ক্রু কখনও বলেনা রাতে ল্যান্ডিং এর সময় কেন ভেতরের লাইটগুলো নিভু নিভু হয়ে যায়। কোন যাত্রীও এ বিষয়ে কিছু জিজ্ঞেসও করেনা কারন তারা মনে করে এটি ল্যান্ডিং এর এটি পক্রিয়া। লাইট নিভু নিভু করার কারন হলো যাত্রীদের ল্যান্ডিং থেকে দৃষ্টি সচল রাখা। লাইট নিভু নিভু থাকার কারনে যাত্রীদের চোখগুলো অন্ধকারের সাথে খাপ খাইয়ে নেয় এবং বিমানের বাইরে এসে তারা ভালভাবে দেখতে পায়।

জরুরী অবতরনের সময় এটা অনেক কাজে লাগে।

আবার খারাপ আবহাওয়ার কারনে পাইলটরা হার্ড ল্যান্ডিং করেন যাতে পানিতে বিমানটি পিছলিয়ে না যায়। কিন্তু যাত্রীরা মনে করে এটা পাইলটের ভুলের কারনে হয়েছে।

দীর্ঘ ফ্লাইট এ পাইলটরা বেশীরভাগ সময় ঘুমিয়ে পরেন। কারন আকাশে খুব বেশী সময় বিমানকে তাদের পরিচালনা করার দরকার পরে না।

একবার সবকিছু সেট করা হয়ে গেলে তারা ঘুমিয়ে পরেন।

আর একটা ভুল ধারনা প্রচলিত আছে মোবাইল ফোন ব্যবহার নিয়ে। বিমানে মোবাইল ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ নয়। মোবাইল ফোন ব্যবহারে একটি বিমান কখনও মাটিতে পরে যায় না কিন্তু এটি পাইলটদের জন্য বিরক্তিকর কারন হেডফোনে তারা সিগন্যাল পেতে থাকেন। আবার যে হেডফোনগুলো যাত্রীদের দেওয়া হয় সেগুলো নতুন নয়, যদিও নতুন নতুন লাগে।

সেগুলো নতুন ব্যাগে মোড়ানো থাকে শুধু।

যখন বিমানের দরজা বন্ধ হয় তখন ক্যাপ্টেন সীমাহীন ক্ষমতা পেয়ে যান। একবার দরজা বন্ধ হয়ে গেলে বিমানেরক্যাপ্টেন কোন যাত্রিকে গ্রেপ্তারের, জরিমানা করার এবং মূমুর্ষ যাত্রীর শেষ ইচ্ছা গ্রহন করার ক্ষমতা পেয়ে থাকেন।

বিমানের দুইজন পাইলটকে সবসময় ভিন্ন ভিন্ন খাবার দেওয়া হয়। এটা করা হয় ফুড পয়জনিং এড়ানোর জন্য।

সোর্স: http://prothom-aloblog.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.