আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশের অভ্যুদয় বিষয়ক কোর্স এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরিণত সিদ্ধান্ত

চলতি শিক্ষাবর্ষে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অনার্স কোর্সে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস বিষয়ক একটি বাধ্যতামূলক কোর্স চালু করেছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং এ সংক্রান্ত বিষয়ে নতুন প্রজন্মকে শিক্ষিত করার জন্য এই কোর্স ।
এই কোর্সটিতে যে সব বিষয়সূচি সংযুক্ত করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে- দেশ জনগোষ্ঠীর পরিচয়, উপমহাদেশের বিভক্তি, পাকিস্তানের বৈষম্য, সামরিক শাসন, ভাষা আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধুর শাসনামল ইত্যাদি।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এর আগে এমন একটি কোর্স চালুর উদ্যোগ নিয়েছিল এবং তখন (১৯৯৬-২০০) মুক্তিযুদ্ধ শিক্ষা গবেষণা ইন্সিটিটিউট গড়ে তোলা হয়েছিল। সে সময় কলেজ শিক্ষকদের জন্য একাধিক প্রশিক্ষণ কোর্সও পরিচালিত হয়।

যে প্রশিক্ষণ কোর্সের মূল বিষয়গুলো এই পাঠক্রমেরই অনুরূপ। অর্থাৎ এরকম একটি রূপরেখার আওতায় কলেজের শিক্ষকরা এই কোর্স পরিচালনা করতে পারবেন।
কিন্তু নতুন এই কোর্স পড়ানোর জন্য জাতী য় বিশ্ববিদ্যালয় কেবলমাত্র রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইতিহাস এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ের শিক্ষকগণ পাঠদান করবেন বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এই সিদ্ধান্ত কতটা যুক্তিসঙ্গত এবং বাস্তব সেটি নিয়ে আমরা প্রশ্ন তুলতেই পারি।

মুক্তিযুদ্ধ এবং বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের বিষয়টি কেবলমাত্র রাষ্ট্রবিজ্ঞান- ইতিহাস ও ইসলামের ইতিহাসের বিষয় নয়।

এই বিষয়টি যতটা তাত্ত্বিক তার চেয়ে বেশি ইতিহাস নির্ভর এবং যেহেতু সকল শিক্ষার্থীর জন্য এই কোর্স বাধ্যতামূলক সেহেতু এর বিষয়বস্তু অনেক বেশি বর্ণনানির্ভর হওয়াটাই যুক্তিসঙ্গত।
তাছাড়া এই বিষয়ের সাথে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইতিহাসের সম্পর্ক থাকলেও ইসলামের ইতিহাসের কি সম্পর্ক আছে তা বোধগম্য নয়। বরং বাংলা সংস্কৃতি, দর্শন, নৃতত্ব , অর্থনীতি ইত্যাদিও সাথে সম্পর্ক অনেক বেশি। সে বিষয়গুলো বিবেচনায় না এনে মাত্র তিনটি বিষয়কে এর সাথে যুক্ত করাটা সঠিক হয়েছে বলে আমার মনে হয় না।
এই কোর্সেও উদ্দেশ্য মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সঠিক ধারণা প্রদান করা।

সে জন্য এর সাথে রাষ্টবিজ্ঞান বা ইতিহাস বিষয়কে যুক্ত করার চেয়ে যে শিক্ষক এ বিষয়ে ক্লাস নেবেন তার চেতনার স্তরটি মূল্যায়ন করা প্রয়োজন। কারণ একথা কেউ নিশ্চিত কওে বলতে পারবেন না যে, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বা ইতিহাসে পাস করলেই তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সঠিকভাবে ধারণ করবেন এবং অবিকৃতভাবে এবং একাডেমিক ভাবে বিষয়টি পাঠদান করতে পারবেন। এই বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় যে নির্দেশনা প্রদান করেছে তা যথার্থ নয়। কারণ এই কোর্স পড়ানোর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বা ইতিহাসবিদ বানানো হবে না। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের একজন শিক্ষার্থীর জন্য এ বিষয়টি যুক্ত করার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা যায়।


মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে যদি তৈরি করতেই হয় তবে তা স্কৃল এবং প্রাথমিক স্তর থেকেই করা উচিত। বিশ্ববিদ্যালয় ম্তরে এটিকে জোর করে বটিকা সেবনের মতোই মনে হবে। তাছড়া বিজ্ঞান এবং ব্যবসায় শিক্ষার ছাত্রদের কাছে এটি যুক্তিনির্ভর বলে গণ্য হবে না। সেক্ষেত্রে বিষয়টিকে বিতর্কিত করা হচ্ছে কি না সেটাও দেখা দরকার।
তারপরও এই বিষয়টি যুক্ত থাকলেও কতকগুলো বিষয় বিবেচনা করতে হবে।


কেবলমাত্র রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইতিহাস ও ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতির শিক্ষকরা এটি পড়াবেন- এ সংক্রান্ত নির্দেশনা প্রত্যাহার। কারণ উপরোক্ত বিষয়ে অভিজ্ঞ মানেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করেন এমন কোনো কথা নেই।

এই কোর্সটির জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে রূপরেখা তৈরি করা এবং সেই রূপরেখার আলোকে এ বিষয়ে আগ্রহী শিক্ষকদেরও পাঠদানের সুযোগ প্রদান। কারণ অনেক শিক্ষক আছেন যারা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে অনেক ভাল ধারনা রাখেন-।
ইতিপূর্বে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে যে সব শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে তাদের তালিকা প্রণয়ন করে এই কোর্সের জন্য নির্দিষ্ট করা।



এ ছাড়া- জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অঞ্চল জেলা ভিত্তিতে মনিটরিং টিম গঠন করে এ বিষয়ে সংক্ষিপ্ত ওয়ার্কসপ পরিচালনা করতে পারেন। এর মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধকে সঠিকভাবে তুলে ধরা সম্ভব হবে।

এই কোর্সটি পরিচালনার জন্য কেবল লেকচার নয়- মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধেও উপর নির্মিত চলচিত্র, বধ্যভূমি পরিদর্শন, ইত্যাদি বিষয়গুেেলাকেই প্রাধান্য দেওয়া উচিত। তাহলে শিক্ষার্থীদের চেতনার স্তরটি আরো উন্নত হবে।
এই বিবেচনা না করা হলে- মুক্তিযুদ্ধের চেয়েও নির্দিস্ট বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে এমন অভিযোগ করলে, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. হারুনর রশিদ, যিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যও বটে, এড়াতে পারবেন না।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.