বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সায়াদ হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আজ বৃহস্পতিবার একাত্মতা প্রকাশ করেছেন শিক্ষকেরা। দাবি আদায়ে আগামী সোমবার পর্যন্ত প্রশাসনকে সময় বেঁধে দিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার ও সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে আজ সকাল নয়টার দিকে সব অনুষদের সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন। সাড়ে নয়টার দিকে তাঁরা প্রশাসন ভবনে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে অবস্থান ধর্মঘট শুরু করেন। এ সময় প্রশাসন ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ফটকের সামনে নির্বাক দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
বেলা ১২টার দিকে তিন থেকে চার হাজার শিক্ষার্থী প্রশাসনিক ভবন থেকে সরে এসে উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করেন। আন্দোলনে মেয়ে শিক্ষার্থীদের বিপুল উপস্থিতি চোখে পড়ে। ছাত্রলীগের আতঙ্কে ছেলেদের উপস্থিতি কম বলে আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। আন্দোলনকারীরা ‘প্রশাসনের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘হইহই রইরই, প্রশাসন গেল কই’ প্রভৃতি স্লোগান দেন।
বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে হাজির হন।
এ সময় শিক্ষক সমিতির সভাপতি লুত্ফুল হাসান শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমাদের এই আন্দোলন, আজ থেকে আমাদের আন্দোলন। আমার এই আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা এই আন্দোলনে আছেন। দাবি আদায়ে প্রশাসনকে আগামী সোমবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিচ্ছি। এই সময়ের মধ্যে হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
অভিযুক্ত ব্যক্তিদের আজীবন বহিষ্কার করতে হবে। প্রতিটি হলে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে হবে। ’
এরপর শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবন থেকে একটি মিছিল নিয়ে আবারও প্রশাসনিক ভবনের সামনে ফিরে আসেন।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলছেন, সাদ হত্যার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার, খুনিদের শাস্তি নিশ্চিত না করা পর্যন্ত তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
মাত্স্যবিজ্ঞান অনুষদের শেষ বর্ষের ছাত্র সায়াদ ইবনে মোমতাজ হত্যার ঘটনায় গতকাল বুধবার ক্ষোভে উত্তাল ছিল ক্যাম্পাস।
শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষকেরাও হত্যাকারীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন।
হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। পুলিশ এ ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ছাত্রলীগের দুই নেতা সুজয় কুমার কুণ্ডু ও রোকনুজ্জামানকে রাতে গ্রেপ্তার করেছে। এর আগে ছাত্রলীগের কর্মী আনিসুজ্জামান ও নাহিদকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সঠিক তদন্ত করে সায়াদ হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের পাশাপাশি আর যেন কোনো শিক্ষার্থীকে অন্য কোনো শিক্ষার্থী মারধর করতে না পারেন, সেই ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
শিক্ষার্থীরা জানান, গত রোববার চতুর্থ বর্ষের ফিশারিজ বায়োলজি ও জেনেটিকস বিভাগের একটি কোর্সের ক্লাস পরীক্ষাটি শিক্ষককে বলে পেছানোর জন্য সায়াদকে চাপ দিয়েছিলেন সুজয় ও রোকন। তাঁদের চাপে একপর্যায়ে তিনি পরীক্ষা হবে না বললেও পরীক্ষা হয় এবং মাত্র দুজন অংশ নেন। শিক্ষক আবার পরীক্ষা নিতে রাজি না হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে সুজয়ের সঙ্গে সায়াদের বাগবিতণ্ডা হয়। এর জেরে সোমবার সন্ধ্যায় হলের ২০৫ নম্বর কক্ষে সায়াদকে ডেকে নিয়ে রড, লাঠি, হকিস্টিক দিয়ে নির্মমভাবে পেটানো হয়। পিটুনিতে সায়াদ বমি করেন ও মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে।
ওই কক্ষে তখন সুজয়, রোকনসহ ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা ছিলেন।
ওই রাতে সায়াদকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে তিনি ময়মনসিংহ শহরের ট্রমা সেন্টারে মারা যান। কে বা কারা তাঁকে ট্রমা সেন্টারে নিল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
জনপ্রিয়তাই কাল হলো সায়াদের!
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।