বাংলাদেশের মৌসুমের প্রায় পুরোটা জুড়ে থাকে গরম। তাই পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে যত পোশাক বের হয়, তা সাধারণত গরমকালে দীর্ঘমেয়াদে পরার উপযোগি করেই তৈরি করা হয়। অঞ্জন’স আড়ং আবর্তন ক্যাটস আই কে ক্র্যাফট কে ক্র্যাফট নগরদোলা নোঙর ও মুসলিমের শার্ট রঙ
আড়ংয়ের জ্যেষ্ট বিপণন কর্মকর্তা তাসনিম হোসাইন বলেন, “শুধু পহেলা বৈশাখ হিসেবে তো কেউ পোশাক কেনে না। এক উৎসব উপলক্ষ্যে পোশাক কিনে পুরো গরমের মৌসুমে ব্যবহার করতে চায় সবাই। ”
“বৈশাখ উপলক্ষ্যে যে ধরনের পোশাক তৈরি হয় সেগুলোই ঘুরে ফিরে সারা বছর বিক্রি হয়।
” বললেন ‘রঙ’য়ের নকশাকার বিপ্লব সাহা।
এই বছরও লম্বা কামিজের চল রয়েছে বলে জানালেন নগরদোলার চিফ অপারেটিং অফিসার মোহাম্মদ আলী আফজাল। তবে ঝুলে এসেছে পরিবর্তন।
অঞ্জন’স
অঞ্জন’স
উৎসব রাঙাতে থিমভিত্তিক সালোয়ার-কামিজ, পাঞ্জাবি, কুর্তার সমাহার ঘটিয়েছে এই দেশি পোশাকের প্রতিষ্ঠান। লাল-সাদার পাশাপাশি ব্যবহার করা হয়েছে দেশীয় মোটিফ।
কাপড়ে নকশার অনুপ্রেরণা হিসেবে থাকছে মৃৎশিল্পের বিশেষ ঐতিহ্য ‘টেপা-পতুল’। মাধ্যম হিসেবে স্ক্রিন প্রিন্ট, ব্লক প্রিন্টয়ের পাশাপাশি হাতের কাজ করা হয়েছে পোশাকে।
আড়ং
এই প্রতিষ্ঠানের তাসনিম বলেন, “লম্বা হলেও কামিজের ঝুলের কাটিংয়ে এসেছে পরিবর্তন। যেমন ওভাল সেইপ এবং মুন সেইপ। আর বিশ্বজুড়ে যেমন চলছে উজ্জ্বল রংয়ের সমাহার, দেশীয় পোশাকেও চলছে সেই ধারা।
”
দেশীয় তৈরি পোশাক বিক্রেয়ের প্রতিষ্ঠান আড়ং বৈশাখ উপলক্ষ্যে নিয়ে এসেছে উজ্জ্বল রংয়ের সালোয়ার কামিজ। তবে গরমের কথা চিন্তুা করে পোশাকে ব্যবহার হয়েছে সুতি ও হ্যান্ডলুমের কাপড়।
তবে যেসব পোশাকের রং হালকা, সেগুলোর দোপাট্টার রং গাঢ়। এসব ওড়নার মান বাড়ানোর জন্য ব্যবহার হয়েছে কাপড়ের টুকরা, ঝালর বা আয়না।
সালোয়ার কামিজ ছাড়াও রয়েছে তাগা।
আরও আছে নানান ছাঁটের রঙিন প্যান্ট।
গ্রীষ্ম মৌসুমে সবসময়ে পরার উপযোগি ছেলেদের নানান ধরনের টি-শার্ট রয়েছে। উৎসবে পরার জন্য রয়েছে ফতুয়া ও কুর্তা। পাঞ্জাবি রয়েছে ‘স্লিম ফিট’ ও ‘নরমাল ফিট’।
আড়ংয়ের এসব পোশাকের দামও রয়েছে হাতের নাগালে।
সালোয়ার কামিজ ২ থেকে ৪ হাজার টাকা। তাগা ৫শ’ থেকে ১৫শ’ টাকা। কুর্তা, ফতুয়া ও টি-শার্ট পাওয়া যাবে ৩শ’ থেকে ৬শ’ টাকার মধ্যে।
আবর্তন
এই বৈশাখে উৎসবমুখী গাঢ় হলুদ, লাল, সবুজ, কমলা ও কলাপাতা সবুজ বা একরঙা কাপড় দিয়ে তৈরি করেছে হ্যান্ডলুমের পাঞ্জাবি। তরুণীদের জন্য বৈশাখে রাখা হয়েছে সিফন, মসলিনসহ সুতির তৈরি শাড়ি।
এতে থাকছে অ্যাপ্লিক, ব্লক ও হাতের কাজ। পাইপিং, এমব্রয়ডারি বা অ্যাপ্লিকের ভিন্নতায় থাকছে দেশি উপাদানে তৈরি সালোয়ার-কামিজে। তাদের সিদ্ধেশ্বরি, মিরপুর, ওয়ারি ও ধানমন্ডি শাখায় পাওয়া যাবে এই আয়োজন।
ক্যাটস আই
বৈশাখের মৌলিক রং লাল-সাদা ছাড়াও পোশাকে রয়েছে বিভিন্ন রংয়ের ছড়াছড়ি। লিলেন, জর্জেট ও সুতি কাপড়ের পোশাকে থাকছে কাট-ছাঁটে ভিন্নতা।
সমকালীন ফ্যাশনভাবনায় যুক্ত হয়েছে পাশ্চাত্য ঘরাণার সঙ্গে দেশীয় মোটিফ।
পুরুষদের ক্যাজুয়াল উৎসবকেন্দ্রিক বৈশাখি পোশাকের পাশাপাশি উজ্জ্বল পশ্চিমা ধাঁচের গরমের পোশাকও রয়েছে তাদের বিক্রয়কেন্দ্রগুলোতে।
কে ক্র্যাফট
কে ক্র্যাফট
কে ক্র্যাফট
বাংলা নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে ক্রেতাগোষ্ঠির সামনে উপস্থাপন করেছে নতুন নতুন ডিজাইনের শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, টপ্স, পাঞ্জাবি, ফতুয়া, শার্ট, টি-শার্ট, শিশুদের পোশাক, গহনা, গিফ্টস ও গৃহসজ্জার সামগ্রী। নিয়ে বৈশাখি আয়োজন। পোশাকে ব্যবহার হয়েছে লাল, মেরুন, কমলা, সাদা, অফহোয়াইট, ম্যাজেন্টাসহ নানান রং।
পোশাক ও অনুষঙ্গে এদেশের চিরাচরিত ফোক মোটিফয়ের উপর নিরীক্ষাধর্মী নকশা ব্যবহার করা হয়েছে।
শাড়িতে বৈশাখের বিষয় হিসেবে নানারকম ভিন্নতা আনা হয়েছে। পটচিত্র, ট্রাইবাল মোটিফ, গ্রিক আর্চ মোটিফ, ফ্লাওয়ার মোটিফ ইত্যাদি বিষয়। বোনা তাঁতের শাড়িতে মার্জিত রংয়ে ব্লকপ্রিন্ট, স্ক্রিনপ্রিন্ট, এল্পিক, হাজার-বুটির কাজ করা হয়েছে। এছাড়া কিছু শাড়িতে রয়েছে এমব্রয়ডারি।
প্রধানত টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জে নিজস্ব ডিজাইনে শাড়িগুলো বোনা।
মানিকগঞ্জের বোনা এন্ডি শাড়ির সঙ্গে চাপাইনবাবগঞ্জের বলাকা সিল্কের মিশ্রণে তৈরি শাড়িতে ব্লকপ্রিন্ট, স্ক্রিনপ্রিন্ট, এল্পিক, হাজার-বুটি, এমব্রয়ডারি, চুমকি-পুতি, ভরাট ও কাঁথা স্টিচের কাজ করা হয়েছে।
নরসিংদীর তাঁতে বয়নকরা সুতি টুটন স্ট্রাইপ, টুইল, গুড়িচেক, নাচনাকাঠি, কাঁথা, ডবি ও জ্যাকার্ড নকশায় করা নিজস্ব বুনন নকশায় কাপড় এবং ইয়ার্ন ডায়েড, এন্ডি ও জয়সিল্কয়ের মিশ্র্রণে সালোয়ার কামিজে থাকছে বৈশাখি আয়োজন। রং হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে কোড়া, সাদা, লাল, মেরুন, ইটলাল, অরেঞ্জ, ম্যাজেন্টার নানান পরশ।
ফতুয়া ও টপসে ছাঁটের বৈচিত্র্য।
নকশায় হাতের কাজে শেইডওয়ার্ক, কাঁথাকাজ, মানিকগঞ্জের ভরাট, এপলিকয়ের কাজ করা হয়েছে।
সুতি এন্ডি ও সিল্কে হাতের কাজ ও এমব্রয়ডারি কাজের পাঞ্জাবি থাকছে সাদা, মেরুন, ইটলাল, কালোসহ নানা রংয়ে। প্রধানত জ্যামিতিক নকশায় কাঁথা, সাটিন স্টিচয়ে অলংকৃত এই সমাহার সব বয়সী ক্রেতাকেই আকৃষ্ট করবে। আরও রয়েছে ছেলেদের ফতুয়া ও শার্ট।
নগরদোলা
লাল রং মূখ্য করে সহযোগী রংগুলোর বর্ণীল উপস্থাপনা রয়েছে তাদের পোশাকে।
চিরাচরিত লাল ও সাদার সঙ্গে কোরা, মেরুন, হলুদ, কমলা, বেগুনি, সবুজ, কলাপাতা রংয়ে সেজেছে এবারের নগরদোলার পোশাক।
সালোয়ার কামিজে ব্যবহার করা হয়েছে ব্লকপ্রিন্ট ও স্ক্রিন প্রিন্ট। বৈশাখী আয়োজনে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী হাতের কাজ বা কাঁথাস্টিচের ব্যবহার রয়েছে উল্লেখ করার মতো। মোটিফ হিসেবে এসেছে সন্দেশের বিভিন্ন ছাঁচ।
কাট-ছাঁটে ত্রয়ী’র পোশাকগুলোতে তিন বা তথোধিক রং এর ব্যবহার করা হয়েছে পরিমিতভাবে।
বৈশাখে যেহেতু রংয়ের অনেক ব্যবহার হয় তাই নগরদোলা এবারের বৈশাখি আয়োজনে রংয়ের গ্যারান্টি প্রদান করছে।
সিঙ্গেল কামিজ এবং কূর্তীর মূল্য ৯৯০-১,১৯০ টাকা। সালোয়ার কামিজ ১,৪৫০-২২৯০ টাকা। পাঞ্জাবি ৭৫০-১,২৫০ টাকা। ফতুয়া ৫৫০-৭৫০ টাকা।
নোঙরের তালে তালে ফ্যাশন
খিলগাঁও তালতলা সুপার মার্কেটের এই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার আরিফুল ইসলাম বলেন, “ক্রেতাদের কথা ভেবে বছরের প্রতিটি মৌসুমেই আমরা পোশাক তৈরি করি। এই ধারাবাহিকতায় এবার গরমে আমরা রং-বেরংয়ের টি-শার্ট তৈরি করেছি। ”
দাম ২৬০ থেকে ৩শ’ টাকা।
ফেয়ার টেক্স
আজিজ সুপার মার্কেটের আরেকটি তৈরি পোশাকের দোকান। এদের রয়েছে বাহারি নকশার টি-শার্ট ও পোলো শার্ট।
কাপড় হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে শতভাগ সুতি। নিজস্ব ডিজাইনাদের নকশায় তৈরি এসব পোশাক পাওয়া যাবে লাল, সাদা, নীল, সবুজ, হলুদ, বেগুনি, গোলাপি, কালো প্রভূতি রংয়ে।
বিসর্গ
রাজধানী শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের এই দোকানে রয়েছে গরমে পরার উপযোগী নিত্য নতুন নকশার আরামদায়ক পোশাক। রয়েছে রং বেরংয়ের টপস, থ্রি-পিস, শাড়ি, ফতুয়া, পাঞ্জাবি ও গহনা।
নোঙর ও মুসলিমের শার্ট
মুসলিমের শার্ট
কেরানীগঞ্জের জিলা পরিষদ মার্কেটের এই দেশি পোশাকের প্রতিষ্ঠান প্রয়োজন ও ফ্যাশনের কথা মাথায় রেখে শতভাগ সুতি কাপড়ে তৈরি করেছে ‘ডিজাইন এক্সক্লুসিভ’ নামে আকর্ষণীয় এসব শার্ট।
বাহারি নকশায় এসব শার্ট পাওয়া যাচ্ছে সাদা, কালো, নীল, খয়েরি, হলুদ, সবুজ, লাল, গোলাপি, বেগুনি, ম্যাজেন্টা, ছাই প্রভৃতি রংয়ে।
রঙ
বাংলাদেশে অনেকদিনের পোশাক সংস্কৃতির চর্চায় পুরুষের ‘লুঙ্গির’ সংযোজন সর্বজননন্দিত। ‘লুঙ্গি’ শিল্পের সুদীর্ঘ অভিযাত্রায় তাঁতশিল্পের বিশাল ভূমিকা রয়েছে।
ঐতিহ্যবাহী লুঙ্গির মোটিফ এবারের বৈশাখে নানান শাড়ি, পাঞ্জাবি, ফতুয়া, সালোয়ার-কামিজ, কুর্তা, টি-শার্ট, কটি, টুপি, ব্যাগ, গহনাসহ ইত্যাদিতে বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। বৈশাখয়ের সময় যেহেতু প্রচন্ড গরম থাকে তাই পোশাকগুলোতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আরামদায়ক পাতলা সুতি কাপড় ব্যবহার করা হয়েছে।
স্বাভাবিকভাবে বৈশাখের রং বলতে যে সকল উজ্জ্বল রং চোখের সামনে ভেসে উঠে, যেমন- লাল, কালো, হলুদ, নীল, বেগুনি, মেজেন্টা, সাদা প্রভৃতি ছাড়াও গ্রামবাংলার উজ্জ্বল রংগুলো ব্যবহার হয়েছে পোশাকেগুলোতে। কাজের মাধ্যম হিসেবে এসেছে ব্লক-স্প্রে, স্ক্রিনপ্রিন্ট, এমব্রয়ডারি, কাটওয়ার্ক, কারচুপি, বাটিক ইত্যাদি।
এই আয়োজন নিয়ে ‘বৈশাখের রঙ’ শীর্ষক প্রদর্শনী চলবে ‘রঙ’ এর সকল বিক্রয়কেন্দ্রে।
লোটো
গরমের পুরো সময় জুড়েই পোলো শার্ট, টি-শার্ট এবং ট্যাঙ্ক টপের কদর একটু বেশিই থাকে। তাই বাংলাদেশের তরুণদের পছন্দকে প্রাধান্য দিয়ে লোটোতে থাকছে বিভিন্ন স্টাইলের নিট ফ্যাব্রিক্সের রঙিন পোলো শার্ট এবং টি-শার্ট।
তাদের বিশেষ দামে নির্দিষ্ট টি-শার্ট, মেনজ আন্ডারওয়ার, এবং স্লিপারস প্রতিটি পাওয়া যাবে মাত্র ২৯০ টাকায়।
* ছবি স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের সৌজন্যে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।