ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়। পূর্নিমার চাদ যেন এক ঝলসানো রুটি। কবির এ আহত উচ্চারন এতদিনে বিমূর্ত হয়ে উঠেছে আবু শাকেরের জীবনে। বাবা হারা সদ্য কৈশোর পেরোনো আবু শাকেরের প্রধান জীবিকা মুট বওয়া। মাওয়া-কাওড়াকান্দি ঘাটে তার অবাধ বিচরন।
ঘাঁটে লঞ্চ ভিড়লেই হুড়মুড় করে হামলে পড়ে এক দঙ্গল দুরন্ত কিশোর। গায়ে ময়লা চিটচিটে জামা আর একফালি শতধাছিন্ন তোয়ালে অথবা গামছা। কারো বা পড়নে দেশীয় স্টাইলে বানানো থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট আর কারো বা জোড়াতালি দেওয়া এক টুকরো লুঙ্গি। গায়ে গতরে বেশ শক্ত সামর্থ হলেও আবু শাকের থাকে সবার পিছনে। কারন সংকোচবোধ, অনভিজ্ঞতা।
কেমন ডাগর মায়াবী চোখে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে ছেলেটা। যদি কেউ সাগ্রহে ওকে নিতে চায় তবেই ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয় আবু শাকেরের। সেদিনই সে একমাত্র ছোটবোন আর মাকে নিয়ে দু মুঠো খেতে পায়। ভাগ্য তো আর সবদিন প্রসন্ন হয় না তার।
বরাবরের মতো সেদিনও যাত্রী বোঝাই লঞ্চ এসে থামে ঘাঁটে।
হঠাৎ কর্মচঞ্চল হয়ে ওঠে আবু শাকেরের সহকর্মীরা। ওদের দেখাদেখি সেও পল্টুন থেকে বের হলো। লঞ্চ থেকে যাত্রীরা একে একে নামছে। যাত্রীদের ভিরে হঠাৎ শেফাকে দেখে চোখ আটকে গেল আবু শাকেরের। নিশ্চল, নিস্তব্ধ হয়ে গেল সে।
শেফার সামনে থেকে সরে আসতে চেয়েও পারল না। শেফার নজরও ততক্ষনে আবু শাকেরের উপর। এমন সুদর্শন ও স্বাস্থ্যবান কুলির দিকে তাকিয়ে প্রাথমিক বিরক্তি কাটিয়ে বিস্ময় প্রকাশ পেল শেফার। শাকেরের সাথে আবার দেখা হবে এ স্বপ্নেও ভাবেনি শেফা। কিন্তু একি হাল শাকেরের।
ও শেষ পর্যন্ত কুলিগিরি করছে। নাহ! এ হতে পারেনা। শেফা এটা কিছুতেই মেনে নেবে না।
রাজউক উত্তরা মডেল স্কুল এ্যান্ড কলেজে আবু শাকেরের সহপাঠী ছিল শেফা। সামান্য এক ব্যবসায়ীর ছেলে আবু শাকেরের বন্ধু হতে শিল্পপতির মেয়ে শেফার মোটেও আপত্তি ছিল না।
এভাবেই চলছিল বেশ। হঠাৎ ছন্দপতন ঘটল একদিন। দুই সন্ত্রাসী প্রতিপক্ষের সংঘর্ষের নির্মম বলি হলেন শাকেরের বাবা সাদেক আহমেদ। বাবার অবর্তমানে রাজউক এর মতো কলেজে পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়া তো দুরের কথা ঢাকায় থাকাই দায় হয়ে পড়ল আবু শাকেরের। অবশেষে তল্পিতল্পাসহ গ্রামে ফিরে এল আবু শাকেরের পরিবার।
গ্রামে এসে আর এক ভিলেজ পলিটিক্সের শিকার হল আবু শাকের। চাচাদের সাথে জমিজমা নিয়ে বিরোধ ছিল আগে থেকেই। বাবার মৃত্যুর পর তা পুনরায় মাথাচাড়া দিয়ে উঠল। জোতদার মহাজনদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও সুবিচার পেল না আবু শাকের। অবশেষে নিজেই ভাগ্যকে গড়ার কঠিন চ্যালেঞ্জ নিল আবু শাকের।
শেফার বাবা রায়হান সাহেব শাকেরের ভাগ্য বিপর্যয়ে মর্মাহত হলেন। এমন একটা ট্যালেন্ট ছেলে এভাবে নষ্ট হয়ে যাবে তা তিনি মানতে পারলেন না। তিনি শাকেরের মায়ের সাথে কথা বললেন। শাকেরকে তিনি ঢাকায় চাকরি জুটিয়ে দেবেন এই শর্তে রিমা বেগম অবশেষে রাজি হলেন।
এবার শাকেরের জায়গা হল শেফাদের ফ্ল্যাটে।
আবারো সেই পরিচিত ক্যাম্পাস, সেই আড্ডা, সেই নির্মল বন্ধুত্বের অপূর্ব রসায়ন। শেফার প্রতি কৃতজ্ঞতায় চোখে জল আসে আবু শাকেরের। শেফার এ ঋন কিভাবে শোধ করবে সে। শেফা তো মহাখুশি। তরুনী মনের বাধভাঙ্গা আবেগের শিহরন তার সারা দেহমনে।
কেমন একটা অনন্দময় অনুভব তার চারপাশে খেলা করে। আবু শাকের এখন তার খুব কাছের মানুষ। এখন আর কোন প্রতিযোগীতায় যেতে হবে না তাকে। মনে মনে আত্মপ্রসাধ লাভ করে শেফা। আবু শাকেরের মনোজগতে একচ্ছত্র আধিপত্য শুধ্ইু তার।
সেখানে আর কারো অধিকার নাই।
আবু শাকেরের মনে চলছে ঝড়। কারো অনুগ্রহ নিয়ে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে চায়নি সে। কিন্তু নিয়তি বলে ভিন্ন কথা। যাই হোক শেফার বাবার আস্থা ধরে রাখতে চায় সে।
সে যে অকৃতজ্ঞ নয় এ সত্য জানাতে চায় আবু শাকের। কিন্তু শেফার কি হবে? একটু ভাবে ও। শেফা যে স্বপ্ন দেখতে বড় ভালোবাসে। আবু শাকের কি পারবে শেফার এমন স্বপ্নের অপমৃত্যু ঘটাতে?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।