নিজের সম্পর্কে জানার আর নিজেকে বোঝার চেষ্টা করছি....। । যে বয়সে পুরুষ ভালোবাসে নারীকে,
সে বয়সে তুমি
ভালোবেসেছিলে তোমার মাতৃভূমি, দক্ষিন আফ্রিকাকে।
যে বয়সে পুরুষ প্রার্থনা করে প্রেয়সীর বরমাল্য,
সে বয়সে
তোমার কন্ঠ রুদ্ধ হয়েছে ফাঁসির রজ্জুতে
যে বয়সে
পুরুষের গ্রীবা আকাঙ্খা করে
রমনীয় কোমাল বাহুর ব্যগ্র-মুগ্ধ আলিঙ্গন;
সে বয়সে
তোমাকে আলিঙ্গন করেছে
মৃত্যুর হিমশীতল বাহু।
তোমার কলম নিঃসৃত প্রতিটি পঙ্ক্তির জন্য
যখন তোমার প্রাপ্য ছিল প্রশংসার হীরকচুম্বন,
তখন তোমার প্রাপ্য হয়েছে মৃত্যুহীরক বিষ।
তোমার কবিতা আমরা একটিও পড়িনি আগে,
কিন্তু যেদিন
ওরা তোমাকে রাতের অন্ধকারে
ফাঁসিতে ঝোলালো-
তার পরদিন
সারা পৃথিবীর ভোরের কাগজে
ছাপা হলো তোমার জীবনের শ্রেষ্ঠ কবিতা।
আমরা জানলাম,
কী গভীরভাবেই না তুমি
ভালোবেসেছিলে তোমার প্রিয়তম মাতৃভূমিকে।
আমরা জানলাম,কালো আফ্রিকার
শ্বেত-শত্রুদের বিরুদ্ধে কী ঘৃণাই না ছিল
তোমার বুক জুড়ে, শোণিতে, হৃদয়ে।
আমরা জানলাম
শুধু শব্দ দিয়ে নয় ,শুধু ছন্দ দিয়ে নয়
কখনো কখনো মৃত্যু দিয়েও লিখা হয় কবিতা ।
তুমি কবি, বেঞ্জামিন মোলয়েস,
তুমি মৃত্যু দিয়ে
কবিতাকে বাঁচিয়ে দিয়েছো তার মৃত্যুদশা থেকে।
বেঞ্জামিন মোলয়েস, তুমি এখন সারা-বিশ্বের কবি,
তোমার মা এখন পৃথিবীর তাবৎ কবিদের জননী।
তোমার জন্মভূমি,দক্ষিন আফ্রিকা এখন পৃথিবীর
তাবৎ কবিদের শৃংখলিত মাতৃভূমি।
কারাগারের ফটকে নেলসন ম্যান্ডেলার পত্নী
যখন তোমার শোকাতুরা মাকে বুকে জড়িয়ে ধরেছিলেন,
তখন,মোলয়েস,তখন তোমার মায়ের পুত্রশোকদগ্ধ
বুকের উদ্দেশে পৃথিবীর সর্বকালের শ্রেষ্ট কবিতাগুলি ছুটে গিয়েছিল;
এবং মাথা নত করে ফিরে এসেছিল
লজ্জায়, তোমার সাহসের যোগ্য হয়ে উঠবে বলে।
তোমার ভালবাসার যোগ্য হয়ে উঠবে বলে ।
আমার সমস্ত কবিতাগুলি তোমার উদ্দেশে শ্রদ্ধা জানাতে
আজ সারাদিন মাথা নত করে নীরবতা পালন করেছে।
মধ্যরাতেও আমাকে কলম হাতে জাগিয়ে রেখেছো তুমি।
বেঞ্জামিন মোলয়েস,
তুমি একটুও ভেবো না,তোমার অপূর্ণ
স্বপ্নসমূহ বুকে নিয়ে আমরা জেগে আছি এশিয়ায়-;
তুমি আফ্রিকার মাটিতে ঘুমাও।
লিখেছেনঃ নির্মলেন্দু গুন ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।