টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করতে পারছেন না কুমার সাঙ্গাকারা। ফাইনাল শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে অবশ্য খেই হারাননি এই লঙ্কান চ্যাম্পিয়ন। স্বভাবসুলভ ক্যারিশমায় বেশ গুছিয়েই অবশ্য পরিস্থিতিটা বুঝিয়ে দিলেন তিনি, ‘আমি জানি না কীভাবে এই অনুভূতি প্রকাশ করব। আমি এখন একটি বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য! কত কষ্ট, কত না পাওয়ার বেদনা মিশে আছে এই গৌরবের পেছনে। এর আগে চারবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেও পারিনি।
এই অনুভূতি সত্যিই ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। ’
সাঙ্গাকারা গৌরবের অনুভূতি জানাতে গিয়ে অবশ্য একই সঙ্গে বেশ বিনয়ীও, ‘এই গৌরবের পেছনে কত জনের অবদান আছে, চিন্তা করুন। কারও একার পক্ষে তো আর এই গৌরব বয়ে নিয়ে আসা সম্ভব ছিল না। এর পেছনে মিশে আছে দলের সব সদস্যের ঘাম। মিশে আছে নিজ দেশের মানুষের শুভ কামনা।
প্রত্যেক খেলোয়াড়ের পরিবার-পরিজনের কথা না বললেও অন্যায় করা হবে। আমি এই জয়ে যেমন আনন্দিত, সেই সঙ্গে অনেকটা বিনীতও। ’
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরুর আগ মুহূর্তে ছোট ফরম্যাটের ক্রিকেট থেকে নিজেদের বিদায়ের সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন সাঙ্গাকারা ও জয়াবর্ধনে। এসব ক্ষেত্রে সাধারণত যা হয়, নিজেদের বিদায়বেলাকে স্মরণীয় করে রাখার আকাঙ্ক্ষায় একটা চাপও আপনা-আপনিই তৈরি হয়ে যায়। শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের এই দুই মহারথী কী সেই চাপ অনুভব করেছেন? সংবাদ সম্মেলনে ধেয়ে আসা এমন প্রশ্নের জবাবে বেশ খানিকটা আবেগাপ্লুত এই লঙ্কান গ্রেট।
পুরো ব্যাপারটিকেই তিনি উল্লেখ করলেন একটা ‘পথচলা’ হিসেবে। জানালেন, ‘আজ এই পথচলা শেষ হয়ে গেল। ’ তবে জয়ের কৃতিত্বটা ভাগ করে দিলেন সবার মধ্যেই, ‘টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটকে বিদায় বলে দিয়ে নিজেদের মধ্যে চাপ নিয়ে নিয়েছি কি না, সেটা বলা কঠিন। তবে এই জয়ের কৃতিত্ব সবার। দলের সবাই মিলে আমাদের দুজনের বিদায়বেলাটাকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য সবার কাছে আমাদের কৃতজ্ঞতার সীমা নেই।
এমন একটি দলের অংশ হয়ে খেলা ছাড়তে কে না চাইবে। ’
পুরো ম্যাচটিই সাঙ্গাকারার জন্য ছিল আবেগের। কিন্তু খেলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত আবেগকে প্রশ্রয় দেননি তিনি। তবে খেলা শেষে আবেগের কাছে যে নতিস্বীকার করেননি, সেটা বলে ছলনার আশ্রয় নেননি তিনি, ‘হ্যাঁ, একটু আবেগাক্রান্ত তো ছিলামই। তবে অবশ্যই খেলা শেষ করার আগ পর্যন্ত নয়।
আমি বিশ্বাস করি, আবেগাক্রান্ত হলে আপনি প্রতিপক্ষকে সুবিধা করে দেবেন। তাই ওসব প্রশ্রয় দিইনি। তবে শেষ পর্যন্ত আবেগের কাছে আত্মসমর্পণ না করে আর উপায় হয়তো ছিল না। ’
ভারতের ইনিংসের শেষ চারটি ওভারকে আলাদা করেই রাখতে চাইলেন সাঙ্গাকারা, ‘ওই চারটি ওভার আসলেই ছিল অচিন্তনীয়। ভেবে দেখুন, উইকেটে তখন মহেন্দ্র সিং ধোনির মতো ব্যাটসম্যান।
উইকেটে ফিফটি করে অপরাজিত বিরাট কোহলি। কিন্তু আমাদের বোলাররা কী অসাধারণ বোলিংই না তখন করল। ২৪ বলে যেখানে টি-টোয়েন্টিতে অনেক কিছুই ঘটে যায়, সেখানে ভারত রানই পেল না। আমার তো মনে হয়, এটাই ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট। ১৩০ রান টপকে যাওয়াটা কোনো ব্যাপার নয়।
কিন্তু এমন শক্তিশালী একটা ব্যাটিং লাইনআপকে ১৩০ রানের মধ্যে আটকে দেওয়াটাই আসল। আমাদের বোলিং আজ সত্যিই ছিল অনন্য, অসাধারণ। ’
সংবাদ সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের আবদার মেটাতে হলো সাঙ্গাকে। অনেকেই নিজেদের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডে রেখে দিলেন তাঁর সই। এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় স্যুভেনির যে এটাই।
এই গ্রেটের কলমের ছোঁয়া নিজেদের করে রাখাটাও তো তাঁর প্রতি এক ধরনের সম্মাননা। সাংবাদিকদের জন্য ওটাই যে ছিল তাঁকে স্যালুট করার সর্বোত্তম পন্থা!
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।