আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রেলে আশার আলো

অবহেলিত রেলকে ঘিরে দেখা দিয়েছে আশার আলো। যাত্রীসেবা বাড়াতে নানা প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। গতকাল ভোরের কাগজে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, সামনে ফেব্রুয়ারি মাসেই ঢাকা ও চট্টগ্রামের কয়েকটি রুটে মনোরেল চালুর জোর প্রস্তুতি নিয়েছে রেল বিভাগ। প্রথম দিকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম নগরীর যাত্রীরা এই আধুনিক যাত্রীসেবা পেলেও পরবর্তীতে দেশের আরো বড় কয়েকটি শহরে চালু হবে এই মনোরেল। এছাড়া রাজধানীতে অনেক দিনের কাক্সিক্ষত মেট্রোরেল প্রকল্পও একনেকে অনুমোদন হয়েছে।

রেলকে ঘিরে এসব পরিকল্পনা খুবই আশা জাগানিয়া। জানা গেছে, আগামী ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী, চট্টগ্রাম-নাজিরহাট, চট্টগ্রাম-ফৌজদারহাট, সিটি পোর্টইয়ার্ড, সল্টগোলা, এসআরবিসহ ১৬টি স্টেশন এই মনোরেলের আওতায় আসবে। এ ছাড়াও চট্টগ্রাম থেকে শহরের বিভিন্ন গন্তব্যে সার্কুলার রেল চালানোর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে রেল মন্ত্রণালয়। একই সময়ে ঢাকার কমলাপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা-টঙ্গী, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা, ভৈরব প্রভৃতি স্টেশনে মনোরেল চলবে। এর জন্য ইতোমধ্যেই চীন থেকে দুই বগি বিশিষ্ট ২০ সেট মনোরেল (ডেমো) আনার চুক্তি হয়েছে।

৬ বগি বিশিষ্ট আরো ৫ সেট আনা হবে ভারত থেকে। এসব ট্রেনের সামনে পেছনে থাকবে ডাবল ইঞ্জিন। ফলে ইঞ্জিন পাল্টানোর কোনো দরকার হবে না। এগুলো দেখতে অনেকটা টিউব রেলের মতো। চলবে অনেক দ্রুতগতিতে।

পিক আওয়ারে এক ঘণ্টা বা আধা ঘণ্টা অন্তর অন্তর চালানো হবে গাড়িগুলো। গন্তব্যে পৌঁছে আবার তা সঙ্গে সঙ্গেই ফিরে আসবে। টিকেট কাটার কোনো হুড়োহুড়ি থাকবে না, গাড়িতেই টিকেট কাটার সুবিধা পাবেন যাত্রীরা। এই সার্ভিস যদি ঠিক মতো চলে তাহলে নগরের ১০০ কিলোমিটার দূরত্ব থেকেও অফিস-আদালত, কলেজ-ভার্সিটি করার সুযোগ পাবেন যাত্রীরা। এতে করে রাজধানীর আবাসন চাপও বেশ-খানিকটা লাঘব হতে পারে।

অন্যদিকে রেলও তার হৃত গৌরব ফিরে পাওয়ার দিকে একধাপ এগোবে। জানা গেছে, রেলের বর্তমান অবকাঠামোতেই চলবে আধুনিক মনোরেল। সেটা অবশ্য সাশ্রয়ী ব্যাপার হবে। কিন্তু রেলের অবকাঠামোর বর্তমান যে দশা তাতে কিছু সংশয়-উৎকণ্ঠা সঙ্গত কারণেই দানা বাঁধে। কারণ অনেক স্টেশনই বন্ধ হয়ে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।

বেশ কিছু লাইনেও ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে রেল। এছাড়া লেনের স্বল্পতাও রয়েছে। মনোরেলের মতো সার্ভিস চালু করতে ২ লেনের লাইনগুলোকে তিন বা চার লেনে সম্প্রসারিত করতে হবে। তারপর নগর এলাকায় লেভেল ক্রসিং বা সিগন্যালিং ব্যবস্থায় দুর্বলতা একটা বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিতে পারে। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না এখনো রাজধানী শহরে লেভেল ক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় দুর্ঘটনায় মানুষের করুণ মৃত্যু হয়।

এই তো গত পরশু রাজধানীর খিলগাঁও লেভেল ক্রসিংয়ে এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় রত্মা খন্দকার নামে এক মহিলা নিহত হন এবং তারই দুই সন্তান আহত হন। বিশেষ করে রাজধানীর রেলক্রসিংগুলোতে এখনো সড়ক পথের চলাচল বন্ধ করে রেলের পাস দিতে হয়। মনোরেলের জন্য বারবার সড়ক বন্ধ করতে হলে তা রাজধানীর যানজট সমস্যাকে বাড়িয়ে দিতে পারে সেটি মোকাবেলার বিষয় নিয়েও ভাবতে হবে। সর্বোপরি রেলের ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কথা তো বলাই বাহুল্য। দীর্ঘদিনের জেঁকে বসা অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা এখনো আছে।

নেই পর্যাপ্ত লোকবল। দুর্নীতি আর অনিয়মের অভিযোগে ২০০৬ সাল থেকে রেলে নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। কাজেই বর্তমান অবকাঠামো ও ব্যবস্থাপনার উন্নতি না করে রেলের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়, সেটা নিশ্চয়ই সংশ্লিষ্টদেরও বিবেচনায় আছে। বর্তমান সরকার প্রায়-স্থবির রেলকে গতি দেবার জন্য নানা পদক্ষেপ নিচ্ছেনÑ এটা আশার কথা। আমাদের প্রত্যাশা, রেলে উন্নত সেবা সংযোজনের যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এগুলো যথাসময়ে বাস্তবায়িত হোক।

আর শুধু নতুন সার্ভিস চালু করাই যথেষ্ট নয়, বড় চ্যালেঞ্জ হলো দক্ষতার সঙ্গে তা পরিচালনা।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.