বৃহস্পতিবার রেল মন্ত্রণালয়ে সরকারের আর্থিক অনুদান নেওয়ার সময় নিজেদের দুর্দশা, অনিশ্চয়তা ও প্রত্যাশার কথা শোনালেন তারা।
তারা মনে করেন, আর্থিক অনুদান সাময়িক স্বস্তি আনলেও পরিবারের ভবিষ্যত জীবনযাপনের নিরাপত্তাহীনতা দূর করতে পারে না। সামনের দিনগুলোর কথা ভাবলেই যেন দৃষ্টি লক্ষ্যশূণ্য হয়ে যায়। আর তাই পরিবারের কোনো সদস্যের জন্য কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা চান তারা।
দুপুরে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে হতাহতদের অনুদানের চেক হস্তান্তর করেন রেলমন্ত্রী মজিবুল হক।
বগুড়ার শেরপুর উপজেলার খামারকান্দির পারভৈবানিপুর থেকে স্ত্রী তাহমিনাকে সঙ্গে করে অনুদান নিতে এসেছেন নাশকতায় আহত রেলের নিরাপত্তকর্মী আনসার সদস্য আজাদুর রহমান।
গত বছরের ২ ডিসেম্বর প্রায় মধ্যরাতে বগুড়ার শাহজাহানপুর স্টেশনে দ্বায়িত্ব পালনের সময় জামায়াত-শিবিরকর্মীদের অতর্কিত হামলায় এক পা ও এক চোখ হারিয়েছেন তিনি। অনুদান হিসেবে আজাদুর পেয়েছেন দুই লাখ টাকা।
টাকার চেক পেয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন তার স্ত্রী তাহমিনা।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই দুই লাখ টাকা ছাড়াও আনসার-ভিডিপি থেকে তিন লাখ টাকা অনুদান দিয়েছে।
“এই অনুদান পেয়েও মনে শান্তি পাচ্ছি না। কারণ এই টাকা সাময়িক শান্তি দেয়। কিন্তু আমার স্বামীতো পঙ্গু হয়ে গেল। কীভাবে চলবে আমার সংসার? কী হবে আমার পুত্র তুহিনের?”
“সরকার যদি একটি স্থায়ী সমাধান দিতো,” একটু থেমে দম নিয়ে বলেন তাহমিনা।
তিনি বলেন, “ছেলেটা অষ্টম শ্রেণিতে পড়ছেন।
বড় হতে একটু সময় লাগবে। তাই সরকার আমাকে একটি চাকরি দিলে ভাল হতো। ”
আজাদুর জানান, ওই দিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে শাহজাহানপুর স্টেশনে তারা চারজন কর্মরত ছিলেন।
“হঠাৎ করে জামায়াত-শিবির ঝটিকা মিছিল নিয়ে এসে আক্রমণ করে আমাদের। শুরুতে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।
অশ্রুসিক্ত নয়নে তিনি বলেন, “তাদের আক্রমণে আমার বাম পা ভেঙে যায়, ডান চোখের দৃষ্টি চিরতবে হারিয়ে ফেলি। ”
এসময় চশমা খুলে ক্ষতিগ্রস্ত চোখটি খুলে দেখান আজাদুর।
তিনি বলেন, “দেখুন চোখটা এখনও কেমন ক্ষত-বিক্ষত, দেখতে পাচ্ছি না। কোনোদিন দেখতেও পারবো না বলে চিকিৎসক বলেছেন। ”
আজাদুরের স্ত্রী তাহমিনার মতোই একটা চাকরির আশা করেন ২৩ জানুয়ারি লালমনিরহাটের সিঙ্গিমারি স্টেশনে আহত আনসার সদস্য আজগর আলীর ছেলে এনামুল হক।
দুই লাখ টাকা চেক দেখিয়ে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিবেদককে বলেন, “স্যার, আমি ইন্টামিডিয়েটে পড়ি, সামনে পরীক্ষা। আমাকে একটি চাকরির নিশ্চয়তা দিতে বলেন মন্ত্রীকে। এই টাকাতো শেষ হয়ে যাবে। ”
অনুদান নিতে এসেছিলেন গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী (ভিডিপি) সদস্য সাইফুর রহমান।
“সাইকেল চালিয়ে চর্চলাইট নিয়ে তাদের কাছাকাছি যাওয়ামাত্র একদল জামায়াতকর্মী আমার ওপর হামলা চালায়। তাদের হামলায় চারদিন আমার কোনো জ্ঞান ছিল না। ”
“১৯ দিন লালনিরহাট জেনারেল হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরি আমি,” বলেন সাইফুর।
২৫ জানুয়ারি রংপুরের বড়বাড়ি রেলস্টেশনে কর্বত্যরত অবস্থায় মারা যান আনসার সদস্য আব্দুস সালাম।
তার স্ত্রী মাহমুদা বেগম অনুদানের চেক নেয়ার পর ছেলে মোতাহারুল ইসলামকে দেখিয়ে বলেন, “স্যার আমার ছেলেটাকে একটি চাকরি দেন।
এসময় মন্ত্রীর পাশে থাকা রেলওয়ের মহাপরিচালক তাফাজ্জল হোসেন বলেন, “রেলে যত ধরনের নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয়া হবে। সবগুলোতে আপনার ছেলেকে আবেদন করতে বলবেন। আমরা চাকরি দেব। ”
রেলমন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে এ অনুদান দেয়া হচ্ছে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।