সোয়া কোটি মানুষের রাজধানীতে যাতায়াত নিয়ে দুর্ভোগের শেষ নেই। নগরীর যাত্রীসেবাহীন মধ্যবিত্ত পড়েছেন মহাসংকটে। যাদের ব্যক্তিগত যানবাহন নেই এমনকি ভিড় গিজ গিজ করা পাবলিক বাসে চড়ার অভ্যাসও নেই, তারা কঠিন দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন। গত কয়েক বছর ধরে নগরীতে ট্যাক্সিক্যাব সার্ভিস নেই বললেই চলে। প্রতিদিন ভোরে নগরীর চার আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল, রেলস্টেশন ও সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল হয়ে যে হাজার হাজার যাত্রী ঢাকায় প্রবেশ করে তাদের গন্তব্যে পৌঁছার ভালো কোনো বাহন নেই নগরীতে।
বয়স্ক, অসুস্থ এবং নারী ও শিশু যাত্রীদেরও ভোগান্তির শেষ নেই। পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্যাক্সিক্যাব বিহীন একটি সভ্য নগরী পৃথিবীর কোথাও কল্পনা করা যায় না। অথচ রাজধানীতে ১১ হাজার ট্যাক্সিক্যাব রাস্তায় নামলেও অব্যবস্থাপনা এবং অনিয়মের কারণে বর্তমানে ১ হাজার ক্যাবও রাস্তায় নেই। অন্যদিকে চলতি মাসেই গলাকাটা ভাড়া নিয়ে নতুন ট্যাক্সিক্যাব নামছে ঢাকার রাস্তায়। নতুন ভাড়ায় কোনো মধ্যবিত্তের পক্ষেও ক্যাবে চড়া কঠিন হয়ে পড়বে।
এদিকে সিএনজি অটোরিকশা নিয়েও যাত্রীদের অভিযোগের শেষ নেই। সরকারি নীতিমালা উপেক্ষা করে মিটারে চলছে না সিএনজি অটোরিকশা।
নগর পরিবহনে স্বস্তির জন্য ১৯৯৭ সালে যে ট্যাঙ্কি্যাব সার্ভিসের সূচনা হয়েছিল ১৭ বছর পর তার ৮০ শতাংশই রাস্তা থেকে ওঠে গেছে। এখন দীর্ঘ অপেক্ষার পরও রাস্তায় কোনো ক্যাব মেলে না। আর পাওয়া গেলেও ক্যাবের অবস্থা এতই নাজুক যে যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছার পূর্ব পর্যন্ত নির্বিঘ্ন যাত্রার জন্য হাজারবার দোয়া-দরুদ পড়তে হয়।
এই পরিস্থিতিতে দীর্ঘ অপেক্ষার পর ঢাকার রাস্তায় নতুন করে আরও ৫০০ ট্যাক্সিক্যাব নামতে যাচ্ছে। এর মধ্যে আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ২৫০টি এবং তমা কনস্ট্রাকশন ২৫০টি ট্যাক্সিক্যাবের অনুমোদন পেয়েছে। পর্যায়ক্রমে এ সংখ্যা বাড়ানো হবে। আগামী ১৪ এপ্রিল বাংলা নতুন বছরের প্রথম দিনেই দুই কোম্পানির ৪৭টি ট্যাক্সিক্যাব ঢাকার রাস্তায় নামানোর পরিকল্পনা করেছে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ২৮টি এবং তমা কনস্ট্রাকশন ১৯টি ক্যাব নামাবে।
তবে বিপত্তি শুরু হয়েছে ভাড়া নিয়ে। ট্যাক্সিক্যাবে উঠলেই যাত্রীকে গুনতে হবে ১০০ টাকা। প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া দিতে হবে ৩৪ টাকা। সব মিলিয়ে যাত্রীরা এই ভাড়াকে 'গলাকাটা ভাড়া' হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। নতুন ট্যাক্সিক্যাবের ভাড়ার হার এশিয়ার যে কোনো দেশের ক্যাব সার্ভিসের ভাড়ার চেয়ে বেশি।
কোনো কোনো দেশের তুলনায় চারগুণ। যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অবশ্য ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে বলেছেন, সিএনজি অটোরিকশার ভাড়া আপাতত বাড়ানো হবে না। তিনি বলেছেন, জনগণ প্রত্যাখ্যান করলে ট্যাক্সিক্যাবের ভাড়া পুনর্নির্ধারণ করা হবে। তিনি বলেন, অতীতে যেসব ট্যাক্সিক্যাব রাস্তায় নেমেছে তা ছয় মাসের মধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে। এখন সেগুলোর দিকে তাকানোও যায় না।
যাত্রীদের জন্যও সেগুলো ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি আরও বলেন, আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট এবং তমা জাপান থেকে মানসম্মত গাড়ি আমদানি করেছে। সেনা পরিচালিত ট্যাঙ্গুিলো সাবেক সেনারা চালাবেন। ফলে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। এ ছাড়াও ট্যাঙ্গুিলো ট্র্যাকিং সিস্টেমের আওতায় থাকবে।
সব বিবেচনা করে ভাড়া কিছুটা বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে জনগণ প্রত্যাখ্যান করলে ভাড়া পুনর্নির্ধারণ করা হবে।
উল্লেখ্য, এসি ট্যাক্সিক্যাবের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে প্রথম দুই কিলোমিটার ১০০ টাকা। প্রতি কিলোমিটারের জন্য ৩৪ টাকা। যানজট, সিগন্যালসহ অপেক্ষার সময়ের জন্য প্রতি দুই কিলোমিটারে আরও সাড়ে আট টাকা।
ফোন করে ট্যাক্স ডাকলে বাড়তি দিতে হবে ২০ টাকা। যাত্রীরা বলেছেন, নিম্নবিত্ত দূরের কথা এই ভাড়া দিয়ে মধ্যবিত্তরাও ট্যাক্সিক্যাবে চড়তে পারবেন না।
মিটারে চলে না সিএনজি : এদিকে সিএনজি অটোরিকশায় মিটার নামক একটি ডিভাইস যে সংযুক্ত রয়েছে সেটিই ভুলে গেছেন যাত্রী ও চালক। অথচ সিএনজি অটোরিকশার নীতিমালায় সরকার নির্ধারিত ভাড়ায় সিটি এলাকার যে কোনো গন্তব্যে যাওয়ার বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছে। ঢাকার প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার সিএনজি অটো এখন যাত্রীদের জিম্মি করে চুক্তি ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করে।
রোদ, বৃষ্টিতে কিংবা অফিস সময়ে স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া আদায় করে তারা। চালকরা বলেন, সিএনজি মালিকদের অতিরিক্ত জমা আদায়ের কারণে বাধ্য হয়েই তারা বেশি ভাড়া আদায় করেন। এর জন্য মাঝে মাঝেই পুলিশের মামলা ও গাড়ি আটকের শিকার হতে হয়। কিন্তু তারপরও চুক্তি ভাড়ায় যাত্রী হয়রানি বন্ধ হয় না।
পরিবহন বিশেষজ্ঞ বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. শামসুল হক বলেন, একটি জনবহুল দেশের রাজধানীতে যদি ট্যাক্সিক্যাব সার্ভিস না থাকে তাহলে সভ্যতার মাপকাঠিতে সেটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
তিনি বলেন, ট্যাক্সিক্যাবের ভাড়া মানুষের ক্রয়ক্ষমতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ থাকতে হবে। নইলে সেটা গণমানুষের বাহন হয়ে উঠবে না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।