আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাম্প্রতিক ইভ-টিজিং( ইন্টারনেটে স্কুলছাত্রীকে চড় দেবার ভিডিও ) প্রসংগেঃ

(শুরুতেই নিজের পরিচয় দিয়ে নিই- এই অধমের নাম মাসরুফ হোসেন, আমি বাংলাদেশ পুলিশের একজন ছোটখাটো চাকুরে। "উর্দিপরা লোকগুলো ইন্টেলেকচুয়ালি নানারকম সীমাবদ্ধতায় ভোগে"- এই কথাটি আমার জন্যে সর্বাংশে সত্য। তবুও,বিচিত্র পু্লিশ জীবনের নানা ঘটনা আপনাদের সাথে ভাগাভাগি করে নেয়ার উদ্দেশ্যেই খানে লেখার দুঃসাহস করছি। উল্লেখ্য,এখানে লেখা মতামতগুলো একান্তই আমার ব্যক্তিগত, এর সম্পূর্ণ দায়দায়িত্ব আমার নিজের। )

( আমার আজকের ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে খানিকটা সংক্ষিপ্ত ও পরিবর্তিত)

আমি দেশের বাইরে অবস্থানকালে ফেসবুকের “মজা লস” পেইজে একটি ন্যাক্কারজনক ভিডিও দেখতে পাই যেখানে একজন স্কুলছাত্রীকে তার এক সহপাঠী চড় মারে।

আপাতঃদৃষ্টিতে এটাকে খুন বা ধর্ষণের মত ভয়াবহ কোন অপরাধ বলে মনে না হলেও একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে অনুভব করি- এটি ওই মেয়েটি এবং গোটা সমাজের প্রতি কত ভয়াবহ একটি অন্যায়। “ এই দেশে একটা মেয়ের গায়ে হাত তুলে সেটা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিয়ে পার পেয়ে যাওয়া যায়”- এটি যেন আমাদের গোটা সমাজের বিবেকের গালেই চপেটাঘাতের মত।

দেশে আসার সঙ্গে সঙ্গে মজা লস টিমের সহৃদয় এ্যাডমিন প্যানেল এবং সদস্যদের সহায়তায় আমরা ওই ছেলেটির যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করি। এরপর আমাদের ডিসি স্যারের অনুমতিক্রমে এবং এডিসি স্যারের তদারকিতে আমাদের অফিসার এসআই মনির মাত্র চার ঘন্টার মধ্যে ওই কালপ্রিটকে গ্রেপ্তার করে। অপরাধীকে এত দ্রুত গ্রেপ্তার করার জন্যে আমি আমাদের অফিসারের সাথে সাথে সেই সব বিবেকবান নাগরিকদের ধন্যবাদ দিতে চাই, যাঁরা নিজ থেকে আমাদেরকে তথ্য এবং সময় দিয়ে সহায়তা করেছেন।

২০০ বছরের কলোনিয়াল শাসনের কারণে পুলিশের সাথে সাধারণ মানুষের দূরত্ব একটি নিষ্ঠুর বাস্তবতা। এই বাস্তবতা মাথায় রেখেও আপনারা যেভাবে আমাদের সহায়তা করেছেন তা নিঃসন্দেহে প্রনিধানযোগ্য। পুলিশের সাথে দেশের সাধারণ নাগরিকদের সম্প্রীতির যে নজির এই ঘটনার মাধ্যমে স্থাপিত হল, আমি আশা করি এই বীজ একদিন মহীরূহ হয়ে দেখা দেবে, বাংলাদেশের পুলিশ হবে বিশ্বের সবচাইতে বন্ধুত্বপূর্ণ পুলিশ।

এবার আমি নিজের কিছু ব্যক্তিগত মতামত আপনাদের কাছে প্রকাশ করতে চাইঃ

১) অনেকেই আমাকে “ঘটনার পেছনের ঘটনা” অনুসন্ধান করতে বলেছেন। “কেন ছেলেটা এই কাজ করল, মেয়েটাও নিশ্চয়ই খুব খারাপ”- এধরণের ডজনখানেক মেসেজ আমি পেয়েছি।

আমি সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, কোন কারণই একটি মেয়েকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা এবং সেই ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেবার মত জঘন্য কাজকে জায়েজ করেনা। এটি আইনতঃ দণ্ডনীয় একটি অপরাধ এবং আইন এই ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোর। যারা এধরণের বিকৃত চিন্তা করে থাকেন তারাও মনে মনে একেকজন অপরাধী, শুধু ধরা পড়ার অপেক্ষায় আছেন। যেদিন আপনারা ধরা পড়বেন, প্রার্থনা করুন সেদিন আপনাদের কেসের তদারকিতে যেন আমি বা সমমনা কোন অফিসার না থাকি।

২) ক্যান্টনমেন্ট জোনে (খিলক্ষেত এবং ক্যান্টনমেন্ট থানা) ইভ টিজিং-এর মূল উৎপাটন করতে আমি এবং আমার অধীনস্ত অফিসারেরা বদ্ধপরিকর।

আমার নিজেরও একটি ছোট বোন আছে, ওর প্রতি এরকম কিছু করা হলে আমি যে ব্যবস্থা নিতাম- আমার এলাকায় কেউ ইভ টিজিং করলে তার বিরূদ্ধে ঠিক একই রকম ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমি এই লেখার পাঠকদের অনুরোধ করছি, ক্যান্টনমেন্ট এবং খিলক্ষেতে ইভ-টিজিং এর কোন ঘটনা আপনাদের কানে আসলে সঙ্গে সঙ্গে সরাসরি আমাকে জানান। আমি কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেবার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।

৩) মনে রাখবেন, ইভ টিজিং এর প্রতিকার চাইলে সমাজ যদি ভিকটিমকে বাঁকা চোখে দেখে তবে সেটা সমাজের দোষ, ভিকটিমের নয়। আপনার আশেপাশের সমাজ যদি এরকম পঁচে যাওয়া আচরণ করে সেক্ষেত্রে সমাজকে অগ্রাহ্য করতে শিখুন।

পুলিশ আপনার পাশে আছে এবং থাকবে।

স্ট্যাটাসটি এখানেই শেষ। এবার সচল পাঠকদের উদ্দেশ্যে এই গরীবের সামান্য নিবেদনঃ

ক) আমি আমার এলাকাকে ( ক্যান্টনমেন্ট জোন, খিলক্ষেত ও ক্যান্টনমেন্ট থানা নিয়ে গঠিত) সম্পূর্ণরূপে ঈভটিজিং( এবং অন্যান্য অপরাধ) থেকে মুক্ত করতে চাই। আমার সরাসরি এলাকা না হলেও গুলশান বিভাগের অফিসার হিসেবে আমি ক্যান্টনমেন্ট, খিলক্ষেত ছাড়াও বনানী, ভাটারা, বাড্ডা আর গুলশান থানা এলাকাতে ঈভ টিজিং বা যৌন হয়রানি প্রতিরোধে পুলিশি সহায়তা দিতে আগ্রহী। আমি একেবারেই নবীন কর্মকর্তা ( চাকুরির বয়েস তিন বছরের একটু বেশি) , ২০০ বছরের জঞ্জাল রাতারাতি পালটে দেবার ক্ষমতা আমার নেই।

কিন্তু কোথাও না কোথাও তো শুরু করতে হবে!

খ) বাংলাদেশ পুলিশের হাজারটা বদনাম এবং সীমাবদ্ধতার কথা আমি জানি, বুঝি এবং স্বীকার করে নিই। এইসব কিছু মাথায় নিয়েই আমার ক্ষুদ্র যেটুকু সামর্থ্য আছে সেটুকু নিয়ে সেটুকু দিয়ে কাজ করতে আমি আগ্রহী। সচলে অনেক সদস্য আছেন যাঁরা বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে আমাদেরকে সহায়তা করতে পারেন। এই পরামর্শগুলো অফিসিয়ালি রেকর্ড করার জন্যে আমার অফিসে একটি রেজিস্টার চালু করেছি। আপনাদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি আমার অফিসে এসে এখানে আপনার পরামর্শ লিপিবদ্ধ করার জন্যে।

আমি বসি ক্যান্টনমেন্ট থানার উপরের তলায়, আশে পাশে থাকলে চা এবং লাঞ্চ টাইমে আসলে লাঞ্চের আমন্ত্রণ রইলো!

গ) কয়েকটা পুলিশ পেইজের ঠিকানা দিচ্ছিঃ

https://www.facebook.com/tahsinmashroofhossain - এটা এই গরীবের পেইজ।

https://www.facebook.com/dmp.dhaka- এটা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অফিসিয়াল পেজ। স্বয়ং কমিশনার স্যার নিয়মিত দেখে থাকেন।

https://www.facebook.com/gulshan.crime.div- এটা গুলশান ক্রাইম ডিভিশন তথা আমার বর্তমান কর্মস্থলের পেইজ।

https://www.facebook.com/acpatroluttara- উত্তরা ক্রাইম ডিভিশনের পেইজ।

ঘ) ক্যান্টনমেন্ট ও খিলক্ষেত এলাকায় পুলিশি সহায়তা পেতে আমার সরকারী নম্বরঃ ০১৭১৩৩৯৮৩৪২

সবাইকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা।

মাসরুফ হোসেন
সহকারী পুলিশ কমিশনার
ক্যান্টনমেন্ট জোন
গুলশান ক্রাইম ডিভিশন
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ

ছবি: 

সোর্স: http://www.sachalayatan.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.