কাল এইচএসসি ফাইনাল পরীক্ষা। কিন্তু বাবা-মা কেউই ছেলেটির কান থেকে মোবাইল সরাতে পারছেন না। অথচ এই সময়ে তার মোবাইল বন্ধ করে বইয়ের ভেতর বুদ হয়ে থাকার কথা। জিজ্ঞেস করলে বলছে, দরকার আছে, তোমরা বুঝবে না। হঠাৎ খবর পাওয়া গেল যে, “প্রশ্ন ফাঁস হওয়ায় কাল পরীক্ষা স্থগিত”।
এবার আর ছেলেটির কানে মোবাইল নেই। বাবা-মার চাপে শেষ পর্যন্ত ছেলেটি স্বীকার করতে বাধ্য হল যে, সে পরীক্ষার প্রশ্ন সংগ্রহ করছিল এবং সে চার সেট প্রশ্নই পেয়েছে। শুনে বাবা মা তো ‘থ’।
এ ঘটনা এখন নিত্যদিনের। ফাইনাল পরীক্ষা যেন এখন প্রশ্ন ফাঁসের মহোৎসব।
যদিও প্রশাসনের হোমড়া-চোমড়াদের ভাষায় এটি “শিক্ষার বৈপ্লবিক উন্নয়ন”। তবে আমরা ম্যঙ্গো পিপলের কাছে এইসব “বৈপ্লবিক পরিবর্তন” খুব একটা না। ২০০১ সালের আগ পর্যন্ত পরীক্ষার হলে নকলের বস্তা পাওয়া যেত। ২০০১-৬ সালের সময়টাকে অন্তত পরীক্ষা পদ্ধতির স্বর্ণযুগ বলা চলে।
এখন সময়ের পরিবর্তন হয়েছে।
এখন আর পরীক্ষার হলে নকলের বস্তা নিয়ে যেতে হয় না। কারণ এখন পরীক্ষার আগেই পরীক্ষার প্রশ্নের সব সেট একপ্রকার সরকারী উদ্যোগেই ছাত্র ছাত্রীদের কাছে পৌছানো হয়।
পিএসসি থেকে এইচএসসি। সব পরীক্ষার প্রশ্নই এখন পরীক্ষার আগের রাতে বাতাসে ভেসে বেড়ায়।
পরীক্ষার প্রশ্ন পেয়ে গেলে নকল করার দরকার থাকে কি?
এইবার কিছু সূক্ষ্ম ব্যাপারে বলি।
একটি শিশু যখন ৫ম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় পরীক্ষার আগের রাতে প্রশ্ন পাবে, তখন স্বাভাবিক ভাবেই তার মস্তিষ্কে পরিকল্পিতভাবে ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে যে, লেখাপড়া ভালমত না করলেও চলবে। কারণ আমাদের দেশীয় চাকরির বাজারে জ্ঞানের দরকার খুব একটা নেই। সার্টিফিকেট থাকলেই চলবে। আর এখন তো পরীক্ষার আগের রাতে সব সেট প্রশ্ন পাওয়া যায়। তাহলে পড়ালেখা করার দরকার কি???
একজন ৫ম ছেলের শিক্ষার্থী যখন এই ধরণের মানসিকতা নিয়ে বড় হয়, তখন সেই ছেলে/মেয়ে কিভাবে পড়ালেখার প্রতি মনোযোগি হবে?
এইসবের পেছনে সূক্ষ্ম কোন ষড়যন্ত্র কাজ করতেছে।
শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংসের দুটি সুন্দর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
১, আগে ৮ম শ্রেণীর আগে কোন ফাইনাল পরীক্ষা ছিল না। কারণ শিশুদের পরীক্ষাভীতি একটা সাধারণ ব্যাপার। আর এখন ৫ম শ্রেণিতে ফাইনাল পরীক্ষা চালু করার মাধ্যমে এখন অনেক শিশু পাস না করার কারণে ৫ম শ্রেণী থেকেই পড়ালেখা থেকে ছিটকে পড়ছে, যেখানে সবাই আগে অন্তত ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়তে পারতো এই ধরণের কোন বাঁধা ছাড়াই।
২. পরীক্ষার আগের রাতে প্রশ্ন ফাঁসের মাধ্যমে পরীক্ষাকে একটি নাটকের মঞ্চ বানানো হয়েছে।
পড়ালেখাকে নিরুৎসাহিত করার কি সুন্দর বন্দোবস্ত!!!
একটি বাস্তব গল্প দিয়ে শেষ করছি।
এসএসসি পরীক্ষা চলছে। পরীক্ষার হলের গেটে হঠাৎ এক ভদ্রলোকের আগমন। স্যুট-বুট পরা। তিনি গেটের দারোয়ানের কাছে অনুমতি চাইছেন পরীক্ষার হলে ঢোকার জন্য।
কিন্তু দারোয়ান ঢুকতে দেবে না। ভদ্রলোক বাধ্য হয়ে তার পরিচয় দিলেন। দারোয়ান চমকে উঠে স্যালুট দিয়ে বিনয়ের সাথে ভেতরে ঢুকার জন্য বললেন। ভদ্রলোক কোন দিকে না থাকিয়ে সোজা পরীক্ষা চলছে এমন একটি রুমে ঢুকে পড়লেন। গিয়ে দেখলেন যে, এক পরীক্ষার্থী পেছনের জন থেকে দেখে দেখে লিখছে, আর কর্তব্যরত শিক্ষক দেখেও না দেখে বসে আছেন।
ভদ্রলোককে দেখে হলের সকলেই চমকে ‘থ’ হয়ে গেলেন। ভদ্রলোক ছাত্র যেই ছাত্রটি দেখে দেখে লিখছিল তাকে এবং সাথে সাথে কর্তব্যরত শিক্ষককে বহিষ্কার করে দিলেন।
এই ভদ্রলোককে সবাই ভাল করেই চেনেন। জনাব এহসানুল হক মিলন। জোট সরকারের আমলের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী।
বাংলাদেশে নকল মুক্ত পরীক্ষাব্যবস্থা উপহার দিয়েছেন এই ব্যক্তি। আওয়ামী লীগের পাইকারী মামলা সিরিজের ভ্যানিটি ব্যাগ চুরির মামলাটি তার কপালে জুটেছে।
তার মামলাটি যে সত্য নয়, তা সবাই জানে। যদি সত্যও হয়,
তাহলে আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য এমন, ভ্যানিটি ব্যাগ চোরকেই প্রয়োজন, যিনি এই দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে কলুষমুক্ত করবেন।
আমাদের এমন কোন পিএইচডি হোল্ডারকে দরকার নেই, যিনি লম্বা লম্বা কথা বলে বলে দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করবেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।