এর জন্য কেউ কেউ দুষছেন ট্রাফিক ব্যবস্থাকে; সামনে নিয়ে আসছেন ট্রাফিক পুলিশের অদক্ষতা। তবে পরিকল্পনায় ‘কল্পনার অভাবই’ যে মূল সমস্যা সে চিত্র পাওয়া যাবে নির্মাণাধীন মগবাজার-মৌচাক উড়ালসড়ক লাগোয়া রাস্তায় যাওয়ামাত্র।
বাংলামোটর থেকে মগবাজার সড়কটি শুধু খানাখন্দে ভরা না, উড়ালসড়ক নির্মাণের কাজ চলায় সরুও হয়ে পড়েছে। ফলে সারাদিনই লেগে থাকছে যানজট।
মগবাজার রেলগেট থেকে মগবাজার চৌরাস্তা এবং মৌচাক থেকে মগবাজার রাস্তারও অবস্থা একই।
ফুটপাতগুলো মূল সড়কের সঙ্গে মিলিয়ে দেয়ায় পথচারীদের হাটাচলাও এখন কষ্টসাধ্য।
ফলে প্রতিদিন চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে মগবাজার, মৌচাক, মালিবাগ এলাকায় যাতায়াতকারী নগরবাসীদের। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি উড়ালসড়কটির নির্মাণকাজ উদ্বোধনের পর এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বলে জানালেন এলাকাবাসী।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের তত্ত্বাবধানে এই উড়ালসড়ক নির্মাণকাজ পরিচালনা করছে ভারতের সিমপ্লেক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড ও নাভানার যৌথ উদ্যোগের প্রতিষ্ঠান ‘সিমপ্লেক্স নাভানা জেভি’ এবং চীনা প্রতিষ্ঠান দ্য নাম্বার ফোর মেটালার্জিক্যাল কনস্ট্রাকশন ওভারসিজ কোম্পানি (এমসিসিসি) ও তমা কনস্ট্রাকশন লিমিটেড।
জনদুর্ভোগ কমাতে আগে থেকে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় এমনটা হচ্ছে বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “যারা সড়ক প্রকৌশলী তারা অবশ্যই জানেন কীভাবে লেন পরিষ্কার রেখে রাস্তার উপরে ফ্লাইওভার নির্মাণ করতে হয়।
“তারা যদি এ বিষয়গুলো মেনে কাজে নামতেন তাহলে জনদুর্ভোগ কমানো যেতো। বাংলামোটর থেকে মগবাজার চৌরাস্তা পর্যন্ত রাস্তাটি এতোই ভাঙা যে এর উপর দিয়ে কোনো গাড়ি গেলে সে গাড়ির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। ”
সড়ক প্রকৌশলী এবং ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলো জনগণের দুর্ভোগকে গুরুত্ব দেয় না বলেই এমনটি ঘটছে বলে মনে করেন এই পরিকল্পনাবিদ।
তিনি বলেন, “যে সংস্থাগুলো এ কাজ করছে তাদের যদি কোনো অভিজ্ঞতা না থাকে তাহলে তাদের কাজে নামা উচিত হয়নি।
ভারত, মালয়েশিয়া, হংকংসহ প্রতিবেশী দেশগুলো কিভাবে জনদুর্ভোগ কমাতে কী ধরনের পদক্ষেপ নেয় তা অনুসরণ করলে সুফল পাওয়া যেত। ”
প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী নাজমুল আলমও স্বীকার করলেন জনদুর্ভোগের বিষয়টি। তবে যুৎসই কোনো সমাধান দিতে পারলেন না তিনি।
তিনি দাবি করেন, “বাংলামোটর থেকে মগবাজার পর্যন্ত বিকল্প কোনো রাস্তা না থাকায় আমরা সেখানে দুটি লেন বের করে দিয়েছিলাম, যা খারাপ অবস্থায় থাকলেও এখন কার্পেটিং করা হয়েছে।
“এ এলাকায় কোনো কারণে চলাচল বন্ধ হলে বিপর্যয় নেমে আসবে।
এখন যতটুকু জট ওই এলাকায় হচ্ছে তার চেয়ে অনেক বেশি জট হতো অন্য রাস্তাগুলোতে। ”
নাজমুল আলম বলেন, “সাতরাস্তা থেকে মগবাজার, বাংলামোটর থেকে মগবাজার, মৌচাক থেকে মগবাজারের রাস্তায় সব সময়ই জ্যাম ছিল। তবে ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ চলায় বর্তমানে তা বেড়েছে। কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ অবস্থা থাকতে পারে। ”
দুর্ভোগ এড়াতে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সাতরাস্তা থেকে বেগুনবাড়ি হাতিরঝিল এলাকায় একটি বিকল্প রাস্তা ব্যবহারে আমরা নির্দেশনা দিয়েছি।
”
চার লেনের এ ফ্লাইওভারের দৈর্ঘ্য হবে সোয়া ৮ কিলোমিটার। এটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৭২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। দুই বছরের মধ্যে ফ্লাইওভারটির নির্মাণকাজ শেষ করার কথা রয়েছে।
ফ্লাইওভারটি সাতরাস্তা, এফডিসি, মগবাজার, মৌচাক, শান্তিনগর, মালিবাগ, চৌধুরীপাড়া, রমনা থানাসহ মোট আটটি মোড় এবং মগবাজার-মালিবাগসহ দুটি রেলক্রসিং অতিক্রম করবে।
চার লেনবিশিষ্ট এ ফ্লাইওভারে ওঠানামার জন্য আটটি লুপ থাকবে।
ফ্লাইওভার থেকে তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা, এফডিসি, মগবাজার, হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল, বাংলামোটর, মগবাজার, মালিবাগ, রাজারবাগ পুলিশ লাইন ও শান্তিনগর মোড়ে ওঠানামার ব্যবস্থা রাখা হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।