আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। কি বলব। একটা কথা আছে ,অল্প শোকে কাতর , আর অধিক শোকে পাথর । আমি শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েছি। আমার খুব কাছের বন্ধু ছিল আরিফি ।
ছিলো বলছি কারন সে এখন আর এ পৃথিবীতে অবশিষ্ট নেই। গত কাল এক সড়ক দূর্ঘটনায় সে ইহ লোকের মায়া ছেড়ে চলে গেছে না ফেরার দেশে। সে আর আমার কাছে ফিরে আসবে না ভাবতেই ভিতর টা কেমন যেন করে ওঠে। সে আমাকে বড় একা করে দিয়ে চলে গেল। আমার খুব কম বন্ধু তার মধ্যে আরিফ ছিল অন্যতম।
আমি তার জীবদ্দশায় তাকে কখনও বলিনি তুই আমার প্রিয় বন্ধু, বরং সব সময় তাকে গাল দিতাম, ধমক দিতাম, মশকারী করতাম, টিটকারী করতাম। সে এত ভালো ছিলো যে আমার এত খারাপ ব্যবহার সহ্য হরে নিত হাসিমুখে। সে আমাকে ভুল বুঝে দুরে সরে যায়নি বরং সে সকল বন্ধুদের চেয়ে সবচেয়ে বেশি যোগাযোগ রক্ষা করেছে আমার সাথে। আরিফের পুরো নাম মোঃ আরিফুল ইসলাম, বাড়ী ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলায়। সে ছিল আমার ক্লাশমেট।
ক্লাশমেট থেকে বন্ধু। আমার হাত ধরে সে ছাত্র রাজনীতির সাথে যুক্ত হয়। আমার উৎসাহে ও সহযোগীতায় সে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির একটি ইউনিটের সভাপতি হয়। সর্বশেষ পড়ালেখা শেষ করে বাংলাদেশ পলিশ বাহিনীর এস আই হিসাবে যোগ দেয়। আমি সব সময় তাকে বিভিন্ন ভাবে উৎসাহ ,সহযোগীতা ও পরামর্শ দিয়েছি।
বলেছি পুলিশের চাকরী করে সবচেয়ে বেশী মানুষের সেবা করা যায়। আমি তাকে সর্বদা দূর্ণীতি না করে দেশ সেবার তাগিদ দিয়েছি , সে একমত হয়েছে আমার সাথে। কিছু দিন আগে সে শখ করে একটি মটর সাইকেল কেনে। এটাই তার জন্য কাল হয়ে ওঠে। সে আমার বকুনী খেয়ে দূরে সরে যায়নি কিন্ত এখন কেন সে মটর সাইকেল চালিয়ে চির দিনের জন্য দূরে চলে গেল, চলে গেল না ফেরা দেশে।
আমি প্রথম তার মটর সাইকেল দূর্ঘটনার খবর পাই আকাশের নিকট থেকে। প্রথমে ব্যপারটা বিশ্বাস করতে পারি নাই, আমি পরশু দিন তার সাথে ফোনে কথা বললাম,তার বিয়ে নিয়ে কথা বললাম, সম্ভাব্য পাত্রীর সন্ধান দিলাম আর সে কিনা আমাকে না বলে চলে যাবে এত দূরে। আমি কয়েকজন কে ফোন দিয়ে ঘটনা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে চেষ্টা করলাম। তার পরেও ব্যপারটা মেনে নিতে পারিছি না। আরিফকে নিয়ে আমার অনেক পরিকল্পনা ছিল।
আমি আগেই বলে রেখেছিলাম তোর ট্রেনিংমেটদের সবার সাথে যোগাযোগ করে সারাদেশ ব্যপি পুলিশি সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করবি। পুলিশের ভাবমূর্তি বাড়বে তোদের মত পুলিশ অফিসারের ব্যবহারের মাধ্যমে। মোটর সাইকেল কেনার পর ও সবাইকে জানিয়েছিল এসএমএস এর মাধ্যমে আর আমার সাথে ফোনে মটরসাইকেল নিয়ে অনেক কথা বলেছিল। আমিও ওকে পরামর্শ দিয়েছিলাম সাবধানে মটর সাইকেল চালানোর জন্য। সে হয়তো সাবধানী ছিল কিন্তু ঘাতক ট্রাক তাকে ধাক্কা মেরে আর কাছ থেকে সরিয়ে নিলো চির দিনের জন্য।
সে আমাকে বলে ছিলো ছুটি নিয়ে বাড়িতে আছে, দুই এক দিনের মধ্যে ঢাকায় এসে আমা সাথে দেখা করবে। সে তার কথা রাখতো পারলো না। সে কোন দিন আমার সাথে দেখা করবে না ভাবতেই আমার গা শিউরে ওঠে। আমি তার মৃত্যু শোকে এতটাই আবেগপ্লুত ছিলাম তাই তাৎখনিকভাবে সবাইকে আমার বন্ধুর মৃত্যু বার্তা জানাতে পারি নাই। আপনরা সবাই দোয়া করবেন যেন আমার প্রিয় বন্ধু পরপারে স্বর্গীয় স্বাধ পায়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।