সরকার দলের সাবেক মন্ত্রী ও প্রভাবশালীদের পর এবার কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কঠোর অবস্থান নিয়েছে। হলফনামা এবং বিভিন্নভাবে প্রাপ্ত তথ্য যাচাই-বাছাইয়ে কোনো ছাড় পাচ্ছেন না সরকারি দলের এমপি ও কেন্দ্রীয় নেতারা। এমনকি সাবেক মন্ত্রীদের বিরুদ্ধেও দুদকের অবস্থান অনমনীয়। জানা গেছে, প্রভাবশালীদের সম্পর্কে দুদক তথ্য নিচ্ছে রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ ব্যাংক ও ভূমি রেজিস্ট্রেশন অধিদফতরসহ বিভিন্ন সূত্র থেকে। নির্বাচন কমিশন হলফনামা থেকেও তথ্য-উপাত্ত পাচ্ছে দুদকের তদন্ত কর্মকর্তারা।
এ ছাড়া অনেক বেনামি চিঠি আমলে নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে অনেকের বিরুদ্ধে। সূত্র জানায়, দুদকের এই কাজে খুশি নন সরকারি দলের অনেক সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমান সংসদের এমপি। তারা ক্ষোভের কথা প্রকাশ করলেও লাভ হচ্ছে না। কারণ, খোদ প্রধানমন্ত্রী সুশাসনের পক্ষে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে চান।
এ কারণে গত পাঁচ বছর এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মরত বিতর্কিত কাউকে নতুন করে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না। অধিকতর গ্রহণযোগ্যদের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে নেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর শক্ত অবস্থানের কারণেই দুর্নীতির অভিযোগ সরকারি দলের যে প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে উত্থাপন হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রধানমন্ত্রী সবসময় আইনের শাসনের স্বাভাবিক গতিতে বিশ্বাস করেন। যে কারণে সব প্রতিষ্ঠান নিরপেক্ষভাবে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে।
সূত্রমতে, সরকারি দলের সাতজন প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে তদন্ত করছে দুদক। গত পাঁচ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উপদেষ্টা থেকে শুরু করে প্রভাবশালী মন্ত্রীদের দুদক জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। বাংলাদেশে এভাবে দুদক অফিসে মন্ত্রীদের ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদের সংস্কৃতি অতীতে ছিল না। এই সরকারই এ ব্যাপারে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সরকারের সাবেক প্রভাবশালী মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও এমপি যাদের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধান করা হয়েছে তারা হলেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক, সাবেক গণপূর্ত ও গৃহায়ন প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান খান, সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান, কক্সবাজার-৪ আসনের এমপি আবদুর রহমান বদি, ঢাকা-১৪ আসনের এমপি আসলামুল হক, রাজশাহী-৪ আসনের এমপি এনামুল হক।
নতুন করে তদন্ত শুরু হয়েছে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন ও বিএম মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে। এরপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হবে কেন্দ্রীয় কমিটির আরও কিছু নেতার বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগের। এ ব্যাপারে দুদক কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিন চুপপুু বলেন, আওয়ামী লীগের কোনো নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেলে প্রথমে অনুসন্ধান করা হবে। সেটা যদি তদন্তযোগ্য হয় তাহলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আওয়ামী লীগ সূত্রমতে, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের কেন্দ্রীয় নেতা, মন্ত্রী, এমপিদের কঠোর ভাষায় হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন যার বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যাবে সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দুর্নীতির ব্যাপারে কোনো ছাড় নয়। এ ছাড়া জাতীয় নির্বাচনের কয়েকদিন পর দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হলফনামা থেকে সংবাদপত্রে লেখালেখি নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা সভানেত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। সে সময় শেখ হাসিনা বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোনো রকমের ছাড় দেওয়া হবে না। যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে তাকেই মোকাবিলা করে অভিযোগ খণ্ডন করতে হবে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এটি একটি ইতিবাচক দিক।
ইতিপূর্বে আর কখনোই এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকেই এমন ইঙ্গিত পেয়ে দুদক এ কাজ শুরু করেছে। কারণ তিনি ঘোষণা দিয়েছেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। তবে আমাদের দেখতে হবে দুদক কতটা সফল হয়। যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে প্রভাবমুক্ত হয়ে ব্যবস্থা নিতে পারে কিনা সেটাই দেখার বিষয়।
তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন নেতাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করার প্রক্রিয়া স্বাধীন কমিশন হিসেবে দুদকের সামনে বড় সুযোগ। দুদক যে নখদন্তহীন নয় তা প্রমাণ করা এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্ভব হবে। তবে অতীতের মতো ‘লোক দেখানো’ তদন্ত হলে জনগণ আরেক দফায় দুদকের ওপর থেকে আস্থা হারাবে বলেও মনে করেন ড. ইফতেখার। জানা গেছে, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হলফনামায় অনেকের সম্পদ বিবরণী অস্বাভাবিক বেড়েছে বলে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। প্রার্থীদের মধ্যে অনেকেই নবম জাতীয় সংসদের এমপি ও মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রভাবশালী নেতা।
প্রার্থীদের অনেকেরই নবম সংসদ নির্বাচনে দেওয়া হলফনামার তুলনায় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেওয়া হলফনামায় সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে, যা সৎ ও স্বাভাবিক উপায়ে অর্জন করা সম্ভব নয়। বিভিন্নভাবে পাওয়া অভিযোগ ও নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হলফনামার ভিত্তিতে দুদক সংশ্লিষ্টদের সম্পদের উৎস খুঁজতে এবং অবৈধ সম্পদ রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নেয়। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করছে। যখন খুশি, যেভাবে খুশি সরকারদলীয় এমপি-মন্ত্রীদের ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এতেই প্রমাণ হয়, আওয়ামী লীগ সরকার দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয় না।
এটাই শেখ হাসিনার সরকারের নীতি। এর মাধ্যমে প্রমাণ হচ্ছে দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়তে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আওয়ামী লীগের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য নূহ-উল আলম লেনিন বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার দুর্নীতি দমন কমিশনকে স্বাধীনতা দিয়েছে, শক্তিশালী করেছে। যে কারণেই সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ এবং তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে। কিন্তু বিএনপি আমলে মন্ত্রী-এমপি তো দূরে থাক একজন সমর্থকের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে পারেনি।
তারা দুর্নীতি দমন কমিশনকে দন্তবিহীন বাঘ বানিয়ে রেখে গিয়েছিল। আমরা শক্তিশালী করেছি।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।