লিখে খাই, সবার ভাল চাই
বাস চলছে দ্রুত গতিতে। পাশের সিটে বসা এক ভদ্রলোক। কখনও চোখ বুজে ঝিমুচ্ছেন। আবার কখনও ধ্যানমগ্ন হয়ে জানালা দিয়ে প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখছেন। হঠাৎ প্রশ্ন, আচ্ছা বলুন তো আমরা শান্তির জন্য কি করতে পারি? কোথাও শান্তি খুঁজে পাচ্ছি না।
দাদাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তিনি উত্তর দিয়েছেন শান্তির মা মইরা গেছে। তিনি একটি উদাহরণ দিয়ে বললেন, দেখ আমার মনে হচ্ছে আল্লাহ নিজেই তাঁর কাছে শান্তির পুঁটলি রেখে দিয়েছেন। দাদাকে বললাম, এটা কেমন? এবার দাদা বললেন, শোন কোরআন-হাদিসে আছে আল্লাহ সব রুহ একসঙ্গে তৈরি করে রেখেছেন। এখন পর্যায়ক্রমে তা পৃথিবীতে পাঠাচ্ছেন। আমার মনে হয়, আল্লাহ একদিন সব রুহকে ডেকে বলেছেন, তোমরা তো পরে পৃথিবীতে যাবে।
সেখানে বসবাস করতে হবে। নানা ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হবে। খেতে হবে। ঘুমাতে হবে। কেউ রাজা হবে, কেউ প্রজা হবে।
তোমরা পৃথিবীতে কেমন ভাবে থাকবে তা এখান থেকেই ঠিক করে যাও। ওই যে কোণায় একটি রুম দেখছো সেখানে তোমাদের জন্য সব কিছু রাখা আছে। একে একে গিয়ে তোমরা তা নিয়ে আসো। মনে রাখবে, ওই রুম থেকে যা নিয়ে আসবে তা-ই কিন্তু পৃথিবীতে যাবে তোমাদের সঙ্গে। নির্দেশ পেয়ে সব রুহ গিয়ে সেই রুমে হাজির।
কার আগে কে কি আনবে তা নিয়ে কাড়াকাড়ি। যে আগে পৌঁছতে পেরেছে সে ভাল জিনিস পেয়েছে। যে পরে পৌঁছেছে সে খারাপ জিনিস পেয়েছে। ওই রুমের এক কোণে পড়ে ছিল শান্তির ছোট্ট একটি পুঁটলি। তাড়াহুড়ায় সে দিকে কারও নজর ছিল না।
সবাই যার সামনে যে পুঁটলি পেয়েছে তা-ই নিয়ে খুশি মনে চলে এসেছে। শেষ পর্যন্ত ওই রুমে শান্তির পুঁটলি রয়েই গেছে। কেউ আর সেটি আনতে পারেনি। ছোট্ট বলে কেউ এর দিকে ফিরেও তাকায়নি। তাই পৃথিবীতে ধন দৌলত সব থাকলেও নেই শান্তি।
বুঝলা নাতি। এ হলো আমার থিওরি। নিশ্চয়ই তুমিও আমার সঙ্গে একমত হবা। পাশের ভদ্রলোক বললেন, ভাই দিন যত যাচ্ছে ততই পৃথিবী অধৈর্য হয়ে উঠছে। কেউ কাউকে মান্য করছে না।
স্ত্রী তার স্বামীকে, সন্তান তার পিতাকে, উজির তার রাজাকে। যে যার মতো করে চলছে। এ চলা যে কত ভয়ঙ্কর তা টের পাচ্ছে ভুক্তভোগী সবাই। ক্ষমতা নাকি মানুষকে অন্ধ করে ফেলে। মনীষীদের এ কথা এতদিন বিশ্বাস না করলেও এখন দিনে দিনে এর প্রতি অন্ধবিশ্বাস জমে উঠেছে।
কি রাষ্ট্র ক্ষমতা, কি প্রশাসনিক ক্ষমতা, কি দলীয় ক্ষমতা, কি সাংগঠনিক ক্ষমতা, কি সাংসারিক ক্ষমতাÑ সর্বত্র একই অবস্থা। কথায় বলে না- যে যায় লঙ্কায় সে হয় রাবণ। এমন যদি হয় চিত্র তাহলে আমরা যাবো কোথায়? ভাল কথা বলা যায়। বক্তৃতা বিবৃতিতে ভাল কথা বলে মুখে ফেনা তোলা যায়। যারা ফেনা তোলেন তারা কতটুকু কথার সঙ্গে মিল রেখে চলেন? আবার সমাজে ভাল চলাও তো কঠিন।
ভাল চলতে কেউ দিতে চায় না। কেউ না কেউ পেছনে লেগেই থাকবে। সমাজটা এমন হয়েছে যে, কেউ ভাল চললে তার পেছনে সবাই উঠেপড়ে লেগে যায়। এ অবস্থায় আমরা যাবো কোথায়? পরিস্থিতি ওই দুই বন্ধুর মতো। তারা রাতে একসঙ্গে হেঁটে যাচ্ছিলেন কোথাও।
গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছে। এতে পিচ্ছিল হয়ে উঠেছে কাঁচা রাস্তা। এক বন্ধু আরেকজনকে চেপে ধরে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। পিছলে যেন পড়ে না যান। তারা হাঁটছেন সমানে।
কিছুদূর যাওয়ার পর তাদের একজন পা পিছলে পড়ে যান। সঙ্গে সঙ্গে আকাশে বিজলি চমকায়। পড়ে যাওয়া বন্ধুটি বলে ওঠেন, ওই দেখছস আল্লায় ফালাইছে তো ফালাইছে আবার লাইট মাইরা দ্যাহে ঠিকঠাক মতো পড়ছি কিনা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।