আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নাবালক হরতাল, ধর্মাচারী মোল্লামৌলবি ও বামাচারী সুযোগসন্ধানী সম্প্রদায়

লেখার চেয়ে পড়ায় আগ্রহী। ধার্মিক, পরমতসহিষ্ণু। বাহ্যত সুনির্দিষ্ট ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে এবং সমসাময়িক রাজনৈতিক বাস্তবতার কারণে (!) বামজোট হরতাল আহ্বান করে ১৮ ডিসেম্বর ২০১২। তাদের দাবি ছিল যুদ্ধাপরাধের বিচার ত্বরান্বিত করা, জামায়াত-শিবিরসহ ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করা এবং তাজরিন গার্মেন্টেসের দুর্ঘটনায় দায়ীদের বিচার ইত্যাদি। কিন্তু আসলে কি তাই? প্রশ্নটার উত্তর দিতেই হয়।

যুদ্ধাপরাধের বিচারের ব্যাপক গণ-রায় নিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। বামরাও এ ক্ষমতার ভাগিদার বা অংশীদার। কারণ সারা পৃথিবীতে বামদের যা অবস্থা, তাতে করে কারো কোলে না বসে ক্ষমতার স্বাদ গ্রহণ তাদের জন্য নিতান্ত আকাশ-কুসুম কল্পনা। বামদের এ করুণ অবস্থার জন্য কি শুধু পুঁজিবাদী ষড়যন্ত্রই দায়ী? এতে বামদের কি ন্যূনতম স্খলন নেই? ভ্রষ্টতা নেই? আমাদের দেশের বামদের কথা ধরলেই তো সত্য বেরিয়ে পড়ে। ষাট-সত্তরের দশকে, স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে বামদের সে-কি প্রভাব আর টগবগে উত্তেজনা! প্ুঁজিবাদী বা মিশ্র শাসন-ব্যবস্থার বিরুদ্ধে তাদের তখন মরণপণ জেহাদ ও লাল নিশানের জঙ্গি তৎপরতা! সেই-সব বামাচারী মুজাহিদরা এখন কোথায়? এখন সবাই পুঁজিবাদী-স্বার্থবাদী আওয়ামী লীগ-বিএনপিতে আশ্রিত ও পোষিত।

সে-সব সাবেক বাম নেতাদের দিকে তাকালে মনেই হবে না, এরা কখনো বামনেতা ছিলেন বা এদেশে কখনো জোরদার বাম আন্দোলন ছিল। বিএনপিতে যারা যোগ দিয়েছেন, তারা তো ভীষণ সাচ্চা মুসলমান! তাই ইমানদার (?) জামায়াতি ভাইদের মতো এ দুনিয়ায় অনেক জান্নাতি সুখভোগ করেছেন তারা। এদের স্খলন, সুখভোগ ও প্রাপ্তিযোগ দেখে আওয়ামী লীগ-আশ্রিত বা প্রশ্রয়প্রাপ্ত বামদের ভেতরে অপ্রাপ্তির হতাশা চাগাড় দিয়ে ওঠে। যারা সরাসরি আওয়ামী পরিবারের সদস্য, তারা ইতিমধ্যে স্বর্গসুখের পরশ পেয়েছেন। প্রশ্রয়প্রাপ্ত বামরা এবারে আওয়ামী লীগের কোলে বসে পেছনের সকল অপ্রাপ্তির ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চেষ্টা করছেন! ইতিমধ্যে অনেকে মার্কস কথিত বুর্জোয়াদেরও ছাড়িয়ে গেছেন! মাশা-আল্লাহ, এটা তাদের যোগ্যতা এবং এর প্রশংসা না করে উপায় নেই।

আর এবারে আওয়ামী লীগের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে তাদের যে প্রপ্তি ঘটেছে এবং ঘটতে যাচ্ছে, এর শুকরিয়া আদায় করার জন্যই মূলত এই হরতাল। কারণ গুটিকয় জামায়াত-শিবির বৃহৎ গণ-সমর্থনের একটা দাবিকে বাঞ্চাল করতে পারবে না। যতটুকু উৎপাত তারা করতে পারছে, সে আমাদের গুটিকয় পঁচা শামুকের কারণে। পঁচা শামুকগুলো সরিয়ে নিলে জামায়াত-শিবির আবারও একাত্তর পরবর্তী অবস্থার মতো নিস্তব্ধ হয়ে যাবে। বামরা এখন আওয়ামী লীগের কোলেই বাস করে, শোয়-ঘুমায়, খায়-দায়।

করারই কথা। আওয়ামী লীগই তাদের শেষ আশ্রয়। বাম কোনো স্রোত এদেশে আর জন্ম নেবে না। কথাটা বলতে খুব কষ্ট হয়। কিন্তু বাস্তবতা তো অস্বীকার করা যায় না।

তারা এখন সে আশ্রয়কে নির্বিঘ্ন করার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন মাত্র। এমন কি সাম্রাজ্যবাদী-পুঁজিবাদী আমেরিকা যদি দিন-দুপুরে, ভর আলোতে বলে ওঠে যে, একেবারে উত্তর আকাশে মৌলবাদের ঝকঝকে চাঁদ দেখা যাচ্ছে, তখন আমাদের দেশের বামরা সমস্বরে বলতে থাকবেন, আমরা তো একই সঙ্গে মৌলবাদের অসংখ্য চকচকে তারাও দেখতে পাচ্ছি! কারণ, আদর্শিক শূন্যতায় ও অপ্রাপ্তির হতাশায় তাদের চোখে যে-সর্ষে ফুল ভেসে উঠছে, একে তারা মৌলবাদে পরিণত করতে চান। বর্তমানে তাদের একমাত্র লক্ষ্য, যে-কয়দিন বেঁচে থাকা যায়, তাতে পেছনের সব ক্ষতি-অপ্রাপ্তি সুদে-আসলে পুষিয়ে নেওয়া। তা না হলে, যে-আওয়ামী লীগ সংবিধানে বিসমিল্লাহকে বহাল রাখতে চায়, ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করার বিষয়টিতে বামদের থেকে বিপরীত মেরুতে, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রাখার পক্ষে, আবার নিজেরাই ধর্ম-ব্যবসায় জড়িত, তাজরিন ফ্যাশনের মালিকের পক্ষে নানা রকমের সাফাই তুলে ধরায় ব্যস্ত, তাদেরই সমর্থন নিয়ে বামদের সফল হরতাল! হা-হা-হা-হা-হা-হা-হা-হা-হা! মাগো, হাসি আর থামতে চায় না। হ্যাঁ, বামরা যেহেতু এখন সরকারের কোলে আছে, সেই সূত্রে তারা নির্বিঘ্নে হরতাল করতেই পারেন।

সরকারও সেই-সব হরতালেই সাহায্য করবেন, যেখানে সরাসরি তার স্বার্থ জড়িত। তা না হলে আনু মুহাম্মদের মতো ব্যক্তিও তো এ সরকারের আমলেই হরতালের সময় আক্রান্ত হয়েছেন। তাই বামরা ১৮ ডিসেম্বরের হরতাল নিয়ে নাচুক। এদের সমর্থক অন্ধ সাংবাদিক-কলামিস্টরা এ হরতালের সফলতা নিয়ে জারিগান তৈরি করুক। নেশা না লাগলেও আমরা তা শুনে অভ্যস্ত হয়ে গেছি।

কিন্তু বামদের এ নর্তন-কুর্দন দেখে মোল্লাদেরও নাচার সাধ হল। নাবালক শিশুরা প্রায়ই অযৌক্তিক বায়না করে। একে অপরের সঙ্গে পাল্লা দিতে চায় নিজের অবস্থানকে যাচাই বা তুলনা না করেই। ১৮ তারিখের হরতালের প্রতিবাদে ২০ তারিখে তারা নাবালক একটা হরতাল আহ্বান করে বসে। মোল্লারা ভুলে গেলেন যে, তাদের ‘আম্মাজান’ ম্যাডাম খালেদা তো এখন ক্ষমতায় নেই! ‘সৎ-মা’ কি আর সেই সুযোগ দেবেন? ‘সৎ-মা’ বললাম এ জন্য যে হাসিনা এদের কোলে নিতে চাইলেও এরা উঠতে চান না।

জানি না, এর পেছনে কী রহস্য আছে? আবার এ সব মোল্লা-মৌলবির হরতালের ধরনটাও বেশ মজার। আগে এরা কি-যেন তথাকথিত ইসলামী নানা দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সমগ্র দেশব্যাপী হরতাল আহ্বান করেন। কিন্তু হরতালের দিন যমুনার ওপারে হরতাল শিথিল করেন এই অজুহাতে যে, ম্যাডাম খালেদা ওই এলাকা সফরে যাবেন! তখন হাসতে হাসতে পেঠে খিল ধরে গিয়েছিল। তাই এখন আর হাসবো না। ইসলামের দাবিদাওয়া খালেদার কাছে নস্যি? খালেদাই বড়? এবারেও এ-সব মোল্লা-মৌলবি তাই করলেন।

প্রথমত, একগুচ্ছ ইসলামী দল এ হরতালের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বিবৃতি দেন। অবশ্য জামাত সমর্থন দিয়েছিল। এরা তো কোনো সুযোগ হাতছাড়া করতে চায় না। অন্যদিকে এক পত্রিকার ভাষ্য মতে, ২০ ডিসেম্বর বে-সরকারি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড ‘বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া’র মিটিং বিধায় দুপুরের পর থেকেই হরতাল শিথিল! আবার সরকার-সমর্থিত বামদের পিকেটারবিহীন হরতাল দেখে এরা ঘোষণা করেন, হরতালে পিকেটিং হবে না। হরতাল যা হওয়ার তাই হল।

ইমানের দাবি নিয়ে সবাই ঘরে বসে রইল। আসলে এদের বামবিরোধিতা একটা ফ্যাশনমাত্র। বামদের বাসায় দাওয়াত দিলে এরাই কুরআনখানি করে খেয়ে-দেয়ে, হাদিয়া নিয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলেন, ভবিষ্যতে তুলবেন। এরা আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির কোনো আসনে নিজের প্রার্থিতার বৈধতা তুলে ধরার চেষ্টা করছেন শুধু। তবে বামরা হরতালের দিনে গুটিকয় জায়গায় ঢোল-ডুগগি বাজিয়েছেন।

সব জায়গায় এ-সব শুষ্ক (?) গান পরিবেশনের মানুষও নাই, শ্রোতাও নাই। তাই এর অনুসরণে মোল্লা-মৌলবিরা রাস্তার মোড়ে মোড়ে ওয়াজের ব্যবস্থা করতে পারতেন। এতে অন্তত একটা দিনে নগরবাসীর কানে সুকৌশলে ধর্মবিষয়ক কথাবার্তা ঢুকিয়ে দেওয়া যেত। সামনের বার এসব বালখিল্য রকমের হরতাল দেওয়ার সময় বিষয়টি বিবেচনার দাবি রাখে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.