গাছের সারীর ভিতর দিয়ে অনেক পথ ধরে হাঁটছিলাম আমি। নাগরিক সভ্যতার কোন খবর আর চাই না শুনতে। গত দুমাস ধরে একটার পর একটা ভয়াবহ খবর দেখে চলেছি। আর গত ক'দিন একটানা ফেইসবুক, ব্লগ, পত্রিকা, টিভি এমন কি বিদেশি টেলিভিশনেও একই খবর; ভেঙ্গে পরা বহুতল ভবন। মৃত্, আহত, স্বজনহারা মানুষের আকুতি।
উদ্ধার কর্মি, মানবিক আবেদনে সারা দেয়া মানুষের অস্থিরতা, আবেদন। রক্ত, অক্সিজেন, আলো, অন্ধকার এ্যাম্বুলেণ্স ফায়ার ব্রিগেডের শব্দ এবং অসংখ্য ক্ষত বিক্ষত ছবি আমার শরীরের রোমে রোমে যেন বাসা বেঁধে ফেলেছে। আমি কিছুতেই এর বাইরে যেতে পারছি না। প্রত্যহ কাজ গুলো যেন ঘোরের ভিতর করছি চারপাশে লাশের সারী আর স্বজনের আর্তনাদ সহ্য করতে পারিনা; উদ্ধার কর্মির আপ্রাণ চেষ্টার শেষ টুকু দেখার অপেক্ষায় তবু উন্মুখ হয়ে থাকি। আর ঘুমের ভিতর আমি যেন অন্ধকার গুহায় মৃতর সারীর মধ্যে দমবন্ধ অক্সিজেন হীনতায় প্রচণ্ড গরমে যন্ত্রনায় অস্থির হয়ে বারেবারে জেগে উঠছি।
অসহায় এতিম হয়ে যাওয়া শিশুদের মুখগুলো আমার চারপাশে ভীড় করে থাকে।
এসব থেকে মুক্তি নিতে আমি প্রকৃতির শরনাপন্ন হয়ে গাছের সারীর ভিতর হাঁটতে থাকি। প্রকৃতিও এবার যেন মরা জরাজীর্ণ হয়ে আছে। এই সময়ে সবুজ হয়ে উঠা পাতা এখনও কুঁকড়ে আছে এবার। শুকনো খটখটে ডালপালা্ চারপাশে।
বসন্তের ফুলের ভুবনে নিদারুন হাহাকার।
বছরটা শুরুর পর থেকেই পৃথিবী ব্যাপী একটার পর একটা মানুষের সৃষ্টি ক্ষতবিক্ষত, রক্তাত খবর অস্থির করে রাখছে। প্যালেষ্টাইন, ইজরাইল,গাজা গুলি আর বোমার আঘাতে ক্ষত বিক্ষত মানুষ। ক্রমাগত ভাবে চলছে এক ''ইগোর'' লড়াই। ছোট ছোট শিশুরা হাতে প্লেকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়েছে এবার, "ডোন্ট কিল আস"।
এমনই সভ্য হয়েছে মানুষের সভ্যতা যে শিশুদের বাঁচার আবেদন নিয়ে দাঁড়াতে হচ্ছে। গুলাগুলির সাথে সিরিয়ায় ক্যামিকেল বোমা। কতরকম দুঃসহ, নৃসংশভাবে মানুষ মারার আয়োজন!
দেশে ভয়ানক নৃশংস ভাবে কুপিয়ে জবাই করে মানুষ হত্যা। জ্বলিয়ে পুড়িয়ে স্বহিংসতা উপাসনালয় থেকে গৃহ ধ্বংস স্তুপ বানিয়ে ধর্মের নামে বড় বড় কথা, বকধার্মিকদের। আস্তিক নাস্তিকের অহেতুক হুজোগ তুলে দেশবাসীর দায় ভার ধর্মের নামে নিজ কাধে তুলে নেয়ার পায়তাড়ায় জ্বালাও পুড়াও মেরে ফেলার স্বহিংশতায় এক অস্থির উন্মাদনা চলাচ্ছে দেশ জুড়ে।
শান্তিপূর্ণ ভাবে সমাধানে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ এক আলোর দিশা। কিন্তু দেশ ব্যাপী যুবকদের অর্তকিত আক্রমণের ভয় ইসলামের নামে জেহাদীর হাতে। রক্তেরধারা বইছে দেশজুড়ে। হাতের মুঠোয় জীবন নিয়ে তবু তারা পথে।
এর মাঝে আমেরিকায় নিরিহ মানুষের উপর বোমা ম্যারাথনে।
তাও শান্তির ধর্ম ইসলামের নামে। দুদিনের মাথায় কারখানায় আগুন লেগে অসংখ্য মানুষের মৃত্যু আহত হওয়ার খবর।
ভাবি কেন এই হিংস্রতা মানুষের মাঝে। কেন এই ভয়ংকর মরণাস্ত্র সব মানুষকে মারার জন্য মানুষ তৈরী করছে। দেশে দেশে সুস্থ মানুষদের পঙ্গু করে দিচ্ছে অস্ত্রের আঘাতে।
মানুষ মেরে পঙ্গু করে দিচ্ছে পরিবার।
পরিবেশের বিরুপ প্রক্রিয়া চারপাশে; গাছ লতাপাতা ফুলের সহজ প্রগলভতা কেমন স্থবির হয়ে আছে। এ আরেক রকম যুদ্ধ নিজের পায়ে কুড়াল মারার মতন। অথবা যে গাছে বসা সেই ডাল কেটে ফেলার মতন যেন।
মানুষ এত বেশী ব্যস্ত হানাহানিতে এর মাঝে পরিবেশবিদরা বলে যাচ্ছে পরিবেশের কথা।
সে কথা কতটা কানে যাচ্ছে মানুষের, কত জন স্বচেতন হয়ে উঠছে পরিবেশ বিষয়ে্ যা অত্যন্ত জরুরী এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য।
প্রকৃতি হিংস্র হয়ে উঠলে সকল সম্পদ ধন ক্ষমতা এক নিমিষে উড়িয়ে নিতে পারে, ডুবিয়ে দিতে পারে। এ আমরা দেখছি, জানি। যা রোধ করার ক্ষমতা মানুষের সীমিত। কিন্তু প্রকৃতির পরিবেশ রক্ষায় সহায়তা না করে ধ্বংস করে প্রকৃতিকে বিরুপ করে যাচ্ছি অহরোহ।
কিছুদিন আগে মারা গেলেন আয়রন লেডী নামে খ্যাত মার্গরেট থেচার। প্রকৃতি ক্ষয়ের একধরনের সূত্রপাত তিনি শুরু করেন। সুপেয় পানিরে ইজারা ব্যাক্তিগত কোম্পানির হাতে তুলে দিয়ে। পানি বাবদ কত খরচ করতে হয় পৌর এলাকা গুলোতে; খুবই স্বল্প পরিমান কিন্তু ব্যাক্তি মালিকানায় পরে কিছু মানুষ পানির দখলদারী নিয়ে হয়ে উঠল অর্থবান। জলের বয়ে চলার গতি রোধ হতে থাকল।
তৃষ্ণার জল নাই সাধারনের ঘরে আর পৃথিবী হারাতে থাকল সুপেয় পানির পরিমান। দরিদ্র জনগণ মাটি খুঁড়ে কাঁদাজল খেয়ে হলো নানা রকম রোগে আক্রন্ত। আর স্প্রিং ওয়াটার চলে যেত লাগল ক্ষমতাবানের দখলে।
যদিও পৃথিবীর তিন ভাগ জল কিন্তু পানিয় জল সুমিষ্ট জল একশ ভাগের মধ্যে মোটে তিনভাগ পরিমাণ।
থ্যাচারের আরোপিত নিয়ম মোতাবেক প্রাইভেট কোম্পানিগুলো এখন নদী, খাল, হ্রদ থেকে তুলে নিতে থাকল সুপেয় পানি সংরক্ষণ করে বোতলে বিক্রি হতে লাগল ।
আগে যে একটা অবস্থা ছিল রিসাইকেল করা সেটা কমে গেলো। আর এক সাথে অনেক পানি তুলে নিয়ে পানিশূন্য করা হতে থাকল ধরিত্রী।
এই বছর গত ক' মাসে একই রকম তিনটা খবর অবাক হওয়ার মতন। একটা লোক ঘরসহ মাটিতে দেবে গেলো। তাকে কিছুতেই তুলে আনা গেল না।
জীবন্ত কবর হয়ে গেলো ঘরের ভিতর। এরপর এক লোক গলফ খেলতে গিয়ে ঢুকে পড়ল মাটির নীচে। গলফ খেলার মাঠ তৈরী করতে সবচেয়ে বেশী পয়সা খরচ করা হয়। মেম্বারশীপ নিতে কোন কোন গলফ ক্লাবে ৫০ হাজার ডলার বা বেশী পর্যন্ত ফি দিতে হয় এমন দামী খেলা বড় লোকরা খেলেন। মনে পড়ে আশির দশকে ক্যণ্টনমেন্টের শহীদ মইনুল রোডের নতুন তৈরী বিল্ডিং এর পিছনে তাকালে গাছগাছড়ায় ছাওয়া সবুজ বন ভূমির গাছ কেটে মিহীন ঘাসের গালিচায় মুড়ে দিয়ে, গলফ ফিল্ড বানানো হয়েছিল দেখতে পেতাম।
গরিব দেশের ধনী রাজা; ধনীদের খেলা আমদানী করেছিল বাংলাদেশে।
এমন পয়সা ঢালা মাঠের নীচে ফোকর আর সেই ফোকরে তলিয়ে গেল খেলোয়ার আমেরিকায়। সর্বশেষ ঘটনাটা বাড়ির সামনে পার্কিং স্পটে রাখা গাড়ি একটার পর একটা ঢুকে পরছে গর্তে।
সাজানো আবাসিক এলাকায় ঘর বাড়ি, খেলার মাঠে চোরাবালির উপদ্রপ যেন।
হঠাৎ করে এমন ফোকরগুলো তৈরী হচ্ছে কেন ভূগর্ভে।
এর নিশ্চয় কারণ আছে। আর সে কারণটি হচ্ছে পানিশূন্যতা। ভূগর্ভতলে যে পানি থাকার কথা। সে পানি উঠিয়ে নেয়া হচ্ছে। নীচে ভার সাম্য হারাচ্ছে পৃথিবী্।
উপরের সুরৌম্য দালান কোঠা ফোকলা হয়ে পরছে ভিতরে ভিতরে।
বাধ বেঁধে পানি আটকিয়ে বাংলাদেশের নদীগুলো করা হয়েছে চড়া পরা। যেটা উপর দিয়ে দেখা যায়। কিন্তু ভিতরে পৃথিবীর ভূপৃষ্টের অভ্যন্তরে যে পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে ধীরে; তা চোখে দেখা যায় না। কিন্তু না দেখা ঈশ্বরকে যেমন বিশ্বাস করে মানুষ তেমন বিশ্বাস করতে হবে ভালোবাসতে হবে প্রকৃতিকে।
প্রকৃতির ভালো থাকার সাথে জড়িয়ে আছে নিজেদের ভালো থাকা। ফুল, ফল, আহারের ব্যবস্থা। হানাহানি,ধ্বংস যজ্ঞ বন্ধ করো মানুষ বন্ধ করো বোমা বিস্ফোরক তৈরী। সাম্য এবং সমতা রাখো পৃথিবীর সাথে জীবন ধারনের। পানিরে অপর নাম জীবন, সে জীবনকে ক্ষমতার হাতে বন্ধি করো না।
ভালোবাসায় আপ্লুত হই কিছু বিজ্ঞানী সচেতন মানুষ পৃথিবী ব্যাপী অসংখ্য মানুষকে সচেতন করে দিচ্ছেন মৌলিক ভিত্তির প্রতি নজর দেয়ার জন্য। কিন্তু তাদের জ্ঞান চাপা পরে যাচ্ছে পৃথিবী ব্যাপী রাজনীতি আর ক্ষমতার দাপটে। স্থাপিত হয় কোর্পরেট ঘণ্টায় দুইশত লিটার পানি তুলে ফেলে যারা ভূপৃষ্ট থেকে। ফসল আবাদের মাঠ শুঁষে পানির বানিজ্য চলছে, পাইপের মাধ্যমে চলে যাচ্ছে এ প্রান্তের পানি পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে। স্বাভাবিকতা হরন করে এ যেন "প্লাষ্টিক র্সাজারি সুন্দরী" কেটে ছেটে এক জায়গার চামড়া অন্য জায়গায় লাগিয়ে দেয়ার মতন।
আপতঃ সুন্দরী ভুগতে থাকে যার বিরুপ প্রতিক্রিয়ায় আজীবন। পৃথিবীর স্বাভাবিকতা তেমনি বাধা প্রাপ্ত হচ্ছে।
হাঁটতে হাঁটতে এমন সব কথাই মনের আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। তার সাথে প্রকৃতির কিছু বৈচিত্রের ছবি ধারন করছিলাম সব ভুলে শান্ত হতে তবু সব মনের গহীনে শুকতারা হয়ে জ্বলছে এক একটা ক্ষত।
তবে শান্তনা পাই কিছু নতুন মানুষের খবর জেনে।
এই হৃদয়হীন পৃথিবীতে কিছু অসাধারন হৃদয়বান মানুষের খবর জানতে পারলাম। যাদের কথা হয়ত কখনও জানা হত না। উদ্ধার কাজে, সেবা শুশ্রুষায়, মানবতায় যারা একখণ্ড হীরের টুকরো।
একটা অনুরোধ থাকবে এমন মানুষদের সমন্বয়ে একটা ট্রেনিং প্রাপ্ত সংগঠন গড়া হোক সারা বাংলাদেশে। যেন কোন প্রয়োজনে তারা সুশৃঙ্খল ভাবে কালক্ষেপন না করে কাজ শুরু করতে পারেন সাহায্য সহযোগীতায়।
আর সারা দেশে প্রয়োজনীয় উদ্ধার কর্মের প্রশিক্ষন চালু হোক। শিক্ষা ক্ষেত্রে পাঠদেয়া হোক জরুরী সময়ে নিজেকে রক্ষা করা এবং পাশের মানুষকে সাহায্য করার মহানুভবতা। দেশের ভবন গুলো পরীক্ষা করা হোক জরুরী ভিত্তিতে। শুধু কারকানা নয় আকাশ চুম্বি দালানগুলো কতটা নিরাপদ যে কোন প্রকার ভূমি ধ্বসে। সময় থাকতে সে পদক্ষেপ নেয়া দরকার জীবন বাঁচানোর জন্য।
এমন নয় যে শুধু অন্যরা মরবে আমি ভালো থাকব। যে কেউ ঝুঁকিতে পরতে পারে। অনেক অর্থ সম্পদ রক্ষা করতে পারবে না কিছুই তাই সব চেয়ে বড় প্রয়োজন সততা আর সততা। সততার ভিত্তিতে গড়ে তোলা মাটি থেকে ফসল, দালান, ইট, কাঠ, খাবার। সততাই বয়ে আনবে সুন্দর জীবন পরিবার থেকে দেশে।
সেই অনুশীলন চলুক সর্বক্ষেত্র সাধারণ থেকে নেতা নেত্রীর মধ্যে । সাথে ভালোবাসা মানুষের সাথে প্রকৃতির জন্য সুস্থ রাখার জন্য, থাকার জন্য। ফুলে ফলে সুন্দরের জন্য।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।