আজ একযুগ ধরে ঢাকায় আছি অন্যের বাড়িতে ভাড়াটিয়া হয়ে। কখনো এবাড়ি কখনো ওবাড়ি ঘুরে শেষ মেষ যেটা বুঝলাম আমরা বোধকরি ইনকাম করি মাস শেষে চকচকে সিংহভাগ নোটগুলো সেই সব তথাকথিত বাড়িওয়ালাদের হাতে তুলে দিতে। পাঠকদের মধ্যে যারা আমার মতো ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় আজও ভাড়াটিয়া তারা নিশ্চয়ই আমার সাথে একমত হবেন এবিষয়ে যে মোট ইনকামের প্রায় ৬০-৭০ ভাগ খরচা হয় শুধু রাজধানীতে মাথা গোঁজার ঠাঁইটার জন্য। মূল্যস্ফিতির এই বাজারে আমার আপনার ইনকাম যতটুকুই বাড়ে বাড়ি ভাড়া বাড়ে তার চেয়ে অনেক বেশী হারে। সত্যি বলতে কি এর কোন হারই নেই।
যার যেমন খুশি এডভান্স, বছর বছর বৃদ্ধি যেন তাদের নিত্যকার। মেইন রোড থেকে গলি, গলি থেকে নতুন ঢাকা, টাইলস এর বাড়ী ছেড়ে মোজাইক করা বাড়ী, সেটা ছেড়ে সিমেন্ট এর পাকা, তারপর আধপাকা, তারও পরে সেমি পাকা, গ্যাস ছাড়া-সহ, বিশাল রুম ছেড়ে খুপড়ির মতো রুম, একক সুবিধাদি থেকে সাবলেট এরকম অসংখ্য এডজাষ্টমেন্ট করতে করতে হাপিয়েঁ গেছি। আর পারি না। সাধের মা-বাবা, ভাই বোন, স্ত্রী সন্তান গ্রামের বাড়িতে রেখে মেসের ভাগাভাগি করা বিছানায় শুয়ে ভাবি.....ইস আমার বাবার যদি ঢাকায় একটা জায়গা বা বাড়ি থাকতো ! তবে আর যাযাবরের মতো বাড়ি বদল করতে হতো না বছর বছর। সরকার, আইন বা কোন বিধি নিষেধ কি নেই যে বাড়ী ভাড়া বাড়ানো, ভাড়াটিয়ার স্বার্থ দেখবে এমন কিছু।
যতটা কাঠ কয়লা পুড়িয়ে একটা সাধ ও সাধ্যের বাসা ভাড়া পাওয়া যায়; হয়তো এমন করে খুঁজলে স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা স্বর্গ বুঝিয়ে দিতেন অনাআসে। বাড়ী ওয়ালাদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি....আপনারা কি কোনভাবে আমাদের (ভাড়াটিয়াদের) মানুষ ভাবতে পারেন ? একটা পত্রিকায় পড়েছিলাম-ঢাকা জেলা ম্যাজিসট্রেটের অফিসে চাইলে বাড়ীওয়ালার বিপক্ষে নালিশ করা যায়। কিন্তু দূর্বল চিত্ত আমি পারিনা এই ভেবে যে কজনের সাথে লড়বো? আর কোর্ট কাচারী করার মত অত টাকা থাকলে কি আর ভাড়াটিয়া থাকি! যদি কোন যথাযত কর্তৃপক্ষ দেশে থাকেন যারা পারেন জীবন জীবিকার জন্য ঢাকায় বাধ্য হয়ে থাকা এসব পরিবারের একটা সহনশীল মাত্রার ভাড়া নীতি বা এধরনের কিছু একটা; যা আমাদের ভাসমান থেকে স্থির করবে। কেননা আমাদের যেমন ঢাকাকে জরুরী তেমনি ঢাকার ও চাই আমাদের মতো কর্মী বাহিনী রাজধানীকে সচল রাখার মতো। ....আমরা টাইলস্, লিফট, জেনারেটর, সিকিউরিটি, পার্কি, মাঠ, জিম, পুল ওয়ালা এপার্টমেন্ট বা বাড়ি চাইনা।
শুধু একটা বাসা হবে....সারাদিন হাড় ভাঙ্গা খাটুনি খেটে এসে মা-বাবা, স্ত্রী-সন্তানের মুখ দেখবো প্রতিদিন। ....আমাকে ক্ষমা করবেন ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।