আমরা হেরে যাইনি। এশিয়া কাপ না জিতলেও তোমরা আমাদের হৃদয় জয় করেছ। আমরা গর্বিত বহুল আলোচিত বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ডের অভিযুক্ত রফিকুল ইসলাম শাকিলের পরিবারের সদস্যরা ৬ দিন ধরে লাপাত্তা। এ পরিবারের সদস্যদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নম্বরগুলোও বন্ধ রয়েছে। বাংলানিউজের অনুসন্ধানে জানা গেছে, পটুয়াখালী শহরের ফায়ার সার্ভিস সড়কে কর ভবন সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা মো. আনসার মিয়ার ছোট ছেলে মো. রফিকুল ইসলাম শাকিল।
বাবা পটুয়াখালী কর বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী।
শাকিলের ওই পৈত্রিক বাড়িতে শাকিলকে ধরতে একাধিকবার তল্লাশি চালিয়েছে পটুয়াখালী সদর থানা পুলিশ। এ সময় ওই বাড়িতে শাকিলের ভাবী ও গৃহকর্মী ছাড়া কাউকে পাওয়া যায়নি।
জাহানারা পারভিন নামে শাকিলের ভাবী বাংলানিউজকে বলেন, “শাকিল ভালো ছেলে। ওর পক্ষে এ কাজ করা অস্বাভাবিক।
”
এলাকাবাসী বাংলানিউজকে জানান, ‘‘৫ ভাই-বোনের মধ্যে শাকিল সবার ছোট হওয়ায় ছোটবেলা থেকেই একটু রগচটা ছিল। মা-বাবার অতি আদরের কারণেই শাকিলের আজ এ অবস্থা। ছোটবেলা থেকেই এলাকায় বেপরোয়া জীবন-যাপন করতো শাকিল। প্রায় প্রতিদিন বিভিন্ন অপরাধের নালিশ যেতো তার বাবার কাছে। ’’
তবে, স্কুল বা কলেজ জীবনে শাকিলের রাজনীতির পছন্দ-অপছন্দের কোনো খবর এলাকাবাসী বলতে না পারলেও তার বড় ভাই পটুয়াখালী শহর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. শাহিন মিয়া ওরফে ট্যাক্স শাহিন মোবাইল ফোনে বাংলানিউজকে বলেন, “আমি যখন ছাত্রদলের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম, তখন শাকিল আমাকে এবং আমার দলকে অপছন্দ করতো।
ছোটবেলা থেকেই শাকিল ছাত্রলীগ ঘরানার বন্ধুদের সঙ্গে মিশতো বেশি। ”
তিনি আরও বলেন, “সে কখনও ছাত্রদল করেনি। ছাত্রলীগের সঙ্গেই লাইন ঘাট (যোগোযোগ রক্ষা) করে শাকিল জগন্নাথে ভর্তি হয়েছিল। ”
শাকিলের দ্বারা হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা অসম্ভব বলেও দাবি করেন বড় ভাই শাহিন।
তাহলে পত্রিকা এবং টিভি ফুটেজে যে শাকিলকে চিহ্নিত করা হয়েছে আপনার ভাই সেই শাকিল কিনা-এমন প্রশ্নের জবাব তিনি কৌশলে এড়িয়ে গিয়ে বলেন, “আমার মনে হয়, ব্যপারটি নিয়ে পুলিশ এবং আপনারা বেশি বাড়াবাড়ি করছেন।
”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শাকিলের বাল্যবন্ধু ও জেলা ছাত্রলীগের এক নেতা বাংলানিউজকে জানান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উপ-নাট্য সম্পাদক জহির উদ্দিন বাবরের সঙ্গে নিয়মিত চলাফেরা করতেন শাকিল। কয়েক বছর আগে ছাত্রী উত্ত্যক্ত করার জেরে দুই গ্র“পের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় শাকিলকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল।
শাকিলের বিরুদ্ধে জবিতে সাংবাদিকদের মারধরের অভিযোগ রয়েছে বলেও শাকিলের ওই বন্ধু জানান।
তবে শাকিল পটুয়াখালী জেলা ছাত্রদলের সঙ্গে কখনোই যুক্ত ছিলেন না বলে বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছেন জেলা ছাত্রদলের সাবেক ও বর্তমান সভাপতি এবং একাধিক সাধারণ সম্পাদক।
এদিকে, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শাকিলের বাবা মো. আনসার মিয়া পটুয়াখালী কর বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী হয়েও অঢেল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন।
তার রয়েছে পটুয়াখালী শহরের ফায়ার সার্ভিস রোডে কর ভবনের সামনে চারতলা বিশিষ্ট সুরম্য একটি অট্টালিকা। এছাড়া তাদের গ্রামের বাড়ি বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলায় রয়েছে আরেকটি পাকা বাড়ি।
অভিযোগ রয়েছে, ৪ বছর আগে অবসর নিলেও পটুয়াখালী কর অফিসে বহাল তবিয়তে থেকে এখনও কর সংক্রান্ত ফাইলের কাজ করে যাচ্ছেন মো. আনসার মিয়া। তার এতোসব সম্পদ অবৈধ উপায়ে অর্জিত বলেও গোটা এলাকায় গুঞ্জন রয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা কর বিভাগের অতিরিক্ত সহকারী কর কমিশনার মো. আজিজুল হক মোল্লা বাংলানিউজকে জানান, আনসার মিয়ার পরিবারের ৩টি কর সংক্রান্ত ফাইল থাকায় করভবনে তিনি নিয়মিত আসেন এবং কর বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত এমএলএসএস কর্মচারী হিসেবে আনসার মিয়া বিভিন্ন জনের ফাইলের কাজও করে থাকেন।
পটুয়াখালীর সহকারী পুলিশ সুপার(সদর) মো. আনসার উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ডে জড়িত শাকিলকে গ্রেফতারে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ। পত্রিকা থেকে শাকিলের ছবি সংগ্রহ করে জেলার প্রতিটি উপজেলায় সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠানো হয়েছে।
জেলার মধ্যে কোথাও শাকিলকে দেখামাত্র গ্রেফতারের নির্দেশ দেওয়া আছে বলেও তিনি জানান।
পটুয়াখালী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, শাকিলকে গ্রেফতারের আপ্রাণ চেষ্টা চলছে। এ লক্ষ্যে তার পটুয়াখালীর বাড়িতে একাধিকবার তল্লাশি চালানো হয়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।