আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বেগম রোকেয়ার ‘নারীস্থান’, সৌরশক্তি'র স্বপ্ন ও আমাদের ‘দীনতমা শ্মশান’

নারী জাগরণের অগ্রদূত বলে পরিচিত বেগম রোকেয়া আজ থেকে ১০০ বছরেরও বেশি আগে সৌর শক্তি ব্যাবহার করে গোটা দেশের জ্বালানি চাহিদা মেটানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং তার সেই স্বপ্ন আমদানী বা বিদেশী প্রযুক্তি নির্ভর ছিলনা, দেশীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘নানাবিধ বৈজ্ঞানিক অনুশীলনে’র মাধ্যমেই তা অর্জনের কথা সে সময় তিনি বলেছিলেন। প্রখর যুক্তিবাদি ও বিজ্ঞানমনষ্ক এই সংগ্রামী মানুষটি’র দুরদর্শীতা ও স্বপ্ন দেখবার ক্ষমতা দেখে বিষ্মিত হতে হয়। আজ ৯ ডিসেম্বর, তার জন্ম ও মৃত্যু দিবসে তাকে গভীর শ্রদ্ধা জানাই। রোকেয়া ১৯০৫ সালে ইন্ডিয়ান লেডিস ম্যাগাজিনে প্রকাশিত ‘সুলতানাজ ড্রিম’ বা ‘সুলতানার স্বপ্ন’ নামের লেখায় “নারীস্থান” নামের এমন একটি দেশের ছবি একেছেন যেখানে রীতিমত সোলার হিটার ব্যাবহার হয়- “‘আপনারা রাধেন কিরুপে? কোথাও তো অগ্নি জ্বালাবার স্থান দেখিতেছিনা?’ তিনি বলিলেন, ‘সূর্য্যাত্তাপে রান্না হয়’। “ নারীস্থানে এভাবে ‘সোলার হিটার’ ব্যাবহার ছাড়াও ‘সোলার কালেক্টর’ ব্যাবহার করে আহরিত শক্তি ‘থারমাল রিজার্ভার’-এ রাখার ব্যাবস্থা আছে- “তাহারা অল্পকালের মধ্যে একটি যন্ত্র নির্মাণ করিলেন, তদ্দারা সূর্য্যাত্তাপ সংগ্রহ করা যায়।

কেবল ইহাই নহে- তাহারা প্রচুর পরিমাণে ঐ উত্তাপ সংগ্রহ করিয়া রাখিতে এবং ইচ্ছামত যথা তথা বিতরণ করিতে পারেন। ” সূর্যতাপ ব্যাবহারের আকাঙ্খার ইতিহাস বহুপ্রাচীণ হলেও বেগম রোকেয়া যে সময়ে শক্তির উৎস হিসেবে সূর্যতাপ এবং হাইড্রোজেনের ব্যাবহারের মাধ্যমে একটা গোটা দেশের রান্না-বান্না থেকে শুরু করে পরিবহন এমনকি প্রতিরক্ষার জন্য সৌর শক্তি নির্ভর যুদ্ধাস্ত্রের কথা পর্যন্ত ভাবতে পেরেছিলেন তখন শুধু ভারতবর্ষই নয়, গোটা দুনিয়ায় খুব কম মানুষ পাওয়া যাবে যারা তার মতো অতো দূর দেখতে পেরেছিলেন। অথচ আজও বাংলাদেশের তথাকথিত বিশেষজ্ঞ, কনসালটেন্ট, প্রকৌশলী, রাজনীতিবিদ, শাসক ও পরিকল্পনাবিদেরা এমনকি সারা দুনিয়া ব্যাপি নবায়ণ যোগ্য জ্বালানি’র ব্যাপক বিকাশ দেখেও এ ক্ষেত্রে জাতীয় সক্ষমতা অর্জনের কথা ভাবতে পারেন না, বিদেশ থেকে সোলার প্যানেল আমদানী করে গ্রামে গঞ্জে দুই চারটা বাতি জ্বালানো পর্যন্তই এই কমিশনজীবিদের দৌড়! বেগম রোকেয়ার ‘নারীস্থান’-এর এই প্রযুক্তি কিন্তু বিদেশী কোম্পানি নির্ভর নয়- “যৎকালে এদেশের রমণীবৃন্দ নানাবিধ বৈজ্ঞানিক অনুশীলনে নিযুক্ত ছিলেন, পুরুষেরা তখন সৈনিক বিভাগের বলবৃদ্ধির চেষ্টায় ছিলেন। যখন নরবীরগণ শুনিতে পাইলেন যে, জেনানা বিশ্ববিদ্যালয়দ্বয় বায়ু হইতে জলগ্রহণ করিতে এবং সূর্য্যাত্তাপ সংগ্রহ করিতে পারে, তাহারা তাচ্ছিল্যের ভাবে হাসিলেন। এমনকি কি তাহারা বিদ্যালয়ের সমুদয় কার্যপ্রণালীকে ‘স্বপ্ন-কল্পনা’ বলিয়া উপহাস করিতেও বিরত হন নাই।

” আজকের বাংলাদেশেও এমন বিশেষজ্ঞ’র অভাব নাই যারা জ্বালানি খাতে জাতীয় সক্ষমতার কথা তুললে ‘স্বপ্ন-কল্পনা’ বলে উড়িয়ে দিতে চান। বেগম রোকেয়া যেন তাদের উদ্দেশ্যেই বলেছিলেন- “কোন দেশ আপনা হইতে উন্নত হয় না, তাহাকে উন্নত করিতে হয়। নারীস্থানে কখনও স্বর্ণ বৃষ্টি হয় নাই, কিম্বা জোয়ারের জলেও মণিমুক্তা ভাসিয়া আইসে নাই?” তিনি নারীস্থানবাসীকে প্রশংসা করে নিজের দেশ সম্পর্কে হতাশা ব্যাক্ত করে বলছেন- “ত্রিশ বৎসরে আপনারা একটা নগণ্য দেশকে সুসভ্য করিলেন,- না, প্রকৃত পক্ষে দশ বৎসরেই আপনারা এদেশকে স্বর্গতুল্য পুণ্যভূমিতে পরিণত করিতে পারিলেন। আর আমরা একটি সুসভ্য রত্নগর্ভা দেশকে ক্রমে উন্নত করিব দূরের কথা,- বরং ক্রমশ: তাহাকে দীনতমা শ্মশানে পরিণত করিতে বসিয়াছি। ” বেগম রোকেয়া সেই ১৯০৫ সালে যে “সুসভ্য রত্নগর্ভা” দেশকে “দীনতমা শ্মশানে” পরিণত করার কথা বলেছিলেন সে কি আজকের বাংলাদেশ নয়? পার্থক্য হলো তখন বাংলাদেশ পরাধীন ছিল-ক্রমে ব্রিটিশ ও পাকিস্তানী ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্ত হলেও দেশীয় শাসকদের লুটপাট ও বিদেশী কোম্পানি’র হয়ে দালালি’র ফলে ‘সোনার বাংলা’ আজও ‘দীনতমা শ্মশান’।

বিজয়ের এই মাসে রোকেয়া দিবস তাই নতুন তাৎপর্য নিয়ে রোকেয়ার ‘নারী স্থান’-এর আদলে শোষণ মুক্ত দূষণ মুক্ত এক ‘সুখস্থান’ গড়ার লড়াইয়ের ডাক দিয়ে যায়। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।