ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে খেলায় জিতেছে বাংলাদেশ। এখন, আনন্দের উত্তেজনায় ভাসছে বাঙালি সত্ত্বা। আজ একটা শোকসংবাদও আছে, অধ্যাপক খান সারওয়ার মুরর্শিদ ৮৮ বছর শেষ করে চলে গেলেন। ১৯৪৮ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে স্নাতক এবং সে-বছরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে জয়েন করেন। তারপর, ভাষা-স্বাধীকার আন্দোলন, নিউ ভ্যালুজ, সংস্কৃতি সংসদ গঠন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্ত হওয়ার পর তৎকালীন সামরিক শাসক আইয়ুব খানের সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠকে জাতীয় নেতাদের সঙ্গে যুক্ত থাকা বা ছয় দফার নীতিনির্ধারক ও পরিকল্পনাকারীদের অন্যতম ছিলেন খান সারওয়ার মুরশিদ।
উনসত্তরের গণআন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু ও তাজউদ্দিন আহমেদের অন্যতম সহযোগী ছিলেন। জাতীয় মুক্তির আন্দোলনেও ছিল তার পরামর্শ। পঞ্চাশের দশকেই গবেষণার জন্য বিদেশে পাড়ি জমান তিনি। নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘দ্য ইনফ্লুয়েন্স অফ টেগোর অন দ্য ওয়ার্কস অফ ডব্লিউ বি ইয়েটস, আলদোস হাক্সলি অ্যান্ড টিএস এলিয়ট’ বিষয়ে পিএইচডি করেন। তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর প্রবল বাধা পেরিয়ে ১৯৬১ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মশতবার্ষিকী পালনে নেতৃত্ব দেন।
ছিলেন রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা কমিশনের অন্যতম সদস্য হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৯৭২ থেকে ৭৪ সাল পর্যন্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেন। ‘ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজ’ গঠন করে বিশ্বের খ্যাতনামা বিভিন্ন শিক্ষাবিদ ও গবেষককে দেশে আনেন। মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক ফরাসি বুদ্ধিজীবী অঁদ্রে মালরোকে আমন্ত্রণ করে তাকে সম্মানজনক ডি লিট প্রদানে মুখ্য ভূমিকা ছিল মুরশিদের।
১৯৭৫ সালে শুরু হয় খান সারওয়ারের কূটনৈতিক জীবন। পোল্যান্ডে ও হাঙ্গেরিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি কমনওয়েলথের সহকারী মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সেখান থেকে ১৯৮৩ সালে আবার দেশে ফেরেন।
আজ ছিল এই বর্ণাঢ্য ব্যক্তিত্বের বহুবর্ণিল জীবনের শেষদিন। তাঁর লেখা পড়েছি, কখনো সামনাসামনি দেখা হয়নি, কথাও হয়নি।
একটু আগে ফোন দিলেন মহাকাশ বার্তা ও গ্রহনক্ষত্রের অনুসন্ধানী আমাদের বন্ধু মহাকাশ মিলন। মিলনের বক্তব্য: 'শোনো, জানো তো আজ খান সারওয়ার মুরশিদ মারা গেছেন?'
বললাম, 'জানি'
'তোমারে একটা কথা বলার জন্য ফোন দিছি'
বললাম, 'কও'
মিলনের কথা, 'মুহম্মদ মীজানুর রহমানের সম্বর্ধনা সভায়, শামসুর রাহমানও ছিলেন সেদিন, উনি বলছিলেন এখন যারা লেখালেখি করে তার মধ্যে তুমি বেঁচে থাকবা। তোমাকে উনি খুব প্রশংসা করছিলেন। মুহম্মদ মীজানুর রহমান, শামসুর রাহমানের পর উনি আজ চলে গেলেন। '
বললাম, 'তিনজন মৃত মানুষের কথা বলছ তুমি, তুমি বেঁচে আছ তো?'
শোকসংবাদ প্রদানকারী বন্ধু মিলন হা হা করে হাসলেন।
মনে মনে ভাবছি, এত গুণী মানুষ খান সারওয়ার মুরর্শিদ, তিনি আমার লেখা পড়তেন! কীই বা এমন লিখি!। বেঁচে থাকতে, কোনোদিন পরিচিতও হতে পারলাম না!! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।