"সময়ের অতল গহ্বরে মিলিয়ে যাওয়া শেষ আলোক রশ্মি"
গ্রীক মিথের কাহিনীগুলো আমাদের সবারই কমবেশি জানা আছে । এবার পরিচিত হয়ে নিন ভয়ংকর কিছু দানবদের সাথে । এদেরকে মূলত দেবতারা তাদের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য ব্যবহার করতেন । কাজ শেষ আবার ধ্বংসও করে ফেলতেন । প্রাচীন গ্রীকের কয়েকটি কমন চরিত্র তুলে আনার চেষ্টা ।
Argus
আর্গুস হচ্ছে গ্রীক মিথের একটা ভয়ংকর দানবের নাম । যার সারা শরীর জুড়ে মিট মিট করে একশত চোখ, সারা শরীরে একশো চোখ নিয়ে দেবী হেরার গার্ড হিসেবে ভূমিকা পালন করে আর্গুস । এরেস্টরের পুত্র আর্গুস এর পদবী হচ্ছে ‘গার্ডিয়ান অফ দি হেইফার নিম্প লো । বলা হয়ে থাকে আর্গুসের চোখে কোনদিন ঘুম তো দূরের কথা তন্দ্রাও আসে না, একটা মাছিও ওর চোখকে ফাঁকি দেবার উপায় নেই । হেরা তাকে জব দেয় একিডনা নামক একটা মনস্টার, সর্পমানবী যে কিনা অর্ধেক সাপ অর্ধেক মানুষ তাকে হত্যা করার ।
কিন্তু আর্গুস হচ্ছে জিউস কতৃক নিয়োজিত হোয়াইট হেইফারের গার্ড, যেখানে ওর কাজ হচ্ছে দৃষ্টি রাখা যেন লো পালাতে না পারে । আর্গুস একিডনাকে হত্যা না করে বন্দী করে রাখে নেমিয়ার জলপাই গাছের নিচে । এদিকে হেরা আগে থেকেই জানতো হেফার রাজ্য থেকে নিম্প লো পালানোর পরিকল্পনা করছিলো । জিউসও এদিকে আর পেরে উঠতে না পেরে অবশেষে মনস্থির করে লো কে মুক্ত করে দেবার । তাই হেরমেস নামক এক ঘাতক কে নির্দেশ দেওয়া হয় আর্গুস কে হত্যা করে ফেলার জন্য ।
হেরমেস পাথর দ্বারা একটা একটা করে আর্গুসের সবকটা চোখ খুলে নেয় । পরে দেবী হেরা তার প্রিয় ময়ূরপঙ্খীর লেজ আর্গুসের চোখ দ্বারা সুসজ্জিত করেন ।
Cerberus
কারবেরাস হচ্ছে একটা বিরাট দানব আকৃতির তিন মাথার কুকুর । সম্ভবত হ্যারি পটারের প্রথম বইটিতে এর উল্লেখ আছে । টাইফূন আর একিডনার স্পিরিট বলা হয় কারবেরাসকে ।
টাইফূনও একটা ভয়ংকর ফায়ার ব্রীথিং মনস্টার যার শ্বাস প্রশ্বাসের সাথে নীল আগুন উঠানামা করে । এমনকি দেবতারাও তাকে সহজে চটাতে চাইতেন না ।
দেবতা অরথ্রাস খুবই ভয় পেতেন কারবেরাসকে, তাঁর মতে ইটস আ টু হেডেড হেলহাউন্ড । কারবেরাসের অতিরিক্ত দু মাথাকে মনে করা হত নরকের অগ্নিভূক । কারবেরাসের তিন মাথার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তিন মাথাই একসাথে সবকিছু রেসপন্ড করবে এবং তিন মাথা ক্রমান্বয়ে রিপ্রেজেন্ট করে অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ একই সাথে আরেকটি সোর্স এই তিন মাথার জাজ অনুযায়ী রিপ্রেজেন্ট করে জন্ম, নবযৌবন এবং যৌবনহীনা মানে বৃদ্ধ আর কি ।
প্রত্যেকটি মাথার ক্ষুদা মিটে জীবিত মাংস আর উষ্ণ রক্ত দ্বারা এবং অসহায় ভিক্টিমের আত্না মুক্ত হয়ে প্রবেশ করে এমন এক আন্ডারওয়ার্ল্ডে যেখান থেকে কেউই মুক্তি পায়না । সেখানে কারো আত্না নবযৌবন পাবে, কেউবা মাত্র জন্মাবে আর হতভাগা কেউ বৃদ্ধ হয়েই কাটাবে আজীবন । এই আন্ডারওয়ার্ল্ডের কারারক্ষীও কারবেরাস । শিকার যাতে কিছুতেই বের হতে না পারে সেদিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখে । এই ভয়ংকর দানব কারবেরাস শেষ পর্যন্ত কার হাতে পতিত হয় জানেন? জিউসপুত্র হাফগড হারকিউলিস !! হারকিউলিস স্পেশাল ওয়েপন দিয়ে কারবেরাসকে ধ্বংস করে ।
Cyclopes
বিশাল মাথা, কপালে একটামাত্র চোখ । এ হলো গিয়ে সাইক্লোপস । সাইক্লোপসকে বলা হয় ‘ঠান্ডারবোল্টস অব জিউস’ । সাইক্লোপস আসলে একটি ব্যাক্তিসতন্ত্রের নাম নয়, বরং দানবদের প্রিমরডিয়াল রেইসের একটা গ্রুপের নাম । প্রত্যেকেরই একটা করে চোখ, সাইক্লোপস এর মানে হচ্ছে বৃত্তাকার চোখ ।
বিভিন্ন গ্রীক সাহিত্যিকেরা একে বিভিন্ন ভাবে উপস্থাপন করেন ।
হেসিওড বলেন, নিষ্ঠুর পলিফেমাস, সাইক্লোপস আর পসেইডনের পুত্র একটি দ্বীপে একসাথে বসবাস করত । সেখানেই জিউসের আদেশে ওডেসাস ওকে অন্ধ করে দেয় ।
হোমারের মতে, দেবতা জিউস টারটারাসের ডার্ক পিট থেকে তিনটা সাইক্লোপসকে মুক্ত করেন । আরানুস এবং তার পুত্র আর গইয়া ।
তারা একাধারে জিউসের জন্য বজ্রপাত সৃষ্টি করত, হেডিসের অদৃষ্ট হেলমেট আর পোসেইডনের ত্রিশূল হিসেবে ব্যবহৃত হত ।
রোমান এপিক কবি ভার্জিল তার দ্যা থ্রি অফ দি এ্যনেইড বইতে লিখেন, কিভাবে এনিয়াস এবং তার ক্রুরা ট্রয়ের ট্রোজান যুদ্ধের শেষে পালিয়ে এসে সাইক্লোপসদের দ্বীপে গিয়ে আশ্রয় নেয় ।
অনেকে আবার মনে করে সাইক্লোপস মিথটি মূলত দাঁড়া করানো হয়েছে একটি বহু আগের একটি ঘটনার দ্বারা । ১৯১৪ সালে Paleontologist ওথেনিয় আবেল অনুসন্ধান করতে করতে একটি মানুষের মাথার দিগুণ সাইজের স্কাল খুঁজে পান । পরে দেখা যায় স্কালটি একটি ডয়ার্ফ এলিফেন্টের ।
Gorgons
গর্গনস গ্রীক মিথলজির সবচেয়ে ভয়ংকর, কুৎসিত দানব, পৃথিবীর শেষপ্রান্তে বসবাস করতো । গ্রীকশব্দ Gorgos থেকে Gorgons এর উৎপত্তি যার অর্থ দাঁড়ায় Dreadful । গ্রীক লিটারেচার বলে এই টার্ম ওদের তিন বোনের যে কাউকেই নির্দেশ করে । তিনজনেরই আছে জীবন্ত সর্পকেশ- যেগুলো আবার পৃথিবীর যেকোনো বিষধরকে হার মানিয়ে দিতে পারে, এবং ভয়ংকর ভিসেজ আর সম্মোহনবিদ্যা যা যে কাউকেই মুহূর্তের মাঝে নিরেট পাথরে পরিণত করে দিতে পারে । তিনবোনের মাঝে মেডিউসা ছাড়া স্থেনো আর ইউরায়েলি ছিলো ইমমর্টাল ।
পরবর্তীতে জিউসপুত্র পারসিউস মেডিউসাকে কৌশলে পরাস্ত করে ।
গর্গনসদের বিচ্ছুরিত চোখের ফ্ল্যাশকে বলা হয় ‘দ্যা ডিভাইন আইস’ । এ চোখকে তুলনা করা হয় দেবী এথেনার পবিত্র পেঁচার চোখের সাথে । ক্লাসিক্যাল মিথ বলে গর্গনসরা ছিল বিশেষ শক্তির অধিকারী । তাদের কুৎসিত জিহ্বা শিকারের উত্তেজনায় স্টিকিং করলেই ওয়ার্স বেরিয়ে আসে, তাদের চক্ষুকে বলা হয় ইভিল আই ।
হিন্দু মিথলজির দেবী কালীর সাথে এদের আবার মিল পাওয়া যায়; স্টিকিং টাং, মাথায় সাপ প্যাঁচানো ইত্যাদি ।
Hydra
হাইড্রা জিউসের প্রাচীন সার্ভেন্ট । জলদানব, নয়মাথা বিশিষ্ট সরীসৃপ ট্রেইটস । বলা হয়ে থাকে হাইড্রার এক মাথা কাটা পড়লে সে জায়গায় দুই মাথা গজায় । মানে দিগুণ হারে বৃদ্ধি ।
এর নিঃশ্বাস এতই বিষাক্ত যে, আশে পাশে কেউ ঘেঁষতে পারেনা । লেরনা লেকের নিচে আরগলিক রাজ্যের গার্ডিয়ান হচ্ছে হাইড্রা । বারোজন সঙ্গী নিয়ে হেরাক্লেস হাইড্রাকে কর্তন করতে রওনা দেয় । লেরনা লেকের নিকটে এসে হেরাক্লেস আর তার সঙ্গীরা বিষাক্ত পয়জন থেকে বাঁচতে কাপড় দিয়ে ভালো করে নাকমুখ পেঁচিয়ে নেয় । তারপর ওরা হাইড্রার মুখোমুখি হয় ।
সঙ্গীরা প্রত্যেকটি মাথা লক্ষ্য করে জ্বলন্ত তীর ছুঁড়তে থাকে । এইফাঁকে হেরাক্লেস তার স্পেশাল হারভেস্টিং চেইন আর সোর্ড দিয়ে হাইড্রাকে প্রতিহত করার চেষ্টা করে । কিন্তু বেশিক্ষণ পেরে ওঠেনা । যখনই হেরাক্লেস হাইড্রার একটা মাথা কাটে সঙ্গে সঙ্গে আরো দুই মাথা গজিয়ে যায় । হেরাক্লেস কাটতে কাটতে দেখে আর মাত্র দুই মাথা বাকি ।
কিন্তু এই পর্যন্ত এসে আর পারেনা সে । এরই মধ্যে অন্যমাথাগুলো গজিয়ে যায় । হাইড্রার একমাত্র দুর্বলতা হচ্ছে, কিছুতেই তাকে এক মাথাওয়ালা হতে দেওয়া যাবেনা নইলে হত্যা করাটা দুর্ভেদ্য হয়ে পড়বে । তো যখন হেরাক্লেস ক্লান্ত হয়ে পড়ল সে তার ভাতিজাকে ডাকল । ভাতিজা বুদ্ধি দিলো মাথা কাটার পর জ্বলন্ত কয়লা দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার, যাতে আর না গজাতে পারে ।
সেই অনুযায়ী হেরাক্লেস আর তার ভাতিজা মিলে হাইড্রার একটা করে মাথা কাটে আর সে জায়গাটা পুড়িয়ে দিতে থাকে । এভাবে হাইড্রা হেরাক্লেস দ্বারা ধ্বংস হয় ।
Minotaur
মাইনোটরকে বলা হয় মহিষের মাথাবিশিষ্ট মানুষখেকো দানব । প্রাচীন গ্রীকের অর্ধেক মানুষ অর্ধেক ষাঁড় । রাজা মাইনস মাইনোটর থেকে তাঁর রাজ্য ও প্রজাদের ডিফেন্ড করতে ডিডেলাস আর তার পুত্র ইকারুসকে নির্দেশ দেন একটা গোলকধাঁধা তৈরি করতে ।
ক্রেটান লেবিরিন্থ নামক সেই গোলকধাঁধার সেন্টারে আটকা পড়ে যায় দানবটি । পরবর্তীতে কিং মাইনস তাঁর সহোদরকে সিংহাসনের অধিকার দেন । মেনে নেন ভাইয়ের শাসন । মাইনস দেবতা পোসেইডনকে অনুরোধ করেন সাইন অফ সাপোর্ট হিসেবে তাঁকে যেন একটা সাদা ষাঁড় পাঠানো হয় । কথামত একটা ষাঁড় পাঠানো হল কিন্তু এর সৌন্দর্যতার কারণে মাইনস সেটিকে আর উৎসর্গ করলেন না ।
মনে মনে ভাবলেন পোসেইডন কিছু মনে করবেনা যদি তিনি এটার বদলে তাঁর পোষা ষাঁড়গুলো থেকে একটি উৎসর্গ করেন । তাই মাইনসকে শাস্তি দিতে ভবিষ্যৎদ্রষ্টা আফ্রদ্যিতি সৃষ্টি করেন সুন্দরী পেসিফিকে । মাইনসের স্ত্রী পেসিফি হোয়াইট বুলের সৌন্দর্যের প্রেমে পড়ে যান । হিংস্র মাইনোটর ছিলো পেসিফির সন্তান ! পেসিফি মাতৃস্নেহ দিয়ে তাকে বড় করে তুলেন । কিন্তু সে বড় হয়ে হিংস্র ও বন্য বনে যায় ।
সে ছিলো মানুষ এবং পশুর আনন্যাচারাল সংকর । পড়ে মাইনস ডেলফির দৈববাণী অনুযায়ী একটা বিশাল লেবিরিন্থ তৈরি করান । পরে অবশ্য থেসিউস স্বেচ্ছাসেবক হয়ে মাইনটোরকে হত্যা করে ।
Scylla and Charybdis
স্কাইলা আর চেরিবডিস একত্রে সমুদ্র নিচে অতল গুহায় থাকতো । স্কাইলা ছিল ছয়মাথা বিশিষ্ট রক শোলের মত কুৎসিত একটা মনস্টার ।
সাগরের ঝড় ঝঞ্ঝা এবং নানা প্রতিকূলতার জন্য দায়ী করা হয় স্কাইলা ও চেরিবডিসকে । তারা খুবই ক্লোজ থাকতো । ফলে স্কাইলাকে ফাঁকি দিতে পারলেও চেরিবডিসকে ফাঁকি দেওয়া সম্ভব হয়না । একপক্ষকে ফাঁকি দেয়া মানে ফুটন্ত কড়াই থেকে জ্বলন্ত আগুনে ঝাঁপ দেয়া । চেরিবডিস সাগরে একটা ম্যাগনেটিক ফোর্স সৃষ্টি করে, যা সবকিছু টেনে নিয়ে যেতে থাকে অভিমুখের দিকে ।
ক্র্যাকেন কে ওদের জ্ঞাতিভাই বলা হয় ।
________________ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।