সকাল আর আসেনা গোলাপ হয়ে ফোটেনা কিশোরীর হাতে তখন আবছা অন্ধকার।
পায়ের সামনে গোলমত কিছু একটা দেখে থমকে দাঁড়ালাম। কি হতে পারে?ভাবছিলাম। বলের আকৃতির বর্ণনায় জানি বল গোল। তাই বস্তুটা বল'ই হবে হয়ত!কাঁপা হাত বাড়িয়ে তুলে নিলাম।
বলের উপরে ধূলোর আস্তরণ জমে আছে। অনেকদিন খেলা হয়নি বুঝা যায়।
সে বয়সে তখনো আমার বল খেলার অভিজ্ঞতা হয় নি। তাই পাকা খেলোয়ারের মত বলটা দেখেই পায়ের পেশি টানটান হয়ে উঠেনি।
অথবা কার বল?কিক করা ঠিক হবে কি না হবে ইত্যাদি ভাবনায় কিক করিনি যদিও, তবু ছুঁয়ে দেখার লোভ সামলাতে পারিনি।
কেননা তখনো বল আমার কাছে একটা রহস্য। আমি বলটার গায়ে জমা ধূলোর আবরণ ফুঁ দিয়ে সরাতেই বলটা তার নিজস্ব রঙ ফিরে পেল। বলের বহিরাবরণ ঝকঝক করে উঠল। পাকা খেলোয়ার হলে নির্ঘাৎ কষে একটা কিক মারত।
বলটা যেখানে ছিলো আমি সেটাকে আলতোভাবে সেখানেই রেখে চলে আসি।
এই ছিলো আমার বল বিষয়ক প্রথম অভিজ্ঞতা।
কিন্ত্ত হঠাৎ পাওয়া বল এবং এতদবিষয়ক ভাবনা মন থেকে দূর করতে পারছিলাম না। আমি শুধু জানতাম মানুষ বল খেলে। কিন্ত্ত খেলার প্রক্রিয়া পুরোপুরি অজানাই ছিলো। নিজেই আচমকা এমন একটা বলের মুখোমুখি হব সে প্রস্তুতি মোটেই ছিলো না।
তারপর থেকে আমার ভাবনা জুড়ে শুধু বল। সারাক্ষণ ডুবে থাকি বল ভাবনায়। আকাশে । বাতাসে । ডানে।
বামে। সামনে। পেছনে। বল আর বল।
বন্ধুবান্ধবদের সাথে আড্ডায়ও বল নিয়ে মাতামাতি ।
ততদিনে বল বিষয়ক থিউরিটিক্যাল জ্ঞান একটু পাকাপোক্ত হয়েছে। কিন্ত্ত একটা বলের অধিকারি হতে উতলা হইনি।
শুনেছি এবং ক্ষেত্র বিশেষে জেনেছি বন্ধুদের কারো কারো বল আছে এবং তারা নিয়মিত বিরতিতে, খেলার সুযোগ এবং অবসর পেলে খেলে।
কিন্ত্ত মাঝে মাঝে সত্যিই উত্তেজিত হতাম। খেলার একটা সলজ্জ বাসনা মনে জাগত।
তারপর অনেক সময় পেরিয়ে যায়।
আবছা অন্ধকার ক্রমশ আলোয় ভরে উঠে। সেই সাথে আমার বল বিষয়ক উত্তেজনার উপশম ঘটে। আমি ধরে নিই বল জগতের নানাবিধ খেলার মধ্যে খেলার একটি উপকরণ। রেংকিংয়ে প্রথম সারির।
যে কেউ বলের অধিকারি হতে পারে জীবনের যে কোন সময় এবং সে বল খেলতেও পারে। এ নিয়ে এত আকাশ পাতাল ভাবনার কিছু নেই। বল খেলার অধিকার সবারই আছে। এরকম একটা ভাবনার ভেতর দিয়ে আমি কিছুটা স্থিত হই।
তারপর অনেকগুলো দিন পেরিয়ে যায় দিনগুলো বুষ্টিমুখর তারুণ্যের উচ্ছ্বাসে ভরা আনন্দময় আড্ডার দিন।
আবেগময়। হাসি আর দুরন্তপনার দিন। বখাটেপনার দিন।
এরই মধ্যে পড়ালেখার পাশাপাশি কিছুটা ক্রিকেটে অভ্যস্ত হয়ে উঠি। একসময় সেটা নেশায় পরিণত হয়।
ক্রিকেট ভাবনায় আচ্ছন্ন থাকি দিনে রাতে। স্বপ্নগুলোও ক্রিকেটময়। দারুণ বোলিং হচ্ছে। ব্যাটসম্যান পরাস্ত। আউট এবং সবাই বোল্ড আউট।
আনাচে কানাচে ক্ষ্যাপ খেলতে যাই। এক পক্ষের হয়ে খেলতে নেমে অপর পক্ষের উপঢৌকন পেয়ে হেরেও চলে আসি......
ঠিক এমনই সময় সবাইকে চমকে দিয়ে আমি একটা বল অধিকার করি। আমার বল অধিকারে সবার টাসকি লাগে। বাবা -মা বেঁকে বসে। হয় বল ছাড় না হয় আমাদের।
এতদিন ক্রিকেট খেলতে কিছু বলিনি কিন্ত্ত বল? সে হবে না।
আমি বল ছাড়তে পারিনি। নিঃস্তব্ধ ,মাটিতে পড়ে থাকা বলটির প্রতি মায়া পড়ে গেছে। আমি বলটি নিয়ে খেলতে চাই।
তারপর থেকেই শুরু আমার খেলোয়ারী জীবন।
অনেক মানসিক এবং শারীরিক কসরত এ খেলায়। অনেক কষ্ট। অনেক বাঁধা ডিঙ্গোতে হয়। এতকিছু জানা ছিলো না। আমি মচকাই তবু ভাঙ্গি না।
খেলোয়ারী জীবনের খেলার মাঠের কথা।
খেলার বলবৃত্ত মাঠ। খেলা চলছে পুরোদমে। গ্যালারি ভর্তি দর্শক। আমি তখন দু'টো গোল করে কিছুটা ক্লান্ত।
বলটা তখন মাঠের বাইরে। একটু জিরিয়ে নেবার চেষ্টা। বলটার খেলার মাঠে আসতে যেটুকু সময়। তারপরই পুরোদমে শুরু করব।
এমনই সময় অন্য কোন মাঠ থেকে অন্য কারো একটা বল আমার খেলার মাঠে এসে পড়ে।
একদম আমার বরাবর। ধীরে ধীরে। যেন কেউ কিক দেবার জন্য আলতো করে আমার দিকে ঠেলে দিয়েছে। কিক করার লোভ সামলাতে পারিনি। আমি কিক নেবার জন্য সামনে দৌড়াচ্ছি।
দর্শক সারিতে চেঁচামেচি। কেউ কেউ বলছে এই বল তোমার না। আবার কেউ বলছে মার ব্যাটা কিক মার। যার বলই হোক সামনে যখন আসছে, ছাড়বি ক্যান? কিক মার!মার কিক!এমন আলতো ভাবে আসছে!
ততক্ষণে আমার বলটা খেলার মাঠে এসেছে। আমি বহিরাগত বলটার দিকে দৌড়াচ্ছি ।
পূর্ণ উদ্যমে।
দর্শক সারিতে পক্ষে বিপক্ষে শোরগোল।
কিক দিই। পরিপূর্ণ কিক।
বহিরাগত বলটাকে ডিঙ্গিয়ে মাঠে নিশ্চুপ পড়ে থাকা আমার বলটাতেই।
ততক্ষণে গ্যালারির শোরগোল থেমে গেছে। কেউ আপসোস করে আবার কেউ হাফ ছেড়ে বাঁচে।
আজও খেলার মাঠেই আছি। আমার একান্ত নিজস্ব বলটা নিয়েই। বলটা ঠিক আগের মত নেই।
কিছুটা মলিন হয়ে এসেছে।
আর আমার চারদিকে নতুন বলের ছড়াছড়ি। কোনটা ঠিক সামনে আলতো করে চলে আসছে। কোনটা বাম পায়ের দিকে। কোনটা ডান পায়ের দিকে।
পাকা খেলোয়ার আমি। দু'পা সমানে চালাতে পারি।
এবার আমি প্রস্তুত!!! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।