দীর্ঘদিন ধরেই মঙ্গল কিংবা চাঁদে, মেঘে, পাহাড়ে অথবা পৃথিবীর নানা বস্তুতে, প্রকৃতিতে এমনকি পোড়া রুটিতেও মানুষের মুখচ্ছবি দেখার কথা বলে আসছে অনেকেই। গবেষকেরা কোনো কিছুর মধ্যে মানুষের মুখের আদল খুঁজে পাওয়ার এ ঘটনার নাম দিয়েছেন ‘প্যারেইডোলিয়া’। কিন্তু এর নেপথ্যে আসলে কি রয়েছে? সম্প্রতি বিবিসি অনলাইনে এই প্যারেইডোলিয়া বা চাঁদ, পাহাড়, রুটিতে মানুষের মুখ খুঁজে পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
প্যারেইডোলিয়ার বিষয়টি সম্প্রতি আলোচনায় এসেছে মঙ্গলগ্রহের প্রকৃতিতে মানুষের ও প্রাণীর মুখ সদৃশ বেশ কয়েকটি ছবি প্রকাশিত হওয়ায়। মঙ্গল গ্রহের পরিবেশ, পরিস্থিতি এখনও মানুষের কাছে রহস্যাবৃত।
যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসার পাঠানো গবেষণা যান কিউরিওসিটি মঙ্গল পৃষ্ঠের অজানা তথ্য ধীরে ধীরে মানুষের কাছে তুলে ধরছে। কিন্তু ১৯৭৬ সাল থেকেই মঙ্গলগ্রহে মানুষের মুখের অস্তিত্ব রয়েছে বলে একটি ধারণা মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছিল। এর কারণ ছিল আমেরিকান ভাইকিং-১ অরবিটার থেকে তোলা এক ছবিতে মঙ্গলের বড় এক পাহাড়কে মানুষের মুখের আদলের মতোই মনে হতো। এরপর একে একে ছড়িয়েছে মঙ্গলের হাতি, মঙ্গলে পিঁপড়া, মঙ্গলে মহাত্মা গান্ধী, এমনকি মঙ্গলে ইঁদুরের কথাও। গবেষকেরা এ আকার আকৃতিগুলো প্রাচীনকালে মঙ্গলে প্রবাহিত লাভা স্রোতের ফলে এবং মঙ্গলের রুক্ষ আবহাওয়ার কারণে হতে পারে বলেই ধারণা করেন।
এ ক্ষেত্রে অবশ্য উত্সাহীদের মধ্যে অন্য আরেকটি ধারণাও কাজ করে। অনেকেই মহাকাশের ভূপৃষ্ঠে বিভিন্ন প্রাণীর আদলের ছবি ফুটিয়ে তোলার কাজটি এলিয়েন বা ভিন গ্রহ বাসীর কাজ বলেও মনে করেন। কিন্তু এর নেপথ্যে ‘প্যারেইডোলিয়া’ কারণটিই যে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকজন গবেষক এর পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন।
গবেষকেরা জানিয়েছেন, অতি-উত্তেজনার ফলে প্যারেইডোলিয়ার কারণে প্রকৃতি কিংবা মেঘের মধ্যে কোনো অবয়ব বা মুখ দেখা যায়। গবেষকেরা এ প্রসঙ্গে বলেন, প্যারেইডোলিয়া স্বভাবজাত।
মানুষ টিকে থাকার জন্যই কোনো পরিচিত কিছুর সঙ্গে তুলনা করে, যা তাদের স্বভাবের মধ্যে পড়ে। চাঁদের দিকে তাকিয়ে অনেকে হয়তো চোখ, নাক, মুখ বা পরিচিত কোনো মানুষ দেখতে পেয়েছেন। এ ঘটনাই প্যারেইডোলিয়া। এ অভিজ্ঞতা হয়তো অনেকেরই হয়েছে কিন্তু অনেকে মানুষই হয়তো ‘প্যারেইডোলিয়া’ সম্পর্কে এখনো বিশদ কিছু জানেন না। প্যারেইডোলিয়া হচ্ছে কোনো বিষয়ের কাল্পনিক ধারণা বাস্তবে যার কোনো অস্তিত্ব নেই।
গবেষকেদের মতে, প্যারেইডোলিয়া একটি সম্পূর্ণ মানসিক বিষয়। এ অবস্থায় অনেক মানুষই মেঘের গায়ে, চাঁদে, পাহাড়ে ও প্রকৃতিতে বিভিন্ন বস্তুর ছবি দেখতে এবং নানা শব্দও শুনতে পান।
এ প্রসঙ্গে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. নোচিন হাজিখানি বলেছেন, মানুষের মনে শৈশব থেকেই অনেক মানুষের মুখের গড়ন গাঁথা থাকে। অর্থাত্ জন্মের সময় থেকে মুখ শনাক্তকরণ বৈশিষ্ট্য অর্জন করে মানুষ। পরে তা বিভিন্ন বস্তুর মধ্যে খুঁজে পেতে পারে।
নর্থওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ুবিদ গবেষকে জোয়েল ভস জানান, মস্তিষ্কে তথ্য গাঁথার একটি পদ্ধতি এ প্যারেইডোলিয়া। মস্তিষ্ক ক্রমাগত এলোমেলোভাবে বস্তুর ধারণা লাভ করতে থাকে এবং লব্ধ জ্ঞানের সঙ্গে তা মিলিয়ে নিয়ে একটা অর্থ দাঁড় করায়। একারণেই অনেক দুর্বোধ্য বস্তুর সঙ্গে সহজ কিছুর মিল বের করে ফেলে ।
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের স্নায়ুবিদ সোফি স্কট জানিয়েছেন, মানুষের আকাঙ্ক্ষা থেকেও প্যারেইডোলিয়া তৈরি হতে পারে। মানুষ কি আশা করে তার সঙ্গে পারিপার্শ্বিকতা মিলিয়ে প্যারেইডোলিয়া তৈরি হতে পারে।
‘দ্য সেলফ ইলিউশন: হাউ দ্য সোশ্যাল ব্রেইন ক্রিয়েটস আইডেন্টিটি’ বইয়ের লেখক ব্রুস হুড এ প্রসঙ্গে বলেছেন, প্যারেইডোলিয়া হচ্ছে বিভ্রমের একটা অংশ। প্যারেইডোলিয়া অবস্থায় মানুষের যে বিভ্রম তৈরি হয় তা তার মনে গাঁথা থাকে বলে সহজে এ বিভ্রম থেকে বের হতে পারে না। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।