জঞ্জাল যত আটকে থাকুক হৃদয়ের মাঝখানে, কিছু সুর ফেরাতে পারে সম্ভাবনার তানে, তাই সঙ্কুচিত কোরোনা হে অফুরন্ত ডালা, প্রাণে খুশির ঢেউ জাগিয়ে সাজাও নতুন পালা ইসলাম এবং বৌদ্ধ, দুটি ধর্মই বহুকাল ধরে এ অঞ্চলের মানুষের জীবনে গভীর প্রভাব বিস্তার করে আসছে। বৌদ্ধ ধর্মের তো জন্মই পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে ( বর্তমান নেপাল ) অন্যদিকে ইসলাম মধ্যপ্রাচ্য থেকে এলেও কালের বিবর্তনে শক্ত আসন লাভ করেছে। দুটি ধর্মের তুলনা নয় বরং কিছু বিষয় বিশ্লেষণ করে দেখা যাক -
সৃষ্টির শুরু থেকে এ পর্যন্ত যত ধর্মের আবির্ভাব ঘটেছে, তার মধ্যে একটি সীমারেখা টানা যেতে পারে - প্রথমত, ব্যক্তিক ঈশ্বরে বিশ্বাসী ধর্ম, যেমন খ্রিস্টান ধর্ম, ইহুদী ধর্ম, ইসলা্ম ধর্ম ইত্যাদি। দ্বিতীয়ত, নৈর্ব্যক্তিক ঈশ্বরে বিশ্বাসী ধর্ম, যেমন - হিন্দু ধর্ম, বৌদ্ধ ধর্ম। ব্যক্তিক ঈশ্বরে বিশ্বাসীগন অদৃশ্য এক স্রষ্টার কাছে নিজেদের সঁপে দেয়।
অন্যদিকে নৈর্ব্যক্তিক ঈশ্বরে বিশ্বাসীদের মধ্যে হিন্দুরা সাকার কিংবা নিরাকারবাদী আবার বৌদ্ধরা আত্মোৎকর্ষবাদী।
বৌদ্ধ এবং ইসলাম উভয় ধর্মেই ধর্মপ্রবর্তকদের সর্বজনীন স্বীকৃতি শক্তিশালী ভুমিকায় স্থাপিত। বৌদ্ধ 'ত্রিরত্ন' তে যেমন -
''বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি,
ধম্মং শরণং গচ্ছামি,
সঙঘং শরণং গচ্ছামি,''
অর্থাৎ, আমি বুদ্ধের আশ্রয় নিচ্ছি, ধর্মের আশ্রয় নিচ্ছি, সঙ্ঘের আশ্রয় নিচ্ছি। আবার ইসলাম ধর্মে 'কলেমা' তে, বলা হয়েছে
'' লা ইলাহা ইল্লালাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ্''।
অর্থাৎ, আল্লাহ্র কোনও শরীক নেই, মুহাম্মাদ (সাঃ) আল্লাহ্র প্রেরন করা রাসুল।
লক্ষ করলে দেখা যাবে, বৌদ্ধ ধর্মে বুদ্ধের আশ্রয়ের মাঝেই ধর্ম এবং সঙ্ঘের আশ্রয় নিহিত। আবার ইসলাম ধর্মে আল্লাহ্ এক এই কথা যেমনি স্বীকৃত তেমনি মুহাম্মাদ (সাঃ) আল্লাহ্ প্রেরিত রাসুল কথাটিও স্বীকৃত হতে বাধ্য। অর্থাৎ উভয় ধর্মেই ধর্মপ্রবর্তকদের প্রাথমিক স্বীকৃতি অবিচ্ছেদ্য।
বৌদ্ধ শাস্ত্রমতে, গৌতম বুদ্ধের পূর্বে আরও চব্বিশজন বুদ্ধের আবির্ভাব ঘটেছে। গৌতম পঁচিশতম এবং ভবিষ্যতেও আরও বুদ্ধের আবির্ভাব ঘটবে।
অতীতের বুদ্ধরাও সিদ্ধাথের্র অনুরূপ মতবাদ প্রচার করেছিলেন এবং ভবিষ্যতের বুদ্ধরাও সেই মতবাদ প্রচার করবেন। ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করে মুহাম্মাদ (সাঃ) এর পূর্বে আরও এক লক্ষ চব্বিশ হাজার পয়গম্বর আবির্ভূত হয়েছিলেন। তারা যুগে যুগে আল্লাহ্র বানী প্রচার করেছিলেন। মুহাম্মাদ (সাঃ) সেই বানীর পূর্ণতা দিলেন। তাঁর পর আর কোনও পয়গম্বর আসবেনা, তবে হাজার বছর পর পর ইসলাম ধর্মে পবিত্রতা বজায় রাখার উদ্দেশ্যে সংস্কারকের আবির্ভাব ঘটবে।
বৌদ্ধধর্মে থেরবাদ একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রচলিত মতবাদ। প্রাজ্ঞ ও জ্ঞানী লোকেরা অপর মানুষদের জ্ঞান দান করবে, যাতে পরম্পরা বজায় থাকে। ধর্মীয় আচার অনুসারে এসব জ্ঞানী থেরদের মৃত্যুর পর দাহ কিংবা সমাধি দেবার পর চৈত্য নির্মাণ করা হতো। ধারনা করা হতো থেরগন মৃত্যুর পরও ভক্তদের আশীর্বাদ করতে সক্ষম। অন্যদিকে ইসলাম ধর্মে পীরবাদ একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ।
এ অঞ্চলে পীরদের সমাধির উপর দরগাহ কেন্দ্রিক কৃত্যের প্রচলন বহু পুরনো। ফুল, ধুপ দিয়ে জিয়ারত করার এই দক্ষিন এশিয়ো প্রচলন সম্ভবত থেরবাদ দ্বারা প্রভাবিত।
বৌদ্ধদের শীল হল পাঁচটি, যথা - প্রাণী হত্যা, চুরি, মিথ্যা, পরকামাচার ও মাদকসেবন ইত্যাদি থেকে রত থাকা, আবার ইসলাম অনুসারীদের পাঁচ স্তম্ভ হল কলেমা, নামাজ, রোজা, যাকাত, হজ্ব। উভয় ধর্মেরই ধর্মপ্রাণ অনুসারীগণ পাঁচ অত্যাবশ্যকীয় বিষয় বর্জন ও পালনে সচেষ্ট থাকে।
মুহাম্মাদ (সাঃ) ও গৌতম বুদ্ধ উভয়েই মহামানব।
উভয়েই ধ্যান করে ওহী ও বোধিশক্তি লাভ করেছেন। তাদের প্রচারিত মহান বানী স্থান-কালের সীমারেখা ছাড়িয়ে পড়েছে সারা পৃথিবীতে। উভয়কে শ্রদ্ধা। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।