লেখালেখির হাত আমার কোন কালেও ভাল না; তাই, কলম ধরার সাহস করিনা। তারপরও ডা: সাজিয়ার অপমৃত্যুকে কেন্দ্র করে "চিকিৎসক সমাচার" পেজের ফেসবুক স্ট্যাটাস ও তার কিছু কমেন্ট পড়ে একটু লেখার সাহস না দেখিয়ে পারলাম না। কয়জন পড়বেন জানিনা, তারপরও আমার কাঁচা লেখা অসীম ধৈর্য প্রদর্শন করে যারা পড়বেন তাদের কাছে আগেভাগেই কষ্ট দেবার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
গত ১৫ই জুলাই, ২০১২ইং তারিখে বিভিন্ন সময়ে বি,সি,এস পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া ৪০জন চিকিৎসক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে রাজধানীর বিয়াম ফাউন্ডেশনে শুরু করেছিলেন সরকারী চাকুরী স্থায়ীকরনের অবশ্যপূরণীয় শর্তসমূহের একটি- বুনিয়াদী প্রশিক্ষণ। এই প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে গত ০১ সেপ্টেম্বর তারা যাত্রা করেন বান্দরবান ও কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে; কারণ? শিক্ষা সফর।
বান্দরবান হতে কক্সবাজার যাবার পথে ০৩ সেপ্টেম্বর তাদের বহনকারী বাসটি কক্সবাজারের রামুর রশিদনগর নামক স্থানে দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়। এতে কম-বেশী প্রায় সবাই আহত হন; কিন্তু গুরুতরভাবে আহত হন ডাঃ চৈতী সাহা ও ডাঃ নুরুজ্জামান। পরে, ১০ই সেপ্টেম্বর ডাঃ চৈতী সাহা (এম,এম,সি-৩৮তম ব্যাচ) পাড়ি জমান চির না ফেরার দেশে।
এই ঘটনা গণমাধ্যমে কতটা প্রকাশিত হয়েছে? দুর্ঘটনার পরপরই তা দুই-একটা টিভি চ্যানেলের নীচের চলমান লাইনে স্থান পেলেও অল্প কিছুক্ষনের মধ্যেই কোন এক অজানা কারনে ওইটুকু প্রচারও বন্ধ হয়ে যায়? কিছু পত্রিকায় এই সংবাদ যাওবা প্রকাশিত হয়েছে তাও কিছুটা বিকৃতভাবে; সংবাদ পড়ে মনে হয় দুর্ঘটনার থেকে বেশি গুরুত্ব বহন করে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তাকে হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় আনা যা কিনা স্বাস্থ্য বিভাগের ইতিহাসে বিরল ঘটনা (প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ)। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যদি এই নির্দেশের সাথে তার চিকিৎসা ব্যয় সরকারীভাবে বহন করার নির্দেশটুকু দিতেন তবে কি দেশের অর্থ তহবিল খালি হয়ে যেত? এক পত্রিকা (নাম মনে নাই) তো আবার এক কাঠি সরেশ! তারা লিখেছিল, ওই বাসে বি,এম,এর কিছু সদস্য নাকি তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে কক্সবাজারে ঘুরতে যাচ্ছিলেন (আজব!)।
আর বি,এম,এ? খুলনায় শোক পালন আর হাসপাতাল ও বি,এম,এ ভবনে কালো ব্যানার ঝুলিয়েই ক্ষান্ত।
এত কিছু বলার উদ্দ্যেশ্য হল এই যে, ডাঃ সাজিয়া, ডাঃ চৈতীর মত আমরা চিকিৎসক সমাজের অধিকাংশ সদস্যই শত গালি খেয়েও নিরবে নিভৃতে আমাদের দায়িত্ব পালন করে যাব এবং এক সময় জীবনপটের অন্তরালে চলে যাব। একজন ডাক্তারের মৃত্যুতে কারোর কিছুই যায়-আসবে না। সাংবাদিকদেরও খুঁজে পাওয়া যাবেনা। কারন, ডাক্তারের মৃত্যু থেকে ডাক্তারের ভুল চিকিৎসা অথবা কর্তব্যে অবহেলার সংবাদের কাটতি বেশী।
সংবাদ মাধ্যম এক সময় হয়ত ছিল সত্য প্রকাশের মাধ্যম যা সাধারণ মানুষের সামনে সত্য উন্মোচন করত, জ্ঞান পিপাষা নিবৃত্ত করত; কিন্তু নিজের উদর শুণ্য রেখে তো আর অন্যের পিপাষা মিটানো সম্ভব নয়। তাই কালক্রমে অধিকাংশ সংবাদ মাধ্যম নিজেদেরকে পরিণত করেছে ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠানে; যেখানে প্রাতিষ্ঠানিক লাভক্ষতির অঙ্ক কষে সংবাদ আহরণ, পরিমার্জন অথবা পরিবর্ধন ও পরিবেশন করা হয়। তাই, আমাদের অধিকাংশ সাংবাদিক ভাই-বোনেরা “ডাক্তারের ভুল চিকিৎসা অথবা কর্তব্যে অবহেলার” সংবাদের অন্বেষণে দিবারাত্রি এক করে ফেলেন। এ দাবি করা খুবই ভুল হবে যদি আমি বলি ‘কোন ডাক্তার ভুল চিকিৎসা করেন না’ অথবা ‘প্রত্যেক ডাক্তার সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছেন’; প্রত্যেক পেশাজীবিদের মাঝেই কেউ কেউ অসৎ থাকেন, চিকিৎসকেরাও তার ঊর্ধ্বে নন। কিন্তু সংবাদে একজনের ভুলের জন্য ঢালাওভাবে পুরা চিকিৎসক সমাজকে এমনভাবে দোষারোপ করা হয় যেন দেশে কোন ভাল ডাক্তার নাই।
এতে সংবাদপত্রের বিক্রি বেড়ে যায় বহু গুণ কিন্তু দেশের মানুষের চিকিৎসকের প্রতি আস্থা কমে গিয়ে দাঁড়ায় প্রায় শুন্যের কোঠায়। যারা নিরুপায় তারা আস্থাহীনতায় ভুগলেও সেবা পেতে দেশী ডাক্তারদের দ্বারস্থ হতে বাধ্য হন; আর যাদের অর্থ আছে তারা পূর্ণ আস্থা নিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে দেশের অর্থ দিয়ে বিদেশের মুদ্রা তহবিল ভরপুর করে দিয়ে আসেন; তবে আমাদের দেশীয় সংবাদ মাধ্যমের তাতে কি? তারা তো আছেন লাভের পাল্লায়! অতএব, ডাক্তারের মৃত্যুতে কি এসে যায়; বরং ডাক্তার অপরাধ করলেই লাভ!
এবার আসি সরকারের কথায়,
ডাক্তারের চিকিৎসার ব্যায়ভার বহন করা বা নিরাপত্তার ব্যাবস্থা করার কি দরকার, এদের কলমের খোঁচায় কারও জীবন বাঁচবে ঠিকই, কিন্তু সাংবাদিকের কলমের লেখায় দেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে আমূল পরিবর্তন এসে যেতে পারে, এতে তাদের গদি যদি উল্টে যায়? অতএব, সাংবাদিক আহত হলে এর চিকিৎসা ব্যয় বহন করা ও তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের জন্য লাভজনক।
বাকি থাকল বি,এম,এ (বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন)-
এই নেতৃবৃন্দের কাজ হল আড়াই বছর শীতনিদ্রায় থাকা, আর নিদ্রাভঙ্গ হলে পরবর্তী মেয়াদের জন্য শীতনিদ্রায় যাবার পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে ভোট চাওয়া। এর মাঝে যদি মর্জি হয় তবে কোন ডাক্তারের মৃত্যুতে শোক পালন, মানব বন্ধন ইত্যাদি করা। তাই, চিকিৎসকের অপমৃত্যুতে বি,এম,এ কিছু উন্নতমানের পদক্ষেপ নিবে এইটা আশা করা অনেকটা ‘মেঘের ভেলায় প্রাসাদ গড়ার’ স্বপ্ন দেখার মত হবে বললে বোধ হয় ভুল হবে না।
অপেক্ষায় থাকতে হবে কবে বি,এম,এর ঘুম ভাঙবে, আর তা রাজনৈতিক বলয় ভেদ করে চিকিৎসকদের রাজনীতিমুক্ত সংগঠন হিসেবে মেরুদণ্ড সোজা করে দাড়িয়ে আমাদের দাবি দাওয়া আদায়ে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।