বাংলাদেশের ক্রিকেটের বর্তমান ঘটনাপ্রবাহে ভীষণ মর্মাহত আমিনুল ইসলাম। টেস্ট ক্রিকেটে এ দেশের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান ও বিশ্বকাপে দেশকে প্রথম নেতৃত্ব দেওয়া জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মনে করেন, স্পট ফিক্সিং ও জুয়াড়িদের সঙ্গে কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান ক্রিকেটারের সম্পর্ক রাখার বিষয়ের সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত। ক্রিকেট বোর্ডের উচিত বিষয়টি ভালোভাবে তদন্ত করে যত দ্রুত সম্ভব ফয়সালা করা।
স্পট ফিক্সিংয়ের সঙ্গে মোহাম্মদ আশরাফুলের মতো ক্রিকেটারের নাম জড়িয়ে পড়া; একই সঙ্গে ক্রিকেট জুয়াড়িদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার বিষয়ে খালেদ মাহমুদ, মোহাম্মদ রফিক ও খালেদ মাসুদের মতো সাবেক ক্রিকেটারের নাম চলে আসা বিমূঢ় করে দিয়েছে আমিনুল ইসলামকে। প্রথম আলো ডটকমের সঙ্গে এক আলাপচারিতায় তিনি বলেন, ‘শুক্রবার খবরটি পড়ে আমি মর্মাহত।
বাংলাদেশের মানুষ ক্রিকেটকে অত্যন্ত ভালোবাসে। খবরটি যে তাদের ভীষণভাবে আহত করবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। বিসিবির উচিত, আইসিসির সহায়তায় খুব দ্রুত এ বিষয়ে সুষ্ঠু সমাধানে পৌঁছানো। ’
বাংলাদেশের ক্রিকেটে স্পট বা ম্যাচ ফিক্সিংয়ের বিষয়টি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ বা বিপিএল মাঠে গড়ানোর পরই বিপজ্জনকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে বলে মনে করেন আমিনুল। তিনি বিপিএলকে ‘বেসবল ক্রিকেট’ হিসেবে অভিহিত করে বলেন, বিসিবির উচিত বিপিএলের বদলে ক্লাব ক্রিকেটে জোর দেওয়া।
’ তিনি বলেন, ‘টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটকেই আমার কাছে সত্যিকারের ক্রিকেট বলে মনে হয় না। আর এই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট যদি ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক হয়, তাহলে তাতে দুর্নীতির ব্যাপারটি ঢুকে পড়ার অনেক সুযোগ থাকে। বিসিবির উচিত খুব দ্রুত বিপিএলের ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্তে আসা। ’
আমিনুল আরও বলেন, ‘বিপিএল বিশ্বদরবারে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সুনাম নষ্ট করেছে। দুটি আসরে অনেক ক্রিকেটার তাদের ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর কাছ থেকে পারিশ্রমিক পায়নি।
ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর আড়ালে ক্রিকেটে অনেক লোকের আবির্ভাব হয়েছে, যারা ক্রিকেটকে ভালোবাসে না; যাদের একমাত্র লক্ষ্য ক্রিকেটকে ব্যবহার করে নিজেদের ব্যাংক-ব্যালেন্স ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে তোলা। ’
বাংলাদেশের সাবেক এই অধিনায়ক বলেন, ‘গত দুটি আসরেই বিপিএলের বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার প্রস্তাব পেয়েছি। এবার কমপক্ষে তিনটি ফ্র্যাঞ্চাইজি থেকে কোচ হওয়ার প্রস্তাব ছিল। কিন্তু প্রস্তাবগুলো গ্রহণ করতে মন সায় দেয়নি। ’
আমিনুলের মতে, ‘বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে যত কম গুরুত্ব দেবে, ততই মঙ্গল।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট যাতে আমাদের বয়সভিত্তিক সার্কিটে কোনোভাবেই ঢুকতে না পারে, সে ব্যাপারে বিসিবিকে সতর্ক থাকতে হবে। আমাদের এখন একটি ভালো টেস্ট দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। সে জন্য বেশি করে বড় দৈর্ঘ্যের ম্যাচ খেলতে হবে। টি-টোয়েন্টি কখনোই আমাদের ক্রিকেটের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না। ’
আমিনুল দুঃখ করে বলেন, ‘এ দেশে একটি দারুণ ক্লাব-সংস্কৃতি ছিল।
আবাহনী, মোহামেডান, ব্রাদার্স, বিমান, সূর্য তরুণের মতো ক্লাবগুলো এ দেশের ক্রিকেটের এই পর্যায়ে আসার পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে। তারা ভালো ভালো খেলোয়াড় তৈরি করেছে। বিসিবির উচিত ছিল ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক না করে ক্লাবভিত্তিক প্রতিযোগিতা হিসেবে বিপিএলের আয়োজন করা। ’
আমিনুল খুব করেই চান নিজের ক্রিকেটীয় মেধা এ দেশের ক্রিকেটের উন্নয়নে কাজে লাগাতে। এ মুহূর্তে মালয়েশিয়ায় এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) ক্রিকেট উন্নয়ন কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আমিনুল ক্রিকেট কোচিংয়ে সম্পৃক্ত হওয়ারও স্বপ্ন দেখেন।
এ জন্য লেভেল-৩ পর্যায়ের প্রশিক্ষণও নিয়ে রেখেছেন। কিন্তু এখনো দেশ থেকে সে ধরনের কোনো প্রস্তাব পাননি বলেই জানালেন তিনি।
আমিনুল বলেন, ‘জাতীয় দলের সঙ্গে যুক্ত হতে চাই। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে, বিদেশি নাগরিক হওয়াই এই মুহূর্তে জাতীয় ক্রিকেট দলের কোচ হওয়ার একমাত্র যোগ্যতা। আমি এসিসি ও আইসিসিতে বাংলাদেশের সাবেক ক্রিকেটার হিসেবে বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ করেছি।
আমি সেখানে আমার যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখেছি। কিন্তু দেশের ক্রিকেট বোর্ড এখনো কোনো কাজে আমাকে ডাকল না—এই দুঃখ থেকেই যাচ্ছে। ’।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।