যে বিশ্বাস নিয়ে একটা ছোট্ট শিশু হেসে ওঠে তাকে পরে ছুড়ে দেয়া হলে, তেমনি বিশ্বাস আমি করি তোমাকে। আমি জানি তুমি দুঃখ কখনও দেবেনা আমাকে। মানুষ বড় অসহায় প্রানী। তার হায়াত-মউত সবই বুঝি বিধাতার হাতে। তার পরও কিছু কিছু মানুষের ভাগ্যের ব্যপারে ডাক্তার সাহেবরা একটা বড় ভূমিকা পালন করেন।
আমাদের দেশের চিকিৎসকের উপর অনেকেরই ভরসা খুব কম। আর তাই তো সামর্থ থাকলে লোকে রুগীকে বিদেশে নিয়ে যান চিকিৎসার জন্য। এই ব্যপারে এশিয়ার কিছু কিছু দেশ বেশ সুখ্যাতি অর্জন করেছে। সিঙ্গাপুর তার মধ্যে একটি। সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতাল শুধু এশিয়া নয়, বিশ্বের উন্নত চিকিৎসা সেবা দানকারী একটি প্রতিষ্ঠান হিসাবে খ্যাত।
এই হাসপাতালে যদি ভুল চিকিৎসা করা হয়, তাহলে কার দোষ দেব? ডাক্তার সাহেবদের? নাকি নিয়তির?
গত বছর বাবার চিকিৎসার জন্য প্রায় অনেক মাস সিঙ্গাপুরে কাটাতে হয়েছিল। ঘটনাটা তখনই প্রত্যক্ষ করি। গত বছর মার্চ মাসের মাঝামাঝি মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে কিডনী প্রতিস্থাপন করেন বাবার এক বন্ধুর স্ত্রী। অপারেশন সাকসেসফুল, কিন্তু নতুন কিডনী কাজ করে না। কোন বিচিত্র কারনে নতুন কিডনীতে রক্ত সঞ্চালন খুব কম হচ্ছে এবং এই কারনে তা কাজ করতে পারছে না।
তার মানে, অপারেশন সাকসেসফুল, কিন্তু মিশন ফেইলড। রোগীর চিকিৎসাটা আমি একটা মিশন হিসাবেই দেখি। এটা একটা যুদ্ধ আমার কাছে।
সে যাহোক, অপারেশনের পর আন্টি প্রায় ৪ মাস সেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অনেক টাকা হাসপাতালের বিল হয়ে যাচ্ছে।
প্রায় ৪ মাস পর ডাক্তাররা বললেন, তারা আশাবাদী নন। রোগীকে তার আত্মীয়দের কাছে নিয়ে যেতে অনুরোধ করলেন। শেষ কয়েকটা দিন যেন সবার চোখের সামনে থাকে।
সিঙ্গাপুরে হাসপাতালে থাকার একটা ভাল দিক হচ্ছে, সপ্তাহে ২ দিন তারা আল্ট্রা সাউন্ড থেকে শুরু করে সব ধরনের প্রয়োজনীয় পরীক্ষাগুলো করে থাকেন। কিন্তু এত পরীক্ষা নিরীক্ষার পরও তারা সমস্যা চিহ্নিত করতে পারছেন না।
শেষে ৪ মাস পর আন্টিকে দেশে ফিরিয়ে আনা হল। আংকেল ভাবলেন, ঘরে থাকলে ঠিক মত পরিচর্যা হয় কি না হয়, তাই তিনি আন্টিকে বারিধারাস্থিত ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করে দিলেন। সেখানে ডাক্তাররা আল্ট্রা সাউন্ড করিয়ে বললেন, প্রতিস্থাপনের সময় একটি নালীর ভেতর দিয়ে সেলাই চলে যায়। সেই নালী দিয়ে রক্ত সঞ্চালিত হচ্ছে না বলে আন্টির নতুন কিডনী কাজ করছে না। আংকেল ভাবলেন, সব রকমে তো মারাই যাবে।
শেষ চেষ্টা করে দেখতে তো দোষ নেই। তাই তিনি আর এক বার অস্ত্রপচারে সম্মতি দিলেন। এবং এবার শুধু অপারেশন সাকসেসফুলই নয়, মিশনও সফল হল। আন্টি সুস্থ হয়ে উঠতে শুরু করলেন এবং আল্লাহর অশেষ রহমতে এখন সম্পূর্ন ভাল আছেন।
আমি আংকেলকে অনেক বার বলেছিলাম, মাউন্ট এলিজাবেথ কর্তৃপক্ষকে ব্যপারটা জানাতে।
এতে করে ভবিষ্যতে মানুষ সাবধানি হবে। কিন্তু, আন্টি সেরে উঠেছে, আংকেল তাতেই খুশি। কারও বিরুদ্ধে আর কোন অভিযোগ নেই তার।
আমরা মনে করি দেশের বাইরে চিকিৎসা করালে সুষ্ঠ চিকিৎসার একটা নিশ্চয়তা পাওয়া যাবে। কিন্তু, ভাগ্যের উপর বুঝি কারওই হাত নেই!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।