আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ রক্ষায় কর্তা ব্যক্তিরা যা ভাবতে পারেন

শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। শিক্ষার মাধ্যমে একটা জাতি উন্নতির চরম শিখরে আরোহন করে। বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়। শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষণা দেয়। নেতৃত্বের যোগ্যতা লাভ করে।

বলা হয়ে থাকে যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত সে জাতি তত বেশি উন্নত। কিন্তু সেই ব্রিটিশ আমল থেকে আমাদের মোল্লা মৌলবীদের ফতোয়ায় ফতোয়ার জর্জরিত হয়ে আছে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা। তৎকালীন আলেম সমাজ বললেন যে, ‘ইংরেজী শিক্ষা গ্রগণ করা যাবে না; এটা হারাম। বিধর্মীদের ভাষা। ’ যার ফলে তৎকালীন ঈমানদার মুসলমানগণ ইংরেজী শিখল না।

ফলে পিছিয়ে গেল শতাব্দীর পর শতাব্দী পর্যন্ত। এখনও তারা পিছিয়েই আছে। সৈয়দ আমীর আলী, স্যার সৈয়দ আহমদ, নওয়াব আবদুল লতিফ মুসলমানদেরকে ইংরেজী শিক্ষার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করলেন। ধীরে ধীরে হাতেগোনা কয়েকজন মুসলমান আলেমদের ফতোয়া আর মূর্খতার বেঁড়াজাল অতিক্রম ইংরেজী শিক্ষা গ্রহণ করতে লাগল। এগিয়ে গেল সামনের দিকে।

আমাদের জাতীয় কবি, মানবতার কবি, সাম্যের কবি, বিদ্রোহের কবি, স্বাধীনতার কবি, কাজী নজরুল ইসলাম আলেমদের তৎকালীন কথাকে চ্যালেঞ্জ করে ঘোষণা করলেন- ’বিশ্ব যখন এগিয়ে চলেছে আমরা তখনো পিছে/ বিবি তালাকের ফতোয়া খুঁজেছি ফিকাহ ও হাদীস চষে। ’ এভাবে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা। এর মানে শিক্ষাব্যবস্থায় আমাদের কোন উন্নতি হয়নি এমনটা কিন্তু নয়। আমাদের দেশেল শিক্ষার্থীরা বিদেশে গিয়ে উচ্চতর ডিগ্রী নিয়ে দেশের সুনাম বৃদ্ধি করেছে, করছে ও ভবিষ্যতেও করবে। এর কৃতিত্ব কিন্তু আমাদের দেশের নয়; তারা বিদেশে পড়াশোনা করেছে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পায়নি তাই।

তবুও এতটুকু শান্তনা যে তারা আমাদের দেশের আলো বাতসে বড় হয়েছিল একদিন। লর্ড কর্নওয়ালিশ প্রবর্তিত সঙ্গনি সাপের মতো দ্বিমুখি শিক্ষাব্যবস্থার প্রনয়ণ করে দেশের মানুষকে বিভক্ত করে ফেলা হয়েছিল। তারা চেয়েছিল এমন একটা শিক্ষাব্যবস্থা প্রনয়ণ করতে যাতে দেখতে শুনতে হবে বাঙালি কিন্তু চিন্তা চেতনায় হবে ব্রিটিশ। যার ফলে আমাদেরকে প্রতিনিয়ত ব্রিটিশদের দালালী করতে দেখা যায়। এখানে মানুষকে গালি দিয়ে লাভ হবে না।

মূল জায়গা ঠিক না করে যতই ফালাফালি করি না কেন তাতে কোনই ফয়দা হবে না। গাছকে যদি সবুজ সতেজ রাখতে চান তাহলে গোড়ায় পানি দিতে হবে আগায় দিয়ে কি লাভ। যাক সে এক ব্যাপক আলোচনার বিষয়। ফিলে অসি বর্তমান সময়ে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে নতুন শিক্ষাব্যবস্থা প্রনয়ণ করে।

যা নিঃসন্দেহে আধুনিক এবং যুগোপযোগী বলা যায়। কিন্তু তবুও একটা কথা থেকে যায় যে, বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা হয়নি। এবং কি নাম্বার ও কম রাখা হয়েছে। ইদানিং একটা বিজ্ঞাপন খুব একটা মার্কেট পেয়েছে যে, ‘জমির সবকিছু ঠিকঠাক শুধু বন বিভাগের জমির উপর একটু দাবী আছে আর কি; মাসে মাসে হাজিরা দিলে চলবে। শেষে বলা হয় কখনো কখনো এক পার্সেন্ট অপুর্ণতাই ক্ষতির কারণ হয়ে থাকে।

’ তদ্রুপ ধর্মীয় শিক্ষাকে অবহেলা করে সরকার পুরো শিক্ষাব্যবস্থাকেউ বিতর্কিত করে ফেলেছে। যার ফলে আলেম সমাজকে রাজপথে আন্দোলন করতেও দেখা গেছে। অমমান অপধস্ত হয়ে জেল খাটতে দেখা গেছে। এবার চোখ ফিরানো যাক বর্তমান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর পুর্ব বাংলার শিক্ষার্থীরা; বিশেষ করে মুসলমান ছাত্ররা বেশি উপকৃৎ হলো।

যার ফলে তৎকালীন কলকাতার বুদ্ধিজীবীরা কোমরে গামছা বেঁধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিল। তারা চায়নি পূর্ব বাংলার মুসলমানরা শিক্ষা-দীক্ষায় এগিয়ে যাক। তারা চায় মুসলমানদেরকে গোলাম বানিয়ে রাখতে। ১৭৫৭ সালে ২৩ জুন পলাশীর বিপর্যয়ের পর একমাত্র কলকাতার বুদ্ধিজীবীরাই আনন্দ মিছিল করেছিল। তার পর দুইশত বছরের গোলামীর জিঞ্জির থেকে পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এরপর ১৯৮৭ সালে ভারত স্বাধীনতা লাভ।

এরপর ১৯৭১ সালে এক সাগর রক্তের বিণিময়ে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্ম। আজ আমরা গর্ব করে বলতে পারি আমরা স্বাধীন। আমাদের একটি ভূখন্ড আছে। লাল-সবুজের একটি পতাকা আছে। আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি আছে।

ভাটিয়ালী, মারফতী, ভাওয়াইয়া, পল্লীগীতি মুর্শিদী গান আছে। আরও আছে নজরুল আর রবীন্দ্র সঙ্গীত। আমাদের একজন জাতীয় কবি আছে যার নাম কাজী নজরুল ইসলাম। বাংলা ভাষায় একজন বিশ্ব কবির জন্ম হয়েছে যার নাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এতবড় একজন কবি হওয়া সত্ত্বেও কেন যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধীতা করেছিলেন তা আমার বুঝে আসে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর মুসলমান ছাত্র ছিল হাতেগোনা কয়েকজন। তাই শেরে বাংলা একে ফজলুল হক মুসলমান ছাত্রদের জন্য বিশেষ বৃত্তির ব্যবস্থা করে দিলেন। এরপর ধীরে ধীরে বাড়তে লাগলো মুসলমান ছাত্রের সংখ্যা। মুসলমানদের স্বাধীনাতার জন্য, মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য, স্বকিয়তার জন্য, শিক্ষার উন্নতি সাধনের জন্য যে সকল মনীষীরা অশেষ অবদান রেখেছেন তাদের মধ্যে শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখা থাকবে। আমরা সকলেই জানি এ ব্যাপারে ইতিহাস স্বাক্ষী যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পূর্ব থেকে এই পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিশেষ অবদান রয়েছে।

১৯৫২ সালের মাতৃভাষা আন্দোলন। ১৯৬৯ এর আইয়ুব বিরোধী গণ অভূত্থান। ১৯৭১ সালের মাহান স্বাধীনতা যুদ্ধ। ১৯৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন। সকল আন্দোলন সংগ্রামেই ছাত্র সমাজের বিশেষ একটা ভূমিকা ছিল।

তখন তারা দেশের জন্য, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য, স্বাধিকারের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য মিছিল করেছিল মিটিং করেছিল। এবং কি জীবন পর্যন্তও বিলিয়ে দিয়েছিল। নুর হোসেন, ডা. মিলন জীবন দিয়ে তা দেখিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু বর্তমানে ছাত্র সমাজের সেই সোনালী ঐতিহ্য আর নেই। এখন ছাত্ররা শিক্ষা অর্জনকে ছেড়ে দিয়ে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ধর্ষণ, খুন এবং কি রাজনৈতিক লেজুড়বিত্তি করে তাদের মূল্যবান শিক্ষাজীবন অতিবাহিত করছে।

ছাত্র সমাজের উপর নির্ভর করে একটি দেশের ভবিষ্যৎ। আমাদের ছাত্র সমাজের বর্তমান হাল হাকিকত দেখে মাথায় হাত দেয়া ছাড়া কোন উপায় দেখছি না। যেখানে উন্নত বিশ্বের প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্ররা শুধুমাত্র জ্ঞানার্জন করে সময় অতিবাহিত করছে। আর আমাদের দেশের ছাত্ররা মাদক সেবন করে প্রতিভাকে ধ্বংস করছে। উন্নত দেশে একটা সুবিধা ছাত্ররা পড়ার ফাঁকে ঘন্টা বিক্তিক কাজের সুবিধা পায়।

আমাদের দেশে আমরা তা পাচ্ছি না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অশান্ত হওয়ার পেছনে এটাও অন্যতম একটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ বলে আমার কাছে মনে হয়। ফিরে আসা যাক বর্তমান শিক্ষা বর্তমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থা লেজে গোবরে একথা বলা যায়। কথাটা শুনতে বেখাপ্পা লাগলেও আমরা যদি একটু ভাল করে তাকাই তাহলে আমাদের চোখের সামনে তা ধরা দেবে অতি সহজে।

বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ছাত্রলীগ সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একক আধিপত্য কায়েম করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঞ্জীরনগর বিশ্ববিদ্যায়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যায়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যায়, বাজশাহী পলিটেকনিক ইন্সস্টিটিউট, চুয়েট, ডুয়েটসহ সকল বিশ্ববিদ্যায় নরককূন্ডে পরিণত করেছে। আর দেশের প্রকৌশল বিশ্ব বিদ্যায়গুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ বুয়েটে সর্বকালের ঝামেলা আর মারামারিতে সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশের অনেক কলামিষ্ট কলাম লেখেছেন। তাদের মধ্যে সৈয়দ আবুল মকসুদ, আনিসুল হক কলাম লিখেছেন।

যা বিবেকবান মানুষের টনক নড়েছে। পরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়। আমরা সকলে জানি কিছুদিন আগে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সিলেট এমসি কলেজে ছাত্রলীগের দু’গ্র“পের সংঘর্ষে শত বছরেরও অধিক পুরণো ছাত্রাবাসে আগুণ জ্বালিয়ে দেয় ছাত্রলীগ। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রী মহোদয় সে কলেজেরই ছাত্র ছিলেন এক সময়। যার ফলে তারা নিজেদের আবেগকে ধরে রাখতে পারেনি।

তাই ছুটে গিয়েছেন ধ্বংস দশা দেখতে। মনের দুঃখে চোখে রুমাল দিয়ে চোখ মোছার দৃশ্য সারা দেশবাসী দেখেছে। সব টিভি চ্যানেলগুলো ঘটাকরে সেটি দেখালোও। দেশের মানুষ আশা করেছিল শিক্ষামন্ত্রীর প্রতিষ্ঠানে-অর্থমন্ত্রীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আগুণ লাগালো! ছাত্রলীগের আর রক্ষা নাই। এবার বুঝবে ঠেলা।

কিন্তু এগুলোর কিছুই হয়নি। খবর খবরই রয়ে গেল। কাজের কাজ কিছুই হল না। শুধু তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েই শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় দায়িত্ব শেষ করেছেন বলে মনে হয়। উল্টো আমরা দেখলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নবগঠিত ছাত্রদল কমিটি যথন ভিসির সাথে দেখা করতে যাবে- পথিমধ্যে ছাত্রলীগ তাদের উপর বেপরোয়া হামলা চালিয়ে, তাদেরকে লাঠিপেটা করে, আহত কর্মীদের শরীরের উপর উঠে নর্দন কুর্দন করতেও দেখা গেছে।

তবুও ছাত্রলীগ ধোয়া তুলসী পাতা। আর যত দোষ ছাত্রদল আর শিবিরের উপর ছাপিয়ে দিয়ে যেন মনে বেশ সুখ পায় বর্তমান আওয়ামীলীগের বড় বড় নেতারা। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে এমটি এমপি মন্ত্রী পর্যন্ত প্রায়ই সকলেই কোন কিছু সংঘটিত হলে তার মধ্যে ছাত্র শিবিরের গন্ধ খুঁজে পান। অথচ তারা জানে না যে, শিবির ছাত্র সমাজের নৈতিক মানকে উন্নত করার জন্য রাতদিন কত অমানুষিক পরিশ্রম করে চলছে। বর্তমান সরকারের আমলের শুরুতেই খুন হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র শরিফুজ্জামান নোমানী।

সে ইসলামী ছাত্র শিবির বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলো। এরপর একই বিশ্ববিদ্যালয়ে খুন হয়েছে ছাত্রলীগের কর্মী ফারুক হোসেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে খুন হয়েছে শিবিরের দু’জন কর্মী। এছাড়া ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে খুন হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যায়ে ছাত্রলীগের দু’জন কর্মী। রাজশাহী পলিটেকনিক কলেজে ছাত্রলীগ এক গ্র“পের কর্মীরা অন্য গ্র“পের কর্মীদেরকে রামদা আর কিরিচ দিয়ে কুপিয়েছে।

সেদিন প্রথম সারির একটি দৈনিক পড়তে গিয়ে একটা জরিপ দেখতে পেলাম তা হলো- ‘বর্তমান সরকারের ৪৪ মাসে ১৯ জন ছাত্র নিহত আহত ৪ সহস্রাধিক: সংঘর্ষ শতাধিক একের পর এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। -(দৈনিক ইনকিলাম ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১২ ইং)। ’ এভাবে যখন বর্তমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো একের পর এক বিশৃঙ্খলা আর করুণ পরিস্থিতিতে দিনাতিপাত করছে। এমতাবস্থায় আমি কর্তা ব্যক্তিদের জ্ঞাতার্থে কিছু সুপারিশ বা প্রস্তাবনা পেশ করছি। তা হলো: এক. শিক্ষার্থীদের জন্য পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক করা।

দুই. শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে প্রবেশের সময় এবং বের হবার সময় নিজ নিজ পরিচয়পত্র প্রদর্শন করা। তিন. অ-ছাত্রদেরকে ক্যাম্পাসে প্রবেশের অনুমতি না দেয়া। চার. ছাত্রদের মৌলিক স্বার্থের পরিপন্থি হয় এমন আন্দোলনকে কঠোর হস্তে দমন করা। পাঁচ. আন্দেলনরত শিক্ষার্থীদেরকে নিয়ে তাৎক্ষনিক বৈঠকে বসা। ছয়. অধ্যয়ণরত শিক্ষার্থীদের জন্য আচরণবিধি প্রনয়ণ করা।

সাত. ছাত্ররা যাতে মিছিল-মিটিং না করে স্মারকলিপির মাধ্যমে দাবী আদায় করতে পারে তার ব্যবস্থা রাখা। আট. ছাত্রদেরকে যাতে কোন রাজনৈতিক দল তাদের স্বার্থে ব্যবহার করতে না পারে সেদিকে কর্তৃপক্ষ সজাগ দৃষ্টি রাখবেন। নয়. সকল ধরণের তামাকদ্রব্য ক্যাম্পাসে প্রবেশ, বিপণন এবং সেবন নিষিদ্ধ করা। দশ. শিক্ষার্থীদের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশের জন্য প্রতিমাসে রচনা, বিতর্ক, নাটক, অভিনয় ও কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতা চালু করা। যাতে করে শিক্ষার্থীরা এদিকে ব্যস্ত থেকে অন্যদিকে জড়ানোর সুযোগ না পায়।

এগার. প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করা। এতে সিট বাণিজ্য বন্ধ হবে বলে মনে হয়। বার. শিক্ষার্থীদেরকে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান এবং দেশপ্রেমে উজ্জীবিত করা। তার জন্য ওয়ার্কসপ এবং বিশেষ আলোচনার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তের. শিক্ষার্থীদের জন্য যাতায়াতের সুব্যবস্থা রাখা।

এবং দেশের অন্যান্য সকল বাসগুলোতে হাফ ভাড়ার ব্যবস্থা করা। চৌদ্দ. ক্যাম্পাসে অবাধ যৌনাচারমূলক মেলামেশার উপর কড়াকড়ি আরোপ করা। কেননা অনেক ঘটনার সূত্রপাত মেয়েদেরকে নিয়েও হয়ে থাকে। পনের. ইভটিজিংকারী ছেলে হোক বা মেয়ে হোক উভয়ের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রাখা এবং কার্যকর করা। ষোল. উপরোক্ত ব্যবস্থার পরও ক্যাম্পাসে শান্তি ফিরে না এলে তাহলে প্রয়োজনে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের চিন্তা ভাবনা করা।

উপরোক্ত প্রস্তাবণাগুলো কর্তৃপক্ষ দয়া করে একটু ভেবে দেখবেন। তাহলে ছাত্র সামাজের হারানো গৌরব আর ঐতিহ্য ফিরিয়ে আসবে বলে আমি মনে করি। আমাদের মেধাবী ছাত্ররা যাতে কোন বিশেষ রাজনৈতিক দলের ক্রীড়নকে পরিণত না হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখা। তাদের মেধা-মনন-স্বকিয়তা-আর সুপ্ত প্রতিভাকে বিকিয়ে না দিয়ে দেশ এবং মানুষের সেবার কাজে লাগাবেন। এটাই বর্তমান মেধাবী ছাত্রদের কাছে দেশবাসীর প্রাণের চাওয়া।

আর রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আমার একটাই চাওয়া দয়া করে মেধাবী ছাত্রদেরকে আপনারা নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। তাহলে আমরা মেধাবী প্রজন্ম গঠন করতে পারবো। যারা বড় হয়ে দেশের সেবায় নিজেদেরকে বিলিয়ে দেবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে ফুলের বাগানের মত আর শিক্ষার্থীরা হলো সে বাগানের ফুল। আমাদের শিক্ষকরা হলেন সে বাগানের মালী।

প্রত্যেকটি ছাত্ররা এক একটি লাল গোলাপ হয়ে তাদের চারপাশকে আলোকিত করে খুশবু ছড়াবে এটাই হোক আমাদের প্রাপ্য। বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ফুলের বাগানের মত। দক্ষ মালীর পরিচর্যার মাধ্যমে সেই বাগান থেকে ফুল ফোটানোর কাজ করুক। আর ফুলে সুভাশে আমোদিত হোক আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ। শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড।

শিক্ষার মাধ্যমে একটা জাতি উন্নতির চরম শিখরে আরোহন করে। বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়। শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষণা দেয়। নেতৃত্বের যোগ্যতা লাভ করে। বলা হয়ে থাকে যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত সে জাতি তত বেশি উন্নত।

কিন্তু সেই ব্রিটিশ আমল থেকে আমাদের মোল্লা মৌলবীদের ফতোয়ায় ফতোয়ার জর্জরিত হয়ে আছে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা। তৎকালীন আলেম সমাজ বললেন যে, ‘ইংরেজী শিক্ষা গ্রগণ করা যাবে না; এটা হারাম। বিধর্মীদের ভাষা। ’ যার ফলে তৎকালীন ঈমানদার মুসলমানগণ ইংরেজী শিখল না। ফলে পিছিয়ে গেল শতাব্দীর পর শতাব্দী পর্যন্ত।

এখনও তারা পিছিয়েই আছে। সৈয়দ আমীর আলী, স্যার সৈয়দ আহমদ, নওয়াব আবদুল লতিফ মুসলমানদেরকে ইংরেজী শিক্ষার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করলেন। ধীরে ধীরে হাতেগোনা কয়েকজন মুসলমান আলেমদের ফতোয়া আর মূর্খতার বেঁড়াজাল অতিক্রম ইংরেজী শিক্ষা গ্রহণ করতে লাগল। এগিয়ে গেল সামনের দিকে। আমাদের জাতীয় কবি, মানবতার কবি, সাম্যের কবি, বিদ্রোহের কবি, স্বাধীনতার কবি, কাজী নজরুল ইসলাম আলেমদের তৎকালীন কথাকে চ্যালেঞ্জ করে ঘোষণা করলেন- ’বিশ্ব যখন এগিয়ে চলেছে আমরা তখনো পিছে/ বিবি তালাকের ফতোয়া খুঁজেছি ফিকাহ ও হাদীস চষে।

’ এভাবে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা। এর মানে শিক্ষাব্যবস্থায় আমাদের কোন উন্নতি হয়নি এমনটা কিন্তু নয়। আমাদের দেশেল শিক্ষার্থীরা বিদেশে গিয়ে উচ্চতর ডিগ্রী নিয়ে দেশের সুনাম বৃদ্ধি করেছে, করছে ও ভবিষ্যতেও করবে। এর কৃতিত্ব কিন্তু আমাদের দেশের নয়; তারা বিদেশে পড়াশোনা করেছে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পায়নি তাই। তবুও এতটুকু শান্তনা যে তারা আমাদের দেশের আলো বাতসে বড় হয়েছিল একদিন।

লর্ড কর্নওয়ালিশ প্রবর্তিত সঙ্গনি সাপের মতো দ্বিমুখি শিক্ষাব্যবস্থার প্রনয়ণ করে দেশের মানুষকে বিভক্ত করে ফেলা হয়েছিল। তারা চেয়েছিল এমন একটা শিক্ষাব্যবস্থা প্রনয়ণ করতে যাতে দেখতে শুনতে হবে বাঙালি কিন্তু চিন্তা চেতনায় হবে ব্রিটিশ। যার ফলে আমাদেরকে প্রতিনিয়ত ব্রিটিশদের দালালী করতে দেখা যায়। এখানে মানুষকে গালি দিয়ে লাভ হবে না। মূল জায়গা ঠিক না করে যতই ফালাফালি করি না কেন তাতে কোনই ফয়দা হবে না।

গাছকে যদি সবুজ সতেজ রাখতে চান তাহলে গোড়ায় পানি দিতে হবে আগায় দিয়ে কি লাভ। যাক সে এক ব্যাপক আলোচনার বিষয়। ফিলে অসি বর্তমান সময়ে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে নতুন শিক্ষাব্যবস্থা প্রনয়ণ করে। যা নিঃসন্দেহে আধুনিক এবং যুগোপযোগী বলা যায়।

কিন্তু তবুও একটা কথা থেকে যায় যে, বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা হয়নি। এবং কি নাম্বার ও কম রাখা হয়েছে। ইদানিং একটা বিজ্ঞাপন খুব একটা মার্কেট পেয়েছে যে, ‘জমির সবকিছু ঠিকঠাক শুধু বন বিভাগের জমির উপর একটু দাবী আছে আর কি; মাসে মাসে হাজিরা দিলে চলবে। শেষে বলা হয় কখনো কখনো এক পার্সেন্ট অপুর্ণতাই ক্ষতির কারণ হয়ে থাকে। ’ তদ্রুপ ধর্মীয় শিক্ষাকে অবহেলা করে সরকার পুরো শিক্ষাব্যবস্থাকেউ বিতর্কিত করে ফেলেছে।

যার ফলে আলেম সমাজকে রাজপথে আন্দোলন করতেও দেখা গেছে। অমমান অপধস্ত হয়ে জেল খাটতে দেখা গেছে। এবার চোখ ফিরানো যাক বর্তমান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর পুর্ব বাংলার শিক্ষার্থীরা; বিশেষ করে মুসলমান ছাত্ররা বেশি উপকৃৎ হলো। যার ফলে তৎকালীন কলকাতার বুদ্ধিজীবীরা কোমরে গামছা বেঁধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিল।

তারা চায়নি পূর্ব বাংলার মুসলমানরা শিক্ষা-দীক্ষায় এগিয়ে যাক। তারা চায় মুসলমানদেরকে গোলাম বানিয়ে রাখতে। ১৭৫৭ সালে ২৩ জুন পলাশীর বিপর্যয়ের পর একমাত্র কলকাতার বুদ্ধিজীবীরাই আনন্দ মিছিল করেছিল। তার পর দুইশত বছরের গোলামীর জিঞ্জির থেকে পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এরপর ১৯৮৭ সালে ভারত স্বাধীনতা লাভ। এরপর ১৯৭১ সালে এক সাগর রক্তের বিণিময়ে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্ম।

আজ আমরা গর্ব করে বলতে পারি আমরা স্বাধীন। আমাদের একটি ভূখন্ড আছে। লাল-সবুজের একটি পতাকা আছে। আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি আছে। ভাটিয়ালী, মারফতী, ভাওয়াইয়া, পল্লীগীতি মুর্শিদী গান আছে।

আরও আছে নজরুল আর রবীন্দ্র সঙ্গীত। আমাদের একজন জাতীয় কবি আছে যার নাম কাজী নজরুল ইসলাম। বাংলা ভাষায় একজন বিশ্ব কবির জন্ম হয়েছে যার নাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এতবড় একজন কবি হওয়া সত্ত্বেও কেন যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধীতা করেছিলেন তা আমার বুঝে আসে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর মুসলমান ছাত্র ছিল হাতেগোনা কয়েকজন।

তাই শেরে বাংলা একে ফজলুল হক মুসলমান ছাত্রদের জন্য বিশেষ বৃত্তির ব্যবস্থা করে দিলেন। এরপর ধীরে ধীরে বাড়তে লাগলো মুসলমান ছাত্রের সংখ্যা। মুসলমানদের স্বাধীনাতার জন্য, মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য, স্বকিয়তার জন্য, শিক্ষার উন্নতি সাধনের জন্য যে সকল মনীষীরা অশেষ অবদান রেখেছেন তাদের মধ্যে শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখা থাকবে। আমরা সকলেই জানি এ ব্যাপারে ইতিহাস স্বাক্ষী যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পূর্ব থেকে এই পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিশেষ অবদান রয়েছে। ১৯৫২ সালের মাতৃভাষা আন্দোলন।

১৯৬৯ এর আইয়ুব বিরোধী গণ অভূত্থান। ১৯৭১ সালের মাহান স্বাধীনতা যুদ্ধ। ১৯৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন। সকল আন্দোলন সংগ্রামেই ছাত্র সমাজের বিশেষ একটা ভূমিকা ছিল। তখন তারা দেশের জন্য, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য, স্বাধিকারের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য মিছিল করেছিল মিটিং করেছিল।

এবং কি জীবন পর্যন্তও বিলিয়ে দিয়েছিল। নুর হোসেন, ডা. মিলন জীবন দিয়ে তা দেখিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু বর্তমানে ছাত্র সমাজের সেই সোনালী ঐতিহ্য আর নেই। এখন ছাত্ররা শিক্ষা অর্জনকে ছেড়ে দিয়ে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ধর্ষণ, খুন এবং কি রাজনৈতিক লেজুড়বিত্তি করে তাদের মূল্যবান শিক্ষাজীবন অতিবাহিত করছে। ছাত্র সমাজের উপর নির্ভর করে একটি দেশের ভবিষ্যৎ।

আমাদের ছাত্র সমাজের বর্তমান হাল হাকিকত দেখে মাথায় হাত দেয়া ছাড়া কোন উপায় দেখছি না। যেখানে উন্নত বিশ্বের প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্ররা শুধুমাত্র জ্ঞানার্জন করে সময় অতিবাহিত করছে। আর আমাদের দেশের ছাত্ররা মাদক সেবন করে প্রতিভাকে ধ্বংস করছে। উন্নত দেশে একটা সুবিধা ছাত্ররা পড়ার ফাঁকে ঘন্টা বিক্তিক কাজের সুবিধা পায়। আমাদের দেশে আমরা তা পাচ্ছি না।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অশান্ত হওয়ার পেছনে এটাও অন্যতম একটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ বলে আমার কাছে মনে হয়। ফিরে আসা যাক বর্তমান শিক্ষা বর্তমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থা লেজে গোবরে একথা বলা যায়। কথাটা শুনতে বেখাপ্পা লাগলেও আমরা যদি একটু ভাল করে তাকাই তাহলে আমাদের চোখের সামনে তা ধরা দেবে অতি সহজে। বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ছাত্রলীগ সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একক আধিপত্য কায়েম করে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঞ্জীরনগর বিশ্ববিদ্যায়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যায়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যায়, বাজশাহী পলিটেকনিক ইন্সস্টিটিউট, চুয়েট, ডুয়েটসহ সকল বিশ্ববিদ্যায় নরককূন্ডে পরিণত করেছে। আর দেশের প্রকৌশল বিশ্ব বিদ্যায়গুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ বুয়েটে সর্বকালের ঝামেলা আর মারামারিতে সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশের অনেক কলামিষ্ট কলাম লেখেছেন। তাদের মধ্যে সৈয়দ আবুল মকসুদ, আনিসুল হক কলাম লিখেছেন। যা বিবেকবান মানুষের টনক নড়েছে।

পরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়। আমরা সকলে জানি কিছুদিন আগে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সিলেট এমসি কলেজে ছাত্রলীগের দু’গ্র“পের সংঘর্ষে শত বছরেরও অধিক পুরণো ছাত্রাবাসে আগুণ জ্বালিয়ে দেয় ছাত্রলীগ। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রী মহোদয় সে কলেজেরই ছাত্র ছিলেন এক সময়। যার ফলে তারা নিজেদের আবেগকে ধরে রাখতে পারেনি। তাই ছুটে গিয়েছেন ধ্বংস দশা দেখতে।

মনের দুঃখে চোখে রুমাল দিয়ে চোখ মোছার দৃশ্য সারা দেশবাসী দেখেছে। সব টিভি চ্যানেলগুলো ঘটাকরে সেটি দেখালোও। দেশের মানুষ আশা করেছিল শিক্ষামন্ত্রীর প্রতিষ্ঠানে-অর্থমন্ত্রীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আগুণ লাগালো! ছাত্রলীগের আর রক্ষা নাই। এবার বুঝবে ঠেলা। কিন্তু এগুলোর কিছুই হয়নি।

খবর খবরই রয়ে গেল। কাজের কাজ কিছুই হল না। শুধু তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েই শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় দায়িত্ব শেষ করেছেন বলে মনে হয়। উল্টো আমরা দেখলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নবগঠিত ছাত্রদল কমিটি যথন ভিসির সাথে দেখা করতে যাবে- পথিমধ্যে ছাত্রলীগ তাদের উপর বেপরোয়া হামলা চালিয়ে, তাদেরকে লাঠিপেটা করে, আহত কর্মীদের শরীরের উপর উঠে নর্দন কুর্দন করতেও দেখা গেছে। তবুও ছাত্রলীগ ধোয়া তুলসী পাতা।

আর যত দোষ ছাত্রদল আর শিবিরের উপর ছাপিয়ে দিয়ে যেন মনে বেশ সুখ পায় বর্তমান আওয়ামীলীগের বড় বড় নেতারা। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে এমটি এমপি মন্ত্রী পর্যন্ত প্রায়ই সকলেই কোন কিছু সংঘটিত হলে তার মধ্যে ছাত্র শিবিরের গন্ধ খুঁজে পান। অথচ তারা জানে না যে, শিবির ছাত্র সমাজের নৈতিক মানকে উন্নত করার জন্য রাতদিন কত অমানুষিক পরিশ্রম করে চলছে। বর্তমান সরকারের আমলের শুরুতেই খুন হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র শরিফুজ্জামান নোমানী। সে ইসলামী ছাত্র শিবির বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলো।

এরপর একই বিশ্ববিদ্যালয়ে খুন হয়েছে ছাত্রলীগের কর্মী ফারুক হোসেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে খুন হয়েছে শিবিরের দু’জন কর্মী। এছাড়া ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে খুন হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যায়ে ছাত্রলীগের দু’জন কর্মী। রাজশাহী পলিটেকনিক কলেজে ছাত্রলীগ এক গ্র“পের কর্মীরা অন্য গ্র“পের কর্মীদেরকে রামদা আর কিরিচ দিয়ে কুপিয়েছে। সেদিন প্রথম সারির একটি দৈনিক পড়তে গিয়ে একটা জরিপ দেখতে পেলাম তা হলো- ‘বর্তমান সরকারের ৪৪ মাসে ১৯ জন ছাত্র নিহত আহত ৪ সহস্রাধিক: সংঘর্ষ শতাধিক একের পর এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ।

-(দৈনিক ইনকিলাম ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১২ ইং)। ’ এভাবে যখন বর্তমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো একের পর এক বিশৃঙ্খলা আর করুণ পরিস্থিতিতে দিনাতিপাত করছে। এমতাবস্থায় আমি কর্তা ব্যক্তিদের জ্ঞাতার্থে কিছু সুপারিশ বা প্রস্তাবনা পেশ করছি। তা হলো: এক. শিক্ষার্থীদের জন্য পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক করা। দুই. শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে প্রবেশের সময় এবং বের হবার সময় নিজ নিজ পরিচয়পত্র প্রদর্শন করা।

তিন. অ-ছাত্রদেরকে ক্যাম্পাসে প্রবেশের অনুমতি না দেয়া। চার. ছাত্রদের মৌলিক স্বার্থের পরিপন্থি হয় এমন আন্দোলনকে কঠোর হস্তে দমন করা। পাঁচ. আন্দেলনরত শিক্ষার্থীদেরকে নিয়ে তাৎক্ষনিক বৈঠকে বসা। ছয়. অধ্যয়ণরত শিক্ষার্থীদের জন্য আচরণবিধি প্রনয়ণ করা। সাত. ছাত্ররা যাতে মিছিল-মিটিং না করে স্মারকলিপির মাধ্যমে দাবী আদায় করতে পারে তার ব্যবস্থা রাখা।

আট. ছাত্রদেরকে যাতে কোন রাজনৈতিক দল তাদের স্বার্থে ব্যবহার করতে না পারে সেদিকে কর্তৃপক্ষ সজাগ দৃষ্টি রাখবেন। নয়. সকল ধরণের তামাকদ্রব্য ক্যাম্পাসে প্রবেশ, বিপণন এবং সেবন নিষিদ্ধ করা। দশ. শিক্ষার্থীদের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশের জন্য প্রতিমাসে রচনা, বিতর্ক, নাটক, অভিনয় ও কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতা চালু করা। যাতে করে শিক্ষার্থীরা এদিকে ব্যস্ত থেকে অন্যদিকে জড়ানোর সুযোগ না পায়। এগার. প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করা।

এতে সিট বাণিজ্য বন্ধ হবে বলে মনে হয়। বার. শিক্ষার্থীদেরকে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান এবং দেশপ্রেমে উজ্জীবিত করা। তার জন্য ওয়ার্কসপ এবং বিশেষ আলোচনার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তের. শিক্ষার্থীদের জন্য যাতায়াতের সুব্যবস্থা রাখা। এবং দেশের অন্যান্য সকল বাসগুলোতে হাফ ভাড়ার ব্যবস্থা করা।

চৌদ্দ. ক্যাম্পাসে অবাধ যৌনাচারমূলক মেলামেশার উপর কড়াকড়ি আরোপ করা। কেননা অনেক ঘটনার সূত্রপাত মেয়েদেরকে নিয়েও হয়ে থাকে। পনের. ইভটিজিংকারী ছেলে হোক বা মেয়ে হোক উভয়ের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রাখা এবং কার্যকর করা। ষোল. উপরোক্ত ব্যবস্থার পরও ক্যাম্পাসে শান্তি ফিরে না এলে তাহলে প্রয়োজনে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের চিন্তা ভাবনা করা। উপরোক্ত প্রস্তাবণাগুলো কর্তৃপক্ষ দয়া করে একটু ভেবে দেখবেন।

তাহলে ছাত্র সামাজের হারানো গৌরব আর ঐতিহ্য ফিরিয়ে আসবে বলে আমি মনে করি। আমাদের মেধাবী ছাত্ররা যাতে কোন বিশেষ রাজনৈতিক দলের ক্রীড়নকে পরিণত না হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখা। তাদের মেধা-মনন-স্বকিয়তা-আর সুপ্ত প্রতিভাকে বিকিয়ে না দিয়ে দেশ এবং মানুষের সেবার কাজে লাগাবেন। এটাই বর্তমান মেধাবী ছাত্রদের কাছে দেশবাসীর প্রাণের চাওয়া। আর রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আমার একটাই চাওয়া দয়া করে মেধাবী ছাত্রদেরকে আপনারা নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।

তাহলে আমরা মেধাবী প্রজন্ম গঠন করতে পারবো। যারা বড় হয়ে দেশের সেবায় নিজেদেরকে বিলিয়ে দেবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে ফুলের বাগানের মত আর শিক্ষার্থীরা হলো সে বাগানের ফুল। আমাদের শিক্ষকরা হলেন সে বাগানের মালী। প্রত্যেকটি ছাত্ররা এক একটি লাল গোলাপ হয়ে তাদের চারপাশকে আলোকিত করে খুশবু ছড়াবে এটাই হোক আমাদের প্রাপ্য।

বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ফুলের বাগানের মত। দক্ষ মালীর পরিচর্যার মাধ্যমে সেই বাগান থেকে ফুল ফোটানোর কাজ করুক। আর ফুলে সুভাশে আমোদিত হোক আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.