দিলের দরজা ২৪/৭ খুইলা রাখি মাছি বসে মানুষ বসে না। মানুষ খালি উড়াল পারে! এক দিন আমি ও দিমু উড়াল, নিজের পায়ে নিজে মাইরা কুড়াল... চব্বিশ বছর আগের কথা। আমি তখন মন্ট্রিয়লে থাকি। দেশ থেকে সবেমাত্র এসেছি। বয়স নিতান্তই কম।
তখনকার দিনে দোকানে কাপড়চোপড় কিনতে গেলে মেইড ইন ইন্ডিয়া আর মেইড ইন শ্রীলংন্কা দেখলেই কেমন যেনো লাগত! মন কেবল বাংলাদেশ নামটা খুঁজত। তখনো 'সোয়েট শপ' এই ব্যাপারসেপার গুলো বুঝতাম না। চব্বিশ বছর আগে কানাডায় বাংলাদেশের মানুষ সেই পরিমানে ছিল না। ইন্টারনেট, স্কাইপি, সেলুলার ফোন এসব কিছুই ছিল না। সব কিছু মিলিয়ে এই পরবাস যেন ছিল দূরে কোথায় দূরে দূরে...
যখনি বন্ধুবান্ধব মিলে শপিং এ গেছি কাপড়ের সেকশনে গেলেই কিছু কিনি বা না কিনি মনের অজান্তেই যেনো শার্টের কলার এর মাঝে দেখে নিতাম কাপড়টি কোথাকার তৈরী? মেইড ইন চায়না, মেইড ইন ভিয়েত নাম, মেইড ইন ইন্ডিয়া-শ্রীলংন্ক কোথাও বাংলাদেশের নামটি খুঁজে আর পাই না! অজানা কারনে মন খারাপ হয়ে যেত তখন।
সে তো অনেক অনেক আগের কথা। তার পর জীবনে পেরিয়ে গেছে বহু দিন, ক্ষন, মাস, বছর যুগ। মনে নেই তবু মনে আছে যে বার প্রথম কাপড় ধরে খুঁজতে খুঁজতে প্রথম দেখে ছিলাম বাংলাদেশের নাম, কি যে কি যে খুশি আমার! জানি না বিদেশ বিভূঁইয়ে ওইটুকুন মেড ইন বাংলাদেশে লেখা দেখে চোখে আমার জল এসে গিয়ে ছিল। খুটিয়ে খুটিয়ে পড়েছিলাম যত কিছু লিখা ছিল কাপড়ের ট্যাগ গুলোতে। হাতড়ে হাতড়ে খুঁজে দেখেছি কাপড়ের সেকশনের সকল হ্যাঙ্গার, কাপড়ের তাক ইত্যাদি।
এপার্টমেন্ট এ এসে গল্প করেছি রুমমেটদের সাথে। সবাই মিলে গেছি মেইড ইন বাংলাদেশ লেখা কাপড় দেখতে!
চব্বিশ বছর, সে আসলেই অনেক অনেক দিন আগের কথা। আশির দশকের গোড়ার দিকে বাংলাদেশে তৈরী পোশাকের কারখানা ছিল যেখানে ৪০/৫০ টি এখন তা বেড়ে দাড়িয়েছে ৪ হাজারের ও ওপর। দিন আর আগের মত নাই। এখনো এখানে ওখানে কাপড়ের দোকানে গেলেই অভ্যেসবশত চোখ চলে যায় শার্টের কলারে।
ওয়ালমার্ট, জেলার্স এগুলোতে বাজার সদাই করতে গেলেই দেখতাম সার সার বাধা টাল করে রাখা কাপড়ের সারি। প্রায় সব কাপড় ই বাংলাদেশের তৈরী। আমি কাপড় কিনি হয়ত অন্য কোন দোকান থেকে অথচ জানি না অদ্ভুত এক কারনে ওয়ালমার্ট এ বা জেলার্সে গেলে কাপড় গুলো একটু ছুঁয়ে ধরে আসি নাই এমন কখনো হয় নাই। আজো বাজার করতে ওয়ালমার্টে গিয়ে ছিলাম। কাপড়ের সেকশনের সামনে যেতেই খুব খারাপ লাগছিল।
আগের মত কাপড় গুলো আজ আর ছুঁয়ে দেখতে পারি নাই। জানি না কেন, ওয়ালমার্টের কাপড়ের ও সেকশনটায় দাড়িয়ে থাকতে যেয়ে কেমন যেনো লাগছিল আমার! মনে হচ্ছিল একটা পোড়া মুখ এখনি কোথাও থেকে এসে আমাকে জিজ্ঞেস করবে, তুমি কি কিছু খুঁজছ!
বাড়ি ফিরে এসে আমার সে অস্বস্থি এখনো কিছুতেই আর যাচ্ছে না! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।