সাম্য আর সাহসিকতার সাথে এগিয়ে যাবো আমরা ব্লগের শুরুতেই বলে রাখি এই ব্লগ পড়ার পর আমাকে যে যাই বলুক আমার কিছু যায় আসে না। আমি সত্যটাই বলতে পছন্দ করি। চট্রগ্রামের ফ্লাইওভারের গার্ডার পরে এত মানুষের মৃত্যু আসলেই মেনে নেওয়া যায় না। কিন্তু এটা নিয়ে যা যা ঘটছে তা আগে থেকেই বলা যায়।
কারণ প্রতিটি সরকারের আমলেই ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনা থেকে আমরা সেই শিক্ষাই পায়।
তাহলে দেখা যাক এবারের ঘটনা গুলোঃ
১। প্রথমেই আসি লাশের হিসাবে। এই দুর্ঘটনায় আসলে মৃতের সংখ্যা কত?? বিশ্বস্ত কোন সুত্র থেকে কেউ কি উত্তরটা দিতে পারবে?? না, পারবে না। । কারণ ফেসবুকের মাধ্যমেই জানলাম দুইজন প্রত্যক্ষদর্শী দুই ধরণের বর্ণনা দিয়েছেন।
আসুন দেখে নিই সেই সকল বর্ণনাঃ
প্রথম ছবির বক্তা অন্যের কাছ থেকে শুনে বলছেন কমপক্ষে সত্তরজন মারা গেছেন। অন্য ছবির বক্তা নিজের চোখে ঘটনা দেখে বললেন ২০-২৫জনের বেশি নয়। অনেকে ঘটনাস্থলে না গিয়েই বলছেন ২০০এর উপর মারা গেছে। এখন আপনি আপনার যুক্তি খাটিয়ে দেখুন আসলে কতজন মারা গেছে।
২।
আমরা বাঙ্গালিরা আসলে গুজবে কান দিই বেশি। একটা গুজব ছড়াইতে বেশিক্ষণ সময় নিই না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় চট্রগ্রামের তৃতীয় কর্ণফুলী সেতুর কথা। সেতুটি উদ্বোধন করতে নাকি ২০০জনের মাথা লাগবে। তাই হাসিনা আদেশ দিসে শিশু গুম করে তাদের মাথা কাটতে।
কয়েকজন নাকি শুনছে কাটা মাথা নিয়ে যাইতে, কিন্তু দেখে নাই। এটা নিয়ে বেশ আতঙ্কও ছড়ানো হইছিল। যাই হোক সেটা পরে মিথ্যাই প্রমাণিত হইছিল। কালও একই অবস্থা। গার্ডারগুলো সরানোর আগেই বলা শুরু হয়ে গেছিল ২০০ এর উপর মানুষ মারা গেছে।
৩। এবার আসি দুর্নীতির কথাই। বাংলাদেশে কেউ বলতে পারবে না দুর্নীতি ছাড়া কোন কাজ হইছে। তবে কালকের ঘটনাটা যে দুর্নীতির কারণে হইছে তা কিন্তু না। আগের বারের তদন্ত রিপোর্টটা যদি সিডিএ চেয়ারম্যান এম এ সালাম গুরুত্ব সহকারে দেখতেন তাহলে এই দুর্ঘটনা ঘটত না।
দায়িত্বে অবহেলার কারণেই দুর্ঘটনাটা ঘটেছে। আর এর মূল হোতা হলেন এম এ সালাম। ২নং ছবি থেকে আমরা জানতে পারি গার্ডারগুলো ভেঙ্গে পড়েনি। একটার সাথে আরেকটার ধাক্কা লেগে পড়ে যায়। আগেরবারও যেভাবে পড়ছিল।
তাই এটা নির্দ্বিধায় বলা যায় এই দুর্ঘটনার মূল কারণ দায়িত্বে অবহেলা।
৪। গার্ডার তৈরির সময় নির্দিষ্ট জায়গাটি নিরাপত্তা বেষ্টনী দিয়ে ঘিরে রাখা হয়। কিন্তু বিস্ময়কর হলেও সত্য যে, বর্তমানে যে গার্ডারগুলো তৈরি করা হচ্ছে তার আশেপাশে নিরাপত্তার কোন বালাই নেই। গার্ডারগুলোর নিচেই ছিল ভাসমান বাজার।
নিরাপত্তা বেষ্টনী দেয়া থাকলে হয়তো এত লাশ দেখতে হত না। এখানেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলায় দায়ী। তবে এখানে কিছুটা সাধারণ জনগণেরও দোষ দেয়া যায়। জেনেশুনে মৃত্যুকে বরণ করে নিতেই কি তারা সেখানে বাজার বসিয়েছিলেন?? এমন তো না যে সেখানে আগে থেকেই বাজার বসত। ফ্লাইওভার তৈরির কারণে রাস্তা বন্ধ থাকায় এই বাজার বসেছিল।
তাদেরও কি সতর্ক থাকা উচিত ছিল না??
৫। এবার আসি উত্তেজিত জনতার কথায়। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের ভ্রাম্যমান কার্যালয়ে আগুন, সালামের প্রতিষ্ঠান ওয়েলফুড ভাংচুর এতটুকু মানলাম। তারপর!! উদ্ধার কর্মীদেরকে মারধর, তাদেরকে উদ্ধার কাজে সহযোগিতা না করা, আহত ব্যক্তিদেরকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে আসা এ্যাম্বুলেন্স ভাংচুর এসব কার স্বার্থের জন্য??? কোথায় উদ্ধার কর্মীদেরকে আটকে পড়া মানুষদের দ্রুত উদ্ধার করতে সাহায্য করবে তা না, বরং তাদেরকে মারধর করা হল। এমন দৃশ্য আমরা আগেও দেখেছি।
৬। একটা বিষয় নিশ্চিত যে লাশ গুম করার একটা চেষ্টা খুব সম্ভবত হয়েছিল। কিন্তু মানুষ যেভাবে বলাবলি করছে আমার মনে হয় সেরকম কিছু হয়েছে। লাশ গুম করার সময় মানুষজন কোথায় ছিল?? কাল এনটিভির খবরেই দেখলাম দুইটি লাশ ঢাকছে জনগণ। সেখানে কোন পুলিশ ছিল না।
লাশ গুম হতে পারে একটা জায়গায়। সেটা হল হাসপাতালের মর্গ। এখান থেকে লাশ গুম করা হলে কেউ জানবে না। কিন্তু মর্গের কথা কেউ বললই না!!!
৭। আরেকটা বিষয় হল গার্ডার সরানোর মত যন্ত্রপাতি নাকি চট্রগ্রামে নেই।
ঢাকা থেকে যন্ত্রপাতি আসার পর নাকি উদ্ধার কাজ দ্রুত এগিয়ে যাবে। আমার প্রশ্ন হল, সব দুর্ঘটনা কি ঢাকাই ঘটবে বলে কথা আছে?? চট্রগ্রাম বাণিজ্যিক রাজধানী(!!!)। কিন্তু এখানে উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনার মত যন্ত্রপাতি এখনো নেই কেন?? এই প্রশ্নের উত্তর কে দিবে??
৮। সবচাইতে মজার বিষয় হল চট্রগ্রামের মাস্টার প্লেনে এই ফ্লাইওভার নাই-ই। নগর পরিকল্পনার বাইরে গিয়ে করা হচ্ছে এই ফ্লাইওভার।
কার স্বার্থে?? পেট পূজো করার জন্যেই কি নয়??? এই কথাটা কাল থেকে এখন পর্যন্ত শুধু একজনের মূখেই শুনেছি। অনেকেই এই ব্যাপারটা সম্পর্কে হয়তো জানেও না।
সবশেষে একটা কথায় বলব, এই দুর্ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদেরকে এমন শাস্তি দেওয়া হোক যাতে অন্যরা মানুষের জীবন নিয়ে খেলা করতে ভয় পায়। এমন মৃত্যু কারও কাম্য নয়। একদিন হয়ত আমাকে বা আপনাকেও এভাবে মরতে হবে।
আসুন তার আগেই আমরা সচেতন হয়, নিজেদের নিরাপত্তার জন্য দাবি তুলি। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।