পরে বলবো News Bangladesh চাপ সংকটের কারণে দেশে শিল্প, বাণিজ্য ও আবাসিক গ্যাস সংযোগ বন্ধ থাকলেও গাজীপুর ও টঙ্গী’র আবাসিক এলাকায় সহস্রধিক অবৈধ সংযোগের মাধ্যমে গ্যাস চুরির মহোউৎসব চলছে।
অবৈধ সংযোগ ও পুরনো সংযোগ থেকে অবৈধ ভাবে চুলা বৃদ্ধি করে প্রতি মাসে প্রায় কোটি টাকার গ্যাস চুরি হচ্ছে। গত দুই বছরে চুরি হয়েছে কমপক্ষে ২০ কোটি টাকার গ্যাস।
গ্যাস চুরির টাকা নিয়ে কয়েক ঠিকাদার ও গ্যাসের কর্মকর্তারা বাড়ি, জমি, ফ্যটের মালিক হয়ে কোটিপতি বনেছেন। অবৈধ রাইজার বসিয়ে নেয়া হয়েছে লাখ লাখ টাকা।
চুরি করে গ্যাস ব্যবহারকারিদের কাছ থেকে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদাররা চুলা বাবদ ৫শ’ টাকা হারে মাসিক বিল বাবদ প্রতিমাসে প্রায় অর্ধকোটি টাকা আদায় করছে। ওই টাকায় কয়েক ঠিকাদার ও কর্মকর্তা রাতারাতি কোটিপতি বনেছেন।
গাজীপুরস্থ গ্যাস অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে গ্যাস চুরিতে মদদ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাজীপুরে কোটি কোটি টাকার গ্যাস চুরির বিষয়ে গত ২৪ সেপ্টেম্বর বোর্ডবাজারের খাইলকৈর এলাকার জনৈক আ. হাই তিতাস গ্যাসের এমডি বরাবর গ্যাস চুরি বন্ধ করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে লিখিত অভিযোগ দেন। যার অনুলিপি গাজীপুর গ্যাস অফিসের জিএম, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবর পেশ করা হয়।
ওই অভিযোগে তিতাস গ্যাসের কয়েক ঠিকাদার, গ্যাস কর্মকর্তা-কর্মচারির নামসহ শতাধিক অবৈধ সংযোগ ও অর্ধশত গ্রাহকের নাম-ঠিকানা নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে একাধিক জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে। কোটি কোটি টাকার গ্যাস চুরির সংবাদে তোলপাড় শুরু হয়। কিন্তু গাজীপুর তিতাস গ্যাস কর্মকর্তাদের টনক নড়েনি।
দায়সারা তৎপরতা দেখাতে বোর্ডবাজার, জয়দেবপুর, জরুন এলাকার ১৫-২০ টি বাড়িতে অভিযান চালায় গ্যাস কর্তৃপক্ষ।
ওই সব বাড়িতে অবৈধ সংযোগ দিয়ে গ্যাস চুরি হাতেনাতে ধরলেও থানায় কয়েকটি জিডি ছাড়া এর বিরুদ্ধে কার্যত আইনগত কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মৌখিক চুক্তিতে টঙ্গী ও গাজীপুরে ফয়েজ ও তার পিতা সোলায়মান, জাহাঙ্গীর ও তার ভগ্নিপতি আমিনুল, কবির, আলম, জয়নাল, টঙ্গী গ্যাস অফিসের কর্মচারি রহিমসহ ১০-১২ জন ঠিকাদার প্রতিটি অবৈধ সংযোগ বাবদ প্রকার ভেদে এক থেকে আড়াই লাখ টাকা নিয়ে রাইজার উত্তোলন করেছে।
এভাবে টঙ্গীর সাতাইশ, গাজীপুরের বোর্ডবাজার, খাইলকৈর, উত্তর খাইলকৈর, কুনিয়াপাচর, বড়বাড়ি, কলমেশ্বর, রোকেয়া স্বরণী সড়ক, ডেগের চালা, মোগর খাল, চৌরাস্তা, গ্রেট ওয়াল সিটি, রওশন সড়ক, তেলীপাড়া, জেলা শহরের হাড়িনাল, ভোড়া, রথখোলা, লক্ষীপুরা, কলাবাগান, চন্দ্রা অঞ্চলের জরুন, কোণাবাড়ি, কাশিমপুর ও শফিপুর এলাকায় গত দুই বছরে শহস্রাধিক অবৈধ ভাবে রাইজার উত্তোলন এবং চুলা বৃদ্ধি করে ৬-৭ হাজার চুলায় অবৈধ সংযোগ দিয়ে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার গ্যাস চুরিতে সহায়তা করছে।
অবৈধ সংযোগ প্রদানকারি একাধিক ঠিকাদার জানান, দির্ঘদিন থেকে গ্যাসের নতুন সংযোগ বন্ধ রয়েছে। এ কারণে টাকা নিয়ে কিছু সংযোগ দিয়েছে।
চুলা বাবদ ৫শ টাকা হারে প্রতি মাসে বিল আদায়ের কথা স্বীকার করে বলেন, রাইজার এবং চুলাবাবদ আদায়কৃত টাকার ভাগ তিতাস গ্যাসের সার্ভিস টিমসহ কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। না দিলে তারা অভিযান চালায়। তাই প্রতি মাসেই সার্ভিস টিমের আ. রাজ্জাক, শামীম, আব্দুল আজিজ, হারুন অর রশিদ, আতাউর রহমান কচিসহ কর্মকর্তাদের ছালামি পাঠিয়ে দেই। কোন কারণে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে আসলেও অন্য একটি গ্রাহকের বিল বই দেখিয়ে দিলেই তারা সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করে চলে যায়। অবশ্য এ বাবদ তাদেরকে কিছু নগদ টাকা দিয়ে দিতে হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বোর্ডবাজার এলাকার অবৈধ সংযোগ গ্রহণ কারি বাড়ির মালিক জানান, ৫তলা বাড়ি নির্মান করে গ্যাসের জন্য ভাড়া দিতে পারছিলাম না। ঠিকাদার ফয়েজের সাথে যোগযোগ করলে দুই লাখ টাকা নিয়ে আমার বাড়িতে এক দিনেই গ্যাস সংযোগ দিয়ে যায়। প্রতি মাসে চুলা প্রতি ৫শ’ টাকা হারে বিলও দিতে হয় ফয়েজকে। দেড় বছরে গ্যাসের কোন লোক জন আমার কোন সমস্যা করেনি। একই রকম তথ্য একাধিক বাড়ি’র মালিকও জানান।
ঠিকাদার সোলামানের প্রতিবেশী ব্যবসায়ি জনান, সোলায়মান মুন্সি ৮-১০ বছার আগে এ এলাকায় গ্যাস লাইনের হাউজ ওয়ারিং মিস্ত্রি’র কাজ করতো। সে সুবাদে আমার বাসার গ্যাস লাইনের হাউজ ওয়ারিংএর কাজ করেছে। গত ৪ দলীয় জোট সরকারের আমলে সে হঠাৎ গ্যাসের ঠিকাদার বনে যায়। এর পর থেকেই বোর্ডবাজার এলাকাতেই সোলায়মান মুন্সি, তার স্ত্রী ও সন্তানদের নামে পর্যায়ক্রমে ৮-১০ টি প্লট ক্রয় করে। বর্তমান সরকারের সময়ে একটি ৫তলা ভবন, একটি ৩ তলা ভবনসহ আরো ৫টি টিন সেড বাড়ি নির্মাণ করেছে সে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিতাস গ্যাস অফিসের হিসাব শাখার এক কর্মকর্তা জানান, বিগত বিএনপি আমলে জ্বালানি উপদেষ্টা মাহমুদুর রহমানের সময়ও বেশ কিছু দিন গ্যাস সংযোগ বন্ধ ছিল। ওই সময় সোলায়মান মুন্সিসহ কয়েক জন ঠিকাদারও গাজীপুরে শত শত অবৈধ সংযোগ দিয়ে হাতিয়ে নেয় কোটি কোটি টাকা। পরে মন্ত্রণারয়ের নির্দেশে তিন মাসের বিল জরিমানা দিয়ে অবৈধ সংযোগ বৈধ করতে ২ মাসের বিশেষ সুযোগের ঘোষণা দেয়।
ওই সুযোগে দেয়ার পরই ঠিকাদার সোলায়মান ও তার ছেলে ফয়েজ গাজীপুরে রাতা রাতি বিতরন লাইন স্থাপন করে শত শত অবৈধ সংযোগ দিয়ে অবৈধ সংযোগ বৈধ করার সুযোগ নেয়। গাজীপুর গ্যাস অফিসের প্রায় সকলেরই ওই ঘটনা জানা আছে।
বর্তমান সরকারও অবৈধ সংযোগ বৈধ করতে বিশেষ কোন সুযোগ দিবে এ ধারণা থেকেই এবারো তারা দাপটের সাথেই অনবরত অবৈধ সংযোগ দিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
শিমুলতলী এলাকার কামাল হোসেন জানান, গ্যাস ঠিকাদার জাহাঙ্গীর গত ২ বছরে এই এলাকায় ১০ কাঠা জমি ক্রয় করেছে। সেখানে ৬তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে দুই তলা পর্যন্ত বাড়ি নির্মান সম্পূর্ণ করেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সার্ভিস টিমের এক কর্মকর্তা জানান, দীর্ঘদিন থেকে গ্যাসের নতুন সংযোগ বন্ধ থাকায় কিছু ঠিকাদার চুরি করে অবৈধ সংযোগ দিয়ে টাকা নেয়। ওই টাকা এবং চুলার মাসিক বিল আদায় করে ক’জন ঠিকাদার গ্যাস অফিসের লোকজনকে একটি ভাগ দেয়।
এর মধ্যে বোর্ডবাজার এলাকায় ফয়েজ ও তার পিতা সোলায়মান, চন্দ্রা অঞ্চলে জাহাঙ্গীর ও কবির এবং জয়দেবপুরে আলম ও আমিনুলসহ কয়েক জন ঠিকাদার কয়েক’শ অবৈধ রাইজার উত্তোলন করেছে। প্রতি মাসে তাদের আদায়ও বেশী।
তিতাস গ্যাস অফিস সুত্রে জানা গেছে, গত দেড় মাসে ভোড়া, রথখোলা, চতর, নলজানীর গ্রেট ওয়াল সিটি, তারগাছ, শিমুলতলী, রাজেন্দ্রপুর এবং চন্দ্রার অঞ্চলের জরুন, শফিপুর ও কালিয়াকৈর এলাকা থেকে ১৫-২০ টি অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে জয়দেবপুর ও কালিয়াকৈর থানায় সাধারণ ডাইরি করা হয়েছে।
তিতাস গ্যাস কোম্পানির জয়দেবপুর অঞ্চলিক বিতরণ কার্যালয়ের জিএম প্রকৌশলী মো. খালেকুজ্জামান এ বিষয়ে বলেন- যেটুকু খবর পাই আমরা ব্যবস্থা নেই। এ ছাড়া আমাদের লোক বলের অভাব রয়েছে।
সারা দেশেই গ্যাস চুরি হচ্ছে, আমাদের কি করার আছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। সংযোগ কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও লোক বলের অভাব কি কারণে জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তোর দিতে পারেন নি। বরং প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়ে গ্যাস চুরির টাকার ভাগ পাওয়ার বিষয়ে তাদের কোন সম্পৃক্ততা নেই বলে তিনি দাবি করেন। সূত্র, সংবাদ ২৪ডটনেট ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।