আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফিলিস্তিনে মানবিক বিপর্যয় ও কয়েকটি ছবির বর্ণনা

গত ২০ নভেম্বর সকালে সবেমাত্র অফিসে গিয়ে বসেছি। বসে বসে সামহোয়ারইন ব্লগ এবং ফেসবুক ইউজ করছি। দেখতে দেখতে একটা খবরের উপর আমার দৃষ্টি আটকে গেল। যা দেখে আমার চক্ষু বিষ্ফারিত হল, হৃদয় সিক্ত হল, মন ডুকরে কেঁদে উঠল। বুকের গহীন জগৎ থেকে বেরিয়ে এল অনলের মত একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস।

অজান্তেই চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ল দু’ফোটা অশ্রু। মাত্র দু’ফোটা অশ্রু হলেও এর দাম এবং শক্তি কিন্তু অনেক বেশি। আমার বিশ্বাস যদি আমার চোখের মাত্র দু’ফোটা অশ্রুও যদি ইসরাইলি ভূখন্ডের কোন এক স্থানে গভীর রাতে শিশিরের সাথে টুপ করে ঝরে পড়ত ভখন সেখানে গড়ত কোন ভয়ংকর প্রলয়কান্ড কিংবা দেখা দিত মহামারির প্রাদুর্ভাব। যা আমেরিকার ক্যাটরিনা-স্যান্ডি, ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপের ধ্বংসযজ্ঞ কিংবা বাংলাদেশের সিডরের চাইতেও কোন অংশেই কম ভয়াবহ হত না। গত পাঁচ দিনে ফিলিস্তিনের গাজায় ইতিহাসের ঘৃণিত এবং নিন্দনীয় মানবিক বিপর্যয় সংঘটিত হয়েছে।

সেখানে অসংখ্য নারী-পুরুষের প্রাণহানি ঘটেছে। শুধু শিশু হত্যা করা হয়েছে ৩০ থেকে ৫০ জন। নারী-পুরুষ, যুবা-কিশোরের রক্তে সিক্ত হয়েছে ফিলিস্তিনের মাটি। আমার এও বিশ্বাস যে, সে রক্ত থেকে পঁচা কোন গন্ধ বের হয়নি, দূষিত হয়নি প্রকৃতির বাতাসও। সেখান থেকে বের হয়েছে মিশক আম্বরের খোশবু।

সে গন্ধ সমীরণের সাথে মিশে গিয়ে সৃষ্টিকর্তার চতুর্দিকে আবর্তিত হয়ে আবার ফিরে এসেছে ফিলিস্তিনের পবিত্র ভূখন্ডে। তখন সৃষ্টিকর্তা হয়তো হেসে হেসে সে সকল শহীদদের আতœাকে বলেছেন-“আমি তোমাদের উপর সন্তুষ্ট হয়েছি। কারণ, তোমরা একমাত্র আমার উপর ভালবাসা প্রদর্শন করতে গিয়ে জীবন উৎসর্গ করেছ। ” আমি সেদিন ফেসবুক এবং সামহোয়ারইন ব্লগে দশ বারোটির মত ছবি দেখেছিলাম। যত দেখলাম তত শিহরিত, পুলকিত, আনন্দিত, আহ্লাদিত, আশান্বিত হলাম।

পথ চলায় নতুন পথের দিশা খুঁজে পেলাম। কিন্তু একটা বিষয় আমার কাছে খুবই আশ্চর্য রকমের ঠেকেছে। বিষয়টি হল-ছবিগুলোর কোন একটা দেখেও আমি বিন্দু মাত্র ভয় পাইনি, মুচড়ে পড়িনি, আশা ছাড়িনি, ভেঙে পড়িনি। ববং আমার আশা, আমার প্রত্যাশা-সপ্ন বহুগুণে বেড়ে গেল। আর বিশ্বাস বদ্ধমূল হল বটগাছের মত মাটির গভীর থেকে আরো গভীরে।

সুপ্রিয় পাঠকবৃন্দ, আপনাদের জ্ঞাতার্থে আমি এখানে কয়েকটি ছবির বর্ণনা দেয়ার চেষ্টা করব। প্রথম ছবি: জায়গাটা ফিলিস্তিন ভূখন্ডের কোন এক স্থানের হবে। ইসরাইলি এক সৈন্য জোর করে ঢুকে পড়েছে সেখানে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ইসরাইলি এক সৈন্য ২০ বছরের ফিলিস্তিনি এক যুবকের বুকের উপর বন্দুক তাক করে আছে। যুবকটির তাতে কোন ভয় নেই, নেই এতটুকুন শংকা এবং সংকোচবোধও।

বরং একা যুবকটি অস্ত্র হাতে সৈন্যটির সামনে নির্ভয়ে উদ্যত ভঙ্গি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমার প্রশ্ন যুবকটি এ সাহস কোথায় পেল? এত আবেগ এত ভালবাসা এত ত্যাগ স্বীকারের মানসিকতা কী করে তৈরী হল তার ভেতর। এত মজবুত ঈমান গঠন করল কিভাবে? এই সব চিন্তা আমাকে ভাবনার অতলান্ত সমুদ্রে নিক্ষেপ করল। সেই সমুদ্রে আমি একা কেবল ঢেউয়ের সাথে আঁচড়ে পড়তে থাকি। আমি তার কোন কূল কিনারা খুঁজে পাই না।

দ্বিতীয় ছবি: আট নয় বছরের একটি শিশুর লাশ পড়ে আছে খাটের উপর। মনে হয় শিশুটি ছেলেই হবে। শিশুটির শব দেহের উপর ছড়ানো আছে নানা রঙের-গন্ধের বাহারি ফুল। ফুটফুটে সাদা-সুন্দর একখানা মুখ। খাটের চারপাশে ঘিরে বয়েছে তার সতীর্থ-বন্ধু আর খেলার সাথীরা।

তাদের চোখের কোণে চিকচিক করছে সকালে দূর্বাঘাসে ছড়ানো শিশিরের মত মুক্তোর মত ফোটা ফোটা জল। তাদের চেহারায় বন্ধুকে হারানোর বেদনা। হৃদয়ে তাদের সারাজীবনের জন্য চির বিদায় জানানোর আকুতি দেখলাম কিন্তু ভয়ের লেশমাত্র চিহ্ন আমি তাতে দেখতে পেলাম না। তৃতীয় ছবি: এক স্কুলে, ক্লাশ শেষে ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা বের হচ্ছে। তাদের সবার পরনে নীল-সবুজ রঙের সেলোয়ার কামিজ।

সবার মাথায় সাদা স্কার্ফ দিয়ে ঢাকা। তাদের দিকে বন্দুকের নল তাক করে আছে ইসরাইলি সৈন্যরা। স্কুলের ছেলে-মেয়েরা তাদের সুন্দর চিল চোখে তাকিয়ে আছে বন্দুক তাক করা সৈন্যেদের দিকে। আমি তাদের চোখে ঘৃণা আর আক্রোশ লক্ষ্য করলাম। কিন্তু ভয়ের বিন্দুমাত্রও আমি ছবিটির মধ্যে খুঁজে পেলাম না।

চতুর্থ ছবি: দশ বারো বছরের মৃত এক বালিকা। চোখে-মুখে-হাতে রক্তের আলপনা মাখা। অবুঝ ছোট ভাইটি খাট ধরে দাঁড়িয়ে আছে আর বোনকে ডাকছে। মনে হয় বোনের সাথে খেলার জন্য ডাকছে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস সে সুযোগ ছোট ভাইটি আর পাবে না।

কারণ তার বোনটি এখন অন্য ভূবণের বাসিন্দা। সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হল ভাইটি একথা ঘূর্ণাক্ষরেও জানে না যে, তার বোন আর তার সাথে পুতুল পুতুল খেলবে না। পঞ্চম ছবি: দুইটি মেয়ে শিশু, সম্ভবত তারা দু’জন বোন হবে। ছবি দেখে বুঝা গেল, তাদের মা-বাবাকে হত্যার পর তাদেরকে জানে মারার জন্য উদ্যত হয়েছে ইসরাইলি নরপশুরা। দুইটি মেয়ে একা! তাদের পাশে কেউ নেই।

তারা হরিণীর মত চোখ তুলে তাদের দিকে ঘৃণা ভরা চোখে তাকিয়ে আছে। চোখে তাদের অশ্রু। কী সুন্দর লাল টুকটুকে তাদের গাল। এত সুন্দর মেয়েকে হত্যা করা কিভাবে সম্ভব! আমার বুঝে আসে না। ৬ষ্ঠ ছবি: এই ছবিতে দেখলাম এক মা’কে ইসরাইলি হামলায় নিহত এক ছেলের মুখে চুমো এঁকে দিয়ে শেষ বিদায় জানাচ্ছেন।

এভাবে প্রতিদিন ফিলিস্তিনের শিশুদের রক্তে সিক্ত হচ্ছে সে দেশের মাটি। মাটি শুষে নিচ্ছে তাদের রক্ত। রক্ত শুষে মাটি গর্ভবতী হচ্ছে ইসলামী বিপ্লবের সন্তান প্রসবের জন্য। ইনশাআল্লাহ রক্তের প্রতিটি ফোটা থেকে জন্ম নেবে এক একটি বিপ্লবী সন্তান। তারা হবেন আবু বকরের মত দানশীল, উমরের মত বীর সেনানী, উসমানের মত দানশীল, আলীর মত জ্ঞানী, হামজার মত সিংহ শাদুল, খালেদের মত সাহসী, সাদ বিন আবি ওয়াক্কাসের মত ক্ষিপ্র, আবু সুফিয়ানের মত ধূর্ত।

ইনশাআল্লাহ, একদিন ফিলিস্তিন স্বাধীন হবেই হবে। ফিলিস্তিনের আকাশে উড়বে কলেমার পতাকা। বাতাসে ছড়িয়ে পড়বে ইসলামের সৌন্দর্য আর তার খোশবু ছড়াবে বিশ্বব্যাপী। আমরা সেদিনের প্রত্যাশায় পথ চেয়ে রইলাম। তাং-২২ নভেস্বর,২০১২ ইং।

লেখক: এম এ অধ্যয়নরত ঢাকা কলেজ, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, ংঁৎবফধশনধৎ@মসধরষ.পড়স ০১৮২০১৪৭৬৫৪ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.