আমি অতি সাধারণ মানুষ ১ম পর্বঃ- Click This Link
২য় পর্বঃ- Click This Link
৩য় পর্বঃ- Click This Link
(এই লেখাটা যখন লিখছি তখন ফিক্সিং কেলেঙ্কারিতে বাংলাদেশ ক্রিকেট জর্জরিত। তবে আশা করি বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াবে, মাথা উঁচু করে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিবে ক্রিকেট বিশ্বে। )
তামিম ইকবালের আগমন
তামিম ইকবাল বাংলাদেশের জন্য এক আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। ওর মত একজন দুর্দান্ত, ড্যাশিং ওপেনিং ব্যাটসম্যান বাংলাদেশ অনেকদিন ধরেই খুঁজছিল। তামিম আসার আগে আমরা কোনোদিন পাওয়ার প্লে ঠিকমত ব্যবহার করতে পেরেছি কিনা সন্দেহ।
আগে আমাদের ওপেনিং ব্যাটসম্যানদের কাজ ছিল কিভাবে প্রথম দশ ওভার উইকেটে কাটিয়ে দেয়া যায়। রান টান কোনো ব্যাপার না। তামিম আসার পর ব্যাপারটা পুরোপুরি পাল্টে গেল। এখন আমরা পাওয়ার প্লে ব্যবহার করতে পারি। প্রথম দশ ওভারে আমাদের ৫০-৬০ রান হয়ে যায়।
তামিম প্রথম লাইমলাইটে আসে ভারতের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপে তার সেই ফিফটির পর। জহির খানকে ডাউন দ্য উইকেটে গিয়ে মিড উইকেটের উপর দিয়ে যখন স্ট্যান্ডে আছড়ে ফেলে, তখনি বুঝে যাই ও হচ্ছে এক স্পেশাল ট্যালেন্ট। ওয়েস্ট ইন্ডিজের এক কিংবদন্তী (নামটা মনে আসছে না) এই ইনিংসের পর তামিম সম্পর্কে বলেছেন-ডোন্ট কিল হিম। অর্থাৎ তাকে তার মত খেলতে দাও।
এরপর ভারতের বিরুদ্ধে তার আরো কিছু দুর্দান্ত ইনিংস আছে।
ঢাকায় টেস্টে ১৫১ রানের এক অসাধারণ এক ইনিংস খেলেছে তামিম। সেই খেলায় তামিমকে আউট করার জন্য কত চেষ্টাই না করেছে ভারত। অফ স্ট্যাম্পের অনেক বাইরে লোপ্পা লোপ্পা বল দিয়ে যাচ্ছিল হরভজন আর শেবাগ, তামিম সবগুলা বলই ছেড়ে দিচ্ছিল। অথচ ততক্ষণে তামিম সেঞ্চুরি করে ফেলেছে!
কিন্তু তামিমকে বিখ্যাত করেছে মূলত ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে তার অসাধারণ পারফর্ম্যান্স। তামিমের প্রিয় প্রতিপক্ষই হয়ে গেছে ইংল্যান্ড।
ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে চার টেস্টে তামিম ২টা সেঞ্চুরি আর ৪টা ফিফটি করেছে। ওয়ানডেতেও একটা সেঞ্চুরি আছে।
লর্ডসের সেই দুর্দান্ত সেঞ্চুরি আজও চোখে ভাসে। ফলোঅনে পরে আবার ব্যাটিঙে নেমে তামিম-কায়েস ওপেনিং জুটিতেই করে ১৭৬। প্রথমদিকে কায়েস পিটিয়ে খেললেও পরে তামিম আস্তে আস্তে খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে আসে।
উইকেটের চারিদিকে দুর্দান্ত সব শর্ট খেলে খুব দ্রুতই সেঞ্চুরির দিকে এগিয়ে যায় তামিম। টিম ব্রেসনানের চার বলে ১৪ রান নিয়ে সেঞ্চুরিতে পৌঁছে যায় মাত্র ৯৪ বলে। প্রথম বলেএকটা ব্যাকফুট ড্রাইভ কাভার দিয়ে, পরের বলে স্ট্রেটে একটা ফ্রনফুট ড্রাইভে চার,তার পরের বলে মিড উইকেটে ঠেলে দিয়ে দুই রান, তারপরের বলে লং অনের ওপর দিয়ে দুর্দান্ত এক লফটেড ড্রাইভে চার-তামিম ততক্ষণে আকাশে উড়ছে। দৌড়ে গিয়ে হেলমেট খুলে তার জার্সির ব্যাকসাইড ড্রেসিংরুমে দেখিয়ে বলছে দেখ, আমি সেঞ্চুরি করেছি। আমার নাম অনার্স বোর্ডে ওঠাও।
সে এক অবিশ্বাস্য অনুভূতি!
অথচ আগের দিন জেফরি বয়কট বাংলাদেশের টেস্ট খেলার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। তামিমের উইলো সেই প্রশ্নকে সপাটে টেমস নদীতে ফেলে দিয়েছে।
লর্ডসে তামিমের সেই সেঞ্চুরির ভিডিও আমি ইউটিউব থেকে ডাউনলোড করেছি। মাঝে মাঝেই আমি সেই ভিডিও দেখি। যতবারই দেখি, ততবারই শিহরিত হই।
কি অসাধারণ সব শর্ট খেলছে তামিম। পুরো ইংল্যান্ড দল দিশেহারা। কাকে ছেড়ে কাকে বল দেবে কিছুই বুঝতে পারছে না স্ট্রাউস। পরে স্ট্রাউস বলেছিল যে তামিমের কারণে তাদের প্ল্যান ই পর্যন্ত যেতে হয়েছিল!
তামিমের এর চেয়েও স্পেশাল ইনিংস হচ্ছে পরের টেস্টে ওল্ড ট্রাফোর্ডে করা সেঞ্চুরি। ইংল্যান্ডে মৌসুমের শুরুতে ওল্ড ট্রাফোর্ডে রান করা খুবই কঠিন।
খেলা হচ্ছে জুন মাসের শুরুতে, মাত্র ২য় দিনের খেলা, অথচ সোয়ানের টার্ন দেখে মনে হচ্ছিল খেলা হচ্ছে ভারতে আর টেস্টের ৫ম দিন চলছে। বিশাল বিশাল একেকটা টার্ন। আর তামিম এই উইকেটেই ১০০ করে ১০১ বলে!
ফেব্রুয়ারিতে যখন বাংলাদেশে আসে ইংল্যান্ড তখন তামিমের এগ্রেসিভ ব্যাটিং দেখে পিটারসেন বলেছিল সামারে ওল্ড ট্রাফোর্ডে দেখব কেমন খেলো। তামিম ওল্ড ট্রাফোর্ডেও মারমার কাটকাট ব্যাটিং করে সেঞ্চুরি করার পর পিটারসেনের দিকে তাকালে পিটারসেন মাথা নিচু করে ফেলে।
তামিম আমাদের দেশের ওপেনিং ব্যাটিঙের ধারা বদলে দিয়েছে।
আমাদের ওপেনিং ব্যাটসম্যানরা এখন আর উইকেটে দাঁড়িয়ে থাকার জন্য যায় না, তারা রানও করতে যায়। এই ব্যাপারটা তামিম আসার আগে ছিলই না। তামিম পুরো ব্যাপারটাই উল্টে দিয়েছে।
(চলবে)
©Muhit Alam
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।